মানুষজনের গল্প
সরদার ফারুক
সীমান্তের কাছের এক মফস্বল শহর । থানা শহরে যেরকম থাকে - একটা ছন্নছাড়া রেলস্টেশন ,ঘেয়ো কুকুরের ঘোরাঘুরি , ব্যস্ত বাস স্ট্যান্ডের পাশে চা সিঙ্গাড়ার দোকান ,কয়েকটা টিনের বেড়ার আড়তের পরেই একমাত্র সিনেমা হল । হলে শো শুরু হবার আগে দর্শক টানতে মাইকে গান বাজে - তুমি যে ডাকাত , তুমি যে চোর / চুরি করেছো হৃদয় মোর ।কেবলমাত্র আজানের সময়ে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ।স্টেশনের দিকের রাস্তায় কিছুদূর এগুলেই বড় বড় শিরিষের তোরণের পাশেই করাতকল ।করাতকলের লাগোয়া চায়ের দোকানটাই ইয়াসিনের ।দুপুরবেলা ইয়াসিনের দোকানে রাতজাগা মানুষেরা আস্তে আস্তে অসময়ের ঘুম থেকে উঠে ভিড় জমায় । আজকের আড্ডাটা অনেকক্ষণ জ্বাল দেয়া দুধের মতোই ক্রমশ গাঢ় আর স্বাদু হয়ে উঠছে ।মমিনের বউয়ের লুজ ক্যারেকটারের গল্প (মমিন আড্ডায় অনুপস্হিত ) ,দেশে কেয়ামতের আলামতের নানাবিধ বিবরণ থেকে আড্ডার বিষয়বস্তু এখন পুলিশ সংক্রান্ত নানা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনার দিকে মোড় নিয়েছে । দেখা যাচ্ছে প্রায় সবারই একটা করে বলবার মতো দারুণ সত্য ঘটনা আছে ,আর একজন আরেকজনের আগে সেই গল্প বলার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে ।সম্মিলিত কোলাহলে আড্ডা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে বেল্টু মিয়া আর বসে থাকতে পারেনা , ফ্যাঁসফেঁসে গলায় চেঁচিয়ে ওঠে -‘ সুমুন্দির ছেইলেরা থাম , তুরা কি মানসির পয়দা ? একজন একজন কইরে কতি পারিসনে বাড়া ?’
ধমকে কাজ হয় । বেল্টু মিয়াকে সমীহ না করে উপায় নেই - কষ্টিপাথরের মতো নিকষকালো বিশাল দেহ , ধবধবে সাদা বুকপকেটওয়ালা পাঞ্জাবীর ফাঁক থেকে উঁকি দেয়া গোল্ডলিফের প্যাকেট আর পাঁচশো টাকার নোট তাকে একটা অন্যরকম মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে ।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর ল্যাংড়া আজিবর গলা খাকারি দ্যায় , মনে হয় কোন একটা কথা বলার জন্য সে সাহস সঞ্চয় করছে । বেল্টু বলে ওঠে -‘ এই শালা ন্যাংড়া তুই আগে ক’ ,তোরতো শালা অনেক অভিজ্ঞতা-পুলিশের বাখারি খাইয়েই তো তুই ন্যাংড়া হয়ছিস !’
আজিবর বলে ওঠে -‘সিডা সত্যি কতা , কিন্তু আমরা যারা বর্ডারের এদিক ওদিক ঘুইরে পেট চালাই তাগের সগলেরই মাঝেমদ্যি কচন খাতি হয় !এখেনে কিডা আছে বুকি হাতদিয়ে কতি পারে একবারো পুলিশির ঠাপ খায়নি ?’
