শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

মলয় রায়চৌধুরীর অপ্রকাশিত ডাইরি

খামচানো কালপৃষ্ঠা
উজবুকের আছাড়
মলয় রায়চৌধুরী

রেড লাইট এলাকা কেমন হয় তা জানার ইচ্ছা থাকলেও, অনেকর পক্ষে, বিশেষ করে মহিলাদের, সেই এলাকাটি দেখার সুযোগ হয় না । নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম শহরে সেই অনুসন্ধিৎসা মেটাবার ব্যবস্হা ওই এলাকারই বাসিন্দারা করে দিয়েছেন । সে-উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে সংস্হাটি যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর নাম মারিসকা মাজুর, একদা এই এলাকারই যুবতী । পর্যটকেরা যাতে গাইডের সঙ্গে এলাকাটি ঘুরে-বেড়িয়ে দেখতে পারেন, যৎসামান্য ইউরোর বিনিময়ে, ডাচ-সরকার অনুমোদিত তেমন ভ্রমণবিলাস গড়ে উঠেছে ওই শহরের সুশোভিত অঞ্চলে । রেড লাইট এরিয়া শুনলেই যে নোংরা ঘিঞ্জি কুৎসিত ভয়াবহ ছবি ভেসে ওঠে ভারতীয়দের মনে, ওই অঞ্চলটি তেমন নয় । অঞ্চলটির অনুমোদন করেছিলেন নেপোলিয়ান, ফরাসি সৈনিকদের রাত কাটাবার জন্য । সেই সময় থেকেই এলাকাটি জুড়ে খুদে-খুদে ঘরের উদ্ভব । সুশোভিত হলেও ঘরগুলোর অধিকাংশ নারীর গল্প নিশ্চয়ই ভয়ংকর, কেননা পূর্ব ইউরোপ-এশিয়া-আফ্রিকা থেকে তাদের ফুসলিয়ে বা উপড়েআনা হয়েছে । ঘরগুলো কেমনভাবে সাজানো তা জানার জন্য মারিসকা মাজুরের দপ্তর-সংলগ্ন একটি ঘর আছে, পর্যটকদের আগ্রহ মেটাবার জন্য ।



অ্যামস্টারডাম শহরের মাঝখানে পুরানো চার্চের কাছে বেশ কয়েকটি মনোরম খালে ঘেরা এই অঞ্চলটির নাম দ্য য়ালেঁ । নৌকোয় চেপে সারাদিন ঘুরে-ঘুরে শহরটাকে দেখা যায় । নেমে ভ্যান গঘ মিউজিয়াম বা রাইস মিউজিয়ামে রেঁমব্রাঁর বিখ্যাত 'নাইট ওয়াচ' বা অ্যানি ফ্র্যাংক যে ঘরে লুকিয়ে ডায়েরি লিখেছিলেন তা দেখতে যাওয়া যায় । যৌনতা সম্পর্কিত সবই আছে দ্য য়ালেঁ পাড়ায় । যৌনতার মিউজিয়াম, মিথুনরঙ্গের নাটক, যৌনতার উঁকি শো, মিথুনকর্মের ডিভিডি, যৌনসুখের ও যাতনার যাবতীয় জিনিসপত্র, এমনকী চাবুক-হাতকড়া-চেস্টিটি বেল্ট ইত্যাদি । আর আছে কফি শপ, যেখানে বসে গাঁজা ফোঁকা যায়, হরেক রকম গাঁজা । গাঁজাপাতারও মিউজিয়াম আছে ; এত রকমের যে গাঁজা হয় তা জানতুম না । যাঁরা র‍্যাঁবো পড়ে আবসাঁথ চেখে দেখতে চান তাঁদের জন্যআছে হালকা বা কড়া নানা নেশার সবুজ আবসাঁথ ।



খালপাড়ের রাস্তার ধারের ঘরগুলোয় সন্ধ্যা থেকে কাচের বিশাল শোকেসের অপরদিকে সেজে গুজে লাল আলো জ্বালিয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন প্রায় নগ্ন যুবতীরা । গাইড বলেছিলেন, বেশিরভাগ যুবতীকে তাদের প্রেমিকরা ফুসলিয়ে এনে মাফিয়াদের বেচে দিয়েছে । সমকামীদের আশ মেটাতে যুবকরাও আছেন এই বাজারে ; তাদের ঘরে জ্বলে নীলাভ আলো। যৌনসেবার সময়, আঙ্গিক ও দরদাম নির্ধারিত। কোনো-কোনো জানলায় অবশ্য আঙ্গিক-আদেখলা দরদস্তুরকারীদেরও দেখা মেলে । এলাকার বা কোনো জানালার ফোটো তোলা নিষেধ ; ফোটো তোলার চেষ্টা করলেই রক্ষীরা ক্যামেরা কেড়ে ফেলে দেবে খালের ঝিলিমিলি জলে, সাঁতার কাটতে-থাকা রাজহাঁসেদের মাঝে । সিসিটিভি লাগানো আছে লক্ষ্য রাখার জন্য । সন্ধ্যাবেলায় দর্শনার্থী পর্যটকদের ভিড়ই বেশি । যারা সেবা কিনতে আসে তারা একটু রাত হলে দেখা দেয় । ফল কেনার আগে যেন পুরো বাজারটা দেখে নিচ্ছে একবার, কার কাছে আপেল ভালো, কার কাছে তরমুজ ভালো, কার কাছে কমলালেবু !



আমাদের দলের সামনেই ওপরে তাকাতে-তাকাতে এক মধ্যবয়সী লোক পড়ল, প্রায় মুখ থুবড়ে বলা চলে । আমাদের গাইড তাকে টেনে তুলে পথের ওপর পাতা একটা ব্রোঞ্জ রিলিফের দিকে নির্দেশ করলেন । দেখলুম সেটা একটা ভাস্কর্য । নারীর স্তনের কাছে স্পর্শসুখের উদ্দেশ্যে এগোনো হাত । গাইড বললেন, রিলিফটির ভাস্কর এটা লুকিয়ে বসিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে বিপথগামীরা হোঁচট খেয়ে আছড়ে পড়ে ; সম্প্রতি জানা গেছে তাঁর নাম রব হজসন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন