আমরা তখন বৃষ্টিফাইড নাহিয়ান ফাহিম
পূর্বিতা টাওয়ার
তুমি পনের তলা, পূর্বিতা টাওয়ার। আমি বেজমেন্ট, যথেষ্ট কাওয়ার্ড।
তোমার বারান্দায় থাকার কথা, কই? গেটের বাইরে, দূরে রাস্তার ওপারে, অপেক্ষার ঝিমলাট্টিম সই।
বার শনি, আষাঢ়স্য, কিন্তু মিস প্রকৃতি আপনি আমার সঙ্গে একমত তো?
‘ঋতু’ শব্দটায় এখন যে শুধুই নারীসত্ব?
নাহলে আগুনমুখো আকাশ কেন আজকেই সূর্য সূর্য বিউটি।
(ও ভাই হাওয়া, আমি কি কেউ না, তোর শুধু পাতা দোলানোই ডিউটি?)
গ্যাভার্ডিন, উস্কো চুল, মনছবির সঙ্গে যা। খয়েরিচেক পাঞ্জাবিÑ সূতির, তাও পিঠ ভেজা।
কিন্তু হাওয়া বলতেও লু-হাওয়া, তার সঙ্গী বলতে ধুলো, মোটরপার্টস দোকান আর পিপ-পিপ গাড়ির ন্যাড়া হর্ণ।
হিন্দি গান বাজাচ্ছে কেউ, তুম পাস আয়ে... (শালা আগে জানলে ইয়াহা আতা কৌন?)।
কাঁপা হাতের টেক্সটঃ ‘শোনো, তোমার বাড়ির সামনে। সিগারেট ধরানো যাবে তো?’
না কোনও রিপ্লাই নেই, কলও ধরছো না, উপেক্ষার লাল ফোস্কা ছিটকে এসে গায়ে লাগছেÑ অপমান, সব মাতালের তন!
ফলে, সিগারেট প্রকৃত বন্ধু, ছাতাদোকানের বেঞ্চে একটা থেকে দুই থেকে তিন, চার...
তোমাকে ছুঁতে না পেরে নিজেকে পুড়িয়ে দিচ্ছি। সঙ্গে চা, খুব কড়া লিকার।
চোখ পড়ছে দোকানে দোকানে। আদনান কার ডেকোরেটর। লিয়া কার ডেকোরেটর।
মন পড়ছে এখানে ওখানে। আমি কার? দ্যাখ রে তোর, আমি কার? দ্যাখ রে তোর...
এমন সময় চায়ের কাপে টুপটুপ। বিলবোর্ডের মেয়ে বলল, চুপ চুপ! কী আশ্চর্য, বৃষ্টি এল? এমনিই? এখন আমি কার ছে যাই, প্রেম নিই? হাওয়াও এসে হাত বুলাচ্ছে পিঠে। হা করেছি, বৃষ্টি এমন মিঠে...এবং তোমার SMS এর শব্দt ‘আসছি। আমি আহাম্মকের হদ্দ, ‘সামনে থাকো Sweet & Sugar এর’, কিন্তু আমি মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে গেছি রো ডিভাইডারের... রাস্তা ভর্তি গাড়ি, গাড়ি ভর্তি হর্ণ, হিন্দি গান বাজাচ্ছে কেউ, দেখো আয়া ডন, দেখো আয়া ডন... বৃষ্টি খাচ্ছি বৃষ্টি এমন মিঠে, তুমি পেছন থেকে হাত রেখেছ পিঠে...
চেন টানলো দোকানি-মেয়ে, মাথার ভিতর কুঝিকঝিক ট্রেন।
‘ভাংতি নাই, লজেন্স লইবেন?’
চেন টানলো কাঠরোদ্দুর, লাল পতাকা দেখাতে এলো ধুলোর মেহফিল...
কিন্তু আমরা, আমরা তখন শতাব্দী পার করব বলে রিকশার সিট ভাগ করেছি, হুড ফেলেছি, সামনে হাতিরঝিল...
আমরা তখন বৃষ্টিফাইড, আমরা তখন নীলের মধ্যে অন্যরকম নীল...
তোমাকে বিশ্বাস নেই ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ, তোমাকে বিশ্বাস নেই ঠাকুর। সেই কবে কোন ছুটিবৃষ্টিবারে আমাদের সন্ধিপত্রলিখিত অঙ্গীকারঃ গীতবিতান এক খতম, বিনিময়ে আমার ছাদবন্ধুনীর হৃৎবিতান থেকে তোমার চিরতরে সরে যাওয়া চাই! আর তুমি ঠাকুর, কী বিচ্ছিরি ব্যাপার, লোকে শুনলে হাসবে− এক ধাক্কায় আমাকেও ছাদ থেকে হুড়মুড় ফেলে দিলে তব প্রেমে, ভয়ডরহীন। ফলে, আমরা দুজনেই, মানে আমি আর বন্ধুনী, তোহে বাসিবার ছলে পৃথিবীরে ভালবাসিলাম। আমাদের চেনাই যাচ্ছিল না— মধ্যরাতে কুকুরের কান্না শুনে ভয়ের বদলে আমাদের ভেতরদেয়ালে বেড়ে উঠল শোক, তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ওষ্ঠ চুম্বনের সুযোগ ঠেলে আমরা প্রার্থনায় নত, হে নাথ... তারপর একদিন সকালে, ঘুম ভেঙে, পৃথিবীর সমস্ত নারীকে মৎসকন্যা জেনে যেদিন পৃথিবীর প্রত্যেকটি পুরুষের নাম হতে যাচ্ছিল জলদাস, তুমি মাইরি কথা রাখলে ঠাকুর।
সে ছিলই, কিন্তু তেমন সাকী না পেলে, তুমি জানো, নেশা সরে যায়, মাথা থেকে সরে যায় তাজ,
কেবলই পানপাত্রে যেরকম মুশায়রা নারাজ।
আর এখন, এই এত বছরের পরে, নবঘন ছুটিবৃষ্টিবারে, মম একলামির মধ্যেও তুমি ঢুকে পড়ছ বেয়াড়ানাছোড়। মার জখমে নাড়ছ তোমার নিমফুল। রাফখাতা থেকে মম শব্দ হাপিস করে ক্যালাচ্ছ তুমি। মধ্যরাতে নিজেরই কান্না শুনে নিশি পাওয়া গলায় আমিই কি চ্যাঁচাচ্ছি, হেই রবিন, খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু! আর তুমুল বৃষ্টির মধ্যে প্রার্থনার সুযোগ ঠেলে নিজেরই ওষ্ঠের দিকে, রে অনাথ...
তোমাতে বিষ শ্বাস নিই, ঠাকুর...
খোয়াই
ঠিক যখন দুপুর তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে ফিরছিল বিকেলবাড়িতে, সে দেখল একটা বৃষ্টিপীড়িত কদম গাছ হন্যে খুঁজছিলাম আমি। ফাঁকা গলি, উড়ন্ত পলিথিন, লালচে দাঁত বের হওয়া পাঁচিল আর একটা ডোবাÑ এসব দেখতে দেখতে বুকটা ধুধু করছিল। কচুরিপানার ভেজা সংসার, শুকনো খড়গাদা, উপচে ওঠা ড্রেন পার হয়ে তারপর একটা বিশাল মাঠ। কিন্তু তুমি কোথায়, হে ঝাঁকড়ামাথা কদম্বগাছ? নাই, কোত্থাও নাই। আমি উদভ্রান্ত পিতা, পাতানো কন্যা যাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি মনে মনে অভিমানের ইংরেজি হাতরাচ্ছি।
এমনও সময় দূরের খোয়াই থেকে কেউ একজন, যে বৃষ্টি আনবার ম্যাজিক জানত, তার মন্ত্রে কাজ হল। আর ওরা বেড়াতে এসেও কী স্বার্থপর সমস্ত মাঠকে একলা ফেলে সরে গেল! ওরা মানে পিঠেহাত প্রেমিকপ্রেমিকাÑ যাদের ওষ্ঠে একে অপরের অশ্রু লেগে আছে, আর স্বাস্থ্যসুচেতা মহিলাসংঘ, আর টেপটেনিসবালকেরাÑ ওরা মানে ওরা সব্বাই। আর তখন ঘাড় নিচু কিনারাবেঞ্চিরা, গাছবন্ধু, ভীড় করে আসা ঘাস আর আমি, এই আমাদের মঞ্চপ্রস্তাবনা। আর আমার হাতের পাতায় বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি। দৌড়ে পালাবার বদলে যদি শুয়ে পড়ি? লোকে বুঝে ফেলবে, এ ছেলেটা আস্ত উজবুক? বুঝে ফেলবে, একটা কদমগাছের সাহচর্যের অভাবে এ ছেলেটা কী ভীষণ ব্যাধিগ্রস্ত? আর শুয়ে পড়তেই কে জানে কোত্থেকে এত হাওয়া এত বৃষ্টিকণা, চোখ খুলে রাখাই যাচ্ছিল না। মুশকিল! একটু পর খুলতেই ঝাঁকড়ামাথা, কদমথোকা সমেত। তুমি কোথা থেকে এলে বন্ধু? তোমাকে অর্ধেক জীবন দেখতে পাইনিÑ একটা পুরো অর্ধজীবন।
বোকাটা আস্তে আস্তে কান্নায় নামল, আমার কাঁধে থুতনি, আর আমার মুছে যাচ্ছিল কালশিটেসমূহ, আহত পাঞ্জাবি থেকে অন্য কোনো ভরসাহীনার চিহ্নদাগ, ছড়ানো বোতামের নিচে হাহা-আস্তরণ। দূরের খোয়াই থেকে ম্যাজিশিয়ান বললেন, বন্ধুরা মিলিত হলে নিভৃত উঠোন ভরে যায়। আমরা হাসলাম। আলিঙ্গন মেঘ। জল আলিঙ্গন। তারপর ঠিক যখন বিকেল তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে ফিরছিল সন্ধ্যাগ্রামে, সে দেখল চোখ মুছে স্নেহপীড়িত কন্যাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ছিলাম আমি, ঝিরি! ঝিরি!
পূর্বিতা টাওয়ার
তুমি পনের তলা, পূর্বিতা টাওয়ার। আমি বেজমেন্ট, যথেষ্ট কাওয়ার্ড।
তোমার বারান্দায় থাকার কথা, কই? গেটের বাইরে, দূরে রাস্তার ওপারে, অপেক্ষার ঝিমলাট্টিম সই।
বার শনি, আষাঢ়স্য, কিন্তু মিস প্রকৃতি আপনি আমার সঙ্গে একমত তো?
‘ঋতু’ শব্দটায় এখন যে শুধুই নারীসত্ব?
নাহলে আগুনমুখো আকাশ কেন আজকেই সূর্য সূর্য বিউটি।
(ও ভাই হাওয়া, আমি কি কেউ না, তোর শুধু পাতা দোলানোই ডিউটি?)
গ্যাভার্ডিন, উস্কো চুল, মনছবির সঙ্গে যা। খয়েরিচেক পাঞ্জাবিÑ সূতির, তাও পিঠ ভেজা।
কিন্তু হাওয়া বলতেও লু-হাওয়া, তার সঙ্গী বলতে ধুলো, মোটরপার্টস দোকান আর পিপ-পিপ গাড়ির ন্যাড়া হর্ণ।
হিন্দি গান বাজাচ্ছে কেউ, তুম পাস আয়ে... (শালা আগে জানলে ইয়াহা আতা কৌন?)।
কাঁপা হাতের টেক্সটঃ ‘শোনো, তোমার বাড়ির সামনে। সিগারেট ধরানো যাবে তো?’
না কোনও রিপ্লাই নেই, কলও ধরছো না, উপেক্ষার লাল ফোস্কা ছিটকে এসে গায়ে লাগছেÑ অপমান, সব মাতালের তন!
ফলে, সিগারেট প্রকৃত বন্ধু, ছাতাদোকানের বেঞ্চে একটা থেকে দুই থেকে তিন, চার...
তোমাকে ছুঁতে না পেরে নিজেকে পুড়িয়ে দিচ্ছি। সঙ্গে চা, খুব কড়া লিকার।
চোখ পড়ছে দোকানে দোকানে। আদনান কার ডেকোরেটর। লিয়া কার ডেকোরেটর।
মন পড়ছে এখানে ওখানে। আমি কার? দ্যাখ রে তোর, আমি কার? দ্যাখ রে তোর...
এমন সময় চায়ের কাপে টুপটুপ। বিলবোর্ডের মেয়ে বলল, চুপ চুপ! কী আশ্চর্য, বৃষ্টি এল? এমনিই? এখন আমি কার ছে যাই, প্রেম নিই? হাওয়াও এসে হাত বুলাচ্ছে পিঠে। হা করেছি, বৃষ্টি এমন মিঠে...এবং তোমার SMS এর শব্দt ‘আসছি। আমি আহাম্মকের হদ্দ, ‘সামনে থাকো Sweet & Sugar এর’, কিন্তু আমি মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে গেছি রো ডিভাইডারের... রাস্তা ভর্তি গাড়ি, গাড়ি ভর্তি হর্ণ, হিন্দি গান বাজাচ্ছে কেউ, দেখো আয়া ডন, দেখো আয়া ডন... বৃষ্টি খাচ্ছি বৃষ্টি এমন মিঠে, তুমি পেছন থেকে হাত রেখেছ পিঠে...
চেন টানলো দোকানি-মেয়ে, মাথার ভিতর কুঝিকঝিক ট্রেন।
‘ভাংতি নাই, লজেন্স লইবেন?’
চেন টানলো কাঠরোদ্দুর, লাল পতাকা দেখাতে এলো ধুলোর মেহফিল...
কিন্তু আমরা, আমরা তখন শতাব্দী পার করব বলে রিকশার সিট ভাগ করেছি, হুড ফেলেছি, সামনে হাতিরঝিল...
আমরা তখন বৃষ্টিফাইড, আমরা তখন নীলের মধ্যে অন্যরকম নীল...
তোমাকে বিশ্বাস নেই ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ, তোমাকে বিশ্বাস নেই ঠাকুর। সেই কবে কোন ছুটিবৃষ্টিবারে আমাদের সন্ধিপত্রলিখিত অঙ্গীকারঃ গীতবিতান এক খতম, বিনিময়ে আমার ছাদবন্ধুনীর হৃৎবিতান থেকে তোমার চিরতরে সরে যাওয়া চাই! আর তুমি ঠাকুর, কী বিচ্ছিরি ব্যাপার, লোকে শুনলে হাসবে− এক ধাক্কায় আমাকেও ছাদ থেকে হুড়মুড় ফেলে দিলে তব প্রেমে, ভয়ডরহীন। ফলে, আমরা দুজনেই, মানে আমি আর বন্ধুনী, তোহে বাসিবার ছলে পৃথিবীরে ভালবাসিলাম। আমাদের চেনাই যাচ্ছিল না— মধ্যরাতে কুকুরের কান্না শুনে ভয়ের বদলে আমাদের ভেতরদেয়ালে বেড়ে উঠল শোক, তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ওষ্ঠ চুম্বনের সুযোগ ঠেলে আমরা প্রার্থনায় নত, হে নাথ... তারপর একদিন সকালে, ঘুম ভেঙে, পৃথিবীর সমস্ত নারীকে মৎসকন্যা জেনে যেদিন পৃথিবীর প্রত্যেকটি পুরুষের নাম হতে যাচ্ছিল জলদাস, তুমি মাইরি কথা রাখলে ঠাকুর।
সে ছিলই, কিন্তু তেমন সাকী না পেলে, তুমি জানো, নেশা সরে যায়, মাথা থেকে সরে যায় তাজ,
কেবলই পানপাত্রে যেরকম মুশায়রা নারাজ।
আর এখন, এই এত বছরের পরে, নবঘন ছুটিবৃষ্টিবারে, মম একলামির মধ্যেও তুমি ঢুকে পড়ছ বেয়াড়ানাছোড়। মার জখমে নাড়ছ তোমার নিমফুল। রাফখাতা থেকে মম শব্দ হাপিস করে ক্যালাচ্ছ তুমি। মধ্যরাতে নিজেরই কান্না শুনে নিশি পাওয়া গলায় আমিই কি চ্যাঁচাচ্ছি, হেই রবিন, খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু! আর তুমুল বৃষ্টির মধ্যে প্রার্থনার সুযোগ ঠেলে নিজেরই ওষ্ঠের দিকে, রে অনাথ...
তোমাতে বিষ শ্বাস নিই, ঠাকুর...
খোয়াই
ঠিক যখন দুপুর তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে ফিরছিল বিকেলবাড়িতে, সে দেখল একটা বৃষ্টিপীড়িত কদম গাছ হন্যে খুঁজছিলাম আমি। ফাঁকা গলি, উড়ন্ত পলিথিন, লালচে দাঁত বের হওয়া পাঁচিল আর একটা ডোবাÑ এসব দেখতে দেখতে বুকটা ধুধু করছিল। কচুরিপানার ভেজা সংসার, শুকনো খড়গাদা, উপচে ওঠা ড্রেন পার হয়ে তারপর একটা বিশাল মাঠ। কিন্তু তুমি কোথায়, হে ঝাঁকড়ামাথা কদম্বগাছ? নাই, কোত্থাও নাই। আমি উদভ্রান্ত পিতা, পাতানো কন্যা যাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি মনে মনে অভিমানের ইংরেজি হাতরাচ্ছি।
এমনও সময় দূরের খোয়াই থেকে কেউ একজন, যে বৃষ্টি আনবার ম্যাজিক জানত, তার মন্ত্রে কাজ হল। আর ওরা বেড়াতে এসেও কী স্বার্থপর সমস্ত মাঠকে একলা ফেলে সরে গেল! ওরা মানে পিঠেহাত প্রেমিকপ্রেমিকাÑ যাদের ওষ্ঠে একে অপরের অশ্রু লেগে আছে, আর স্বাস্থ্যসুচেতা মহিলাসংঘ, আর টেপটেনিসবালকেরাÑ ওরা মানে ওরা সব্বাই। আর তখন ঘাড় নিচু কিনারাবেঞ্চিরা, গাছবন্ধু, ভীড় করে আসা ঘাস আর আমি, এই আমাদের মঞ্চপ্রস্তাবনা। আর আমার হাতের পাতায় বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি। দৌড়ে পালাবার বদলে যদি শুয়ে পড়ি? লোকে বুঝে ফেলবে, এ ছেলেটা আস্ত উজবুক? বুঝে ফেলবে, একটা কদমগাছের সাহচর্যের অভাবে এ ছেলেটা কী ভীষণ ব্যাধিগ্রস্ত? আর শুয়ে পড়তেই কে জানে কোত্থেকে এত হাওয়া এত বৃষ্টিকণা, চোখ খুলে রাখাই যাচ্ছিল না। মুশকিল! একটু পর খুলতেই ঝাঁকড়ামাথা, কদমথোকা সমেত। তুমি কোথা থেকে এলে বন্ধু? তোমাকে অর্ধেক জীবন দেখতে পাইনিÑ একটা পুরো অর্ধজীবন।
বোকাটা আস্তে আস্তে কান্নায় নামল, আমার কাঁধে থুতনি, আর আমার মুছে যাচ্ছিল কালশিটেসমূহ, আহত পাঞ্জাবি থেকে অন্য কোনো ভরসাহীনার চিহ্নদাগ, ছড়ানো বোতামের নিচে হাহা-আস্তরণ। দূরের খোয়াই থেকে ম্যাজিশিয়ান বললেন, বন্ধুরা মিলিত হলে নিভৃত উঠোন ভরে যায়। আমরা হাসলাম। আলিঙ্গন মেঘ। জল আলিঙ্গন। তারপর ঠিক যখন বিকেল তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে ফিরছিল সন্ধ্যাগ্রামে, সে দেখল চোখ মুছে স্নেহপীড়িত কন্যাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ছিলাম আমি, ঝিরি! ঝিরি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন