সম্পাদকীয়
শীত নিয়ে কিছু লিখব ভেবেছিলাম।পাটালি গুড়ের গন্ধ,সতেজ সবুজ সবজি ,লেপের ওম, মিঠে রোদ্দুর এইসব নিয়ে ।কিন্তু মুস্কিল করলো ল্যাপটপে বাজতে থাকা সেই গানের কলিটা -চালচুলো নেই তার ,নেই তার চেনা বা অচেনা ... চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার শহরের সেই পাগলটার মুখ ! এই তীব্র শীতের রাতে যে সারা গায়ে ছাই মেখে ,আগুন জ্বেলে গাছের নিচে ঘুমিয়ে আছে (নাকি জেগে ?) ! মাথার পোকাগুলো নড়ে উঠলো ! এই দুনিয়ায় কত মানুষ আছে যাদের মাথার ওপর ছাদ নেই ? শুধুই আকাশ ! গুগল জানালো ,ইউনাইটেড নেশনের হিউম্যান রাইটস কমিশনের ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন ,মানে ১০০০০০০০০ ! ২০১৪তে কি সংখ্যাটা কমেছে আদৌ ? দি একশন এড ২০০৩ সালে সমীক্ষা করে দেখেছে শুধু ভারতবর্ষেই আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৮ মিলিয়ন ! CRY ( চাইল্ড রিলিফ এন্ড ইউ ) ২০০৬ সালে হিসেব করে দেখেছে ভারতে ১১ মিলিয়ন শিশু রাস্তায় বাস করে ! যদিও ২০১১ সালের সরকারী তথ্য বলছে ভারতে মাত্র ১৮ লক্ষ মানুষ গৃহহীন !!! আচ্ছা , এইসব তথ্যের কচকচানি থেকে মুখ সরিয়ে আমরা যদি মাত্র একজন মানুষের কথাই ভাবি ! দীর্ঘ শীতের রাতে তার মাথায়,গায়ে ,ছেঁড়া চাদরে তীরের ফলার মতো ধেয়ে আসা একেকটা শিশিরের ফোঁটার কথাই ভাবি ! বন্ধুরা তার দমবন্ধ করা কাশির শব্দ শোনা যায় না কি ?
সেই গল্পটা মনে পড়ল যদিও সত্যি ঘটনাকে গল্প বলা যায় কিনা ঠিক জানি না ! বিদ্যাসাগর একবার তাঁর মায়ের গায়ে সুতির চাদর দেখে একটা ভালো শাল কিনে আনলেন।কিন্তু ভগবতী দেবী সেটি পরলেন না , রেখে দিলেন বাক্সে ! বিদ্যাসাগর একদিন তাই দেখে কারণ জানতে চাওয়ায় ভগবতী দেবী বললেন ,এই গাঁয়ে তাঁর অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যাদের এই ঠান্ডায় পরার মত কিছুই নেই ,তিনি সেখানে এই গরম চাদর কিভাবে পরবেন ? বিদ্যাসাগর তারপর প্রত্যেকের জন্যে গরম চাদর এনে দিয়েছিলেন !
লিখতে বসেছিলাম শীতের কথা ,শীতের সুখের কথা ,নিবিড় লেপের ভেতর পাশ ফিরতেই যাদের গালে লাগে সঙ্গিনীর তপ্ত নিঃশ্বাস -তাদের কথা ! কিন্তু জীবনের মতো কথাও কথা রাখে না , অন্যদিকে ঘুরে যায় ! কিন্তু ঘুরে গিয়েও বা কী হয় ? যদি কবিতা হয় কিম্বা একটি সম্পাদকীয় , তাতেই বা কী !! কবিতা কি লেপের ওম হতে পারে ? কারোর মাথার ওপর ছাউনি ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন