একটি মৃত্যু
বেশ কিছু মাছির দল ভিড়
জমিয়েছে। রাস্তার পাশে একটি জঙ্গলে, ভিনভিন-ফিনফিন আওয়াজ সকালের ব্যাস্থ পথের
একজন মানুষের ও কান এড়াতে পারেনি।ম্যাথ
এর মাস্টার মশাই
দুদিন ক্লাস নেবেন না, ছুটি
নিয়ে বাড়ি গেছেন,হয়তো
অসুস্থতার কারনে ছুটি নিয়েছেন,বয়সটা ও তো বাড়ছে, প্রায় পঞ্চাশ ছুই ছুই। এই পথ দিয়ে প্রত্যহ সকাল ছ'টা থেকে সাড়ে ছ'টা মাস্টার
মশাইর প্রাত্যহিক যাতায়াত -- বল্টুদা বলেন।প্রাত্যহিক এক কাপ চা, দুটো বিস্কুইট, এক প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক এর খরিদ্দের কে ভুলবে কেমন করে বল্টুদা।বল্টুদার কাছে উনার খবরটা সঠিক পাওয়া যায়।
রিঙ্কু খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে,গেলো বছর মাধ্যমিকে ৭০% নাম্বার নিয়ে পাশ করে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা
শুরু করেছে। বাবার কথা মতো ম্যাথ
এর মাস্টার মশাই এর কাছে ভর্তি হয়েছিল। পাড়ার সকলে মাস্টার
মশাই বলেই ডাকেন। এবছর একাদশ শ্রেণীতে ম্যাথ-এ ভালো নাম্বার
অর্জন করেছে রিঙ্কু।বাবা-মা খুব খুশি, বাড়ির একটি মাত্র মেয়ের নাম্বার দেখে।বাবা-মা
দুজনেই একদিন মাস্টার
মশাইর সাথে দেখা করে আরো একশ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে এসেছেন।মাস্টার মশাই ও খুশী বাবা-মা
ও।কেবল
খুশী ছিলোনা রিঙ্কু,কারণ
টা সকলের অজানা। আসলে মেয়েটি খুব চাপা স্বভাবের ছিলো, বাবা-মা
বললেন।লুকিয়ে
কাঁদা অভ্যাস।
পরিতোষ একসাথে পড়াশোনা করতো। স্কুল
এর সবচেয়ে ভালো ছাত্র, ভালো
রেজাল্ট ও করে।মাস্টার মশাই দুজনকেই বেশি ভালোবাসতো।
এরপর সেই প্রেম রিঙ্কু-পরিতোষ, একে
অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠা ---- ইত্যাদি,ইত্যাদি -----
মাস্টার মশাই কেমন যেন বেশ কিছুদিন স্বার্থপর হয়ে
উঠেছিলেন, রিঙ্কুর প্রতি
খুব বেশি দুর্বল হয়ে পরে(RE)ছিলেন,পরিতোষের এক বন্ধু রতন এর মুখ থেকে শোনা।
গত সপ্তাহে রিঙ্কু হটাৎ বমি করে,মাস্টার মশাইর মুচকি হাসি রতনের
চোখ এড়াতে পারেনি।পড়ানোর
পর সকলের চলে যাওয়া,রিঙ্কুকে
কোনো কাজ দিয়ে আটকে রাখা,পাশাপাশি বসা এসব রতনের ভালো লাগতো না। একদিন রতন বলেও ছিলো "আমিও থাকবো,রিঙ্কুর সাথে" উত্তরে রিঙ্কুর এবং মাস্টার মশাইর বকুনি ছাড়া কিছুই জোটেনি।
এই তো কয়েকদিন আগে পরিতোষ আর রিঙ্কুর
মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপার টা বাবা-মা জানলো।বাবা-মা'র খুব পছন্দ পরিতোষ
কে। বাবা
বলছিলেন "মেয়ের পরীক্ষার পর,একদিন পরিতোষের
বাবা-মা'র
সাথে কথা বলে এদের সারাজীবনের একসাথে থাকার ব্যবস্থা করে দেবো" মা-ও খুব খুশী।
পরশু তো মাস্টার মশাইর কাছে কেউ যেন বললো, কথাটা শুনে মাস্টার মশাই কেমন যেন হটাৎ রেগে গেলেন। কালকে রিঙ্কুও অনেকক্ষণ ওখানে ছিল। বাড়ি
ফেরার সময় কেমন এলোমেলো লাগছিল বল্টুদা
বললেন।প্রত্যহ
অনেক কিছু দেখতেন।
পুলিশ এসেছিলো পরিতোষের দেহ টা জঙ্গল থেকে তুলে নিয়ে গেছে, ওদিকে রিঙ্কুও
বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়েছে।
বিকেলে দুটি মৃত্যুর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলাম,পরিতোষকে
শ্বাস রোধ করে কেউ মেরেছে আর রিঙ্কু
অন্তসত্তা।
সকলে এখন একটাই কথা বলছেন রিঙ্কুর বাবা-মা
ছেলেটাকে মেরে ফেললো। পুলিশও
জিজ্ঞাসা বাদের জন্য উনাদের থানায় নিয়ে গেছেন।এক ছাত্র বললো কাল রাতেই মাস্টার মশাই
কল করে জানিয়েছে, শরীরের অবস্থা ভালো নেই,শরীর ভালো হওয়ার পর দেশের বাড়ি থেকে ফিরবেন।
কাঁদছে বাবা-মা অথবা আপন দু একজন। প্রত্যহ অজান্তেই ঘটে চলেছে এমন গোপন মৃত্যু।
দৈনন্দিনের আর এক মৃত্যু
বল্টু বাড়িতে আছিস? বেশ কয়েকবার
চেঁচিয়ে ডাকছিলো পল্টু। তখন প্রায় রাত
বারোটা বাজে।খানিক বাদে বল্টু দরজা খুলে বেরিয়ে এলো, আর না এসেই বা থাকবে কেমন করে বাচ্চা থেকেই দুজনে খুব
ভালো বন্ধু। জিজ্ঞাসা করে বসলো
কিরে কোথাও যেতে হবে নাকি?
পল্টু :
ওই পচা কাকা টা মারা গেলো, চল পুড়িয়ে আসি।
বল্টু :
শালা মাল টাকে বহুবার বলতাম, চিন্তা করিসনা, এত মদ গিলিশ না। কে কার কথা শোনে।
পল্টু : তাহলে ভাব এখন চারটা মেয়েকে
কে বিয়ে দেবে, ওই মাল টা তো বেশ শান্তিতেই বিদেয় নিলো।
বল্টু :
ছাড় ওসব কথা, ভেবে আর কাজ নেই।এখন চল অন্তিম কাজ
টা সুস্থ ভাবেই সেরে আসি।
দুজনে
আবার এক পেগ করে মেরে ছুটলো।পল্টু আর বল্টু দুজনে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করতো। প্রাত্যহিক সকাল থেকে সন্ধ্যা দুজনে রিক্সা চালায়। সন্ধ্যা হলে দশ টাকার পাউচ,দুজনে দুটো, নুন দিয়ে মেরে বাড়ি ফেরা।গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে
শুনেছে, এবছর ভোটের পর ইলেকট্রিসিটি আসবে গ্রামে।সেদিন মদ খেতে বসে
আলোচনা করছিলো দুজনে, একটা টিভি আনবে বল্টু। বউর খুব সাধ টিভি দেখার।
বল্টু
বাবা-মা এর এক সন্তান,বাবা রিক্সা চালাতেন। তখন বল্টুর বয়স বারো
বছর বাবা মারা যান। একটা গাড়ির
ধাক্কায় রাত্রি বেলায় রিক্সা সহ রাস্তায়
পরেছিলেন সকালে জানা গিয়েছিল। বাড়ির অভাবের জন্য
তেমন পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি।পল্টুর বাবা বল্টুর সম্পর্কে কাকু হতেন।উনিও রিক্সা চালাতেন।উনি বিপদে খুব
উপকার করেছেন, এমন কি বল্টুর রিক্সা টিও পল্টুর বাবা কিনে
দিয়েছিলেন।
বল্টুর
মাও তিনবছর হলো মারা গেছেন। কোনো এক অসুখে
উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে। মা এর চলে যাওয়ার
পর বল্টুর ওই একা রান্না করা, কোনোদিন হোটেলে
খেয়ে নেওয়া,কোনোদিন পল্টুর বাড়িতে। এমন করেই দিন কাটছিল।
বল্টু
দেখতে খুব সুন্দর ছিলো।গ্রামে এমনি রিক্সায় চাপার মানুষ কম থাকতো। তাই দুজনে মিলে
গ্রাম ছাড়িয়ে একটা কলেজ এর কাছে
অপেক্ষা করতো।কিছু মেয়ে রিক্সায় চেপে কলেজ যেতো, বাড়ি ফিরতো। মধুমিতা এদের মধ্যে একজন।বল্টুর প্রেমে পড়া
এবং অন্তিম নিরবে বিয়ে সেরে ফেলা।দুবছরের কাছাকাছি
এদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর বল্টু ও মদ খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলো।
মধুমিতা
খুব সুন্দরী, সুঠাম। বাড়ির অবস্থা খুব
করুন। নিজে টিউশান পড়িয়ে
নিজে পড়াশোনা করতো।বল্টুর বয়স এখন আর
কত ? ওই ২১-২২---- মাঝে
মাঝে মদের নেশায় ভাগ্য কে দোষ দেয়।কিন্তু দুজনে খুব সুখী।
পাড়ার
ছেলেরাও আজকাল বজ্জাত সেজেছে। মধুমিতাকে দেখলেই সকলে নানান রকমের প্রস্তাব দেয়। আর মধুমিতাও মুচকি
হেসে বাড়ি ফিরে আসে।
ওই তো
সেদিন বল্টু আর পল্টু দুজনে মিলে
ওজন মেশিনে মেপে এলো--- ওজন টা অনেক খানি কমে গেছে--- ৩২--- শালা মদ খেলে রোগা
হওয়া যায়, ওজন কমানো যায়। লোকে কেনো যে ঔষধ
খায় কে জানে।
পল্টু এখনো বিয়ে করেনি। বল্টুর
বাড়িতে প্রায় যাতাযাত করতো।মধুমিতার
সাথে খুব ভালো সম্পর্ক।পল্টু
বেশ কিছুদিন রিক্সা নিয়ে খুব কম বের হতো।রাতে বাইরে মদ খেতো না,দুজনে মিলে বল্টুর
বাড়িতে বসেই মদ
খেতো। রাত
টা ওখানেই কেটে যেতো ---- প্রায়।
পল্টু নিজেকে বদলে ফেলেছিলো ধীরে,ধীরে। গায়ে
গামছার বদলে জামা পরা শুরু করেছিলো,মাঝে মাঝে পারফিউম।এই তো কিছুদিন
আগে পার্লার এ গিয়ে দুদিনের উপার্জন ধংস করে এসেছিল, মাথার চুলে। বেশ সালমান মার্কা কাটিং করিয়েছিল।অনেক খানি পরিবর্তন মধুমিতার ও এসেছিলো।
কিছু কারনে বল্টু আবার মদ টা খাওয়া বাড়িয়েছিল। রাতে
ঠিক করে বাড়ি ফিরতো না। হোটেলে খেয়ে রিক্সায়
ঘুমিয়ে পড়তো।মধুমিতা
খুব দামি একটা শাড়ি কিনেছে।সেদিন
রাতে খুব ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া গিয়েছিলো।বল্টু কয়েকদিন আগে দুপুরে মদ খেয়ে রাস্তায় অকথ্য গালাগাল করছিলো পল্টুকে।মনে
হয়েছিল মধুমিতাকে
নিয়ে কিছু সমস্যা।
রাতেই তো, দুজনে বসে মদ খেয়েছিল ।বোধহয় রাতেই ফিরে গিয়েছিলো পল্টু। সকালে জানা যায় বল্টু মারা গেছে ।গ্রামের ডাক্তার বলে গিয়েছিলেন মদ খেয়ে, খেয়ে
সব পুড়ে গিয়েছিল।গ্রামের
মহিলারা বলাবলি করছিলেন মদে নাকি বিষ ছিলো।খুব
তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়।
পল্টু আর মধুমিতা গ্রামে থাকে না। শহরে রিক্সা চালায়। দুজনে বিয়ে করেছে। দিব্বি সুখে আছে।
পল্টু : ওই পচা কাকা টা মারা গেলো, চল পুড়িয়ে আসি।
বল্টু : শালা মাল টাকে বহুবার বলতাম, চিন্তা করিসনা, এত মদ গিলিশ না। কে কার কথা শোনে।
বল্টু : ছাড় ওসব কথা, ভেবে আর কাজ নেই।এখন চল অন্তিম কাজ টা সুস্থ ভাবেই সেরে আসি।
দুজনে আবার এক পেগ করে মেরে ছুটলো।পল্টু আর বল্টু দুজনে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করতো। প্রাত্যহিক সকাল থেকে সন্ধ্যা দুজনে রিক্সা চালায়। সন্ধ্যা হলে দশ টাকার পাউচ,দুজনে দুটো, নুন দিয়ে মেরে বাড়ি ফেরা।গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুনেছে, এবছর ভোটের পর ইলেকট্রিসিটি আসবে গ্রামে।সেদিন মদ খেতে বসে আলোচনা করছিলো দুজনে, একটা টিভি আনবে বল্টু। বউর খুব সাধ টিভি দেখার।
বল্টু বাবা-মা এর এক সন্তান,বাবা রিক্সা চালাতেন। তখন বল্টুর বয়স বারো বছর বাবা মারা যান। একটা গাড়ির ধাক্কায় রাত্রি বেলায় রিক্সা সহ রাস্তায় পরেছিলেন সকালে জানা গিয়েছিল। বাড়ির অভাবের জন্য তেমন পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি।পল্টুর বাবা বল্টুর সম্পর্কে কাকু হতেন।উনিও রিক্সা চালাতেন।উনি বিপদে খুব উপকার করেছেন, এমন কি বল্টুর রিক্সা টিও পল্টুর বাবা কিনে দিয়েছিলেন।
বল্টুর মাও তিনবছর হলো মারা গেছেন। কোনো এক অসুখে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে। মা এর চলে যাওয়ার পর বল্টুর ওই একা রান্না করা, কোনোদিন হোটেলে খেয়ে নেওয়া,কোনোদিন পল্টুর বাড়িতে। এমন করেই দিন কাটছিল।
বল্টু দেখতে খুব সুন্দর ছিলো।গ্রামে এমনি রিক্সায় চাপার মানুষ কম থাকতো। তাই দুজনে মিলে গ্রাম ছাড়িয়ে একটা কলেজ এর কাছে অপেক্ষা করতো।কিছু মেয়ে রিক্সায় চেপে কলেজ যেতো, বাড়ি ফিরতো। মধুমিতা এদের মধ্যে একজন।বল্টুর প্রেমে পড়া এবং অন্তিম নিরবে বিয়ে সেরে ফেলা।দুবছরের কাছাকাছি এদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর বল্টু ও মদ খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলো।
মধুমিতা খুব সুন্দরী, সুঠাম। বাড়ির অবস্থা খুব করুন। নিজে টিউশান পড়িয়ে নিজে পড়াশোনা করতো।বল্টুর বয়স এখন আর কত ? ওই ২১-২২---- মাঝে মাঝে মদের নেশায় ভাগ্য কে দোষ দেয়।কিন্তু দুজনে খুব সুখী।
পাড়ার ছেলেরাও আজকাল বজ্জাত সেজেছে। মধুমিতাকে দেখলেই সকলে নানান রকমের প্রস্তাব দেয়। আর মধুমিতাও মুচকি হেসে বাড়ি ফিরে আসে।
ওই তো সেদিন বল্টু আর পল্টু দুজনে মিলে ওজন মেশিনে মেপে এলো--- ওজন টা অনেক খানি কমে গেছে--- ৩২--- শালা মদ খেলে রোগা হওয়া যায়, ওজন কমানো যায়। লোকে কেনো যে ঔষধ খায় কে জানে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন