শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

এই সংখ্যার কবি



ইন্দ্রনীল তেওয়ারী
শিরোনামহীন -১

লেখা হোক আজ আমাকে।
লেখা হোক একা রাত।
একা চাঁদ.........

আমার প্রেমিকা কাপড় ছেড়ে তীব্র সকাল হয়ে গেছে।


শিরোনামহীন -২

কোথায় যে কার পেছনে ঢুকে যায় কামড়,
বোঝা দায়!

কথা তো বলি না কখনো,
বলিনি।
তবু তারা বলে ; দেখো মালটার গলায় ঢুকে আছে ভয়ের জিরাফ।

তবুও তো ভাষা আছে। থেকে যায়।

ভয়? সে তো তাহাদের থেকে সংক্রমিত।

হলুদ চোখ । মাথা লাট্টু, প্রলাপের কোনো বিপণন নেই।
অসুস্থ হতে হতে বুঝি সকলের পেছনে ঢুকে যাওয়া কামড়
হরবখত্‌ সুড়সুড়ি দিতে থাকে।


শিরোনামহীন -৩

যত পারো কম কথা বলো।
তুলে রেখো শব্দ।
কেন-না এখনও চোখ আছে
আর আছে গাছেদের বোবা হয়ে যাওয়া।

আসলে আমি তো একটি চোখওয়ালা গাছ
আর তুমি বোবা একটি মানুষ।


শিরোনামহীন -৪

তারও পরে কিছু কথা থেকে যায়।

জীবনের মদ নিঃশেষে
শেষ করে দেওয়ার পর
গভীর মাতাল
বেহুঁশ ঘুমিয়ে গেলে
দু-চারটে প্রলাপ জেগে থাকে।

অতএব কান পেতে রেখো,
তারও পরে কিছু কথা থেকে যায়।


শিরোনামহীন -৫

ওগো ডাকাত রত্নাকর,
প্রতি মুহূর্তে আমাদেরও কিছু গোপন সঙ্গম থাকে।

সেসব লুণ্ঠিত হলে, শোক থেকে শ্লোকে উত্তীর্ণ হও তুমি।

প্রতিনিয়ত লুঠ হয়ে যায় আমরা গভীর প্রণয়ের সময়।
অথচ সময়ের উই ঝেড়ে সকল দস্যু লিখে চলে রামায়ণ ।

শিরোনামহীন - ৬

সেই রাত আসে না আর।
আসে না  ভুল অন্ধকার
বিছানার রঙ লেগে আছে এখনও শরীরে।
জেগে আছে ঘুম আদরে আদরে।

কতদিন হল জমে গেছি পাথরের ঠান্ডায় আর তুমি শিশিরের জলে।


শিরোনামহীন -৭

এইবার ঘুম যাবো।
ঘুম।
এখনও তো ছুঁয়ে দেখো।
ছুঁয়ে দেখো চুম।

তোমার নাম ধরে রাত এসেছে, শেষ গো শেষ যে সময়।


শিরোনামহীন -৮

যতই লেখো গান,
লেখো স্বরলিপি
আসলে এই তো বিষণ্ণ শীত।
যখনই ভেবেছি সবই তো সুন্দর,
দেখি কুয়াশায় ভিজে গেছে জানালার কাঁচ।


শিরোনামহীন -৯

চোখের জলে আর শরাবে কোনো পার্থক্য নেই।
দুটোই চলকে ওঠে।
নেশায় মাথা ঘুরে যায়।
তাই সমস্ত মদ শালা ঘুরে ফিরে
এসেছি সাকী তোমার বেদনশালায়।

আজ মাতাল হওয়ার দিন। অশ্রু তে ছোঁয়াব শুকনো ঠোঁট।


শিরোনামহীন -১০

যেই ক্ষণে কমে যাবে রোদ,
আমি বিকেলের দিকে তাকিয়ে বলে যাবো
ভালো থেকো।
ভালো থেকো গাছ।
রাস্তা।

হয়তো তখন তুমি চোখে লাগাও অন্য ভোর খোঁজা রাত।


শিরোনামহীন -১১

কোনো ঘর নেই।
কোনো বসত...

যেন কোনো ট্রেন।

এই যে এতো ষ্টেশন, হল্ট।
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দ্রুততর ট্রেন আমরণ ছুটে যায়।
লক্ষ্য
একটি নিশ্চিত মৃত্যুলোকে শেড্‌-গহ্বর। 


শিরোনামহীন -১২

গভীর অসুখ...
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি একটি থির জলে।

দেখো সমস্ত কুলির দল ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটে।
অন্ধকার ঝুঁকে থাকে, ঝুঁকে যাওয়া কোনো প্লাটফর্মে।

আর আমি কোনো গম্ভীর বিষাদ
উগরাতে উগরাতে শেডের ভিতর দাঁড় করায়
কোনো অসুস্থ ট্রেন।


শিরোনামহীন -১৩

তবুও ক্রমশ দুরেই চলে যেতে থাকি।

মুছে যেতে থাকে
ফিরতি ট্রেনের ফেরিওয়ালা।

আমিও অন্ধকারের ঠোঁটের ভেতর ডুবে যায়।

ফেরত ট্রেনের লোকেরা বলাবলি করবে,
ষ্টেশনটা আজও ওখানেই আছে,
শুধু লোকটাই চলে গেছে দূরে কুয়াশার ভিতর।


শিরোনামহীন -১৪

এবং কখনোই আমি ভালো নেই।

যতবার আমি নিজেকে ভরেছি জীবনে
ততবার উল্লাসে ঢক ঢক পান করে গেছে ঈশ্বর।

তবুও তো কিছু মদ ছুঁয়ে থাকে গেলাস।
দেখো,
দু-চার ফোঁটা জল ছুঁয়ে আছে আমার চোখ।

এবং এখনও আমি ভালো নেই।

শিরোনামহীন -১৫

নির্দিষ্ট কিছু সময় পার হয়ে গেলে
অবশ্যম্ভাবী রাত জেগে থাকে।
জেগে থাকে জমাট মাংসের মতো অন্ধকার।

তীক্ষ্ণ আমিষ গন্ধ
লেগে থাকে সুক্ষতম শরীরে।

আর যত ঘুম
হতচ্ছাড়া আলকাতরার মতো
বুজিয়ে রাখে চোখ।

কোনোদিন জেগে না ওঠার পণ
ধার করে  বেঁচে থাকে লাওয়ারিশ জীবন।


শিরোনামহীন -১৬

ভালোবাসা কোনো রঙ নয়,
‘দূর’ কোনো ছবি এঁকে দেবে কেও।
ভালোবাসা বন্ধু হোক তোমার

আমি কোনো আকাশের তলে ঘুম ছুঁয়ে যাব।


শিরোনামহীন  -১৭

ক্রমশ বিবস্ত্র হও,
হও নগ্ন রাত।
জ্বলন্ত অঙ্গারসম ছুঁয়ে যাব
ঘুমন্ত নাভি, আশ্চর্য উন্মুখ প্রদীপ।
থরথর ঝড় বেয়ে ঢুকে যাবো চৈতন্যর গর্ভে।

এইবার জন্ম হোক।
হোক মৃত্যু ক্রন্দন।


শিরোনামহীন -১৮

এই তবে শেষ হোক।
এই খানে, এই ক্ষণে।
দুই পথ।
তোমার থাকুক সকাল শুরুর ভোর।
আমি থাকি রাত্রি শেষের আলোয়।

কাল সকালে চোখে লাগাও অন্য প্রসাধনী।



অলংকরণ – মেঘ অদিতি



৪টি মন্তব্য:

  1. বলেন্দ্র , তোর লেখার আমি মুগ্ধ পাঠক ভাই ।
    দারুন বললে ঠিক জুত হয়না , তাই ... জিও ।

    উত্তরমুছুন
  2. ১৮ বার শিরোনামহীন পড়ে খুব বড় 'শিরোনাম'-এ উপলব্ধি হোলো--- 'আপনি খুব ভাল লেখেন, দাদা'। প্রীতি ও শুভেচ্ছা নেবেন।

    উত্তরমুছুন
  3. আমি আবার "শিরোনামহীন" লিখতে অপারগ। অবশ্য চেষ্টাও করি না। কেমন যেন গা রি-রি করে। জন্ম দিচ্ছ ভায়া আর তার পরিচয় দিচ্ছ না! -এ তো ভালো কথা নয়!! তবে যাইহোক, কবিতাগুলো "শিরোনামহীন" হলেও বিষয়বস্তু যথেষ্ট পরিশীলিত নামগোত্রযুক্তই লাগলো।

    উত্তরমুছুন