সম্পাদকীয়
নববর্ষের উৎসব পেরিয়ে শেষ হলো হলো ভোট উৎসব। কিন্তু বঙ্গ জীবনে উৎসবের খামতি নেই। তাই বৈশাখের প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করেই শুরু হয়েছে রসুন উৎসব।
নববর্ষের উৎসব পেরিয়ে শেষ হলো হলো ভোট উৎসব। কিন্তু বঙ্গ জীবনে উৎসবের খামতি নেই। তাই বৈশাখের প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করেই শুরু হয়েছে রসুন উৎসব।
বৈশাখের প্রথমার্ধেই রবীন্দ্রনাথ তারপর একে একে সুকান্ত এবং নজরুল সংক্ষেপে
রসুন। চারিদিকে কান পাতলেই মাইকে বাজছে রবি ঠাকুরের গান। ঠাকুর প্রিয় বাঙালির তাই
উৎসাহের অন্ত নেই। পাড়ার মোড়ে, মাচায় রবীন্দ্রসদনে এখন তাই বাঙ্গালীর বেস্ট সেলার
রবি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। যে ভাবে বাঙালী চিরকাল আসল কথা কে উপেক্ষা করে শুধু
পুজোতে মাতে এবারেও তার ব্যাতিক্রম নয়। সাধে কি বাঙালীর প্রানের ঠাকুর বলেছিলেন
“তেত্রিশ কোটি সন্তানের রে মুদ্ধ জননী রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করো নি”। আমরা
রবীন্দ্রনাথের গানে পাগল, কবিতায় পাগল তার শান্তিনিকেতনে পাগল কিন্তু এই পাগল
বাঙালী রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার পাগল হতে পারলো কই? “শিক্ষা কে আমরা বাহন না করিয়া
বহন করিয়া চলি” এই আপ্ত বাক্য আপামর বাঙালী সে ভাবে মেনে চলল কই? রাস্তায় রবি,
ব্রিজ এ রবি শান্তিনিকেতনের জুতোর দোকানে রবি স্কুল কলেজে রবি মায় বাঙালীর রান্না
ঘরে রবি কিন্তু বাঙালীর মননে সে ভাবে রবির জায়গা কই? যে ভাবে আমরা আসল ধর্মকে
উপেক্ষা করে ধার্মিক কু সংস্কার কে আকড়ে ধরে মুর্তি পুজোতে মগ্ন ঠিক একই ভাবে রবির
গান অবির কবিতাকে আকড়ে ধরে আমরা সত্যিকারের রবি কে পুজলাম কই? এসব লেখা পড়লে পাঠক
আমাকে গালাগাল দিতে পারেন এই বলে তুমি কে হে গঙ্গারাম? রবির তুমি কি চেনো হে? পাঠক
কে দোষ দেওয়া যায় না। কারন বন্দনা করা চিরকালের হুজুগে বাঙালী সত্ত্বা তার
বংশপরম্পরায় বিদ্যমান। কবিকে তারা সে ভাবে মন্থন করলো কই? শুধু কি রবীন্দ্রনাথ?
তারপরের যারা তাদের ক্ষেত্রেও তো সেই একই দশা। শক্তি কে আমরা বাউন্ডুলে করে
দিয়েছি, তার স্পর্ধা কে দুঃসাহস এর আখ্যা দিয়ে দূরে থেকেছি, নয়তো শুধু তার
বোহেমিয়ানা কে অনুকরণ করে সেই বোহেমিয়ানার তার সেই নিয়ম ভাঙার ভেতরে যে নিয়ম তাকে
ভুলে মেরে দিয়েছি। বাঙালী চিরকালের আত্মবিস্মৃত জাতি। নইলে আমরা জীবনানন্দের মতো
কবি কে নির্জন আখ্যা দিয়ে বছরের পর বছর ভুল ধারনায় মগ্ন থেকেছি। এই সেদিন একটি
মেয়ের সাথে কথা হচ্ছিল ফোনে। তার জীবন যন্ত্রনার কথার মাঝে উঠলো জীবননানন্দের কথা।
সেই মেয়েটি হঠাৎ বলে উঠলো, দেখো তিনিও তো নির্জন দুঃখবাদী কবি, তাহলে তুমি আমাকে
তার কবিতা পড়তে বলছো কি করে? হা হতস্মী। সেদিন নিজেকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছিলো।
আজকাল ফেসবুকে অনেক কবিকে দেখতে পাই, (সবাই নয় কিন্তু) তাদের বক্তব্য কবিতা লিখলে
নাকি অনেক নারী সান্নিধ্য পাওয়া যায়। হায়রে আমার বাংলা সাহিত্য। সবাই কি আর চাইলেই
সুনীল গাংগুলী হতে পারে? সুনীল গাংগুলী হবার পেছনে যে পরিশ্রম যে জ্ঞান, যে
পড়াশুনা সেগুলো ছাড়াই কি সুনীল হওয়া যায়? পাঠক বেশ কিছুদিন যাবত এই সব প্রশ্নের
উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার জানা নেই আপনাদের জানা থাকলে যদি আমার সাথে শেয়ার করেন
বাধিত থাকবো।
পরিশেষে বলি ক্ষেপু দেরীতে প্রকাশ হবার জন্য একান্ত ভাবেই আমি দায়ী। শুধুমাত্র
আমিই দায়ী, কোন অজুহাত দেবোনা শুধ দায়টা স্বীকার করাটা ছাড়া। বৈশাখের দাবদাহ
পেরিয়ে বর্ষা নামুক আপনাদের জীবনে এই কামনা করি।
ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে ~ শুভেন্দু দেবনাথ
ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে ~ শুভেন্দু দেবনাথ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন