তিনি
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
ঊনকোটি চৌষট্টি লক্ষ তম সৃষ্টির পর তিনি মুখ তুলে তাকাবার ফুরসৎ পেলেন। মেমোরি কার্ড ব্রাউস করে দেখতে চাইলেন তার আদিযুগের সৃষ্টি সমূহ। আর তা করতে গিয়েই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। হাপিশ, স্রেফ হাপিশ হয়ে গেছে পৃথিবী নামে একটা নীল গ্রহ। তাঁর যদ্দুর মনে পড়ছে ঐ গ্রহটাকে তিনি বেশ সময় নিয়ে সাজিয়েছিলেন । প্রথমে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন জল । প্রচণ্ড উত্তাপ কাটিয়ে বইয়ে দিয়েছিলেন এক সুশীতল আবহাওয়া ; ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলেন যখন সেই জলে প্রথম প্রাণ স্পন্দন দেখা দিল। তিনি আনন্দে শিশুর মত হাত তালি দিয়ে উঠেছিলেন । নিজ সৃষ্টির প্রেমে পড়ে গেছিলেন একপ্রকার বলা চলে। তিনি গালে হাত দিয়ে দেখেছিলেন কিভাবে সেই গ্রহটা ক্রমে সবুজ গয়নায় সেজে উঠলো সদ্য যুবতীর ব্রীড়ায়। তারপর সেই মানব শিশু দুটি , কি যেন নাম ছিল তাদের, যাক গে, তারা তাঁর বড় প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিল তাঁর । সেই শয়তান লুসিফারটাই যত নষ্টের গোঁড়া । এমন উস্কানি দিল যে, বাচ্চা দুটো জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেয়ে টেয়ে একাকার! ওদের জন্য আজও বুক টা বড্ড টাটায় । কিন্তু আজব ব্যাপার, সেই গ্রহটা গেল কই ? একবার ভাবলেন, নারদ কে ফোন লাগান । ও ব্যাটা সারাক্ষণ চরকিবাজি করে বেড়ায়, নিশ্চয় জানবে কিছু । কিন্তু তাঁর আবার ইগোতে লাগলো এ কথা চিন্তা করে, নিজের জিনিস খুঁজে পাচ্ছেন না, এ কথা বল্লে নারদ যদি আবার সেই কথা রাষ্ট্র করে বেড়ায়, সকলে ভাববে না তাঁর ভীমরতি ধরেছে ? লজ্জা, সে বড় লজ্জা। তাঁর কি সত্যি ই বয়স হয়ে গেছে ? হুম , চিন্তার বিষয় । আবার খুঁজতে লাগলেন । মাই ডকুমেন্ট , ই ফাইল , সমস্ত ফোল্ডার তন্ন তন্ন করে খুঁজে , এমন কি রিসাইকেল বিনটাও ঢুঁড়ে এসে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন । তারপর মাথায় একটা প্ল্যান এলো । তিনি স্বর্গের ডেইলিতে একটা হারানো-প্রাপ্তি কলামে বিজ্ঞাপন দিলেন । এক আলোকবর্ষ পর এক ভ্যাগাবন্ড তাঁর সাথে দেখা করতে এলো । সে জানালো যে বিজ্ঞাপনের বর্ণনা অনুযায়ী একটা গ্রহকে সে কয়েক আলোকবর্ষ আগে এক ন্যানোসেকেন্ডের জন্য দেখেছিলো । কিন্তু তার রঙ নীল নয় , ধূসর ছিল ,আর তাতে প্রাণ ছিল কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না। সেখানকার চতুর্দিক ঘন কালো বিষবাষ্পে এতোটাই অন্ধকার হয়ে ছিল যে , ও সেখানে ভালকরে কিছু দেখার চেষ্টাই করে নি । বরং পালিয়ে এসেছে নিরাপদ দূরত্বে । তাঁর ঠিক বিশ্বাস হোল না এই আধপাগল এজেন্টের কথা । অনেক ভেবে তিনি যাদুঘরে গেলেন নিরুপায় হয়ে ।সেখানকার নিযুততম ঘরে অবশেষে তিনি দেখলেন তাঁর সাধের পৃথিবীর প্রত্ন কঙ্কাল স্ফটিকের বাক্সে রাখা আছে ।সেটাকে আঁতিপাঁতি নিরীক্ষণ করতে লাগলেন তিনি ।কেটে গেল হাজার আলোকবর্ষ । কিউরেটর যদিও খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন , তথাপি তাকে কোন প্রশ্ন করতে সাহস পেল না ।এইভাবে অযুত আলোকবর্ষ পর তাঁর চোখে পড়লো এক মানব শিশুর অস্থিচিহ্ন লেগে আছে পারমাণবিক বিস্ফোরণে পুড়ে ঝামা হয়ে যাওয়া একটা প্রস্থর খণ্ডের গায়ে । ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্তোফিলিস – ইয়াক ইয়াক ... । এখান থেকেই ডি-এন-এ নিয়ে তিনি আবার গড়ে তুলবেন তাঁর সাধের হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীর রেপ্লিকা । আর এইবার খুব চোখে চোখে রাখবেন , যাতে এর অধিবাসী ব্যাটারা বেশি বেয়াদবি করে আত্মহত্যা না করতে পারে । তিনি আসলেই খুব খারাপ বাপ ছিলেন ।নিজের নিত্য নতুন সৃষ্টি নিয়ে এতটাই মশগুল ছিলেন যে ঠিকমত নজরদারি করতে পারেন নি তার পুরোনো সৃষ্টিগুলিকে । আর অবশ্যই অতিরিক্ত আদর দিয়ে বাঁদর করেছিলেন সন্তানদের । কিন্তু ঐ যে কথায় বলে না , ‘স্পেয়ার দ রড , স্পয়েল দ চাইল্ড’ ? এটাই বেদবাক্য । হুম ...
ঊনকোটি চৌষট্টি লক্ষ তম সৃষ্টির পর তিনি মুখ তুলে তাকাবার ফুরসৎ পেলেন। মেমোরি কার্ড ব্রাউস করে দেখতে চাইলেন তার আদিযুগের সৃষ্টি সমূহ। আর তা করতে গিয়েই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। হাপিশ, স্রেফ হাপিশ হয়ে গেছে পৃথিবী নামে একটা নীল গ্রহ। তাঁর যদ্দুর মনে পড়ছে ঐ গ্রহটাকে তিনি বেশ সময় নিয়ে সাজিয়েছিলেন । প্রথমে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন জল । প্রচণ্ড উত্তাপ কাটিয়ে বইয়ে দিয়েছিলেন এক সুশীতল আবহাওয়া ; ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলেন যখন সেই জলে প্রথম প্রাণ স্পন্দন দেখা দিল। তিনি আনন্দে শিশুর মত হাত তালি দিয়ে উঠেছিলেন । নিজ সৃষ্টির প্রেমে পড়ে গেছিলেন একপ্রকার বলা চলে। তিনি গালে হাত দিয়ে দেখেছিলেন কিভাবে সেই গ্রহটা ক্রমে সবুজ গয়নায় সেজে উঠলো সদ্য যুবতীর ব্রীড়ায়। তারপর সেই মানব শিশু দুটি , কি যেন নাম ছিল তাদের, যাক গে, তারা তাঁর বড় প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিল তাঁর । সেই শয়তান লুসিফারটাই যত নষ্টের গোঁড়া । এমন উস্কানি দিল যে, বাচ্চা দুটো জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেয়ে টেয়ে একাকার! ওদের জন্য আজও বুক টা বড্ড টাটায় । কিন্তু আজব ব্যাপার, সেই গ্রহটা গেল কই ? একবার ভাবলেন, নারদ কে ফোন লাগান । ও ব্যাটা সারাক্ষণ চরকিবাজি করে বেড়ায়, নিশ্চয় জানবে কিছু । কিন্তু তাঁর আবার ইগোতে লাগলো এ কথা চিন্তা করে, নিজের জিনিস খুঁজে পাচ্ছেন না, এ কথা বল্লে নারদ যদি আবার সেই কথা রাষ্ট্র করে বেড়ায়, সকলে ভাববে না তাঁর ভীমরতি ধরেছে ? লজ্জা, সে বড় লজ্জা। তাঁর কি সত্যি ই বয়স হয়ে গেছে ? হুম , চিন্তার বিষয় । আবার খুঁজতে লাগলেন । মাই ডকুমেন্ট , ই ফাইল , সমস্ত ফোল্ডার তন্ন তন্ন করে খুঁজে , এমন কি রিসাইকেল বিনটাও ঢুঁড়ে এসে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন । তারপর মাথায় একটা প্ল্যান এলো । তিনি স্বর্গের ডেইলিতে একটা হারানো-প্রাপ্তি কলামে বিজ্ঞাপন দিলেন । এক আলোকবর্ষ পর এক ভ্যাগাবন্ড তাঁর সাথে দেখা করতে এলো । সে জানালো যে বিজ্ঞাপনের বর্ণনা অনুযায়ী একটা গ্রহকে সে কয়েক আলোকবর্ষ আগে এক ন্যানোসেকেন্ডের জন্য দেখেছিলো । কিন্তু তার রঙ নীল নয় , ধূসর ছিল ,আর তাতে প্রাণ ছিল কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না। সেখানকার চতুর্দিক ঘন কালো বিষবাষ্পে এতোটাই অন্ধকার হয়ে ছিল যে , ও সেখানে ভালকরে কিছু দেখার চেষ্টাই করে নি । বরং পালিয়ে এসেছে নিরাপদ দূরত্বে । তাঁর ঠিক বিশ্বাস হোল না এই আধপাগল এজেন্টের কথা । অনেক ভেবে তিনি যাদুঘরে গেলেন নিরুপায় হয়ে ।সেখানকার নিযুততম ঘরে অবশেষে তিনি দেখলেন তাঁর সাধের পৃথিবীর প্রত্ন কঙ্কাল স্ফটিকের বাক্সে রাখা আছে ।সেটাকে আঁতিপাঁতি নিরীক্ষণ করতে লাগলেন তিনি ।কেটে গেল হাজার আলোকবর্ষ । কিউরেটর যদিও খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন , তথাপি তাকে কোন প্রশ্ন করতে সাহস পেল না ।এইভাবে অযুত আলোকবর্ষ পর তাঁর চোখে পড়লো এক মানব শিশুর অস্থিচিহ্ন লেগে আছে পারমাণবিক বিস্ফোরণে পুড়ে ঝামা হয়ে যাওয়া একটা প্রস্থর খণ্ডের গায়ে । ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্তোফিলিস – ইয়াক ইয়াক ... । এখান থেকেই ডি-এন-এ নিয়ে তিনি আবার গড়ে তুলবেন তাঁর সাধের হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীর রেপ্লিকা । আর এইবার খুব চোখে চোখে রাখবেন , যাতে এর অধিবাসী ব্যাটারা বেশি বেয়াদবি করে আত্মহত্যা না করতে পারে । তিনি আসলেই খুব খারাপ বাপ ছিলেন ।নিজের নিত্য নতুন সৃষ্টি নিয়ে এতটাই মশগুল ছিলেন যে ঠিকমত নজরদারি করতে পারেন নি তার পুরোনো সৃষ্টিগুলিকে । আর অবশ্যই অতিরিক্ত আদর দিয়ে বাঁদর করেছিলেন সন্তানদের । কিন্তু ঐ যে কথায় বলে না , ‘স্পেয়ার দ রড , স্পয়েল দ চাইল্ড’ ? এটাই বেদবাক্য । হুম ...
বাহ !! সুন্দর ...
উত্তরমুছুন