শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

নন্দিতা ভট্টাচার্য



বাংলা রূপান্তর – নন্দিতা ভট্টাচার্য     

এক
বাবা, একটা পুতুল কিনে দিবি?  রাঙ্গানদীর পারে হাট বসেছে ইটখোলার পাশে। সোনা-দানা চুড়ি বালা মনি-মুক্তো কিছুই চাইনা আমি আমাকে একটা পুতুল দে, তিন টাকাতেই পাবি।
--- মামনি আমার!  মৌজাদারের ঘরে  গতর খেটে ত্রিশ টাকা পেলাম। ডালের দাম পঞ্চাশ টাকা কিলো। রেশনের চাল আনলাম। নুন খার দিয়ে ভাত খাব আজ। পুতুলের সাথে পরে খেলতে পারবি।
 

দুই
--- বাবা, একটা পুতুল কিনে দিবি ?  মৌজাদারের মেয়ের মতো নয় – মোটাসোটা ভালুকের ছানা। হরেক মাল থেকেই কিনে দিতে পারবি। দশ টাকাতেই পাবি।
--- মামনি, মামনি! তোর  মায়ের চাদর দেখ ফেসে গেছে। তোর জামাটিরও সেলাই খুলে গেছে। মৌজাদারের গোলামি করে টাকা কটা পেলে পুতুল নয়,  জামার সঙ্গে চাদর কিনতে হবে।
 

তিন   
--- বাবা, পুতুল কিনে দিবি?  বলেন কাই-র দোকানে পাবি—নীল চোখের সোনালী চুল।
--- মা। মাগো! এখন তুই বড় হয়েছিস। পুতুলের বিয়ে কি করে দিবি?  বাঁশের খুঁটির ভাড়ার ভেঙ্গে মেখলা-চাদর একজোড়া কিনে দেব। লাল রঙের পাথর বসানো আংটি ও মৌজাদারের মেয়ের মতো নখরঞ্জনী - এটা ওটা!
 

চার
--- ও বাবা,  একটি পুতুল কিনে দিবি?  মৌজাদারের মেয়ের মতো নখরঞ্জনী দরকার নেই — বাইরের বেড়ায় যে মেহেন্দির ঝাড় আছে সেই মেহেন্দি পাতা বেটে হাতে লাগাব  নাহয়  আমি।
--- মা,  ও আইজনি!  দৈর্ঘে – প্রস্থ্যে তো মায়ের সমান হয়েছিস। পুতুল নিয়ে কি করে খেলবি?  দু’দিন দিন পর বিদায় করব। তারপর তো  অন্য বাড়িতে গিয়ে তো হাড়ি কড়া ওথলাবি ! 
 

পাঁচ
---  বাবা, ও বাবা!  একটি পুতুল কিনে দিবিনা?  আমার জন্যে নয় আমার মেয়ের জন্যে। বাচ্চাটা বড় জ্বালাতন করে। বাপকে বললেও ক্ষেপে  ওঠে। হাল - লাঙ্গল চালিয়ে যা জোটে তাতে দু’ মুঠো ভাত ই মুখে তুলতে পারিনা ...। 

(চন্দনা পাঠক আসামের শূন্য দশকের বিখ্যাত লেখক )

(অলংকরণ – কৌশিক বিশ্বাস )


৩টি মন্তব্য: