পুতুলখেলা
অনিন্দ্য সুন্দর রায়
ষ্টেশন-রোডে
আফসারার বাবার একটা বাচ্চাদের খেলনার দোকান আছে। দুবছর আগে ওর মা পড়ে গিয়ে বাঁ-দিকটা
যখন প্যারালাইসড হয়ে যায় বাবা অটোটা বেচে দিতে বাধ্য হয়। চিকিৎসায় অনেক খরচ
হয়েছিল। প্রাইভেট স্কুলে ক্লাস-টু অ্যানুয়াল পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।
বাবা লোন নিয়ে দোকানটা দিয়েছে এই মাস-ছয়েক । ‘খোয়াবি খেলনার দোকান’। এ তল্লাটে তেমন কোনো খেলনার দোকান নেই। বাজারে একটা আছে বটে
একটা কিন্তু তার অনেক দাম। বাবার দোকানে দশটাকা থেকে শুরু হরেকরকম পাওয়া যায়।
আফসারা এখন প্রাইমারি স্কুলে যায়। প্রাইমারি স্কুলে মিড-ডে-মিল দেয়। বাবার হিসেব মতো
আফসারা পড়াশুনো করে মাসে সাত’শ টাকা বাঁচায়, রোজকার
করে।
সকালে বাধ্য হয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয় বলে সাড়ে তিনটেয় বাড়ি ফিরে সে ছটফট করে দোকানে যাবে বলে। একসাথে এত খেলনা সে কখনো চোখে দেখেনি। বাবা একটা ছোট্ট সাদা-চুলের পুতুল কিনে দিয়েছিল খুব ছোটবেলায়। সেই পুতুলের জামা নেই, চুল উঠে গেছে, একটা চোখের পাতা পড়তে চায় না কিছুতেই। এছাড়া তার ছিল নারকোল খোলা, আইসক্রিমের কাঠি ইত্যাদি, যা দিয়ে সে রান্নাবাটি খেলতো। দোকানে এলে যেদিন যেটা খুশি নিয়ে খেলতে পারে সে। আগে বাবার অবর্তমানে কাষ্টোমারদের দোকানে বসতে বলতো খানিক্ষন। এখন সে জেনে গেছে প্লাস্টিকের ছোট হাতি, বেজি, হরিন এগুলোর দাম দশটাকা। সামনেই রাখা থাকে। র্যাকে তোলা রোবটটা, যেটায় ব্যাটারি দিলে নিজে নিজে চলে ওটা দেড়শো। আর লাইনওয়ালা ট্রেনটা আড়াইশো। গায়ে তুলো মাখানো ভাল্লুকগুলো পঞ্চাশ, আশি, একশো, সাইজ অনুযায়ী। এখন সে বেশ কিছু মাল নিজেই দেয়। আর বাদবাকি সময় কিছু একটা নিয়ে খেলে। আফসারার প্রিয় তিনটে পুতুল আছে, একটা ওর বাবা, একটা ওর মা আর একটা ও নিজে। বাবার একটা অটো আছে। মায়ের একটা বাড়ি আর নিজের জন্য একটা ছেলে পুতুল। যেদিন স্কুল থেকে ফিরে সে জানতে পারে তার বয়সি একটা মেয়ে ওই ছেলে পুতুলটা কিনে নিয়ে চলে গেছে সেদিন ও খুব কেঁদেছিলো। বাবা যখন দোকানের সমস্ত খেলনা তাকে দেবে, মায় ব্যাটারী-রোবট দেবে বলেও শান্ত করতে পারেনি তখন বেধড়ক মেরেছিল। আসলে সবাই সবকিছু বোঝেনা। আফসারা দোকানে আসার জন্য এখন আর আটুপাটু করে না। বরং তার বাবা তাকে জোর করে নিয়ে যায় দোকানে সাহায্য হবে বলে। অটো, বাড়ি, মা সব বিক্রি হয়ে গেছে একেএকে। মার খাবার ভয়ে, বাবার অবুঝপনায় কিচ্ছু বলতে পারেনি।
গত শনিবার নিজের পুতুলটা দোকান থেকে বাবা না থাকাকালীন লুকিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছে। বাবা যখন দোকান বন্ধ করছিলো, পাশের বিরিয়ানির দোকানের পঞ্চু তাকে চোখ মেরেছে। সেই কথা সে মা-বাবা কাউকে বলেনি। আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে পচা-পুকুরের জলে পুতুলটা ফেলে দিয়ে আসবে। এখন তার আর পুতুলখেলার বয়স নেই, সে নিজেকে নিয়ে খেলতে চায়...
সকালে বাধ্য হয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয় বলে সাড়ে তিনটেয় বাড়ি ফিরে সে ছটফট করে দোকানে যাবে বলে। একসাথে এত খেলনা সে কখনো চোখে দেখেনি। বাবা একটা ছোট্ট সাদা-চুলের পুতুল কিনে দিয়েছিল খুব ছোটবেলায়। সেই পুতুলের জামা নেই, চুল উঠে গেছে, একটা চোখের পাতা পড়তে চায় না কিছুতেই। এছাড়া তার ছিল নারকোল খোলা, আইসক্রিমের কাঠি ইত্যাদি, যা দিয়ে সে রান্নাবাটি খেলতো। দোকানে এলে যেদিন যেটা খুশি নিয়ে খেলতে পারে সে। আগে বাবার অবর্তমানে কাষ্টোমারদের দোকানে বসতে বলতো খানিক্ষন। এখন সে জেনে গেছে প্লাস্টিকের ছোট হাতি, বেজি, হরিন এগুলোর দাম দশটাকা। সামনেই রাখা থাকে। র্যাকে তোলা রোবটটা, যেটায় ব্যাটারি দিলে নিজে নিজে চলে ওটা দেড়শো। আর লাইনওয়ালা ট্রেনটা আড়াইশো। গায়ে তুলো মাখানো ভাল্লুকগুলো পঞ্চাশ, আশি, একশো, সাইজ অনুযায়ী। এখন সে বেশ কিছু মাল নিজেই দেয়। আর বাদবাকি সময় কিছু একটা নিয়ে খেলে। আফসারার প্রিয় তিনটে পুতুল আছে, একটা ওর বাবা, একটা ওর মা আর একটা ও নিজে। বাবার একটা অটো আছে। মায়ের একটা বাড়ি আর নিজের জন্য একটা ছেলে পুতুল। যেদিন স্কুল থেকে ফিরে সে জানতে পারে তার বয়সি একটা মেয়ে ওই ছেলে পুতুলটা কিনে নিয়ে চলে গেছে সেদিন ও খুব কেঁদেছিলো। বাবা যখন দোকানের সমস্ত খেলনা তাকে দেবে, মায় ব্যাটারী-রোবট দেবে বলেও শান্ত করতে পারেনি তখন বেধড়ক মেরেছিল। আসলে সবাই সবকিছু বোঝেনা। আফসারা দোকানে আসার জন্য এখন আর আটুপাটু করে না। বরং তার বাবা তাকে জোর করে নিয়ে যায় দোকানে সাহায্য হবে বলে। অটো, বাড়ি, মা সব বিক্রি হয়ে গেছে একেএকে। মার খাবার ভয়ে, বাবার অবুঝপনায় কিচ্ছু বলতে পারেনি।
গত শনিবার নিজের পুতুলটা দোকান থেকে বাবা না থাকাকালীন লুকিয়ে ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছে। বাবা যখন দোকান বন্ধ করছিলো, পাশের বিরিয়ানির দোকানের পঞ্চু তাকে চোখ মেরেছে। সেই কথা সে মা-বাবা কাউকে বলেনি। আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে পচা-পুকুরের জলে পুতুলটা ফেলে দিয়ে আসবে। এখন তার আর পুতুলখেলার বয়স নেই, সে নিজেকে নিয়ে খেলতে চায়...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন