চলে গেল এক ক্ষেপচুরিয়াস বছর
চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য
একটা ক্ষেপচুরিয়াস বছর বুঝি শেষ হল।
বাপ রে বাপ, সেই শুরু থেকেই কেমন যেন ক্ষ্যাপা ষাড়ের মত মানুষকে ছুটিয়ে নিয়ে চলেছিল ২০১৩ বছরটা! অসুস্থ হয়ে বাড়িতে বসে আছি, হঠাৎ হাজির সন্দিহানবাবু। আসল নাম সন্দীপন, কিন্তু সব কিছুতেই তাঁর নিজস্ব ভাবটা বজায় রাখতে হলে সন্দিহান-টাই ঠিক। এসেই বললেন, “বলেছিলাম না, এতা খুব খারাপ বছর যাবে!”
বললাম, বলেছিলেন বুঝি? কেনো বলেছিলেন, তা যে মনে নেই!
জবাব পেলাম, “মশাই দেখছেন না, শেষ সংখ্যাদুটি ১৩, মানেই আনলাকি। এক বছরে দুটু মাসের ১৩ তারিখ আবার শুক্রবার পড়েছে, মানে ব্ল্যাক ফ্রাইডে”।
বুঝুন অবস্থা! এই বছরেই যে ব্লু মুন নাইটও হয়েছে, সেতা বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছেন। আমার তো এই বছরটা বেশ লাগল। সমস্ত মানুষকে একদম তুড়িয় ক্ষেপচুরিয়াস মেজাজে এনে দিয়ে গেছে। সেই যে আন্না হাজারের অনশনের পর থেকে দিল্লির যুবকেরা ক্ষেপে ছিল, নির্ভয়া কেসে না যেন জ্বলে ঊঠল। বছরের শুরুটাই হল এক্কেবারে ক্ষেপচুরিয়াস। তড়িঘড়ি নতুন আইন বানানো হল, নেতা-মন্ত্রীরা চড়-থাপ্পড়ও খেলেন।
আর তার রেশ এসে পড়ল কলকাতার পথেঘাটে। বারাসাত, গাইঘাটা তো ছিলই; এসে গেল কামদুনি, খড়জুনা, গেদে…। ব্যস, আপার ক্ষেপার পালা। রাজ্যের মানুষ ক্ষেপে পথে পথে কত কিছুই না করল। মিছিল-টিছিল হল আর শেষ হাসিটা হাসল ক্ষমতার জোর। কামদুনির অপরাজিতার পরিবার চাপের কাছে তাকাকেই বাপ ডাকতে বাধ্য হল। গ্রামবাসী তো তা মেনে নেবে না, তাঁরা প্রতিবাদীওই রইলেন। নিহত মেয়েটির পরিবার গ্রাম ছেরে কোথায় যে কপ্পুরের ময় ভ্যানিশ হল, কে জানে!
এ সবের মধ্যেই দার্জিলিং-এর পাহাড়ে খানিক ক্ষেপচুরিয়াস কারবার হহে গেল। জিটিএ নামের খুড়োর কল থেকে পদত্যাগ করে ফেললেন বিমল গুরুং। তাঁর দল তো সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের শাসকদের জানিয়ে দিল ‘সমর্থন তুলে নিলাম’। দরকারের তাঁতে কিছুই যায় আসে না। রাতারাতি বস্তাবন্দী সব মামলা মাটি খুঁড়ে কঙ্কাল উদ্ধারের মত বার করে এনে শুরু হল গুরুংপন্থীদের জেলে পাঠানো। ধন্য গণতন্ত্র, ধন্য তাঁর ক্ষেপচুরিয়াস চেহারা। কয়েক মাসেই বিদ্রোহ ঠাণ্ডা, শীত আসছে যে। শীতের পর ভোট এলে বোঝা যাবে “কোন দিকে কার পাল্লা ভারি”।
ভেবেছিলাম, একটু বুঝি রেস্ট পাব। হায় হায়! আলুর দাম গেল চন্দ্রাভিযানে। সরকার সৎ দাম বাঁধে, দাম ততই বাড়ে। বন্ধ হল অন্য রাজ্যে আলু রফতানি, শুরু হল মামলা। এই সুযোগে “বেগুন গেল বাকিংহামে/ ঢ্যারস চলে ত্রিনিদাদ/ মুসুর গেল কোপেনহেগেন/ পটল গেল পেট্রোগ্রাড।” – না না, এটা আমার না, উত্তরপাড়ার পল্টু চ্যাটার্জিরা ট্রেনের কামরা মাতিয়ে এই গান গাইতে গাইতে হাওড়া যেতেন সেই দিনগুলিতে। ওদিকে দিল্লির ঘোষণায় বোঝা গেল, দাম বাড়ছে সব জিনিষের আরে সর্বত্র। কলকাতায় একটু বেশী। তাঁর জেরে মুদ্রাস্ফীতির হার ‘ডাবল ডিজিটে’ গিয়ে অর্থমন্ত্রী আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের নাকে মাছি হয়ে বসে রইল।
শোনা গেল, ঠাণ্ডা পড়লেই দাম কমবে। অতএব নো চিন্তা, ডু ফুর্তি’। সরকারের ঘোষণায় সন্দিগ্ধ সন্দিহানবাবু বললেন, “আরে বাবা, শীত পড়লে যে সব ফসল অঢেল চলে আসবে, নতুন আলুও আসবে – এটা কে না জানে?” মাস দুয়েক ঘাসপাতা আর সাবু-বার্লি খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারলেই সস্তা সবজি – এই তত্ত্বও বাজারে এল। ততদিনে শীতের সবজি হাজির।
কিন্তু তাতেও কি সব সমস্যা মিটল? চারপাশেই তো ক্ষেপচুরিয়াস হাল। দিল্লির ভোটে বোঝা গেল মানুষ কতটা ক্ষেপেছিল সব দল আর তাঁর নেতাদের উপর। আম আদমি পার্টি জিতে গেল, কিন্তু দু-নম্বরে। তিন নম্বর এবার এক নম্বরকে রুখতে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আম আদমি পার্টিকেই সেই রাজ্যের ক্ষমতায় নিয়ে এল। রাজস্থানের লোকারেও ক্ষমতার বদল ঘটালো। দেশের মাথা হওয়ার রোগে কাবু নামোজির লোকেরা বলে বসল, নামোর ম্যাজিকে না কি এসব হল। হল বুঝি? বুঝি না তো। সন্দিহানবাবুর সঙ্গে থেকে থেকে দেখছি আমারও চরিত্রের দোষ হয়ে যাচ্ছে। আগে এতগুলি রাজ্যে ভোটের প্রচারে নামো গেলেন আর হেরে এলেন কেন? উত্তরপ্রদেশেও তো হারতে হয়েছে। দক্ষিণ ভারতে পা রাখার জায়গাই নেই, পূবে আসাম ছাড়া এক গণ্ডা আসনে জেতার ক্ষমতা নেই, বিহারে ক্ষমতায় থেকেও হারর মুখে – নামো ম্যাজিক ফ্লপ না করে।
চোখ অন্যদিকে ঘোরাতেই দেখি বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর হাল ভোট করাবেই, সরকার ক্ষেপচুরিয়াস। ক্ষেপচুরিয়াস বিরোঢী নেত্রী গোলাপী বিবি ওরফে বেগল জিয়া। ভোট রুখতেই হবে, তাই সারা সপ্তাহ ধরে কেবল হরতাল আর আবরোধ দাও, ট্রাক-বাস পোড়াও, মানুষ মারো-কাটো। জামাতীদের হাল খারাপ করে ছেড়েছে আদালত। অসত্য ভাষণ, মিত্যা তথ্য ইত্যাদিনানা কারণে তাঁদের দলের রেজিস্ট্রেশনই বাতিল। তাঁরা এখন ভোল বদলে সব বিএনপি। বাংলাদেশের লোক আড়ালে তাঁদের বলে ‘তলোয়ার পার্টি’। শেষ পর্যন্ত কি হয় জানতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ কেটে যাবে।
যাক, যাক। তারপর নতুন কথা বলে যাবে। আগামী বছরটা কতটা ক্ষেপচুরিয়ান হবে, সেটা জানতে সন্দিহানবাবুকে পয়লা জানুয়ারি ডাকব ভাবছি। আপনারা কি বলেন?
একটা ক্ষেপচুরিয়াস বছর বুঝি শেষ হল।
বাপ রে বাপ, সেই শুরু থেকেই কেমন যেন ক্ষ্যাপা ষাড়ের মত মানুষকে ছুটিয়ে নিয়ে চলেছিল ২০১৩ বছরটা! অসুস্থ হয়ে বাড়িতে বসে আছি, হঠাৎ হাজির সন্দিহানবাবু। আসল নাম সন্দীপন, কিন্তু সব কিছুতেই তাঁর নিজস্ব ভাবটা বজায় রাখতে হলে সন্দিহান-টাই ঠিক। এসেই বললেন, “বলেছিলাম না, এতা খুব খারাপ বছর যাবে!”
বললাম, বলেছিলেন বুঝি? কেনো বলেছিলেন, তা যে মনে নেই!
জবাব পেলাম, “মশাই দেখছেন না, শেষ সংখ্যাদুটি ১৩, মানেই আনলাকি। এক বছরে দুটু মাসের ১৩ তারিখ আবার শুক্রবার পড়েছে, মানে ব্ল্যাক ফ্রাইডে”।
বুঝুন অবস্থা! এই বছরেই যে ব্লু মুন নাইটও হয়েছে, সেতা বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছেন। আমার তো এই বছরটা বেশ লাগল। সমস্ত মানুষকে একদম তুড়িয় ক্ষেপচুরিয়াস মেজাজে এনে দিয়ে গেছে। সেই যে আন্না হাজারের অনশনের পর থেকে দিল্লির যুবকেরা ক্ষেপে ছিল, নির্ভয়া কেসে না যেন জ্বলে ঊঠল। বছরের শুরুটাই হল এক্কেবারে ক্ষেপচুরিয়াস। তড়িঘড়ি নতুন আইন বানানো হল, নেতা-মন্ত্রীরা চড়-থাপ্পড়ও খেলেন।
আর তার রেশ এসে পড়ল কলকাতার পথেঘাটে। বারাসাত, গাইঘাটা তো ছিলই; এসে গেল কামদুনি, খড়জুনা, গেদে…। ব্যস, আপার ক্ষেপার পালা। রাজ্যের মানুষ ক্ষেপে পথে পথে কত কিছুই না করল। মিছিল-টিছিল হল আর শেষ হাসিটা হাসল ক্ষমতার জোর। কামদুনির অপরাজিতার পরিবার চাপের কাছে তাকাকেই বাপ ডাকতে বাধ্য হল। গ্রামবাসী তো তা মেনে নেবে না, তাঁরা প্রতিবাদীওই রইলেন। নিহত মেয়েটির পরিবার গ্রাম ছেরে কোথায় যে কপ্পুরের ময় ভ্যানিশ হল, কে জানে!
এ সবের মধ্যেই দার্জিলিং-এর পাহাড়ে খানিক ক্ষেপচুরিয়াস কারবার হহে গেল। জিটিএ নামের খুড়োর কল থেকে পদত্যাগ করে ফেললেন বিমল গুরুং। তাঁর দল তো সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের শাসকদের জানিয়ে দিল ‘সমর্থন তুলে নিলাম’। দরকারের তাঁতে কিছুই যায় আসে না। রাতারাতি বস্তাবন্দী সব মামলা মাটি খুঁড়ে কঙ্কাল উদ্ধারের মত বার করে এনে শুরু হল গুরুংপন্থীদের জেলে পাঠানো। ধন্য গণতন্ত্র, ধন্য তাঁর ক্ষেপচুরিয়াস চেহারা। কয়েক মাসেই বিদ্রোহ ঠাণ্ডা, শীত আসছে যে। শীতের পর ভোট এলে বোঝা যাবে “কোন দিকে কার পাল্লা ভারি”।
ভেবেছিলাম, একটু বুঝি রেস্ট পাব। হায় হায়! আলুর দাম গেল চন্দ্রাভিযানে। সরকার সৎ দাম বাঁধে, দাম ততই বাড়ে। বন্ধ হল অন্য রাজ্যে আলু রফতানি, শুরু হল মামলা। এই সুযোগে “বেগুন গেল বাকিংহামে/ ঢ্যারস চলে ত্রিনিদাদ/ মুসুর গেল কোপেনহেগেন/ পটল গেল পেট্রোগ্রাড।” – না না, এটা আমার না, উত্তরপাড়ার পল্টু চ্যাটার্জিরা ট্রেনের কামরা মাতিয়ে এই গান গাইতে গাইতে হাওড়া যেতেন সেই দিনগুলিতে। ওদিকে দিল্লির ঘোষণায় বোঝা গেল, দাম বাড়ছে সব জিনিষের আরে সর্বত্র। কলকাতায় একটু বেশী। তাঁর জেরে মুদ্রাস্ফীতির হার ‘ডাবল ডিজিটে’ গিয়ে অর্থমন্ত্রী আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের নাকে মাছি হয়ে বসে রইল।
শোনা গেল, ঠাণ্ডা পড়লেই দাম কমবে। অতএব নো চিন্তা, ডু ফুর্তি’। সরকারের ঘোষণায় সন্দিগ্ধ সন্দিহানবাবু বললেন, “আরে বাবা, শীত পড়লে যে সব ফসল অঢেল চলে আসবে, নতুন আলুও আসবে – এটা কে না জানে?” মাস দুয়েক ঘাসপাতা আর সাবু-বার্লি খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারলেই সস্তা সবজি – এই তত্ত্বও বাজারে এল। ততদিনে শীতের সবজি হাজির।
কিন্তু তাতেও কি সব সমস্যা মিটল? চারপাশেই তো ক্ষেপচুরিয়াস হাল। দিল্লির ভোটে বোঝা গেল মানুষ কতটা ক্ষেপেছিল সব দল আর তাঁর নেতাদের উপর। আম আদমি পার্টি জিতে গেল, কিন্তু দু-নম্বরে। তিন নম্বর এবার এক নম্বরকে রুখতে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আম আদমি পার্টিকেই সেই রাজ্যের ক্ষমতায় নিয়ে এল। রাজস্থানের লোকারেও ক্ষমতার বদল ঘটালো। দেশের মাথা হওয়ার রোগে কাবু নামোজির লোকেরা বলে বসল, নামোর ম্যাজিকে না কি এসব হল। হল বুঝি? বুঝি না তো। সন্দিহানবাবুর সঙ্গে থেকে থেকে দেখছি আমারও চরিত্রের দোষ হয়ে যাচ্ছে। আগে এতগুলি রাজ্যে ভোটের প্রচারে নামো গেলেন আর হেরে এলেন কেন? উত্তরপ্রদেশেও তো হারতে হয়েছে। দক্ষিণ ভারতে পা রাখার জায়গাই নেই, পূবে আসাম ছাড়া এক গণ্ডা আসনে জেতার ক্ষমতা নেই, বিহারে ক্ষমতায় থেকেও হারর মুখে – নামো ম্যাজিক ফ্লপ না করে।
চোখ অন্যদিকে ঘোরাতেই দেখি বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর হাল ভোট করাবেই, সরকার ক্ষেপচুরিয়াস। ক্ষেপচুরিয়াস বিরোঢী নেত্রী গোলাপী বিবি ওরফে বেগল জিয়া। ভোট রুখতেই হবে, তাই সারা সপ্তাহ ধরে কেবল হরতাল আর আবরোধ দাও, ট্রাক-বাস পোড়াও, মানুষ মারো-কাটো। জামাতীদের হাল খারাপ করে ছেড়েছে আদালত। অসত্য ভাষণ, মিত্যা তথ্য ইত্যাদিনানা কারণে তাঁদের দলের রেজিস্ট্রেশনই বাতিল। তাঁরা এখন ভোল বদলে সব বিএনপি। বাংলাদেশের লোক আড়ালে তাঁদের বলে ‘তলোয়ার পার্টি’। শেষ পর্যন্ত কি হয় জানতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ কেটে যাবে।
যাক, যাক। তারপর নতুন কথা বলে যাবে। আগামী বছরটা কতটা ক্ষেপচুরিয়ান হবে, সেটা জানতে সন্দিহানবাবুকে পয়লা জানুয়ারি ডাকব ভাবছি। আপনারা কি বলেন?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন