কবি পরিচিতিঃ আব্দুল্লাহ্ জামিল পেশায় একজন হৃদরোগ চিকিৎসক। ১৯৬১ সালের ২৬ জুলাই নরসিংদী জেলার এক গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহন করেন শ্রাবন মাসের এক তুমুল বর্ষার দিনে। ছোটবেলায় গ্রামে কাটিয়েছেন কিছুদিন যার স্মৃতি আজো তার কবিতায় দেখা যায়। SSC ও HSC ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে। তারপর শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহা বিদ্যালয় থেকে MBBS পাস করেন। তারপর FCPS (Internal Medicine) ও MD (Cardiology) ডিগ্রী অর্জন করেন যথাক্রমে ১৯৯৭ ও ২০০১ সালে। বর্তমানে Consultant – Interventional Cardiology হিসেবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
ছাত্র জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। পেশাগত প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে গিয়ে লেখালেখি থেকে বহু বছর দূরে ছিলেন। গত এক বছর থেকে আবার লিখা শুরু করেছেন। উনার কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। শীঘ্রই দুটো বই বের হবে।
পুনরাবৃত্তি
প্রথম দৃশ্য
সকালবেলার উজ্জ্বল রোদের আলোকশয্যা। বাসস্টপে অনেকে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষায়। এক একজনের এক একদিকে গন্তব্য। বাসস্টপের শেডের নীচে বেঞ্চের উপর একজন অর্ধোন্মাদ লোক শুয়ে আছে। মাথার চুল উসকোখুসকো। পরনে মলিন শার্ট-প্যান্ট। পায়ে অর্ধক্ষয়ে যাওয়া স্যান্ডেল স্যু। মাঝেমাঝেই স্বগোক্তি করছে। অপেক্ষারত যাত্রিদের মাঝে এক যুবক, সরকারী চাকুরে, এ’শহরে নতুন বদলী হয়ে এসেছে। তার থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো একজন যুবতী, প্রাইভেট ফার্মে চাকুরি করেন। যুবক-যুবতী এক সময় আবিষ্কার করে ওরা এক সময়ের প্রেমিক-প্রেমিকা। ওঁদের আলাপ শুনতে থাকে অর্ধোন্মাদ লোকটা।
যুবকঃ আপনি মাবেলি না?
যুবতীঃ জী। আপনি তো শ্যামল?
শ্যামলঃ হ্যাঁ। পরিবর্তনশীল পৃথিবীর মত তুমি অনেক বদলে গিয়েছো মাবেলি।
মাবেলিঃ উত্তপ্ত আবহাওয়ার ছাপ তো
তোমার চেহারাতেও রেখেছে স্বাক্ষর
যেমন করে মানুষ ধ্বংস করে নিসর্গ!
কার্তিকের মতো যে রূপ তোমার ছিলো
তা কোথায় হারিয়েছে আজ?
শ্যামলঃ ঠিকই বলেছো। প্রকৃতির সাথে সাথে
আমরা নিয়ত বদলাতে থাকি।
স্বার্থের জন্য অনেক কিছু করে ফেলি নির্দ্বিধায় ধ্বংস করি সবুজ, পাহাড়, নদ-নদী, সাগর। লক্ষ করেছো শহরের লেকগুলো কেমন
ভরাট হয়ে যাচ্ছেক্রমশ?
একদিন তোমাকেও হারালাম প্রকৃতির মতো।
মাবেলিঃ হারাইনি কি আমিও তোমাকে?
যেমন করে নদী হারিয়ে ফেলছে তার নাব্যতা শীতের প্রাক্কালে যেইভাবে ঝরে পড়ে পাতা।
শ্যালো ইঞ্জিনের তোড়জোড়ে হারিয়েছে
গুন টানা কিংবা রঙ্গিন পালের নৌকা।
শ্যামলঃ ঠিক তাই। দিক্বিদিক জ্ঞান শূণ্য হয়েঠিক তখনই মাবেলির বাস চলে আসে (বাসের শব্দ শোনা যাবে)। বিদায় নিয়ে মাবেলির প্রস্থান।
উড়ে বেড়িয়েছি কতোযে বনে বাদাড়ে
কপোতী হারানো কপোতের মতো।
জানো! আকাশেও পাখিরা নিরাপদ নয়
অক্সিজেনের বদলে বিষাক্ত গ্যাসে ভরে গেছে আজ বাতাস।
অরণ্যও হয়েছে বপদসঙ্কুল
অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীর করাতে বিপন্ন গাছপালা।
মাছেরা মরছে জলে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে।
তারপর শ্যামলও চলে যায় বাস ধরে। অর্ধউন্মাদ স্বগোক্তি করে।
অর্ধোন্মাদঃ হারানো ভালোবাসা বুঝি পথ খুঁজে পেলোমঞ্চের আলো নিভে যাবে।
যেমন করে ঝড়ের আঘাতে আহত পাখির
আশ্রয় মিলে পোড়োবাড়িতে।
----O----
দ্বিতীয় দৃশ্য
পর দিন সকাল। একই বাসস্টপের দৃশ্য।
শ্যামলঃ কেমন আছো মাবেলি? কখন এসেছো?
মাবেলিঃ ভালো। অল্প আগে।
তুমি ভালো আছো?
শ্যামলঃ ভালো আছি। চোখ লাল কেনো?
রাতে কি ভালো ঘুম হয়নি?
মাবেলিঃ চোখের এলার্জি।লাল হয়ে যায়
জল পড়ে অকারনে শুধু।
সত্যি ভালো আছো?
তোমার চোখের নিচে কালো হয়ে আছে।
শ্যামলঃ আমরা সবাই অভিনেতা
প্রতিদিন শুধু অভিনয় করে যাই
শুধু ভালো মানুষের মুখোশ লাগিয়ে।
মাবেলিঃ সত্যি, ঠিক তাই।
তুমি কাল রাতেস্বপ্নে এসে
যেনোহানা দিলেবার বার।
শ্যামলঃ আমিও দেখলাম কপোতী তার
হারিয়ে যাওয়া কপোতকে খুঁজে মরে
স্মৃতির হায়না এসে হৃদয়টাকে খুবলে খাচ্ছে।
ঘুমোবো কি করে?
মাবেলিঃ কপোতী তো বন্দী রয়েছে খাঁচায় তবু
মনটা তার শুধু উড়ে বেড়ায়
খুঁজে বেড়ায় হারানো ভালোবাসা তার
এই নিষ্প্রাণ ইটের শহরে কোথায় খুঁজে পাবে
প্রেম-ভালোবাসা!
শ্যামলঃ আমরা প্রত্যেকে এক যান্ত্রিক আবর্তে যেনো বন্দী
সবাই যার যার ধান্দায় ব্যস্ত আছি।
হৃদয়ের আর্তনাদ শোনার সময় নেই কারো।
তোমার মোবাইল নম্বরটা দেবে কি?
মাবেলিঃ মোবাইলে অভ্যস্ত নই যে!
শ্যামলঃ অন্য কোনো বা নম্বর?
মাবেলিঃ থাক না! এ’ভাবেই হোক না দেখা রোজ।
(বাস এসে যায়। বাসের শব্দ শোনা যাবে)
কালকে আবার দেখা হবে।
শ্যামলঃ এসো। ভালো থেকো।
একে একে সবার প্রস্থান। অর্ধোন্মাদ আবারও স্বগোক্তি করে।
প্রতিদিনের মতো আরো একটি সকাল।
আজ শ্যামলের আসতে একটু দেরি হয়ে যায়। দেখে বাসস্টপে মাবেলি নেই। মাবেলি চলে গেছে ভেবে মন খারাপ করলো।
পরদিন। যথারীতি বাসস্টপের দৃশ্য। শ্যামল লক্ষ্য করে মাবেলির বা পাশে চোখের নিচের উঁচু জায়গাতে আঘাতের চিহ্ন।
একদিন মাবেলি বাসস্টপে আসেনি। শ্যামল অপেক্ষা করে। প্রথম বাস চলে যায়। আরো একটা বাস ছেড়ে দেয়। মাবেলি আর আসে না।
অর্ধোন্মাদঃ এই তো এবার রাস্তায় নেমেছো বাছা!এখানে মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
শীঘ্র পৌঁছে যাবে আমার মঞ্জিলে।
----O----
তৃতীয় দৃশ্য
প্রতিদিনের মতো আরো একটি সকাল।
মাবেলিঃ সুপ্রভাত মাবেলি! কেমন আছো?
শ্যামলঃ সুপ্রভাত! ভালো। তুমি?
অর্ধোন্মাদঃ ভালো নেই, ভালো নেই আর
রাতের বেলায় ঘুম নেই
সুস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্ন জন্ম নেয় রোজ
শীঘ্র পৌঁছে যাবে আমার মঞ্জিলে!
শ্যামলঃ আপনি আমাদের বলছেন কি?
অর্ধোন্মাদঃ আমি আমার কথা বলছি
কারোর কি লেজ মাড়িয়েছি?
মাবেলিঃ উনি ঠিকই তো বলেছেন।
আমরা যেনো যে যার জগতে পাগল
অন্যের তাতে কি এসে যায়!
কেনো বৃথা অন্যের ভুবনে পদচারণ?
অর্ধোন্মাদঃ (অট্টহাসি) হাহাহাহাহাহা.........
শ্যামলঃ তোমার স্বামীর কথা বলো।
মাবেলিঃ প্রাইভেট ফার্মে কাজ করে।
শ্যামলঃ ছেলেমেয়ে?
মাবেলিঃ এক ছেলে আর এক মেয়ে।
তোমার স্ত্রী? সন্তান ক’জন?
শ্যামলঃ সংসার ঘানির কলুর বলদ আমি
বিয়ে-থা করতে নেই কোনো
বাবা বিয়োগ হলেন বেশ কিছু আগে
মার প্যারালাইসিস হলো
বিবাহযোগ্য দু’টি বোনের দায়ভার।
অর্ধোন্মাদঃ একেবারে পুরোনো স্ক্রিপ্টের ফটোকপি!শ্যামল বিরক্ত হয়ে তাকায়। মাবেলি দুঃখের হাসি হাসে।
মাবেলিঃ তোমার কমল-প্রথা জুটির কথা কি মনে পড়ে?
কি কঠিন প্রেম ছিলো যে ওদের।
শ্যামলঃ যেনো ঠিক লাইলী-মজনু।
মাবেলিঃ জাতের দেয়াল ওদের মিলনে বাধা হলো
নাবিক স্বামী ছ’মাস জলে আর ছ’মাস স্থলে
ভাসুর-জা’এর ষড়যন্ত্রে ঘর ছাড়াকমল নিয়েছে সন্ন্যাসের বেশ।
শ্যামলঃ জীবন কেনো এতো নিষ্ঠুর!বাস চলে আসে (বাসের শব্দ)। সকলের প্রস্থান। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
----O----
চতুর্থ দৃশ্য
আজ শ্যামলের আসতে একটু দেরি হয়ে যায়। দেখে বাসস্টপে মাবেলি নেই। মাবেলি চলে গেছে ভেবে মন খারাপ করলো।
অর্ধোন্মাদঃ আকাশে এতো কালো মেঘ জমছে কেনো?তখনই মাবেলি ব্যস্ত হয়ে প্রবেশ করবে।
এখনই দমকা হাওয়া বইবে
এখনই সূর্য হেসে উঠবে।
মাবেলিঃ ইস! বড্ড দেরী হয়ে গেলো!
বসের নর্দমার ঐ গন্ধযুক্ত বাক্য
শ্রবণ করতে হবে আজ।
শ্যামলঃ আমারও দেরী হয়েছে একটু
তুমি ছিলে না তাই কেমন
শূণ্যতায় ভরে গেলো মন।
দেরী হলো কেনো?
মাবেলিঃ ছেলেটার জ্বর। ছাড়ছিলো না যে!
তোমারও দেরী হলো কেনো?
শ্যামলঃ সরকারের পয়সা লুটেরাদের জন্য।
ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার ও
টেণ্ডারবাজদের কৃপায়
ফিবছর রাস্তাগুলোর উদরেওরা
সার্জারি চালায়
ঘর থেকে বেরুনোই দায়।
মাবেলিঃ দু’জনেরই দেরী, নইলে
একটা পুরোদিনের অপেক্ষা।
আর এগুলো সরকারী পয়সা নয়!
এতো তোমার-আমার ট্যাক্সের পয়সা!
শ্যামলঃ হ্যাঁ! কিন্তু এই যে অসততার ঘূর্ণিজলে পড়ে
আমরা সবাই দেশটাকে রসাতলে দিচ্ছি
এর থেকে উত্তরণের কি পথ আছে?
মাবেলিঃ দৈবক্রমে যদি একজন
সৎ স্বৈরশাসকের আবির্ভাব ঘটে।
যাক এ’সকল।
অন্য কিছু বলো।
শ্যামলঃ তোমার মনে আছে কি? এই শরৎ কালে
কলেজ থেকে একটু দূরে নদী-তীরে
কাশবনের পাশে নির্জনে দুইজন
পাগল করা বাতাসে তোমার ওড়না, চুল উড়ে
পেছনে ধবল কাশফুল দোলেআর
আনমনা দুইজনে কিছুক্ষণ বসে
নদীর জলের ঘ্রাণ আসে
তোমার কোলে মাথা রেখে আকাশ দেখা।
গান শোনানোর বায়না ধরতে তুমি
মান্না দে’র গান গাইতাম আমি এক এক করে।
মাবেলিঃ “ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে......”
“এ নদী এমন নদী, জল চাই একটু যদি......”
“আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে.........”
আরো অনেক অনেক গান!
অর্ধোন্মাদঃ বড়, বড়ই নস্টালজিক
বড় রোমান্টিক!
মাবালিঃ একদিন ওখানে দু’জনে
বৃষ্টিতে ভিজে হলাম একাকার।
শ্যামলঃ কদিন আগে গিয়েছিলাম সেখানে
জানো! সেই কাশবনটা এখন নেই
নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে
ওটা আজ যেপরিণত হয়েছে চিতাবিহীন শ্মশাণে
ওখানে প্রায়ই ভেসে আসে
গলাকাটা বা খণ্ডিত লাশ।
মাবেলিঃ মানুষ আর কতো যে অমানুষ হবে!
অর্ধোন্মাদঃ নিরিহ পশুদের নামে কেনো যে গালি দেই!বাসের শব্দ শোনা যাবে। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
----O----
পঞ্চম দৃশ্য
পরদিন। যথারীতি বাসস্টপের দৃশ্য। শ্যামল লক্ষ্য করে মাবেলির বা পাশে চোখের নিচের উঁচু জায়গাতে আঘাতের চিহ্ন।
শ্যামলঃ তোমার চেহারায় আঘাতের চিহ্ন যে?
মাবেলিঃ না! ওটা গান্ধিপোকার দাগ।
শ্যামলঃ কেনো যে মিছে লুকোচ্ছো তুমি!মাবেলি ফুঁপিয়ে উঠেই নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু চোখের জল নেমে আসে।
অর্ধোন্মাদঃ প্রতি রাতের মতো কালও ঝড় হলো।
শ্যামলঃ কেনো ঝড় নামে এই ফুলের উপর?
কেনো উড়িয়ে দেয় না যত সব বাঁধা?
কেনো যে নিয়ে আসে না পূর্ণ সমাধান?
মাবেলিঃ সব ভাগ্য, বিধাতারই বিধান
শ্যামলঃ মানি না এই বিধান আমি
তবুও সইতে হয় নিয়ত
তোমাকে হারানো থেকে শুরু
এখনো পর্যন্ত সয়ে যাচ্ছি।
মাবেলিঃ এটা বাস্তবতা, এটাই যেনো জীবন!
শ্যামলঃ ওহ! আর কতোকাল সহ্য করে যাবো!
মাবেলিঃ যতোদিন জীবন থাকবে!
শ্যামলঃ তুমিও কি এভাবেই জীবনটা পার করে দেবে?
মাবেলিঃ উপায় নেই যে আর কোনো!
এভাবেই জীবনের অর্ধেক সময় তো হলো অতিবাহিত।
শ্যামলঃ কি অদ্ভুত! সব কেমন জীবনের গোলামী করে যাচ্ছি!বাসের শব্দ শনা যাবে। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
চারিদিকে এতো অত্যাচার, অনাচার
এতো রাহাজনি, গুম, খুন ও ধর্ষণ!
প্রতিকার নেই যেনো কোনো
সব রোবোটের মতো চলি।
----O----
ষষ্ঠ দৃশ্য
একদিন মাবেলি বাসস্টপে আসেনি। শ্যামল অপেক্ষা করে। প্রথম বাস চলে যায়। আরো একটা বাস ছেড়ে দেয়। মাবেলি আর আসে না।
অর্ধোন্মাদঃ রাতে বোধ হয় জ্বলে নেশার আগুনশ্যামলকে ইশারায় কাছে ডেকে বসায় অর্ধোন্মাদ লোকটি। কানে গোঁজা দুটো বিড়ির একটা নিজে ধরিয়ে অন্যটা শ্যামলকে দেয়।
তুলে বুঝি সন্দেহের ঝড়
আজ তাই হৃদয়ে নিদারুণ কষ্ট!
শ্যামলঃ আমার এতে অভ্যাস নেই।
অর্ধোন্মাদঃ দে না দুটো টান!
কষ্টের গোড়ায় একটু আগুন জ্বালা
আরে, কষ্টে কষ্টে কত জ্বালাবি নিজেকে
একটু-আধটু কস্টকেও জ্বালিয়ে দে!
শ্যামলঃ কষ্টকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করতে কতো
আগুন লাগবে বলতে পারবেন কি?
অর্ধোন্মাদঃ হাহাহাহাহা.........। (অট্টহাসি)
যদি জানতাম তবে দুনিয়ার সব
কষ্ট জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতাম যে!
শ্যামলঃ আপনার সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
অর্ধোন্মাদঃ শুনবি আমার সব কথা?
আমিও তোর মতো ছিলাম একদিন
আমারও ছিলো স্বপ্ন কতো
ভালোবাসা, আনন্দ ভরা জীবন
কবিতা, গান, উচ্ছল প্রাণ।
একদিন এক বন্যা এলো জোরেশোরে
ভাসিয়ে নিলো সব আমার
আমিও ভাসলাম কষ্টের জোয়ারেতে
তখনো চাকরি করি তোর মতো
নয়টা-পাঁচটা বাস ধরি।
বদলি হয়ে এলাম এ’শহরে
এই বাসস্টপে দেখা হলো তার সাথে
দু’জনার হৃদয় ব্যাকুলতায় উঠলো ভরে।
বহুদিন এখানে দাঁড়িয়ে হলো কথোপকথন
হঠাৎ একদিন থেকে আর দেখা নেই তার
দু’দিন বাদে খবরের কাগজে দেখি
স্বামীর নির্যাতনের চোটে করেছে আত্মহনন
সেইদিন থেকে এখানে আছি এভাবে।
শ্যামলঃ আপনার ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন?
অর্ধোন্মাদঃ সম্পত্তির ভাগ দেবার ভয়ে কেউ রাখেনি খোঁজ।বাসের আওয়াজ শোনা যায়। মন খারাপ নিয়ে বাস ধরে ছলে যায় শ্যামল। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
এখানেও আমার পালা হয়েছে শেষ
চলে যাবো অন্য কোনোখানে
নতুনেরে স্থান করে দিতে।
----O----
সপ্তম দৃশ্য
পরদিন। বাসস্টপের বেঞ্চটা খালি। শ্যামল এসে বসে পড়ে ওখানে। একটু পরে মাবেলি আসে। শ্যামল লক্ষ্য করে বাম বাহুতে আঘাতের চিহ্ন।
শ্যামলঃ কাল আসোনি যে?
মাবেলিঃ অসুস্থ ছিলাম।
শ্যামলঃ ও কিসের দাগ?
মাবেলিঃ দরোজায় আঘাত লেগেছে।
শ্যামলঃ দেখেছো, পাগল লোকটা আজকে নেই।
জানো! ও পাগল নয় মোটে!
কাল বলেছে আমাকে ওর সমস্ত বৃত্তান্ত
আমার জীবনের সাথে অনেক মিল।
মাবেলিঃ বাজে বকোনা তো!
শ্যামলঃ তোমার শরীরে নির্যাতনের যে ছাপ দেখি রোজ!
মাবেলিঃ ও প্রতি রাতে নেশার ঘোরে বাড়ি ফেরে
লাভ হয়নি বারণ করে।
ইদানিং সন্দেহের আগুন জ্বেলেছে
মাঝে মাঝে গায়ে হাত তোলে।
শ্যামলঃ ওহ বিধাতা! কি যে অসহনীয়!
কেনো নিয়তি এমন হলো?
পারো না কি দিতে কোনো সমাধান এর?
নাকি এটাও তোমার সৃষ্টির রহস্য?
মাবেলিঃ লাভ নেই কোনো।
এভাবেই কাটাতে হবে এই জীবন।
শোনো, তুমি বিয়ে-থা করে সংসারী হও
এখনো বয়স হয় নি তেমন।
শ্যামলঃ হাহাহাহাহা.........হাসালে আমাকে
অন্য কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতা তো
হারিয়েছি বহুকাল আগে।
এখন আর হবার নয়।
মাবেলিঃ আমার জীবন হবে যেনো শেষ শীঘ্র
দেখো, একদিন চলে যাবো সব ছেড়ে।
শ্যামলঃ সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভাবো।
মাবেলিঃ একা ভেবে ভেবে লাভ নেই
এই ব্যাপারে ও উদাসীন।
বাস চলে আসে। সবার প্রস্থান। আলো নিভে যাবে।
পরদিন বাসস্টপে শ্যামল আসে, মাবেলি আসে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যায়। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
পরদিনও মাবেলি আসে না। একজন দাঁড়িয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। উনি পাশের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন –
মঞ্চের আলো জ্বললে দেখা যাবে শ্যামল মলিন কাপড় পরে বেঞ্চের উপর বসা। বিড়ি ফুকছে। যাত্রি আসছে। বাসের শব্দ। যাত্রিরা চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মঞ্চের পর্দা পড়বে।
----O----
অস্টম দৃশ্য
পরদিন বাসস্টপে শ্যামল আসে, মাবেলি আসে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যায়। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।
----O----
নবম দৃশ্য
পরদিনও মাবেলি আসে না। একজন দাঁড়িয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। উনি পাশের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন –
যাত্রিঃ রোজ যে মহিলা এখান থেকে বাসে ধরেনশ্যামল এসে লোকটার হাত থেকে খবরের কাগজটা নিয়ে খবরটা পড়ে ও ছবি দেখে। হঠাৎ সজোরে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে বেঞ্চের উপর বসে পড়ে। হাসতেই থাকে। চোখ দিয়ে জল গড়াতে থাকে।
ওঁকে খুন করে ওর মদ্যপ স্বামী গ্রেপ্তার হয়েছে।
----O----
শেষ দৃশ্য
মঞ্চের আলো জ্বললে দেখা যাবে শ্যামল মলিন কাপড় পরে বেঞ্চের উপর বসা। বিড়ি ফুকছে। যাত্রি আসছে। বাসের শব্দ। যাত্রিরা চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মঞ্চের পর্দা পড়বে।
----O----
আপাতত এটুকু বলছি, বেশ ভালো লাগলো। প্রথম কাব্যনাট্য হিসেবে ধরলে বলতে হোয়, অনেক ভালো লিখেছেন। শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ আপনাকে Hasan Mosfiq
মুছুন