গণেশ পাইন, আমি আর অমিত
অশোক সেন
এই লেখাটি আমি অনুজ বন্ধু অমিতের সনির্বন্ধ অনুরোধে লিখছি, এই বিষয়ে লেখার সঠিক যোগ্যতা আমার নেই ! অমিত ( নাহ্, রায় নয় বিশ্বাস ) নিজে একজন খুবই গুণী চিত্রশিল্পী । আর আমি একজন পদার্থবিদ; সম্পূর্ণ ভিন্ন পথের পথিক ! তবে, সাহিত্য, নাটক, কবিতা, আবৃত্তি, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির মত ফাইন আর্টের অনেকগুলি দিক - আমার মনকে আকর্ষণ করে ! আমাদের আলাপন শুরু হয় বছর খানেক আগে ফেসবুকের পাতা থেকে ; ওনার রঙ-তুলির ব্যবহার আমার ভালো লাগে । চাক্ষুষ পরিচয় হল কোলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস -এর চত্বরে ; অমিত আর বিশ্বজিৎ কর্মকারের ' 'The Visionary Minds' (15-19 February, 2013 ) নামক যৌথ প্রদর্শনীতে । আমি বলেছিলাম যে , গণেশ পাইন আর বিকাশ ভট্টাচার্য ( আমাদের সমকালীন ভারতের দুই কিংবদন্তী চিত্রশিল্পী ) ৭০ এর দশকের গোড়া থেকেই আমার খুবই প্রিয় চিত্রশিল্পী । আর অমিতের বেশ কিছু আঁকায় -গণেশের ছায়া বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায় । যেমন - দ্য এডিটর , টেম্পারা অন পেপার মিডিয়ামে । ফলত, আমাদের ঘনিষ্ঠতা আরও একটু বাড়লো বৈকি ! এর মাস খানেক পরে, ফেসবুকে আমাদের স্বতন্ত্র, একটু গভীর আলোচনা শুরু হয় । গত ১২ ই মার্চ এ, গণেশ পাইনের মৃত্যুদিনের পর থেকে ।
অমিত মূলত গণেশ পাইনের ওপর একটি লেখা দিতে বললেন আমাকে, একটি ব্লগ টাইপের ই - জার্নালের জন্য । শুরুতেই বলে রাখা ভালো যে, আমি অনেক বললাম যে এই রকমের একটি লেখার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা আমার নেই । আমার এই লেখা দেওয়া কি ঠিক হবে ? তখন অমিত বললেন যে - আমি ওনার সাথে কথা বলতে গিয়ে , আমার ভালো লাগার যে অনুভূতিটুকু পেয়েছি , সেই কথা লিখলেই চলবে । তো আমি সেই টুকুই লিখতে বসেছি ।
আর গণেশ পাইনের সঙ্গে কোন উপায়েই কথা বলার চেষ্টা করিনি ; ওনার তীব্র ' introvert ' মনোভাবের কথা জানতাম বলেই । আমি সেই অর্থে ঋদ্ধ নই ।তাই , হে পরিশীলিত পাঠক, এর মধ্যে যে ভুল-ভ্রান্তি পাবেন ,তা জানিয়ে দেবেন এবং নিজগুনে মাফ করে দেবেন - এই আশা রাখি ।
প্রথমেই তাহলে বলি যে , আমাদের বাসার লিভিং রুমে গণেশ -এর যে ছবির প্রিন্ট রয়েছে ~ সেটির কথা । সেই ছবির নাম হল ' দ্য ফ্লুট্ প্লেয়ার'। 'মিক্সড্ মিডিয়া অন পেপার'- এ এই ছবিটির সাল ১৯৯১ । ছবিটি অবশ্যই বংশীবাদক কৃষ্ণের ; ছবির মধ্যে কালচে নীল রঙের প্রাধান্য চোখে পড়ে । কৃষ্ণ ( কালো ) হালকা নীল এর প্রতীক হিসেবে ! আরও মনে হয়েছে যে , এই নীল যেন পিকাসোর ' ব্লু পিরিয়ড' এর অভিব্যক্তি তুল্য ।( শুরুর দিকে ওনার পিকাসো / গগনেন্দ্রনাথ, এবং দালি'র অবচেতন মনকে চিত্রায়ন করার প্রভাব ! অবশ্য , অবনেন্দ্রনাথের প্রভাব ছিল আরো বেশী ) কিন্তু এটাও জানি যে , মাঝ বয়সের আগেই উনি এই সব রথী-মহারথীদের পথ থেকে বেঁকে, অনেক দূরে নিজস্ব একটি শৈলী গড়ে তুলেছিলেন । সেখানে আলোর থেকে অন্ধকার হয়তো কিঞ্চিৎ বেশী পরিমানেই থাকতো ! মৃত্যু প্রায় সব ছবিতেই জীবনের কাছেই স্থান করে নিত ! কিন্তু মিক্সড্ মিডিয়া অন পেপার, গুয়াশ শেষ পর্যন্ত টেম্পেরার অনন্য মাস্টার হিসেবে , ওনার সিগনেচার ছবিগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে যথাযোগ্য স্বীকৃতি লাভ করেছিলো । এই অন্ধকারের আধিক্য নিয়ে অনেকে লিখেছেন । যেমন, ওনার জীবনের প্রথম অর্ধেক যে গলি ঘুঁজির মধ্যে ,আর তার আধো অন্ধকার , মলিন রঙচটা দেওয়াল এবং এই সবের ঊর্ধ্বে অপ্রকাশিত চিলেকোঠার ঘরের ( ওনার স্টুডিও ) কারনেই ঘটেছিল - তা তো প্রায় সত্যই । আমি তো তাই দেখি ওনার প্রায় সমস্ত মিক্সড মিডিয়া বা টেম্পারার কাজগুলির মধ্যে । তাই মনে হয় যে, কৃষ্ণের পটলমার্কা প্রায় নিমীলিত চোখ , অন্ধকারের বিজয় উৎসবকে সূচিত করে না , এটি বরং বহির্জগৎকে পুরো উপেক্ষা করে অন্তর্লীন জগতের উদ্দেশ্যে ধ্যানে মগ্ন !!
এই লেখাটি আমি অনুজ বন্ধু অমিতের সনির্বন্ধ অনুরোধে লিখছি, এই বিষয়ে লেখার সঠিক যোগ্যতা আমার নেই ! অমিত ( নাহ্, রায় নয় বিশ্বাস ) নিজে একজন খুবই গুণী চিত্রশিল্পী । আর আমি একজন পদার্থবিদ; সম্পূর্ণ ভিন্ন পথের পথিক ! তবে, সাহিত্য, নাটক, কবিতা, আবৃত্তি, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির মত ফাইন আর্টের অনেকগুলি দিক - আমার মনকে আকর্ষণ করে ! আমাদের আলাপন শুরু হয় বছর খানেক আগে ফেসবুকের পাতা থেকে ; ওনার রঙ-তুলির ব্যবহার আমার ভালো লাগে । চাক্ষুষ পরিচয় হল কোলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস -এর চত্বরে ; অমিত আর বিশ্বজিৎ কর্মকারের ' 'The Visionary Minds' (15-19 February, 2013 ) নামক যৌথ প্রদর্শনীতে । আমি বলেছিলাম যে , গণেশ পাইন আর বিকাশ ভট্টাচার্য ( আমাদের সমকালীন ভারতের দুই কিংবদন্তী চিত্রশিল্পী ) ৭০ এর দশকের গোড়া থেকেই আমার খুবই প্রিয় চিত্রশিল্পী । আর অমিতের বেশ কিছু আঁকায় -গণেশের ছায়া বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায় । যেমন - দ্য এডিটর , টেম্পারা অন পেপার মিডিয়ামে । ফলত, আমাদের ঘনিষ্ঠতা আরও একটু বাড়লো বৈকি ! এর মাস খানেক পরে, ফেসবুকে আমাদের স্বতন্ত্র, একটু গভীর আলোচনা শুরু হয় । গত ১২ ই মার্চ এ, গণেশ পাইনের মৃত্যুদিনের পর থেকে ।
অমিত মূলত গণেশ পাইনের ওপর একটি লেখা দিতে বললেন আমাকে, একটি ব্লগ টাইপের ই - জার্নালের জন্য । শুরুতেই বলে রাখা ভালো যে, আমি অনেক বললাম যে এই রকমের একটি লেখার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা আমার নেই । আমার এই লেখা দেওয়া কি ঠিক হবে ? তখন অমিত বললেন যে - আমি ওনার সাথে কথা বলতে গিয়ে , আমার ভালো লাগার যে অনুভূতিটুকু পেয়েছি , সেই কথা লিখলেই চলবে । তো আমি সেই টুকুই লিখতে বসেছি ।
আর গণেশ পাইনের সঙ্গে কোন উপায়েই কথা বলার চেষ্টা করিনি ; ওনার তীব্র ' introvert ' মনোভাবের কথা জানতাম বলেই । আমি সেই অর্থে ঋদ্ধ নই ।তাই , হে পরিশীলিত পাঠক, এর মধ্যে যে ভুল-ভ্রান্তি পাবেন ,তা জানিয়ে দেবেন এবং নিজগুনে মাফ করে দেবেন - এই আশা রাখি ।
প্রথমেই তাহলে বলি যে , আমাদের বাসার লিভিং রুমে গণেশ -এর যে ছবির প্রিন্ট রয়েছে ~ সেটির কথা । সেই ছবির নাম হল ' দ্য ফ্লুট্ প্লেয়ার'। 'মিক্সড্ মিডিয়া অন পেপার'- এ এই ছবিটির সাল ১৯৯১ । ছবিটি অবশ্যই বংশীবাদক কৃষ্ণের ; ছবির মধ্যে কালচে নীল রঙের প্রাধান্য চোখে পড়ে । কৃষ্ণ ( কালো ) হালকা নীল এর প্রতীক হিসেবে ! আরও মনে হয়েছে যে , এই নীল যেন পিকাসোর ' ব্লু পিরিয়ড' এর অভিব্যক্তি তুল্য ।( শুরুর দিকে ওনার পিকাসো / গগনেন্দ্রনাথ, এবং দালি'র অবচেতন মনকে চিত্রায়ন করার প্রভাব ! অবশ্য , অবনেন্দ্রনাথের প্রভাব ছিল আরো বেশী ) কিন্তু এটাও জানি যে , মাঝ বয়সের আগেই উনি এই সব রথী-মহারথীদের পথ থেকে বেঁকে, অনেক দূরে নিজস্ব একটি শৈলী গড়ে তুলেছিলেন । সেখানে আলোর থেকে অন্ধকার হয়তো কিঞ্চিৎ বেশী পরিমানেই থাকতো ! মৃত্যু প্রায় সব ছবিতেই জীবনের কাছেই স্থান করে নিত ! কিন্তু মিক্সড্ মিডিয়া অন পেপার, গুয়াশ শেষ পর্যন্ত টেম্পেরার অনন্য মাস্টার হিসেবে , ওনার সিগনেচার ছবিগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে যথাযোগ্য স্বীকৃতি লাভ করেছিলো । এই অন্ধকারের আধিক্য নিয়ে অনেকে লিখেছেন । যেমন, ওনার জীবনের প্রথম অর্ধেক যে গলি ঘুঁজির মধ্যে ,আর তার আধো অন্ধকার , মলিন রঙচটা দেওয়াল এবং এই সবের ঊর্ধ্বে অপ্রকাশিত চিলেকোঠার ঘরের ( ওনার স্টুডিও ) কারনেই ঘটেছিল - তা তো প্রায় সত্যই । আমি তো তাই দেখি ওনার প্রায় সমস্ত মিক্সড মিডিয়া বা টেম্পারার কাজগুলির মধ্যে । তাই মনে হয় যে, কৃষ্ণের পটলমার্কা প্রায় নিমীলিত চোখ , অন্ধকারের বিজয় উৎসবকে সূচিত করে না , এটি বরং বহির্জগৎকে পুরো উপেক্ষা করে অন্তর্লীন জগতের উদ্দেশ্যে ধ্যানে মগ্ন !!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন