বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

কবিতার অমোঘ নারী - নীরা



কবিতার অমোঘ নারী - নীরা

বাণীব্রত কুণ্ডু


আমার যৌবনের দ্বীপটি আমার কাছে মাপে ছোটো লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হলো আমার।-কবি সুনীলের মানসচেতনে সেই যুবক বয়স থেকেই আঁকা হয়ে গিয়েছিল নদীর ছবি। যে নদী তাঁকে ভাবায়। যে নদী তাঁকে ব্যস্ত করে রাখে সারাদিন। যে নদী তাঁকে পরবর্তী সময়ে পাহাড় কিনতে শেখায়! যে পাহাড় মানুষের অহঙ্কার চূর্ণ করে। পরিপূর্ণ করে তোলে মানুষের আত্মনির্মাণ। তাই কবি এভাবেই ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছেন জীবনের গহন অরণ্যে। আত্মদর্শনে মোহিত হয়েছেন ক্রমে ক্রমে। আর সেই আত্মজাগরণের কারণে কবি প্রয়োজনবোধ করলেন নিজের সঙ্গে কথা বলার। আর তাই কবি সৃজন করলেন এক নারীচরিত্র। নীরা। কিন্তু নারীই কেন! কেননা, তা পরমেশ্বর নির্ধারিত। অর্ধনারীশ্বর চেতনানির্ভর। অর্থাএই জগতে স্ত্রী-পুরুষভেদে আমরা প্রত্যেকে পরস্পরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। আমরা এক-একজন হলাম এক-একটি অর্ধেক আত্মা। পুরুষ এবং প্রকৃতির মিলনেই আত্মা সম্পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। এখানে পুরুষ হলেন পরমপুরুষ আর প্রকৃতি হলেন বাকি সমস্তই। যেখানে এই আমরা পুরুষেরাও ওই প্রকৃতিশ্রেণীভূক্ত। সে যাইহোক, উচ্চমার্গের দর্শনতত্ত্বে না গিয়ে যদি বাস্তবের আলোকে দেখি তাহলে অর্ধনারীশ্বর হলো সেই নারী আর ঈশ্বর তথা পুরুষ। অতএব নারীপুরুষ। আর তাই বিধাতাপুরুষের নির্দেশেই হোক বা জৈবিক অনুভূতির আকর্ষণেই হোক একজন পুরুষ যেমন একজন নারীর প্রিয় বিশ্বাসভাজন হতে পারে তেমনি একজন নারীই হতে পারে পুরুষের পরমবিশ্বস্ত, দিনরাতের সফরসঙ্গিনী। শুধু তাই নয়, মানসপ্রকৃতিরও সফল সহগামিনী। আত্মার আত্মীয়। নারীপুরুষ পরস্পর দ্বিধাহীনভাবে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করতে পারে একমাত্র বিপরীতচিহ্নের কাছেই। তাঁর সব অহঙ্কার, সব ব্যক্তিত্ববোধ ভুলে অনায়াসে সমর্পণ করতে পারে নিজের বলতে যা কিছু থাকে। আর তাই এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।

আর নীরা! সে কি সুনীলের গোপন নারী, সুনীলের স্বপ্নসহচরী প্রেমিকা! নাহ্‌, সে তো সুনীলের মনসিজা। একান্তই অভেদাত্মাস্বরূপিনী। কবিমননেরই এক অনন্ত ডায়েরি। কবির আত্মকথন। কবির আনন্দ-বেদনা, সুখ-অসুখ, পাপ-পুণ্য, মান-অপমান, ভয়-দুরন্তপনা, ভালোবাসা-ঘৃণা, আদর্শ-স্খলন, উচি-অনুচিত, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, লৌকিক-অতিলৌকিক, স্বপ্ন-স্মৃতি, চেতন-অচেতন এই সমস্তই ব্যক্ত করেছেন সহজ ও সাবলীল ভাব-ভাষায়। ব্যক্ত করেছেন নীরার কাছে, নীরার হয়ে, নীরার জন্য। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে সুনীলের নীরা জীবনানন্দের বনলতা নন। বনলতার মধ্যে প্রেমিকাসত্বাই অধিক প্রকাশ পায়। কবি সারাদিনের শ্রান্তি দূর করতে দুদন্ড বনলতার মুখোমুখি বসতে চান। তাঁর চোখে খুঁজে পেতে চান এক আশ্চর্য প্রশান্তির পরম তৃপ্তিসুখ। বনলতার কবি তাঁকে রচনা করেছেন এক অপরূপা, অনন্যস্বভাবা লাস্যময়ী নারীরূপে। কিন্তু সুনীলকবি! তাঁর নীরাকে এঁকেছেন পরমাপ্রকৃতি রুপে। নীরার বিস্তার শুধুমাত্র নারীত্বে বা নারীসুলভ ভাবভঙ্গিমায় সীমাবদ্ধ নয়। নীরা একাধারে পরমেশ্বরী, জননী, বান্ধবী, প্রেমিকা আবার কোথাওবা সন্তানসমা। কবি তাঁর মনের অবস্থিতি অনুযায়ী নীরাকে উপলক্ষ্য করে সাজিয়ে তুলেছেন বিবিধ নৈবেদ্যের ডালি। নীরাকে তিনি লঘুপ্রেমে কলঙ্কিত করতে চাননি। নীরার চরিত্রে প্রতিস্থাপন করেছেন স্বর্গীয় মহিমার বীজমন্ত্র। তাই নীরা কেবল নারীর এবং -এর স্থানবদলই করেনি উপরন্তু, নারীচরিত্রকে রূপায়ণ করেছে এক সমগ্রতায়। চরিত্রটি হয়ে উঠেছে স্বর্গীয় সুষমামন্ডিতা।

প্রথম দিককার কয়েকটি কবিতায় যদিও নীরার নারীমুখ উদ্ভাসিত হচ্ছিল কিন্তু পরের পরের কবিতাগুলিতে নীরা ক্রমশ হয়ে উঠেছে অনুভূতির বিশ্বচরাচর। উপলব্ধির উপাদান। যেখানে নারীকে নিয়ে পুরুষমনের যাবতীয় সংশয়, সন্দেহ, কৌতুহলো, উদ্বেগ, ব্যাকুলতা, স্বপ্ন, প্রভৃতি আলোচনা করেছেন কবি নিজের সঙ্গে, নীরার সঙ্গে। বিজনে। স্বপ্নে।

বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল
স্বপ্নে বহুক্ষণ
দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে-দিকচিহ্নহীন-
বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে
তোমাকে দেখেছি কাল স্বপ্নে, নীরা,

অথবা, -

তোমার রঙ একটু ময়লা, পদ্মপাতার থেকে যেন একটু চুরি,
***

নীরা, তোমায় দেখি আমি সারা বছর মাত্র দুদিন
দোল ও সরস্বতী পুজোয় দুটোই খুব রঙের মধ্যে
রঙের মধ্যে ফুলের মধ্যে সারা বছর মাত্র দুদিন...

নীরার জন্য কবিতার ভূমিকায়য় এক অসামান্য ঘূর্ণাবর্তে ঘুরপাক খেয়েছেন। এখানে সুনীল যেন কোনো তান্ত্রিকের অশরীরী অনুচর তাল-বেতালের মতোই তাঁর একান্ত গোপন শব্দতাড়িত কবিতাশরীর হয়ে নীরাকে স্বাস-প্রশ্বাসে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ভালোবাসছেন আবার পরক্ষণেই আশ্বাসও দিচ্ছেন তাঁর পবিত্রতা রক্ষায়।

তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি ঘুমোও, আমি বহু দূরে আছি
আমার ভয়ংকর হাত তোমাকে ছোঁবে না, এই মধ্যরাত্রে
আমার অসম্ভব জেগে ওঠা, উষ্ণতা, তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও
চাপা আর্তরব তোমাকে ভয় দেখাবে না-আমার সম্পূর্ণ আবেগ
শুধু মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র হিম,
শব্দ ও অক্ষরের কবিতায়
তোমার শিয়রের কাছে যাবে-এরা তোমাকে চুম্বন করলে
তুমি টের পাবে না, এরা তোমার সঙ্গে সারারাত শুয়ে থাকবে
এক বিছানায়-তুমি জেগে উঠবে না, সকালবেলা তোমার পায়ের
কাছে মরা প্রজাপতির মতো এরা লুটোবে। এদের আত্মা মিশে
থাকবে তোমার শরীরের রন্ধ্রে, চিরজীবনের মতো...
***
আমি অন্য কথা
বলার সময় তোমার প্রস্ফুটিত মুখখানি আদর করব মনে মনে
ঘরভর্তি লোকের মধ্যেও আমি তোমার দিকে
নিজস্ব চোখে তাকাবো।
তুমি জানতে পারবে না-তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে
আমার একটি অতি-ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা।

আবার অন্যত্র -

আমি তোমায় লোভ করিনি, আমি তোমায় টান মারিনি সুতোয়
আমি তোমার মন্দিরের মতো শরীরে ঢুকিনি ছল ছুতোয়
রক্তমাখা হাতে তোমায় অবলীলায় নাশ করিনি;

এবং এভাবেই নীরাকে নিয়ে কবি মেতেছেন এক অপার্থিব ঘূর্ণিঝড়ে। এক অন্য অবশতায় নিজেকে হারিয়ে কবি নিজেকে খুঁজেছেন বারংবার, নীরার ভিতরে নীরা! স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্ন! তাই বলা যায় সুনীলের অবচেতনের আর এক নাম নীরা। আর এভাবেই কখনো সুনীল হয়ে উঠেছেন নীরাময়। কোথাও কোথাও নীরাও ছাপিয়ে গেছে সুনীলকে। যে কারণে কখনো সখনো পাঠককূল তো বটে স্বয়ং কবি নিজেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন নীরার জন্য।

নীরা নাম্নী মেয়েটি কি শুধু নারী ? মন বিঁধে থাকে
নীরার সারল্য কিংবা লঘুখুশী,
আঙুলের হঠাত লাবণ্য কিংবা
ভোর ভোর মুখ
আমি দেখি, দেখে দেখে দৃষ্টিভ্রম হয়

আবার এই নীরার হাত ধরেই ফুলের মতো নিঃশব্দে ফুটে ওঠে কবির ভয়গুলো। নীরাকে পাওয়া না-পাওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেকে খনন করেছেন তিনি। পরিস্কার দেওয়ালে লেগে থাকা একবিন্দু রক্তরঙ যেমন আতঙ্কের একশেষ হয় তেমনি কবি সুনীল আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করার উদগ্র বাসনায় নারীপুরুষের মিলন-বিরহরূপানুভূতির চরম পরাকাষ্ঠা বৈষ্ণব কবিগণকেও যেন হার মানিয়ে দেন। সেখানে দেখা যায় যে, কোনো আভরণের ব্যবধান অসহনীয় হয়ে ওঠে কিন্তু আমাদের কবির তো বাতাসের ব্যবধানও সহ্য হয় না! প্রেমের যে অনিশ্চয়তা, তারই ভয়ে কবি ভীত। তাই সেই ভায়ভাবনাই উঠে এসেছে কবির নিজস্ব আলাপে।

এত চেনা এত কাছে, তবু কেন এতটা সুদূর ?
নীরার রূপের গায়ে লেগে আছে যেন শিল্পচ্ছটা
ভয় হয়, চাপা দুঃখ হিম হয়ে আসে।

চোখের সম্মুখে তুমি দাঁড়ালেও স্বচ্ছ বাতাসের ব্যবধান
আমার এমনই রাগ, আমি সেই স্বচ্ছতাকে শত্রু বলে ভাবি!

আবার, -

ভালোবাসা শব্দটিতে ইদানীং প্রচুর মিশেছে জল
বস্তুত বন্যার স্রোতে ভেসে যায় ভালোবাসা
ঐ দ্যাখো, সকলেই দেখে
এরকম সার্বজনীনতা আমি পছন্দ করি না!
***
বিচ্ছেদ শব্দটি যেন নিজের শরীরের সাদা পুঁজ-ফোঁড়া...

কিংবা, -

নীরা, তুমি আমাকে ভুল বুঝলে কেন ?
কেন ঐ নবনীত হাতের পাঞ্জা সরিয়ে নিলে-
আমি নির্জন ঘরে বন্দী হয়ে রইলাম!
 
অথবা, -
 
আমাকে দিও না শাস্তি, নীরা, দাও বাল্য প্রেমিকার স্নেহ, সারাটা জীবন
আমি
অবাধ্য শিশুর মতো প্রশ্রয় ভিখারী!

কবির নিভৃত ভয়ের অমোঘ বর্ণনা উচ্চারিত হয় ত্যবদ্ধ অভিমানএর সেই বিস্ময়চরণে। যেখানে সুনীল তাঁর জীবনে কৃত সমস্ত পাপ, সমস্ত অপরাধ, তজ্জনিত ভয় গভীর সংগোপনে স্বীকার করেছেন অবলীলায়। ভালোবাসার কাছে। নীরার কাছে। নিজের কাছে। নীরাকে সামনে রেখে সুনীলবাবু তাঁর নিজস্ব জয়-পরাজয়, আনন্দ-গ্লানি, সৃষ্টি-সংহার নিবেদন করেছেন।

এই হাত ছুঁইয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি ?
***
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালোবাসি
এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যা কি মানায় ?

আবার, -

যে লেখে, সে আমি নয়
কেন যে আমায় দোষী করো!
আমি কি নেকড়ের মতো ক্রুদ্ধ হয়ে ছিঁড়েছি শৃঙ্খল ?
***
যে লেখে সে আমি নয়
যে লেখে সে আমি নয়
সে এখন নীরার সংশ্রবে আছে পাহাড় শিখরে
চৌকোশ বাক্যের সঙ্গে হাওয়াকেও
হারিয়ে দেয় দুরন্তপনায়
কাঙাল হতেও তার লজ্জা নেই
এত ধ্বংসের জন্য তার এত উন্মত্ততা
দূতাবাস কর্মীকেও খুন করতে ভয় পায় না
সে কখনো আমার মতোন বসে থাকে
টেবিলে মুখ গুঁজে ?


সুতরাং এতকিছু দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা, শোক-তাপ, কাতরতা, মান-অভিমান, দ্বেষ এসব কিছুই কবির নিজস্ব নির্মাণ। প্রতি স্বেদগ্রন্থি দিয়ে যাকে ভালোবাসা যায়, যাঁর প্রত্যেকটি মুহূর্ত আমার বলে অনুভূত হয় তা তো হয় অধিকারবোধ থেকেই। আর এই আমার অধিকৃত ভালোবাসায় অন্যের ছায়া তো কখনোই সহনীয় নয়! তাই সব চরিত্র কাল্পনিকের মধ্যে কবি আর এক কাল্পনিক চরিত্রের অবতারণা করলেন নিজের সেই অধিকারবোধকে উপলব্ধি করতে।
 
হিরন্ময়, তুমি নীরার মুখোমুখি দাঁড়িয়ো না,
আমি পছন্দ করি না
পাশে দাঁড়িয়ো না, আমি পছন্দ করি না
তুমি নীরার ছায়াকে আদর করো।

এভাবেই হয়তো একদিন কবি নীরাকে নিয়ে গেছেন স্বর্গরাজ্যে। রচনা করেছেন অরূপরাজ্য। নির্মাণ করেছেন রূপালি মানবী। স্বর্গসঙ্গিনী। আবার দেবী প্রতিমূর্তির রূপেও প্রতিষ্ঠা করেছেন নীরাকে।

যমুনা আমার হাত ধরো। স্বর্গে যাবো।
***
আয় খুকী, স্বর্গের বাগানে আজ ছুটোছুটি করি।

অথবা, -

মায়ের গোলাপ গাছে ঠিক একটি গোলাপের মতো ফুল
ফুটে আছে
চোখের মতোন চোখে দেখতে পাই ভোরবেলার মতো ভোরবেলা-

কিংবা, -

নীরা , তোমার মনে পড়ে না স্বর্গ নদীর পারের দৃশ্য ?
যূথীর মালা গলায় পরে বাতাস ওড়ে একলা একলা দুপুর বেলা

কখনো, -

এক বছর স্বপ্নহীন জেগে
বাহান্ন তীর্থের মতো তোমার ওশরীর ভ্রমণে
পুণ্যবান হব।

কোথাও-বা,
 
আশীর্বাদ দাও, মাথার উপরে রাখো হাত
***
কল্পনার আধার যিনি, তিনি দেবী-
তুই সেই নীরা
তোর কাছে আশীর্বাদ চাই

অতএব, কে নীরা আর কেই বা সুনীল! এমনটাই তো হওয়ার কথা। যে নীরা সেই তো সুনীল। সুনীলের অন্তঃস্থলই নীরার উত্সস্থল। সুনীল সাগরের অজস্র রত্ননিচয়ের মধ্যে এক অসামান্য রত্ন এই নীলপদ্ম। যেখানে লুকিয়ে আছে সুনীলের আনন্দ, বিষাদ, দস্যুতা, মধ্যরাত্রির চাওয়া পাওয়া, যাবতীয় আদিমতা, ভিজেপনা। জাগতিক কাজকর্মের ব্যস্ততায় যে নারীদের হারিয়ে ফেলি, যে নারীদের জীবন কখনো কন্যার মতো কন্যা হতে গিয়ে, বোনের মতো বোন হতে গিয়ে, কখনো স্ত্রীর মতো স্ত্রী হতে গিয়ে, কখনো মায়ের মতো মা হতে গিয়ে আবার অফিসে, দোকানে, পাড়ায় মেয়ের মতো মেয়ে হতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে নিজের থেকে সেই সমস্ত নারীদেরই আর এক পিঠ হলো নীরা। যেখানে নেই অহেতুক কামপিপাসার নির্যাতন। অশোভন আচরণের শরনিক্ষেপণ। সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতায় প্রত্যহ পিষ্ট হবার যমযাতনা। সেখানে সে নির্দ্বিধায় হাসতে পারে, আনন্দ করতে পারে, উচ্ছ্বল হতে পারে, নারীসুলভ ভাবভঙ্গিমায় পুরুষকে সিক্ত করতে পারে। আর পারে পুরুষের এক নির্ভরযোগ্য ফুল-পাখি-ঝর্ণা সাজিয়ে তুলতে। স্বর্গ রচনা করতে।  যেখানে পুরুষমন মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিতে পারে অনেক জীবন। অনেক অনেক জীবন। আর নারীকে দেখবে নীরার মতো। যাকে নিয়ে সুনীলপুরুষ স্বর্গের উদ্যানে ভ্রমণ করবে একশো আটটি নীলপদ্মের সঙ্গে। যেখানে, -

ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না
মৃত্যু হয় না-

যেখানে নীরার হাতের সুগন্ধ নেবে স্রষ্টাপুরুষ। যেখানে নীরার সহস্র রুমাল স্বর্গ থেকে স্বর্গের উদ্দেশ্যে ওড়ে। যেখানে, -

নীরার সহাস্য বুকে আঁচলের পাখিগলি
খেলা করে

যেখান থেকে নির্বাসন পেলে বলতে হবে  

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!

যেখানে সমস্ত নারী হয়ে উঠবে -  জল রং-আলো...
 
আর সুনীল যে পাহাড়টা কিনেছিল নিছক ঠকতে চেয়েই সেই পাহাড় থেকে দশদিকের উদ্দেশ্যে বলা যায় হে দশ দিক, আমি কোনো দোষ করিনি। আমাকে ক্ষমা করো। সেদিনও কবি তাঁর নীরাকে বলে যাবে, -
 
তুমি তো জানো না, নীরা,
আমার মৃত্যুর পরও এই ছবি থেকে যাবে।

২টি মন্তব্য: