সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দুটি কবিতা - সুজিত দাস



সুজিত দাস - এর দুটি কবিতা
                               


ভ্যানিটি ব্যাগ সংক্রান্ত একটি  অ্যান্টিথিসিস   


বেশ কিছু শব্দের বাংলা প্রতিশব্দের মতই, ভ্যানিটি ব্যাগেরও বাংলা জানিনা বলে, 
শহরের এক কবিতা উৎসবে আমাকে মঞ্চেই উঠতে দেওয়া হয়নি, ফেরার ভাড়াও
মঞ্চে না উঠেও, আমি বেশ জোরের সাথেই আমার কবিতাটি পাঠ করেছিলাম বলে
এক সদস্যের একটি কমিশনও বসেসাক্ষীসাবুদ ইত্যাদিএবং এক বছরের ব্যান
মাঝের এই এক বছর, অজ্ঞাতবাসের সময়টুকুতে  প্রেম ও পরকীয়া বাদ দিলে, আমি 
আরেকটি কাজ করলাম, ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে বিস্তর পড়াশুনো, প্রয়োজনে রাত জেগে
গবেষনায় প্রকাশ, মহিলাদের হাত ব্যাগে বিটনুন থেকে অসমাপ্ত কবিতার পান্ডুলিপি
সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু রহস্যের ওপর চটি বই থেকে দুষ্মন্তের ঘ্যামা রাজকীয় আংটি
আকাশের নিচে পাওয়া যায় এমন সব কিছুই থাকতে পারেউৎসাহী পাঠক যদি
শুধু রেভলন আর কন্ডোম এর মাঝের সরলরেখায় হাঁটাহাঁটি করেন, আমি নিরুপায় 
মাঝেমাঝে এই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে বেরিয়ে পড়তে পারে একটা গোটা দুপুর 
সেই সব রাজাকার দুপুর, যাদের থেকে বড় হিটলার আর কেউ নেই, বড় পারভার্টও
যে মেয়েটি, তার ভ্যানিটি ব্যাগে নামখানা থেকে শশা মুড়ি আর আস্ত একটা সকাল
নিয়ে আসে, শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরার সময় তার ব্যাগেও কিন্তু একটা আস্ত গোটা চাঁদ 

 


'বৈশম্পায়ন কহে জনমেজয় শুনে' /
 

হস্তিনাপুররাজ জনমেজয় পুরুষ জাতি সম্বন্ধে বিশদে অবহিত হইতে চাহিলে বৈশম্পায়ন যে আখ্যান উপস্থাপিত করিয়াছিলেন তাহা মোটামুটি এইরূপ :

যিনি অবশ্যই অল্পবয়সে খানিক রাজনীতি করিবেন এবং লিন পিয়াও এর উদ্ধৃতি সহযোগে
দেওয়াল ছয়লাপ করতঃ গ্রাম দিয়া শহর ঘিরিবার মনস্কাম দেখাইবেন, তিনিই পুরুষ
প্রেমে পড়িবার আগে অবধি যাঁহাদিগের নিকট  রবীন্দ্রনাথ ব্রাত্য, তাঁহারাই পুরুষ
হে নরশ্রেষ্ঠ, এই পুরুষ জাতি, কথায় বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ বা সমর সেন আওড়াইয়া থাকেন
কিন্তু শক্তি, সুনীলকে সযত্নে পরিহার করেন কারণ এইসকল কবিদের নামাবলীতে মহেঞ্জোদারো
হইতে আমদানীকৃত পোড়ামাটির কোনও প্রতিষ্ঠান বিরোধী সিলমোহর নাই
আরও শ্রবণ করুন সেই বিচিত্রবুদ্ধি পুরুষদিগের বিবাহের পূর্বে সত্যজিৎ 'রৈ' মহাশয়ের ছবিকে
ভাল বলিতে বড়ই অনীহা, তাহাতে নাকি ঋত্বিক ঘটকের সঠিক মূল্যায়ন হয় না, তদুপরি
মেঘে ঢাকা তারাও উজ্জ্বল হইয়া যাইতে পারে রাজন্‌, শ্রবণপূর্বক আহ্লাদিত হইবেন,
ইত্যকার প্রাণীসকল ছবি বিশ্বাসের উচ্চারণে একটি স্পষ্ট সানুনাসিক বুর্জোয়া ধ্বনির প্রাদুর্ভাব
আবিস্কার করিয়াছেন বরং বিকাশ রায়, জমিদারের চরিত্রেও, প্রলেতারীয় অ্যাকসেন্টে ধমক দিতে পারেন
কবিতা লিখিতে পারিতেন না বলিয়া যাঁহাদিগের নিকট তোমাদের দাদা কখনও ম্যাটিনি আইডল
হইতে পারেন নাই তাঁহারাই পুরুষ হে নরশ্রেষ্ঠ আরও শ্রবণ করুন, পুরুষজাতির
এই কঠিন অবয়ব যেন কাফকার উপন্যাস রূপান্তরিত হইতে থাকে টাইম এবং স্পেসে
ইহাদিগের নিকট জীবনে প্রথম মন্ত্রপাঠ নিতান্তই মাতা পিতার মনোরঞ্জন হেতু, আপন বিশ্বাসের বশে নহে
( সরস্বতী পূজার অঞ্জলি দুধভাত কারণ তখনও জ্ঞানচক্ষু ফুটে নাই এবং গায়ে কাঁচা হলুদের গন্ধ )
এইসকল পুরুষ বাইপাসের ধারে জমি ক্রয় করেন এবন ইএমআই সম্বলিত ঠাকুরঘরে
নির্জলা উপবাস করতঃ ইন্টারনেট ঘাঁটিয়া সানি লিওনের স্বামীর নাম মুখস্ত করিতে থাকেন
যিনি কর্মস্থলে ঘুষ, পুরীতে মদ এবং শান্তিনিকেতনে অন্যের বউকে চুমু খাইতে পারেন, তিনিই পুরুষ
রাজাধিরাজ ! পুনশ্চ শ্রবণ করুন, ঈষৎ প্রগলভ ( কথ্যভাষায় লাউড ) শ্যালিকাবৃন্দের জন্য যাঁহারা
শারদোৎসবে ব্লাউজপিস সহকারে ঘিচাতসর ক্রয় করেন আর জামাইষষ্টিতে শুশ্রুমাতার জন্য
মোহিনীমোহনের গরদ, তাঁহারাই পুরুষ যাঁহাদের বসিবার ঘরে দুইখানি টিপু সুলতানের তরবারি
আড়াআড়ি টাঙানো থাকে, আর কৈশোরের স্মৃতি হিসাবে একখানি সেপিয়া রঙের কার্ল মার্ক্স
( ঠেকায় পড়িলে যাঁহাকে 'মনীষী' বলিতে ইহাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা নাই ), তাঁহারাই পুরুষ  
এই বিষয়ে প্রাক্তন এক নগরকোটালের নিকট ইহাদের কৃতজ্ঞতার সীমা পরিসীমা নাই ( সাহাদা নহে )
যৌবনের উপান্তে ইহাদিগের পরকীয়া বিশেষ উল্লেখযোগ্যপ্রেমিকাকে ইহারা পাগলী বা বেবি
ইত্যকার সম্ভাষণে অভিহিত করিয়া থাকেন

আখ্যান শ্রবণপূর্বক জনমেজয় কহিলেন, হে মুনিবর,
পুরুষদিগের জয় হউক, আপনি বরং শূন্য দশকের কবিকুলের চিত্তাকর্ষক প্রসঙ্গ অবতারণা করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন