অমিতাভ প্রহরাজ
হ্যালো রাজনীতি
"একটা বিস্তীর্ন ভ্রান্ত ধারনা রাজ করছে এ সময়। সেটা হলো রাজনীতি আর রাজনৈতিক ঘটনাকে একই বস্তু ধরে নেওয়া। রাজনৈতিক ঘটনার কবিতাসাহিত্যে প্রভাব আমার কাছে সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক। শুধু রাজনৈতিক কেন, যেকোন ঘটনার প্রভাব যদি কবিতায় থাকে, তবে তা কবিতা থাকেনা, অন্য মাধ্যম হয়ে যায়। সাহিত্যের মধ্যে ঘটনাবহনকারী হিসেবে কবিতা বা কাব্যবান কাব্যিবতীরা একেবারেই আনফিট। তার জন্য চওড়া জুলপিওয়ালা উপন্যাস, বা সরু গোঁফের গল্প বা ধুতি পাঞ্জাবী পরা প্রবন্ধ রয়েছে..."
হ্যালো রাজনীতি, মেসেজ পেয়েছি
দারুন শব্দের মধ্যে আধখানা দারুচিনি গাছ। তা সে গাছটি আড়াআড়ি কাটা না লম্বালম্বি দু ফাঁক, এরকম কোন দ্বন্দ্ব আসেনা, ধন্ধও থাকেনা। না আমাদের অনেক অনেক কিছু শেখায়, সেইভেবে গত দুটি না-কে দেখি। সত্যিতো, এই যে দ্বন্দ্ব আসেনা, ধন্ধ থাকেনা, এই দুটি না কেমন অম্লানবদনে একটি পরম আমাদের সামনে ফেলে যায়, যেন ওবেলার রুটি, শক্ত হয়ে গেছে তাকে ফ্লায়িং ডিস্ক এর মতো ছুঁড়ে দিল। আমিও যেন শীতের সকালে উঠোনে চেয়ার, চেয়ারে বসানো কোন গম্ভীর বাবা, সেভাবে তাকাই বাক্যটির দিকে, বাবাদের হাসি অর্থহীন হয়, সেইভাবে হাসি। "দারুন শব্দের মধ্যে আধখানা দারুচিনি গাছ" যেন মল্লিকদা, সকালে দুধ নিতে বেরিয়েছে, মাফলারে মলাট দেওয়া মুখ, শীতের সকালে গম্ভীর বাবাদের দিকে "কি মাস্টামশায়?" "ওই চলছে"। ব্যাস বেরিয়ে চলে যান। হঠাত খেয়াল হয়, আরে মল্লিকমশায়ের মাফলার মলাট, হনু টুপি, তসরের শাল সবকিছু আছে, নীচে চেক কাটা লুঙ্গিটি মায় আছে কোমরের গিঁট সমেত, কিন্তু ভেতরে তো কোন মাল ছিল না!! Rewind করে দেখি, হ্যাঁ এই মুখ ঘোরালেন কিন্তু কই, মুখ কই, এতো বেবাক ফাঁকা, মায় উল্টোদিকের বাবুনদের কোয়ার্টার দেখা যাচ্ছে। ব্যাস, শীতের সকালে রাশভারি বাবাকে নিমেষে বানানো হলো সন্ধ্যের মিলুদি, যে কিনা উঠোনে পেঁপে গাছ নড়ে ওঠে দেখলেই হেঁচকি তুলে ফিট হয়। তাহলে কি মল্লিকমশায় মানে চন্দ্রবিন্দু কেস?? দারুন শব্দের মধ্যে আছে আধখানা দারুচিনি গাছ, এখানে ছবি কই?? একটা জলজ্যান্ত মস্তো গাছ, তবু কিনা সামান্য দৃশ্যটুকুও নেই!! সকালের করিতকর্মা ভাই বিকেল, সেখানেও বাক্যটি ফিট করে দেখি কোন ছবি আসেনাতো। বরং বাক্যটা থেকে টাটকা পায়েসের গন্ধ ভেসে আসে।
ছোটবেলায় জানতাম পৃথিবীর সকলেই কোয়ার্টারে থাকে, পৃথিবীর সকলেই প্ল্যান্টে যায়। পৃথিবীর সর্বত্র অফিসার র্যাংকের মানুষ থাকে যারা থাকে বাংলোতে এবং যাদের বাংলোগুলির দিকে তাকিয়ে তলপেটে কিরকম দমবন্ধ লাগে, ফের সাইকেলের প্যাডেলে পড়ে চাপ, ফিরে আসি মাঠে। পৃথিবীর সবারই শিফটিং ডিউটি... এবং পৃথিবীর সবার ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ছোট্ট অবান্তর টুকু আনা একটিই কারনে। সেটা হচ্ছে, আমরা অর্থাৎ এইসব সুখসচ্ছ্বল ইস্পাত শহরের কলোনিতে জন্মানো বাসিন্দারা, পৃথিবী চিনতে কম নাকাল হইনি। কারন আজন্ম আমরা ছিলাম এক অদ্ভুত মডেল পরিবেশে। সবকিছু ঝুলনের মতো সাজানো গোছানো। রাস্তায় রোটারি। স্ট্রিট বা এভিনিউতে একইরকমের বাড়ি। নানান কাকু জেঠু, ডাক্তারজেঠু, তপনকাকু, শিকদার স্যার, কূহুদিদির মা, গৌরীপিসী। সবার বাড়ি একরকম না হলেও হিন্দিতে যাকে বলে বাতাবরন, সেই বাতাবরন একই। সবারই হয়তো রাজদূত, নয়তো বুলেট, নয়তো হীরো হোন্ডা। সুখী পরিবার। সবাই "লেবার ক্লাশের" সঙ্গে খুব বেশী মেলামেশা নয় এবং "অফিসার"দের ব্যাপার আলাদা। আসলে একটা মডেল পৃথিবীতে আমরা ছিলাম যেখানে symmetry একচ্ছত্র অধিপতি। সেই সিমেট্রির ধুনকি থেকে অসমান পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার পর আমরা জানপ্রান দিয়ে একটাই কাজ করেছি প্রথম কয়েক বছর সেটা হলো আকূল হয়ে সিমেট্রি খোঁজা। যতদিনে বুঝেছি যে আমরাই একটা অদ্ভুত পৃথিবী থেকে এসেছি, বাইরের পৃথিবীটা অদ্ভুত নয়, ততদিনে সারভাইভ করার মতো আঁশ, কানকো, ফুলকা ইত্যাদি গজিয়ে গিয়ে একেকজন একেকটা নিজস্ব মডেল করে নিয়েছি। উত্তরপাড়ার কাকু, শ্যামবাজারের বৌ এইসব দিব্যি থাকলেও আমার যে বেসিক কোন শিকড় বা কালচার বা ঐতিহ্য নেই তা ঘোরতরো মালুম হয়। এই জন্ম এবং এই রকম মেটামরফোসিসের ঘটনা হুবহু শূন্য দশকের কবিতায়। শূন্য দশকের কবিতার ছোটবেলা স্বপ্নের মতো, অপূর্ব তার পরিবেশ (আহা, মনে পড়ে এইরকম শীতের বিকেলগুলিতে খেলার সরঞ্জাম নিয়ে আমরা আর কোন এক কোটিমাঠপতি হেলায় এদিকে সেদিকে বিভিন্ন মাঠ ফেলে ছড়িয়ে গেছেন আমাদের জন্য, আহা দুর্গাপুর)। কোন কোটেশান তোলার জন্য আমি এখানে আসিনি। আমার লক্ষ্য কয়েকটা বিষয়ের তলায় সঠিক ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্কসের দাগটা বসানো। শূন্য দশকের কবিতা উদবাস্তু কবিতা। প্রথম কবছর সিমেট্রির পৃথিবীতে জমিদারি করার পর যখন আছড়ে পড়লো বাইরের পৃথিবীতে, প্রথমেই ভাঙলো তার মাথার মধ্যেকার মডেল কবিতাটি। যেটি অপ্রতিমা হয়ে বিরাজমান ছিল।
#
মগ্ন আর মুগ্ধ র মধ্যে একটা সুচতুর পার্থক্য রয়েছে। সুচতুর পার্থক্য? হ্যাঁ... পার্থক্য-দার সঙ্গে মানুষের তিনবার আলাপ হয় জীবনে। এই পার্থক্যদা হলো মানুষের আদিম গডফাদার, অপূর্ব লাভ-হেট রিলেশান যার সাথে, কয়েক কেজি মাংস, রক্ত ও হাড়গোড়ের সঙ্গে মানুষ যাকে পিঠে নিয়ে ঘোরে। প্রথমবার আলাপ হওয়ার সময় বোঝাই যায়না আলাপ হয়েছে। পরে কোন একটা সময় হাঁটতে, হাঁটতে আচমকা মুখ ঘোরালে বোঝা যায় পাশে একজন ব্লু জীনস আর সাদা হাফশার্ট পরা লোক হাঁটছে, খুব একটা বিরাট কিছু চমকানো নামেনা তখন। কারন লোকটিকে দেখামাত্র, তক্ষুনি না হলেও সামান্য পরে আবছা আবছা ভাবে মনে পড়ে হ্যাঁ সত্যিই তো, বেশ খানিকক্ষন আগে থেকে, ওই জলট্যাঙ্কির পাশ দিয়ে শর্টকাট করার সময় থেকেই একজন পাশে পাশে হাঁটছিল, খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয়নি। এখন দেখে একটু আধটু কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে। “হাই”
-“হাই, আমার নাম পার্থক্য, পার্থক্য সেন”
-“আমি অমিতাভ্, অমিতাভ্ প্রহরাজ”
-“জানি”
-“জানেন!! Strange, কি করে জানলেন?”
-“আপনি নিজেই বলেছেন, খেয়াল নেই, গুনগুন করে গান গাইছিলেন “ওহে অমিতাভ্ প্রহরাজ/কি নিয়ে ভাবছো আজ/দেখো কত আছে কাজ/ তুমি বড় ফাঁকিবাজ/ ওহে ওহে ওহে ওহে”... ওই শুনে আন্দাজ করেছিলাম”
-“এ বাবা ছি ছি ছি... sorry... sorry… এমনি গাইছিলাম... ইস... এবাবা”
-“sorry বলছেন কেন, আমার তো ভালোই লাগছিল... ফাঁকা রাস্তায়...”
- “কোথায় যাচ্ছেন?”
-“ঠিক করিনি, আপনার সাথেই হাঁটছি...”
-“বাঃ... তুমুল... এটা গ্রেট ব্যাপার, ঠিকঠাক না করে হাঁটা... আমার খুব পছন্দের জিনিস”
-“জানি, সেজন্যইতো করছি”
-“এটাও জানেন!! ভারি ভালো লোক তো আপনি, চলুন, আমার ঘরে যাবেন? আড্ডা দেওয়া যাবে”
-“চলুন”
এইভাবেই পার্থক্যদা ঢোকে জীবনে। বোঝাই যায়না কি করতে এসেছে, কেন, কোথায়, কেমন। একটা নতুন মাইডীয়ার বন্ধু, যে আমাকে অনেকটা বোঝে। যার সাথে কথা বলতে, সময় কাটাতে ভালো লাগে। যার ব্লু জীনস সাদা হাফশার্ট ব্যাপক পছন্দ হয়, নিজের আলনায় শুধু নানান শেডের ব্লু জীনস আর সাদা বা সাদাটে ধরনের নানান কাটিং এর হাফশার্ট ঝোলে। ধীরে ধীরে দেখা যায় পার্থক্য সেন অনেকেরই প্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্লাবে বঙ্কু পচা বলে “শালা পার্থক্যদা না এলে সন্ধ্যেগুলো ইসবগুলের মতো লাগে মাইরি। কি রে অমিতাভ্ পার্থক্যদা কি শরীর খারাপ নাকি রে?”। মহল্লার প্রতিটি বন্ধু পার্থক্যদা বলতে অজ্ঞান। এবং এখানেই ফোঁটা, ফোঁটা, জলের মতো জমা হয় কুটুস। কুটুস হচ্ছে এক নতুন অনুভূতি, পার্থক্যদার সাথে আলাপের পর যেটা জীবনে এসেছে। যদিও সব জায়গায় পার্থক্যদা বলতে লোকে অমিতাভ্ এর বন্ধু বলেই চেনে, এছাড়া আর কোন পরিচয় জানা যায়না তার। তবু পার্থক্যদার ছায়া আস্তে আস্তে অগাধ হয়ে ওঠে আর অমিতাভ্ ছায়ার প্রেশারে তুবড়ে যায়। প্রতীবন্ধী সার্টিফিকেট নিয়ে হাঁটে, বাসে তা দেখিয়ে সীট পায় এবং একদিন জ্বর হয়। জ্বরের সময় ঘটে দ্বিতীয় আলাপটি। অমিতাভ্ দেখে পার্থক্যদা “খুব চিন্তার কথা, খুব চিন্তার কথা” ব’লে ক্লাবে বেরিয়ে যায় মনোরঞ্জন খেলতে। আর অমিতাভ্ জানলার ফাঁক দিয়ে দেখে পাশের বাড়ির বিল্টু, তারও জ্বর, তার পার্থক্যদা পাশে বসে জলপটি দিচ্ছে। তখন কোন কোন অমিতাভ্ বিল্টুর পার্থক্যদার সঙ্গে লুকিয়ে আলাপ করে, আর কোন কোন অমিতাভ্ বিল্টুর পার্থক্যদা আর তার পার্থক্যদার মধ্যে আরেকজন পার্থক্যদাকে দেখতে পায় তার সাথে আলাপ করে। প্রথম অমিতাভ্গুলো বিল্টুর পার্থক্যদার সঙ্গে নলবনে সময় কাটাতে গিয়ে পুলিশ রেডে ধরা পড়ে যায়। দ্বিতীয় অমিতাভ্গুলো নতুন পার্থক্যদাকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে, বোরখা পরিয়ে হাঁটে, তার সঙ্গে সংসার করে। এই পার্থক্যদাকে দিয়ে ফাইফরমাশ খাটায়, কুকুর ছাগলের মতো ব্যবহার করে। এবং এই সমস্ত কাজ নিপুন ভাবে করার জন্য আড়ালবিদ্যা শেখে। এইভাবে বহুদিন ঘরবাড়ি করার পর একদিন বাজার করে ফেরার পর দেখে হাল্কা ব্যাগ নিতে পার্থক্যদা দুহাত কাজে লাগাচ্ছে। অমিতাভ্ খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে দেখে পার্থক্যদার দুহাতেরই বুড়ো আঙুল নেই, গ্রিপ করতে অসুবিধে। অমিতাভ্ নিজের বুড়ো আঙুল দেখে, সুন্দর কচি ছেলের মতো নড়াচড়া করছে। তখনই হয় তৃতীয় আলাপ, অমিতাভ ও পার্থক্যদার মধ্যে যে পার্থক্যদা তার সাথে। অবাক হয়ে দেখে তৃতীয় পার্থক্যদা হুবহু তার মতো দেখতে, কিন্তু সে স্বাধীন, তার নিজের ইচ্ছে আছে, মর্জি আছে, ব্যক্তিত্ব আছে। এতদিন পার্থক্যদা তে মগ্ন থাকার পর অমিতাভ্ মগ্ন থেকে মুগ্ধ হয়। আর কোন কোন দিন, যেহেতু একই রকম দেখতে, অমিতাভ্ পার্থক্যদার যায়গায় আসে আর পার্থক্যদা অমিতাভ্-এর জায়গায়। ভারী মজা হয়... পার্থক্যদার চোখ প’রে সে শহর দেখে, পার্থক্যদার হাত প’রে সে সই করে। আড়ালবিদ্যার কোর্স শেষ হয়ে গেছে ব’লে প্রকাশবিদ্যার ক্লাসে ভর্ত্তি হয়। লোকে বলে ওর পার্থক্যবাজি করবার কেতাই আলাদা, মেয়েরা বলে অমিতাভ্দার পার্থক্য ইজ সো হট!! সত্যি পার্থক্যদাকে ওর আর প্রয়োজন হয়না। সারাদিন হাঁটুগেড়ে কাজ করতে হয় বলে অমিতাভ্ এর পা জমে যায়, এগোতে পারেনা, বড্ড বিরক্ত হয়, তখন ওই সত্যি পার্থক্যদাকে লাথি মেরে পা টা ছাড়িয়ে শুয়ে পড়ে ওকেই বলে পা টিপে দিতে... একটা মোটা ঘুম আর প্যাঁকাটি হাসি নড়াচড়া করতে ভাবে, ওঃ এই তো শিখর। পার্থক্যদা ‘ওর’ পা টিপে দিচ্ছে!!! আহা এই তো শিখর...
শূন্য দশকের এভারেজ কবিতা, sorry এই মুহূর্তে আমি কবিতার কোন separate existence এ বিশ্বাস করিনা, শূন্য দশকের এভারেজ লেখা এই জীবনটাই কাটিয়েছে। পার্থক্যদাকে দিয়ে পা টিপিয়ে, জল আনিয়ে, বাসন মাজিয়ে, মশারি টাঙিয়ে, তার ওপর দুবেলা নিজের এঁটো খেতে দিয়ে মাটিতে ঘুমোতে দিয়েছে। এই অমিতাভ্গুলো সরলরেখার সাথে প্রেম করতে করতেও করতে পারেনি। একে উদ্বাস্তু, তার একটা হীনমন্যতা অতি গোপনে কাজ করে। সেখানে পার্থক্যদার মতো একটা লোক তার “অধীন”, এই অধীনসুখ মনোরম ভাবে মন টিপে দেয় রোজ। কখনো পার্থক্যদা সেজে ক্লাবে গেলে, “গুরু, গুরু” শোনে। বাড়িতে থাকা পার্থক্যদাকে লাথি মারলেও কাইকাই করেনা, তাই সলমনের মতো তাকে মেরে, মুখ ফাটিয়ে কলার তুলে ডায়লগ মারার আরাম পায়, আরো কতো। শূন্য দশকের কবিতা basically বিহারের জোতদার দের মতো জীবন কাটিয়েছে, আরাম হি আরাম পেয়েছে আলোতে বা অন্ধকারে, বাথটাবে চান করে অডিকোলন মেখে স্বতন্ত্র নামে একটা রাঁড়ের দখলের জন্য খুনোখুনি করেছে... মোদ্দা কথা শূন্য দশকের লেখা আস্তে আস্তে বড়লোক কবিতা, গদিতে বসা লেখার উলটো দিকে নিজের গদি, নিজের বাংলো বানানোর ভঙ্গিমার সাথে খাটভাঙার নেশা করেছে। ব্রিলিয়ান্ট সময়টা সবাইকে দুরন্ত স্টাইলিশ ক্যাম্বিসের তৈরী সমস্যা কিনে দিয়েছে। নিতান্তই দরকার তাই মাঝে মাঝে ঝুলনের সৈনিকের মতো ঝুলনের ক্রাইসিস, ঝুলনের বিপদ কিনে দিয়েছে। ডেন্ডরাইট দিয়ে গাছের পাতা টাকে শক্ত করে আটকে দিয়েছে ডালে, দু পাশে দুটো কঞ্চির সাপোর্ট দিয়েছে, তারপর জল ফেলে, “জল পড়ে/পাতা নড়ে না” লিখে সম্মানীয় বিশ্লেষন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে... কাকই প্রথম টের পায় লেখাতে ঘা হলে... কাকের ডাক বদলে গেছে, কা কা র বদলে কিহো কিহো ডাকছে, মানে ওর তোতলা ডায়লেক্টে “কি হবে”...
কেউ শেষ হবেনা, নষ্ট হবেনা। শুধু লেখা বা কবিতা নামক কাজটির মানে এবং ধারনা বদলে যাবে পুরো!!! ঠিক যেরকম "রাজনীতি" র সাথে হয়েছে... পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কনসেপ্টগুলোর মধ্যে একটা হলো "politics" যাকে a master mix of art & science with a highly skillful implementation বলে ধরা হয়. এবং that used to be a 'unique' and 'creative' activity, creating good life and just society!! ( "politics is the most important form of human activity because it involves interaction amongst free and equal citizens. It thus gives meaning to life and affirms the uniqueness of each individual."- Hannah Ardent)। ঠিক লেখার মতোই রাজনীতির জন্য দরকার ছিল উচ্চস্তরের মেধা এবং অনুভবের সমন্বয়, যুক্তির ওপর চূড়ান্ত দখল, এবং সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ন, ভবিষ্যৎকে দেখার ও বিশ্লেষনের ক্ষমতা, সময়ের থেকে এগিয়ে ভাবনাচিন্তা করার পারদর্শিতা (একজন creative মানুষের গুণাবলির থেকে খুব তফাৎ হচ্ছে কি? আরো মজার কথা, এতেও পুঁথিগত বিদ্যার থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হতো)।
কিন্তু এখন? রাজনীতি, এই activityটির ধারনা ও perception এখন দাঁড়িয়েছে একটা ঘৃন্য, ন্যাক্কারজনক অভ্যেস বা কাজ যেটা বেসিক্যালি খারাপ এবং চালাক লোকেরা করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য, একটা permanent negative aura জড়িয়ে আছে এর সাথে মজ্জায়। সংজ্ঞা থেকে শুরু করে মায় basic concept টিও বদলে গেল। যা ছিল একটা creative activity তা হয়ে গেল একটা permissible crime!!! অফিসে ভয়ঙ্কর politics, শ্বাশুড়ি-ননদের politics!! Creativity র চিহ্নটিও হাওয়া। "রাজনীতি করে কিন্তু ভালো লোক", এতদুর অবধি মেনে নিতে রাজি, তাও as an exception। কিন্তু রাজনীতি করে আর creative genius, একটিও উদাহরন নেই, এটাকে accept করতেই রীতিমতো অসুবিধে। রাজনৈতিক intellectual দের আমরা বড়োজোর ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করাতে পারি, কিন্তু টপার? চাপ আছে। এবং এই আপাদমস্তক চরিত্রবদল, "আমি নিজেও জানিনা গো তোমার কাছে এসে আমি কি করে বদলে গেলাম প্রিয়া, তুমি আমাকে এক অন্য মানুষ করে দিলে"- এই টাইপের ইতিহাসের রোমান্টিক ন্যাকামো ভাবলে খুব ভুল হবে। এবং এটি কোন কাফকা-প্রোডাকশান ও নয়। এটি আসলে সভ্যতা নামক ভদ্রলোকটির ১০০% উদ্দেশ্যপ্রনোদিত এক সুপরিকল্পিত কৌশল। যেটা ছিল একটা specialized subject সেটা হয়ে গেল যেকোন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব এমন activity। বলা যায় সময়ের সাথে বাড়লো (বাড়ানো হলো?) আরো আরো মানুষের participation।. যার জন্য একটা বিশেষ শিক্ষা, grooming, skill, experience এর প্রয়োজন ছিল, ধীরে ধীরে তা হয়ে গেল সাধারন মানুষের নাগালে। প্রথমেই উড়িয়ে দেওয়া হলো/বিলুপ্ত হলো specific মাপকাঠি বা standard । যা ছিল মার্কশিট সেটা হলো গ্রেডেশান এবং ফাইন্যালি শুধু সার্টিফিকেট। বিলুপ্ত হলো qualification এর প্রয়োজনীয়তা। "লেখা"/"কবিতা"র ক্ষেত্রেও জার্নি টা একই ভাবে চলছে। গত তিরিশ বছরে GPতে বেড়েছে participation, সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাকে দরাজ ভাবে গ্রহন করা, encourage করা (প্রসঙ্গত আমি কিন্তু এগুলোকে কোনভাবেই negative phenomenon বলে define করছিনা)। চলেছে অবিশ্রান্ত দৈববাণী "আরো, আরো"।
এবং এই প্রক্রিয়াতে নিরুত্তর ভাবে একটা ঘটনা ঘটে গেছে অজান্তেই। যে "রাজনীতি" ছিল একধরনের বোধ, মনন, মেধাচর্চা, এ্যরিস্টটলের master science, মেকিয়াভেলির art of governance, ধীরে ধীরে তার উপাদানের মধ্যে "অনুপ্রবেশ" করেছে 'সাধারন মানুষের সোচ্চার হওয়া', 'দুর্নীতির প্রতিবাদ', 'অধিকারের লড়াই' এই ধরনের activity যার জন্য কোন বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। সোজা বাংলায় কঠিন কাজ পরিবর্ত্তিত হচ্ছে সহজ কাজে। বেশি শ্রম থেকে কম শ্রম। গত কুড়ি বছরে কবিতার ক্ষেত্রে হুবহু এই রূপান্তর দেখা যাচ্ছে। (in fact এই রূপান্তর গতো একশো বছর ধরেই চলছে। প্রথম দিকে তার বৃদ্ধিটা ছিল অতি অতি সামান্য যা চোখে পড়া অসম্ভব, সেটাই গত কুড়ি বছরে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে আরো স্পষ্ট এক দানবিক আকারের দিকে যাচ্ছে। ভেবে দেখলে ১৯১২ সালে বাংলায় মাত্র একজন কবি, কোন দ্বিতীয় নেই। তিরিশ থেকে চল্লিশে সেটা আঙুলে গোনা যাবে এমন একটা সংখ্যা। পঞ্চাশ ষাট, আঙুলে গোনা না গেলেও সংখ্যাটা বলা যাবে। ২০১২ তে সেনসাস ছাড়া অসম্ভব, তাও approximate সংখ্যা হবে, নির্দিষ্ট নয়। ছবিটা একটা ত্রিভুজ যার base চওড়া থেকে আরো চওড়া হচ্ছে। এবং এতে ধ্বংস বা বিলুপ্তির কোন প্রশ্নই আসেনা। কোন প্রজাতির জায়গা আসেনা। যা হুহু করে, বলতে গেলে দিনকে দিন বদলাচ্ছে তা হলো perception আর image। কিছু ''বিশেষ'' লোকের এক "অপার্থিব" আনন্দের স্বাদ পাওয়ার জন্য একটি "বিশেষ" activity - এটা আর থাকছেনা। যে গন্তব্যের দিকে যাত্রাটা দেখা যাচ্ছে তা হলো "এ এক সব মানুষের ব্যাপার" এবং অবশ্যই "একটা স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে"। যে অতিকায় ক্রিয়াপদটি রাজনীতির সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে ফেলেছে, ঠিক সেই শব্দটিই কবিতার ওপর নেমে আসছে ধীরে ধীরে। সেই সহজ সরল শব্দটি হলো "ব্যাবহার"। এবং আমি কখনোই ভাবিনা যে এটা কোন খারাপ বা the end বাঃ ধ্বংস। এটা একটা সম্পূর্ন অন্য দুনিয়ার, এক অন্য দর্শন বা এক অন্য মানসিকতার সূচনা, যেটা হলো এই "কবিতার ব্যবহার"। এবং এই নতুন মানুষটির চরিত্র বা প্রকৃতি কেমন হবে সেটা বলবে সময় আর মানুষের বিবর্তন। সে কি বড় হয়ে রাজনীতির মতো লুচ্চা, লফঙ্গা, bad boy হয়ে যাবে? না কটি good boy হয়ে থাকবে? নাকি কোন তৃতীয় category, একটি অন্যরকম special student হয়ে থাকবে?
উপসংহার।
একটি পরিচয়, ২০১২। "এই যে সত্য রায়, যতই পার্টি করুক মানুষ হিসেবে কিন্তু খুব ভালো। অসৎ নয়। একদম ডেডিকেটেড, আর ভাবে, সত্যিই চেষ্টা করে কিছু করার।"
একটি পরিচয়, ২০৩০।
"এই যে রঞ্জন বলে ছেলেটা, অনেকদিন থেকেই কবিতা লেখে, রেগুলার, মানে ভালোভাবেই attached। কিন্তু ওই অফিসে বস-কে নিয়ে স্পেশাল মোমেন্টস, ঠিক increment এর আগে আগে বা যখন একটু গার্লফ্রেন্ডকে ম্যানেজ করতে হবে, মানে ও যে জব-হোম, জব-হোম ক্যাটেগরির নয় বোঝাতে হবে বা PR এর জন্য... এইসব ফায়দাবাজি, বা প্রফেশনাল রাইটার কে দিয়ে লিখিয়ে দেওয়া... এগুলো করেনা... ও হচ্ছে খুব simple… সত্যিই ডেডিকেটেডলি লেখা করে... অত প্রোপোজিশান, ইমেজ, সার্কুলেশান, পোয়েম-শো এ্যাটেন্ড করা ভাবেনা...সিম্পলি নিজের গ্রুপের মধ্যে লেখে আর মনের আনন্দে লেখে"
"একটা বিস্তীর্ন ভ্রান্ত ধারনা রাজ করছে এ সময়। সেটা হলো রাজনীতি আর রাজনৈতিক ঘটনাকে একই বস্তু ধরে নেওয়া। রাজনৈতিক ঘটনার কবিতাসাহিত্যে প্রভাব আমার কাছে সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক। শুধু রাজনৈতিক কেন, যেকোন ঘটনার প্রভাব যদি কবিতায় থাকে, তবে তা কবিতা থাকেনা, অন্য মাধ্যম হয়ে যায়। সাহিত্যের মধ্যে ঘটনাবহনকারী হিসেবে কবিতা বা কাব্যবান কাব্যিবতীরা একেবারেই আনফিট। তার জন্য চওড়া জুলপিওয়ালা উপন্যাস, বা সরু গোঁফের গল্প বা ধুতি পাঞ্জাবী পরা প্রবন্ধ রয়েছে..."
হ্যালো রাজনীতি, মেসেজ পেয়েছি
দারুন শব্দের মধ্যে আধখানা দারুচিনি গাছ। তা সে গাছটি আড়াআড়ি কাটা না লম্বালম্বি দু ফাঁক, এরকম কোন দ্বন্দ্ব আসেনা, ধন্ধও থাকেনা। না আমাদের অনেক অনেক কিছু শেখায়, সেইভেবে গত দুটি না-কে দেখি। সত্যিতো, এই যে দ্বন্দ্ব আসেনা, ধন্ধ থাকেনা, এই দুটি না কেমন অম্লানবদনে একটি পরম আমাদের সামনে ফেলে যায়, যেন ওবেলার রুটি, শক্ত হয়ে গেছে তাকে ফ্লায়িং ডিস্ক এর মতো ছুঁড়ে দিল। আমিও যেন শীতের সকালে উঠোনে চেয়ার, চেয়ারে বসানো কোন গম্ভীর বাবা, সেভাবে তাকাই বাক্যটির দিকে, বাবাদের হাসি অর্থহীন হয়, সেইভাবে হাসি। "দারুন শব্দের মধ্যে আধখানা দারুচিনি গাছ" যেন মল্লিকদা, সকালে দুধ নিতে বেরিয়েছে, মাফলারে মলাট দেওয়া মুখ, শীতের সকালে গম্ভীর বাবাদের দিকে "কি মাস্টামশায়?" "ওই চলছে"। ব্যাস বেরিয়ে চলে যান। হঠাত খেয়াল হয়, আরে মল্লিকমশায়ের মাফলার মলাট, হনু টুপি, তসরের শাল সবকিছু আছে, নীচে চেক কাটা লুঙ্গিটি মায় আছে কোমরের গিঁট সমেত, কিন্তু ভেতরে তো কোন মাল ছিল না!! Rewind করে দেখি, হ্যাঁ এই মুখ ঘোরালেন কিন্তু কই, মুখ কই, এতো বেবাক ফাঁকা, মায় উল্টোদিকের বাবুনদের কোয়ার্টার দেখা যাচ্ছে। ব্যাস, শীতের সকালে রাশভারি বাবাকে নিমেষে বানানো হলো সন্ধ্যের মিলুদি, যে কিনা উঠোনে পেঁপে গাছ নড়ে ওঠে দেখলেই হেঁচকি তুলে ফিট হয়। তাহলে কি মল্লিকমশায় মানে চন্দ্রবিন্দু কেস?? দারুন শব্দের মধ্যে আছে আধখানা দারুচিনি গাছ, এখানে ছবি কই?? একটা জলজ্যান্ত মস্তো গাছ, তবু কিনা সামান্য দৃশ্যটুকুও নেই!! সকালের করিতকর্মা ভাই বিকেল, সেখানেও বাক্যটি ফিট করে দেখি কোন ছবি আসেনাতো। বরং বাক্যটা থেকে টাটকা পায়েসের গন্ধ ভেসে আসে।
ছোটবেলায় জানতাম পৃথিবীর সকলেই কোয়ার্টারে থাকে, পৃথিবীর সকলেই প্ল্যান্টে যায়। পৃথিবীর সর্বত্র অফিসার র্যাংকের মানুষ থাকে যারা থাকে বাংলোতে এবং যাদের বাংলোগুলির দিকে তাকিয়ে তলপেটে কিরকম দমবন্ধ লাগে, ফের সাইকেলের প্যাডেলে পড়ে চাপ, ফিরে আসি মাঠে। পৃথিবীর সবারই শিফটিং ডিউটি... এবং পৃথিবীর সবার ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ছোট্ট অবান্তর টুকু আনা একটিই কারনে। সেটা হচ্ছে, আমরা অর্থাৎ এইসব সুখসচ্ছ্বল ইস্পাত শহরের কলোনিতে জন্মানো বাসিন্দারা, পৃথিবী চিনতে কম নাকাল হইনি। কারন আজন্ম আমরা ছিলাম এক অদ্ভুত মডেল পরিবেশে। সবকিছু ঝুলনের মতো সাজানো গোছানো। রাস্তায় রোটারি। স্ট্রিট বা এভিনিউতে একইরকমের বাড়ি। নানান কাকু জেঠু, ডাক্তারজেঠু, তপনকাকু, শিকদার স্যার, কূহুদিদির মা, গৌরীপিসী। সবার বাড়ি একরকম না হলেও হিন্দিতে যাকে বলে বাতাবরন, সেই বাতাবরন একই। সবারই হয়তো রাজদূত, নয়তো বুলেট, নয়তো হীরো হোন্ডা। সুখী পরিবার। সবাই "লেবার ক্লাশের" সঙ্গে খুব বেশী মেলামেশা নয় এবং "অফিসার"দের ব্যাপার আলাদা। আসলে একটা মডেল পৃথিবীতে আমরা ছিলাম যেখানে symmetry একচ্ছত্র অধিপতি। সেই সিমেট্রির ধুনকি থেকে অসমান পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার পর আমরা জানপ্রান দিয়ে একটাই কাজ করেছি প্রথম কয়েক বছর সেটা হলো আকূল হয়ে সিমেট্রি খোঁজা। যতদিনে বুঝেছি যে আমরাই একটা অদ্ভুত পৃথিবী থেকে এসেছি, বাইরের পৃথিবীটা অদ্ভুত নয়, ততদিনে সারভাইভ করার মতো আঁশ, কানকো, ফুলকা ইত্যাদি গজিয়ে গিয়ে একেকজন একেকটা নিজস্ব মডেল করে নিয়েছি। উত্তরপাড়ার কাকু, শ্যামবাজারের বৌ এইসব দিব্যি থাকলেও আমার যে বেসিক কোন শিকড় বা কালচার বা ঐতিহ্য নেই তা ঘোরতরো মালুম হয়। এই জন্ম এবং এই রকম মেটামরফোসিসের ঘটনা হুবহু শূন্য দশকের কবিতায়। শূন্য দশকের কবিতার ছোটবেলা স্বপ্নের মতো, অপূর্ব তার পরিবেশ (আহা, মনে পড়ে এইরকম শীতের বিকেলগুলিতে খেলার সরঞ্জাম নিয়ে আমরা আর কোন এক কোটিমাঠপতি হেলায় এদিকে সেদিকে বিভিন্ন মাঠ ফেলে ছড়িয়ে গেছেন আমাদের জন্য, আহা দুর্গাপুর)। কোন কোটেশান তোলার জন্য আমি এখানে আসিনি। আমার লক্ষ্য কয়েকটা বিষয়ের তলায় সঠিক ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্কসের দাগটা বসানো। শূন্য দশকের কবিতা উদবাস্তু কবিতা। প্রথম কবছর সিমেট্রির পৃথিবীতে জমিদারি করার পর যখন আছড়ে পড়লো বাইরের পৃথিবীতে, প্রথমেই ভাঙলো তার মাথার মধ্যেকার মডেল কবিতাটি। যেটি অপ্রতিমা হয়ে বিরাজমান ছিল।
#
মগ্ন আর মুগ্ধ র মধ্যে একটা সুচতুর পার্থক্য রয়েছে। সুচতুর পার্থক্য? হ্যাঁ... পার্থক্য-দার সঙ্গে মানুষের তিনবার আলাপ হয় জীবনে। এই পার্থক্যদা হলো মানুষের আদিম গডফাদার, অপূর্ব লাভ-হেট রিলেশান যার সাথে, কয়েক কেজি মাংস, রক্ত ও হাড়গোড়ের সঙ্গে মানুষ যাকে পিঠে নিয়ে ঘোরে। প্রথমবার আলাপ হওয়ার সময় বোঝাই যায়না আলাপ হয়েছে। পরে কোন একটা সময় হাঁটতে, হাঁটতে আচমকা মুখ ঘোরালে বোঝা যায় পাশে একজন ব্লু জীনস আর সাদা হাফশার্ট পরা লোক হাঁটছে, খুব একটা বিরাট কিছু চমকানো নামেনা তখন। কারন লোকটিকে দেখামাত্র, তক্ষুনি না হলেও সামান্য পরে আবছা আবছা ভাবে মনে পড়ে হ্যাঁ সত্যিই তো, বেশ খানিকক্ষন আগে থেকে, ওই জলট্যাঙ্কির পাশ দিয়ে শর্টকাট করার সময় থেকেই একজন পাশে পাশে হাঁটছিল, খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয়নি। এখন দেখে একটু আধটু কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে। “হাই”
-“হাই, আমার নাম পার্থক্য, পার্থক্য সেন”
-“আমি অমিতাভ্, অমিতাভ্ প্রহরাজ”
-“জানি”
-“জানেন!! Strange, কি করে জানলেন?”
-“আপনি নিজেই বলেছেন, খেয়াল নেই, গুনগুন করে গান গাইছিলেন “ওহে অমিতাভ্ প্রহরাজ/কি নিয়ে ভাবছো আজ/দেখো কত আছে কাজ/ তুমি বড় ফাঁকিবাজ/ ওহে ওহে ওহে ওহে”... ওই শুনে আন্দাজ করেছিলাম”
-“এ বাবা ছি ছি ছি... sorry... sorry… এমনি গাইছিলাম... ইস... এবাবা”
-“sorry বলছেন কেন, আমার তো ভালোই লাগছিল... ফাঁকা রাস্তায়...”
- “কোথায় যাচ্ছেন?”
-“ঠিক করিনি, আপনার সাথেই হাঁটছি...”
-“বাঃ... তুমুল... এটা গ্রেট ব্যাপার, ঠিকঠাক না করে হাঁটা... আমার খুব পছন্দের জিনিস”
-“জানি, সেজন্যইতো করছি”
-“এটাও জানেন!! ভারি ভালো লোক তো আপনি, চলুন, আমার ঘরে যাবেন? আড্ডা দেওয়া যাবে”
-“চলুন”
এইভাবেই পার্থক্যদা ঢোকে জীবনে। বোঝাই যায়না কি করতে এসেছে, কেন, কোথায়, কেমন। একটা নতুন মাইডীয়ার বন্ধু, যে আমাকে অনেকটা বোঝে। যার সাথে কথা বলতে, সময় কাটাতে ভালো লাগে। যার ব্লু জীনস সাদা হাফশার্ট ব্যাপক পছন্দ হয়, নিজের আলনায় শুধু নানান শেডের ব্লু জীনস আর সাদা বা সাদাটে ধরনের নানান কাটিং এর হাফশার্ট ঝোলে। ধীরে ধীরে দেখা যায় পার্থক্য সেন অনেকেরই প্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্লাবে বঙ্কু পচা বলে “শালা পার্থক্যদা না এলে সন্ধ্যেগুলো ইসবগুলের মতো লাগে মাইরি। কি রে অমিতাভ্ পার্থক্যদা কি শরীর খারাপ নাকি রে?”। মহল্লার প্রতিটি বন্ধু পার্থক্যদা বলতে অজ্ঞান। এবং এখানেই ফোঁটা, ফোঁটা, জলের মতো জমা হয় কুটুস। কুটুস হচ্ছে এক নতুন অনুভূতি, পার্থক্যদার সাথে আলাপের পর যেটা জীবনে এসেছে। যদিও সব জায়গায় পার্থক্যদা বলতে লোকে অমিতাভ্ এর বন্ধু বলেই চেনে, এছাড়া আর কোন পরিচয় জানা যায়না তার। তবু পার্থক্যদার ছায়া আস্তে আস্তে অগাধ হয়ে ওঠে আর অমিতাভ্ ছায়ার প্রেশারে তুবড়ে যায়। প্রতীবন্ধী সার্টিফিকেট নিয়ে হাঁটে, বাসে তা দেখিয়ে সীট পায় এবং একদিন জ্বর হয়। জ্বরের সময় ঘটে দ্বিতীয় আলাপটি। অমিতাভ্ দেখে পার্থক্যদা “খুব চিন্তার কথা, খুব চিন্তার কথা” ব’লে ক্লাবে বেরিয়ে যায় মনোরঞ্জন খেলতে। আর অমিতাভ্ জানলার ফাঁক দিয়ে দেখে পাশের বাড়ির বিল্টু, তারও জ্বর, তার পার্থক্যদা পাশে বসে জলপটি দিচ্ছে। তখন কোন কোন অমিতাভ্ বিল্টুর পার্থক্যদার সঙ্গে লুকিয়ে আলাপ করে, আর কোন কোন অমিতাভ্ বিল্টুর পার্থক্যদা আর তার পার্থক্যদার মধ্যে আরেকজন পার্থক্যদাকে দেখতে পায় তার সাথে আলাপ করে। প্রথম অমিতাভ্গুলো বিল্টুর পার্থক্যদার সঙ্গে নলবনে সময় কাটাতে গিয়ে পুলিশ রেডে ধরা পড়ে যায়। দ্বিতীয় অমিতাভ্গুলো নতুন পার্থক্যদাকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে, বোরখা পরিয়ে হাঁটে, তার সঙ্গে সংসার করে। এই পার্থক্যদাকে দিয়ে ফাইফরমাশ খাটায়, কুকুর ছাগলের মতো ব্যবহার করে। এবং এই সমস্ত কাজ নিপুন ভাবে করার জন্য আড়ালবিদ্যা শেখে। এইভাবে বহুদিন ঘরবাড়ি করার পর একদিন বাজার করে ফেরার পর দেখে হাল্কা ব্যাগ নিতে পার্থক্যদা দুহাত কাজে লাগাচ্ছে। অমিতাভ্ খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে দেখে পার্থক্যদার দুহাতেরই বুড়ো আঙুল নেই, গ্রিপ করতে অসুবিধে। অমিতাভ্ নিজের বুড়ো আঙুল দেখে, সুন্দর কচি ছেলের মতো নড়াচড়া করছে। তখনই হয় তৃতীয় আলাপ, অমিতাভ ও পার্থক্যদার মধ্যে যে পার্থক্যদা তার সাথে। অবাক হয়ে দেখে তৃতীয় পার্থক্যদা হুবহু তার মতো দেখতে, কিন্তু সে স্বাধীন, তার নিজের ইচ্ছে আছে, মর্জি আছে, ব্যক্তিত্ব আছে। এতদিন পার্থক্যদা তে মগ্ন থাকার পর অমিতাভ্ মগ্ন থেকে মুগ্ধ হয়। আর কোন কোন দিন, যেহেতু একই রকম দেখতে, অমিতাভ্ পার্থক্যদার যায়গায় আসে আর পার্থক্যদা অমিতাভ্-এর জায়গায়। ভারী মজা হয়... পার্থক্যদার চোখ প’রে সে শহর দেখে, পার্থক্যদার হাত প’রে সে সই করে। আড়ালবিদ্যার কোর্স শেষ হয়ে গেছে ব’লে প্রকাশবিদ্যার ক্লাসে ভর্ত্তি হয়। লোকে বলে ওর পার্থক্যবাজি করবার কেতাই আলাদা, মেয়েরা বলে অমিতাভ্দার পার্থক্য ইজ সো হট!! সত্যি পার্থক্যদাকে ওর আর প্রয়োজন হয়না। সারাদিন হাঁটুগেড়ে কাজ করতে হয় বলে অমিতাভ্ এর পা জমে যায়, এগোতে পারেনা, বড্ড বিরক্ত হয়, তখন ওই সত্যি পার্থক্যদাকে লাথি মেরে পা টা ছাড়িয়ে শুয়ে পড়ে ওকেই বলে পা টিপে দিতে... একটা মোটা ঘুম আর প্যাঁকাটি হাসি নড়াচড়া করতে ভাবে, ওঃ এই তো শিখর। পার্থক্যদা ‘ওর’ পা টিপে দিচ্ছে!!! আহা এই তো শিখর...
শূন্য দশকের এভারেজ কবিতা, sorry এই মুহূর্তে আমি কবিতার কোন separate existence এ বিশ্বাস করিনা, শূন্য দশকের এভারেজ লেখা এই জীবনটাই কাটিয়েছে। পার্থক্যদাকে দিয়ে পা টিপিয়ে, জল আনিয়ে, বাসন মাজিয়ে, মশারি টাঙিয়ে, তার ওপর দুবেলা নিজের এঁটো খেতে দিয়ে মাটিতে ঘুমোতে দিয়েছে। এই অমিতাভ্গুলো সরলরেখার সাথে প্রেম করতে করতেও করতে পারেনি। একে উদ্বাস্তু, তার একটা হীনমন্যতা অতি গোপনে কাজ করে। সেখানে পার্থক্যদার মতো একটা লোক তার “অধীন”, এই অধীনসুখ মনোরম ভাবে মন টিপে দেয় রোজ। কখনো পার্থক্যদা সেজে ক্লাবে গেলে, “গুরু, গুরু” শোনে। বাড়িতে থাকা পার্থক্যদাকে লাথি মারলেও কাইকাই করেনা, তাই সলমনের মতো তাকে মেরে, মুখ ফাটিয়ে কলার তুলে ডায়লগ মারার আরাম পায়, আরো কতো। শূন্য দশকের কবিতা basically বিহারের জোতদার দের মতো জীবন কাটিয়েছে, আরাম হি আরাম পেয়েছে আলোতে বা অন্ধকারে, বাথটাবে চান করে অডিকোলন মেখে স্বতন্ত্র নামে একটা রাঁড়ের দখলের জন্য খুনোখুনি করেছে... মোদ্দা কথা শূন্য দশকের লেখা আস্তে আস্তে বড়লোক কবিতা, গদিতে বসা লেখার উলটো দিকে নিজের গদি, নিজের বাংলো বানানোর ভঙ্গিমার সাথে খাটভাঙার নেশা করেছে। ব্রিলিয়ান্ট সময়টা সবাইকে দুরন্ত স্টাইলিশ ক্যাম্বিসের তৈরী সমস্যা কিনে দিয়েছে। নিতান্তই দরকার তাই মাঝে মাঝে ঝুলনের সৈনিকের মতো ঝুলনের ক্রাইসিস, ঝুলনের বিপদ কিনে দিয়েছে। ডেন্ডরাইট দিয়ে গাছের পাতা টাকে শক্ত করে আটকে দিয়েছে ডালে, দু পাশে দুটো কঞ্চির সাপোর্ট দিয়েছে, তারপর জল ফেলে, “জল পড়ে/পাতা নড়ে না” লিখে সম্মানীয় বিশ্লেষন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে... কাকই প্রথম টের পায় লেখাতে ঘা হলে... কাকের ডাক বদলে গেছে, কা কা র বদলে কিহো কিহো ডাকছে, মানে ওর তোতলা ডায়লেক্টে “কি হবে”...
কেউ শেষ হবেনা, নষ্ট হবেনা। শুধু লেখা বা কবিতা নামক কাজটির মানে এবং ধারনা বদলে যাবে পুরো!!! ঠিক যেরকম "রাজনীতি" র সাথে হয়েছে... পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কনসেপ্টগুলোর মধ্যে একটা হলো "politics" যাকে a master mix of art & science with a highly skillful implementation বলে ধরা হয়. এবং that used to be a 'unique' and 'creative' activity, creating good life and just society!! ( "politics is the most important form of human activity because it involves interaction amongst free and equal citizens. It thus gives meaning to life and affirms the uniqueness of each individual."- Hannah Ardent)। ঠিক লেখার মতোই রাজনীতির জন্য দরকার ছিল উচ্চস্তরের মেধা এবং অনুভবের সমন্বয়, যুক্তির ওপর চূড়ান্ত দখল, এবং সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ন, ভবিষ্যৎকে দেখার ও বিশ্লেষনের ক্ষমতা, সময়ের থেকে এগিয়ে ভাবনাচিন্তা করার পারদর্শিতা (একজন creative মানুষের গুণাবলির থেকে খুব তফাৎ হচ্ছে কি? আরো মজার কথা, এতেও পুঁথিগত বিদ্যার থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হতো)।
কিন্তু এখন? রাজনীতি, এই activityটির ধারনা ও perception এখন দাঁড়িয়েছে একটা ঘৃন্য, ন্যাক্কারজনক অভ্যেস বা কাজ যেটা বেসিক্যালি খারাপ এবং চালাক লোকেরা করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য, একটা permanent negative aura জড়িয়ে আছে এর সাথে মজ্জায়। সংজ্ঞা থেকে শুরু করে মায় basic concept টিও বদলে গেল। যা ছিল একটা creative activity তা হয়ে গেল একটা permissible crime!!! অফিসে ভয়ঙ্কর politics, শ্বাশুড়ি-ননদের politics!! Creativity র চিহ্নটিও হাওয়া। "রাজনীতি করে কিন্তু ভালো লোক", এতদুর অবধি মেনে নিতে রাজি, তাও as an exception। কিন্তু রাজনীতি করে আর creative genius, একটিও উদাহরন নেই, এটাকে accept করতেই রীতিমতো অসুবিধে। রাজনৈতিক intellectual দের আমরা বড়োজোর ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করাতে পারি, কিন্তু টপার? চাপ আছে। এবং এই আপাদমস্তক চরিত্রবদল, "আমি নিজেও জানিনা গো তোমার কাছে এসে আমি কি করে বদলে গেলাম প্রিয়া, তুমি আমাকে এক অন্য মানুষ করে দিলে"- এই টাইপের ইতিহাসের রোমান্টিক ন্যাকামো ভাবলে খুব ভুল হবে। এবং এটি কোন কাফকা-প্রোডাকশান ও নয়। এটি আসলে সভ্যতা নামক ভদ্রলোকটির ১০০% উদ্দেশ্যপ্রনোদিত এক সুপরিকল্পিত কৌশল। যেটা ছিল একটা specialized subject সেটা হয়ে গেল যেকোন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব এমন activity। বলা যায় সময়ের সাথে বাড়লো (বাড়ানো হলো?) আরো আরো মানুষের participation।. যার জন্য একটা বিশেষ শিক্ষা, grooming, skill, experience এর প্রয়োজন ছিল, ধীরে ধীরে তা হয়ে গেল সাধারন মানুষের নাগালে। প্রথমেই উড়িয়ে দেওয়া হলো/বিলুপ্ত হলো specific মাপকাঠি বা standard । যা ছিল মার্কশিট সেটা হলো গ্রেডেশান এবং ফাইন্যালি শুধু সার্টিফিকেট। বিলুপ্ত হলো qualification এর প্রয়োজনীয়তা। "লেখা"/"কবিতা"র ক্ষেত্রেও জার্নি টা একই ভাবে চলছে। গত তিরিশ বছরে GPতে বেড়েছে participation, সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাকে দরাজ ভাবে গ্রহন করা, encourage করা (প্রসঙ্গত আমি কিন্তু এগুলোকে কোনভাবেই negative phenomenon বলে define করছিনা)। চলেছে অবিশ্রান্ত দৈববাণী "আরো, আরো"।
এবং এই প্রক্রিয়াতে নিরুত্তর ভাবে একটা ঘটনা ঘটে গেছে অজান্তেই। যে "রাজনীতি" ছিল একধরনের বোধ, মনন, মেধাচর্চা, এ্যরিস্টটলের master science, মেকিয়াভেলির art of governance, ধীরে ধীরে তার উপাদানের মধ্যে "অনুপ্রবেশ" করেছে 'সাধারন মানুষের সোচ্চার হওয়া', 'দুর্নীতির প্রতিবাদ', 'অধিকারের লড়াই' এই ধরনের activity যার জন্য কোন বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। সোজা বাংলায় কঠিন কাজ পরিবর্ত্তিত হচ্ছে সহজ কাজে। বেশি শ্রম থেকে কম শ্রম। গত কুড়ি বছরে কবিতার ক্ষেত্রে হুবহু এই রূপান্তর দেখা যাচ্ছে। (in fact এই রূপান্তর গতো একশো বছর ধরেই চলছে। প্রথম দিকে তার বৃদ্ধিটা ছিল অতি অতি সামান্য যা চোখে পড়া অসম্ভব, সেটাই গত কুড়ি বছরে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে আরো স্পষ্ট এক দানবিক আকারের দিকে যাচ্ছে। ভেবে দেখলে ১৯১২ সালে বাংলায় মাত্র একজন কবি, কোন দ্বিতীয় নেই। তিরিশ থেকে চল্লিশে সেটা আঙুলে গোনা যাবে এমন একটা সংখ্যা। পঞ্চাশ ষাট, আঙুলে গোনা না গেলেও সংখ্যাটা বলা যাবে। ২০১২ তে সেনসাস ছাড়া অসম্ভব, তাও approximate সংখ্যা হবে, নির্দিষ্ট নয়। ছবিটা একটা ত্রিভুজ যার base চওড়া থেকে আরো চওড়া হচ্ছে। এবং এতে ধ্বংস বা বিলুপ্তির কোন প্রশ্নই আসেনা। কোন প্রজাতির জায়গা আসেনা। যা হুহু করে, বলতে গেলে দিনকে দিন বদলাচ্ছে তা হলো perception আর image। কিছু ''বিশেষ'' লোকের এক "অপার্থিব" আনন্দের স্বাদ পাওয়ার জন্য একটি "বিশেষ" activity - এটা আর থাকছেনা। যে গন্তব্যের দিকে যাত্রাটা দেখা যাচ্ছে তা হলো "এ এক সব মানুষের ব্যাপার" এবং অবশ্যই "একটা স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে"। যে অতিকায় ক্রিয়াপদটি রাজনীতির সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে ফেলেছে, ঠিক সেই শব্দটিই কবিতার ওপর নেমে আসছে ধীরে ধীরে। সেই সহজ সরল শব্দটি হলো "ব্যাবহার"। এবং আমি কখনোই ভাবিনা যে এটা কোন খারাপ বা the end বাঃ ধ্বংস। এটা একটা সম্পূর্ন অন্য দুনিয়ার, এক অন্য দর্শন বা এক অন্য মানসিকতার সূচনা, যেটা হলো এই "কবিতার ব্যবহার"। এবং এই নতুন মানুষটির চরিত্র বা প্রকৃতি কেমন হবে সেটা বলবে সময় আর মানুষের বিবর্তন। সে কি বড় হয়ে রাজনীতির মতো লুচ্চা, লফঙ্গা, bad boy হয়ে যাবে? না কটি good boy হয়ে থাকবে? নাকি কোন তৃতীয় category, একটি অন্যরকম special student হয়ে থাকবে?
উপসংহার।
একটি পরিচয়, ২০১২। "এই যে সত্য রায়, যতই পার্টি করুক মানুষ হিসেবে কিন্তু খুব ভালো। অসৎ নয়। একদম ডেডিকেটেড, আর ভাবে, সত্যিই চেষ্টা করে কিছু করার।"
একটি পরিচয়, ২০৩০।
"এই যে রঞ্জন বলে ছেলেটা, অনেকদিন থেকেই কবিতা লেখে, রেগুলার, মানে ভালোভাবেই attached। কিন্তু ওই অফিসে বস-কে নিয়ে স্পেশাল মোমেন্টস, ঠিক increment এর আগে আগে বা যখন একটু গার্লফ্রেন্ডকে ম্যানেজ করতে হবে, মানে ও যে জব-হোম, জব-হোম ক্যাটেগরির নয় বোঝাতে হবে বা PR এর জন্য... এইসব ফায়দাবাজি, বা প্রফেশনাল রাইটার কে দিয়ে লিখিয়ে দেওয়া... এগুলো করেনা... ও হচ্ছে খুব simple… সত্যিই ডেডিকেটেডলি লেখা করে... অত প্রোপোজিশান, ইমেজ, সার্কুলেশান, পোয়েম-শো এ্যাটেন্ড করা ভাবেনা...সিম্পলি নিজের গ্রুপের মধ্যে লেখে আর মনের আনন্দে লেখে"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন