শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মিলন চ্যাটার্জী

প্রবন্ধঃ
অন্য স্বাধীনতার গল্প ...


ভারতের স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায় ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের ২৩ শে জুন পলাশীর মাঠে ইংরেজদের কাছে সিরাজের হারের সঙ্গে সঙ্গে । কথিত আছে নদিয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এই যুদ্ধে ইংরেজ পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন । এরপর থেকেই শুরু হয় অন্ধকারের ইতিহাস ।
এর প্রায় একশো বছর পর ১৮৫৪ সালে চালু হয় নদিয়া বিভাগ । যার প্রধান কার্যালয় হয় কৃষ্ণনগর । কিন্তু কমিশনার কৃষ্ণনগরে না থাকতে চাওয়ায়নদিয়া বিভাগের প্রধান কার্যালয় আলিপুরে সরানো হয় । এর মধ্যে চূর্ণী দিয়ে বয়ে যায় সময়ের স্রোত ।

এরপর শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই আর আত্মত্যাগের দিন । ১৯৪৪ সালের ২৭ শে জুলাই মহাত্মা গান্ধী তৎকালীন বড়লাট ওয়াভেলকে চিঠিতে জানান তারা সরকারকে সাহায্য করবেন যদি যুদ্ধের শেষে ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ।

ততদিনে যুদ্ধের গতি নির্ধারিত হয়ে গেছে , ফলে গান্ধীর চিঠি গুরুত্ব হারায়।এর ভিতরেই ১৯৪২ সালের ২০ শে আগস্ট মুসলিম লীগ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কাছে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের আবেদন করেছিল । যাকে সমর্থণ করেছিলেন গান্ধী তথা কংগ্রেস !

নিশ্চিত পূর্ণ স্বাধীনতাকে খণ্ডিত করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাটেলি ১৯৪৬ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর লর্ড ওয়াভেলের মাধ্যমে জওহরলালকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করা হয় । এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতরেই আসে সেই মহার্ঘ্য দিনের ঘোষণা । ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট বিকেলে কৃষ্ণনগর কলেজস্টিটের জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের এক সভায় স্বাধীনতা দিবস কীভাবে পালন করা হবে তা স্থির করা হয় ।
 
এমন সময় সন্ধ্যার রেডিওবার্তায় ঘোষণা করা হয় নদিয়া, ২৪ পরগনা,মালদা,মুর্শিদাবাদ চূড়ান্ত ঘোষণা সাপেক্ষে পাকিস্থানের অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং খুলনা অস্থায়ীভাবে ভারতের মধ্যে থাকবে । এরপরই ১৫ ই আগস্ট নদিয়া জেলায় পাকিস্থান দিবস পালনের তোড়জোড় শুরু হয় । কৃষ্ণনগর শহরে তারকদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে পাকিস্থানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করানো হয় এবং চাকদহের পৌরসভায় সহপৌরপিতা কাজী আবুতইয়ব সালেহ পাকিস্থানের পতাকা তোলেন ( পৌরপিতা কমল ভট্টাচার্য পতাকা না তোলায়

এরফলে দেশ জুড়ে দেখা দেয় প্রচণ্ড বিতর্ক। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,লক্মীকান্ত মৈত্র সহ নেতৃবৃন্দের চাপে অবিভক্ত নদিয়া জেলার তিনটি মহকুমা ( কুষ্টিয়া,মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা (পূর্ব পাকিস্থানের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বাকি দুটি মহকুমা কৃষ্ণনগর ও রাণাঘাট) প্রথমে 'নবদ্বীপ জেলা' নামে ভারতের সাথে যুক্ত হয় । এই অন্তর্ভুক্তিতে তিনদিন সময় লাগায় ১৮ই আগস্ট সোমবার নবদ্বীপ তথা নদিয়া স্বাধীন ভারতের মানচিত্রে স্থান পায় ।
মাত্র তিনটি দিন আর তাতেই নদিয়া জেলার দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হয় । যারা চেয়েছিলেন ভারতে থাকতে তাদের পাকিস্থানে থাকতে হয় ।

শুধু নদিয়াই নয় দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বনগাঁও ম্যাপের ভুলে পাকিস্থানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছিল । শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাস ও 'খেদাও অভিযান'যদিও ১৭ই আগস্ট রেডিওবার্তায় বনগাঁর মানুষ জানতে পারেন এটা ম্যাপের ভুল । ১৮ই আগস্ট বনগাঁয় পতপত করে স্বাধীন ভারতের তেরঙ্গা পতাকা সেই থেকেই বনগাঁর স্বাধীনতা পালিত হয় ১৮ ই আগস্ট । এখনও বনগাঁর আইনজীবীরা এই দিনটি পালন করেন ।

ইতিহাস বলে ভুলটা ছিল র‍্যাডক্লিফের ম্যাপে , তিনিই তৈরি করেন খণ্ডিত ভারতের প্রথম মানচিত্র । আর তাতেই রাণাঘাট ও বনগাঁ মহকুমা চলে যায় পাকিস্থানে !
আজও ১৮ই আগস্ট নদিয়ার রাণাঘাট ও কৃষ্ণনগরে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস । প্রবীণ নাগরিকরা বলেন রাণাঘাটের যে অংশে আজ বেশি ধূমধাম সেখানেই সৃষ্টি হয়েছিল দাঙ্গার পরিবেশ । ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করা উচিৎ না হলেও বৃহত্তর স্বার্থে ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে একটি দেশেই দুটি স্বাধীনতা দিবস পালন করা কি উচিৎ ?

এর উত্তর পাঠকের জন্যই ছেড়ে রাখলাম ।

তথ্যসূত্রঃ-

রাণাঘাটের সেকাল একাল
বিপ্লবী যুগান্তরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম
নদিয়া স্বাধীনতার সংখ্যা
১৮ই আগস্ট নদিয়ার স্বাধীনতা ।

৬টি মন্তব্য:

  1. আরো অনেক কিছুই জানতে চাই এই বিষয়ে।

    ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  2. নিশ্চয়ই জানাব নীতেশ ।
    আমি আসলে খুব কুঁড়ে বলেই এতো অল্প কথায় গপ্পোটা বললুম । আর একটা ব্রাকেট ব্যবহারে সামান্য ত্রুটি আছে , যেটা নীচে লিখে দিলুম ।


    "চাকদহের পৌরসভায় সহপৌরপিতা কাজী আবুতইয়ব সালেহ পাকিস্থানের পতাকা তোলেন ( পৌরপিতা কমল ভট্টাচার্য পতাকা না তোলায় ) ।"

    উত্তরমুছুন
  3. আশা রাখছি আরো বিস্তারিত জানবো বলে :)

    উত্তরমুছুন
  4. এইভাবে ইতিহাসকে আরো তুলে ধরাও আমাদের কর্তব্য। খুব ভালো কাজ হয়েছে। এই বিষয়ে আরো অনেক জানার অপেক্ষায় রইলাম।

    উত্তরমুছুন
  5. ভালো লাগল। অনেক কিছু জানতে পারলাম।

    উত্তরমুছুন