আবারো নীরবতা নেমে আসলে ,বেল্টু মিয়াই নীরবতা ভেঙে নরম স্বরে বলে - ‘কদিনি ,এ্যাতো তত্ত্ব কতা বাদ দিয়ে ।’
আজিবর নেভী সিগারেটে একটা জোর টান দিয়ে বলে -‘একবার সাইকেলের টিউবের মদ্যি ফেনসিডিল আনতিছিলাম ।বর্ডার পার হতিই এ্যাক শালা হাবিলদার ধইরে বইসলো - মনে হয় আমাগের মদ্যিই কোনো বাইনচোত খবর দিয়িলো !অবশ্যো হাবিলদারডা খুব ভালো ,আমারে কিছু না কইয়ে সুজা এসপি সাহেবের কাছে নিয়ে গেলো । আমারে পরথম লাথিটা মাইরেলো স্বয়ং এসপি সাহেব , কোন কনেস্টবাল আমার গায় হাত দ্যায়নি !’
বারবার এসপি সাহেবের কথা উল্লেখ করতে করতে একধরনের অহংকারের ভাব ফুটে উঠছিলো আজিবরের ভাঙা চোয়ালে আর ঘোলাটে বাল্বের মতো চোখে ।
আজিবরের গল্প শেষ হতেই টেকো শমসের বলতে শুরু করলো তার দেখা এক সত্যি ঘটনা ।কিছুদিন আগে নাকি সে ট্রেনে করে কালিগঞ্জ থেকে খুলনা যাচ্ছিলো ,পথে শুরু হ’ল চেকিং ।মেয়েছেলেদেরও গায়ে হাত দিয়ে চেক করছিলো জি আর পি। এমন সময় একজন যুবতী মেয়ে পুলিশকে বলে উঠলো -‘দ্যাকো বাবা , তুমার সুমান একটা ছেইলে আমারও আছে পুলিশ ডিপারমেনে -গায় হাত দিবানা !’
পুলিশটি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে -‘তোমার এই বয়সে আমার মতো ছেইলে ?’
যুবতীটি উত্তর দেয় -‘ সিডা অবশ্যি আমার বিয়ের আগের ছেইলে , আর শুনিছি বিয়ের আগের ছেইলে ছাড়া তোমাগের ডিপারমেনে ন্যায়না !’
ঠা ঠা হাসিতে ফেটে পড়ে ইয়াসিনের দোকান । বেল্টু মিয়া একটা গোল্ডলিফ এগিয়ে দেয় টেকো শমসেরের দিকে ।
সীমান্তের কাছের এক মফস্বল শহর । থানা শহরে যেরকম থাকে - একটা ছন্নছাড়া রেলস্টেশন ,ঘেয়ো কুকুরের ঘোরাঘুরি , ব্যস্ত বাস স্ট্যান্ডের পাশে চা সিঙ্গাড়ার দোকান ,কয়েকটা টিনের বেড়ার আড়তের পরেই একমাত্র সিনেমা হল । হলে শো শুরু হবার আগে দর্শক টানতে মাইকে গান বাজে - তুমি যে ডাকাত , তুমি যে চোর / চুরি করেছো হৃদয় মোর ।কেবলমাত্র আজানের সময়ে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ।স্টেশনের দিকের রাস্তায় কিছুদূর এগুলেই বড় বড় শিরিষের তোরণের পাশেই করাতকল ।করাতকলের লাগোয়া চায়ের দোকানটাই ইয়াসিনের ।দুপুরবেলা ইয়াসিনের দোকানে রাতজাগা মানুষেরা আস্তে আস্তে অসময়ের ঘুম থেকে উঠে ভিড় জমায় । আজকের আড্ডাটা অনেকক্ষণ জ্বাল দেয়া দুধের মতোই ক্রমশ গাঢ় আর স্বাদু হয়ে উঠছে ।মমিনের বউয়ের লুজ ক্যারেকটারের গল্প (মমিন আড্ডায় অনুপস্হিত ) ,দেশে কেয়ামতের আলামতের নানাবিধ বিবরণ থেকে আড্ডার বিষয়বস্তু এখন পুলিশ সংক্রান্ত নানা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনার দিকে মোড় নিয়েছে । দেখা যাচ্ছে প্রায় সবারই একটা করে বলবার মতো দারুণ সত্য ঘটনা আছে ,আর একজন আরেকজনের আগে সেই গল্প বলার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে ।সম্মিলিত কোলাহলে আড্ডা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে বেল্টু মিয়া আর বসে থাকতে পারেনা , ফ্যাঁসফেঁসে গলায় চেঁচিয়ে ওঠে -‘ সুমুন্দির ছেইলেরা থাম , তুরা কি মানসির পয়দা ? একজন একজন কইরে কতি পারিসনে বাড়া ?’
ধমকে কাজ হয় । বেল্টু মিয়াকে সমীহ না করে উপায় নেই - কষ্টিপাথরের মতো নিকষকালো বিশাল দেহ , ধবধবে সাদা বুকপকেটওয়ালা পাঞ্জাবীর ফাঁক থেকে উঁকি দেয়া গোল্ডলিফের প্যাকেট আর পাঁচশো টাকার নোট তাকে একটা অন্যরকম মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে ।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর ল্যাংড়া আজিবর গলা খাকারি দ্যায় , মনে হয় কোন একটা কথা বলার জন্য সে সাহস সঞ্চয় করছে । বেল্টু বলে ওঠে -‘ এই শালা ন্যাংড়া তুই আগে ক’ ,তোরতো শালা অনেক অভিজ্ঞতা-পুলিশের বাখারি খাইয়েই তো তুই ন্যাংড়া হয়ছিস !’
আজিবর বলে ওঠে -‘সিডা সত্যি কতা , কিন্তু আমরা যারা বর্ডারের এদিক ওদিক ঘুইরে পেট চালাই তাগের সগলেরই মাঝেমদ্যি কচন খাতি হয় !এখেনে কিডা আছে বুকি হাতদিয়ে কতি পারে একবারো পুলিশির ঠাপ খায়নি ?’
আবারো নীরবতা নেমে আসলে ,বেল্টু মিয়াই নীরবতা ভেঙে নরম স্বরে বলে - ‘কদিনি ,এ্যাতো তত্ত্ব কতা বাদ দিয়ে ।’
আজিবর নেভী সিগারেটে একটা জোর টান দিয়ে বলে -‘একবার সাইকেলের টিউবের মদ্যি ফেনসিডিল আনতিছিলাম ।বর্ডার পার হতিই এ্যাক শালা হাবিলদার ধইরে বইসলো - মনে হয় আমাগের মদ্যিই কোনো বাইনচোত খবর দিয়িলো !অবশ্যো হাবিলদারডা খুব ভালো ,আমারে কিছু না কইয়ে সুজা এসপি সাহেবের কাছে নিয়ে গেলো । আমারে পরথম লাথিটা মাইরেলো স্বয়ং এসপি সাহেব , কোন কনেস্টবাল আমার গায় হাত দ্যায়নি !’
বারবার এসপি সাহেবের কথা উল্লেখ করতে করতে একধরনের অহংকারের ভাব ফুটে উঠছিলো আজিবরের ভাঙা চোয়ালে আর ঘোলাটে বাল্বের মতো চোখে ।
আজিবরের গল্প শেষ হতেই টেকো শমসের বলতে শুরু করলো তার দেখা এক সত্যি ঘটনা ।কিছুদিন আগে নাকি সে ট্রেনে করে কালিগঞ্জ থেকে খুলনা যাচ্ছিলো ,পথে শুরু হ’ল চেকিং ।মেয়েছেলেদেরও গায়ে হাত দিয়ে চেক করছিলো জি আর পি। এমন সময় একজন যুবতী মেয়ে পুলিশকে বলে উঠলো -‘দ্যাকো বাবা , তুমার সুমান একটা ছেইলে আমারও আছে পুলিশ ডিপারমেনে -গায় হাত দিবানা !’
পুলিশটি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে -‘তোমার এই বয়সে আমার মতো ছেইলে ?’
যুবতীটি উত্তর দেয় -‘ সিডা অবশ্যি আমার বিয়ের আগের ছেইলে , আর শুনিছি বিয়ের আগের ছেইলে ছাড়া তোমাগের ডিপারমেনে ন্যায়না !’
ঠা ঠা হাসিতে ফেটে পড়ে ইয়াসিনের দোকান । বেল্টু মিয়া একটা গোল্ডলিফ এগিয়ে দেয় টেকো শমসেরের দিকে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন