আমার গল্প
কৌস্তভ ভট্টাচার্য
অফিসে কার্ড পাঞ্চিং মেশিনটা রোজ যখন বিপ বিপ শব্দ করে কার্ডটা পাঞ্চ করলে -
মনে হয় একটা টাইমবোমার দিকে হাত এগিয়ে দিচ্ছি।
আজকাল সব সিগারেট খুব পানসে লাগে। নেশাদের বয়েস বেড়ে যাচ্ছে।
বাসে সিট না পেলে রোজ রোজ দু'তিনটে যাত্রীকে খুন করে ফেলি-ঘুম ভাংলে
দেখি তারা আমার জন্য জায়গা ছেড়ে নিজের নিজের স্টপে নেমে গেল।
তোমার সাথে অনেকদিন কথা হয়নি দীপান্বিতা-ফেসবুকে তোমাকে ব্লক করে দেবার পর-সব
মহিলাকেই বড়ো ভন্ড মনে হয়।
অ্যালার্ম ক্লকটা এককোণে পড়ে রয়েছে অবহেলিতা ঘরের বউয়ের মতো-আজকাল আমি আমার
মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করি-সুদৃশ্য হারামিদের মতো তার মিঠে আওয়াজ-আমাকে রোজ
বাস্তবে ফিরিয়ে আনে।
ফোরামের পাশের গলিতে -কফিশপটায় সেদিন কথা হচ্ছিল-
আমি: রক্ত আর রেড ওয়াইন-এর লাল রঙ দেখলে মনে হয়না দুজনের মধ্যে কোথাও একটা
মিল রয়েছে?
তুমি: আমার তোমার মতো?
সে: তোমাদের মিলটা রঙের মিল নয় । বরং অনেকটা ধর্ষিতা আর সন্ত্রাসবাদীর মিল ।
রাষ্ট্র কাউকেই মেনে নেয়না ।
আমি হাড্ডি বর্জনীয় মনে করিনা-আমি বোনলেস চিকেন খাইনা-প্রেম করতে গেলে তৃতীয়
ব্যক্তির উপস্থিতি প্রেমকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের সামনে অক্সিডাইজড করে-ভ্যাপসা
জলীয় বাস্পগুলো আলাদা হয়ে যায়-নিজেকে বেশ নতুন নতুন লাগে।
তবে আমাদের প্রেমটা বোধহয় ভেঙে যাবে। কিছুই হয়নি-কিন্তু আমার সিক্সথ সেন্স, যাকে
ইন্টিউশনও বলে কালকে আমাকে বলে গেছে -
"যেদিন দেখবে হাওড়া ব্রিজের জায়গায় টাইটানিক চলছে-সেদিন আর প্রেম করতে ভালো লাগবে
না"।
"ধ্যাত তা আবার হয় নাকি-হুগলির জলে আজকাল
নিয়মিত ড্রেজিং করতে হয়-আর টাইটানিক তো কবে ডুবে গেছে"।
"সব কিছু রোজ রোজ জ়োড়া লাগতে হবে সেটা
কোথায় লেখা আছে"।
এলগিন রোড মেট্রো স্টেশনে সামনে দেখলাম বড়ো মিছিল বেরিয়েছে-প্রায় একশো
মেয়ে-কারো গায়ে একটাও কাপড় নেই।
কে যেন বললো এরা সবাই কখনো না কখনো ধর্ষিত হয়েছে - লোকের বাড়ি কাজ করতে
গিয়ে, অফিসের
ঘরে, কিম্বা
নিজের বরের কাছে।
"কনসেপ্টটা মণিপুর থেকে টোকা মনে হচ্ছে না?"
"ও মা তা কেন হবে-ওই তো ইরম শর্মিলা চানু
নিজে লিড করছেন-সাথে মণিপুরের সেই মায়েরা"।
দূর আমার দ্বারা কোনো বিপ্লব হবেনা-আমার মধ্যে সেই চাড়টাই নেই। আর আমার
প্রেমিকাও আমার জামা ধরে টান মারছে-
"বাড়ি চলো মা চিন্তা করবে"।
মেট্রোয় টিকেট কেটে আসার সাথে সাথে দেখলাম ট্রেন ভরতি শুধু পুরুষ মানুষ।
নেতাজী ভবন ছাড়াতেই একটা সাউন্ড এলো স্পিকারে-
"পরবর্তী স্টেশন হাওড়া ব্রিজ, প্ল্যাটফর্ম
ডান দিকে"।
একি - ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তো এখনো চালু হয়নি তবে।
এদিকে আমার প্রেমিকাকে নিয়ে কয়েকজন পুরুষ ছেঁড়াছিঁড়ি,কামড়াকামড়ি
শুরু করেছে। ও আমার দিকে ফিরে বললো-
"বাড়ি যাবো মা চিন্তা করবে"।
তারপর আস্তে আস্তে ট্রেনটা এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশন থেকে ইডেন গার্ডেনের পিচ
ফুঁড়ে ওপরে চলে এলো। সেখানে তখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হচ্ছিল-কি আশ্চর্য ইডেনেও
সবাই পুরুষ-তারা একে একে ট্রেনে উঠে এসে আমার প্রেমিকাকে গণধর্ষণ শুরু করলো। আমার
প্রেমিকা বললো-
"বাড়ি নিয়ে চলো-মা চিন্তা করবে"।
তারপর ট্রেনটা স্ট্র্যান্ডরোড ধরে হাওড়া ব্রিজে উঠে পড়লো।
ব্রিজের ওপাশে সেই মেয়েদের মিছিল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
হঠাৎ করে তারা ছুটে আসতে শুরু করলো।
তার পর আমাদের পুরো ট্রেনটার জানলায় নিজেদের বেঁধে ফেলে মানবীশৃঙ্খল রচনা করে
ফেললো সব নগ্ন ধর্ষিতারা।
কে যেন আমাকে জানলা দিয়ে টেনে বের করে আনলো।
আমার গণধর্ষিতা প্রেমিকা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললো -
"বাড়ি যাও মা চিন্তা করবে"।
আমি চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে ব্রিজের মাঝের কয়েকটা নাটবল্টু ঢিলে করে
দিলাম-আগেরদিনের মতো হাওড়া ব্রিজ মাঝখান থেকে খুলে দুভাগ হয়ে গেল।
ট্রেনটা যখন হুগলীর জলে তলিয়ে যাচ্ছে দেখি পেছনের ইঞ্জিনের সামনে জ্যাক আর
রোজের মৃতদেহ বাঁধা।পরে কাগজে পড়েছিলাম ওদের অনার কিলিং করা হয়েছিল।
সেই থেকে মোমবাতি হাতে হেঁটে যাচ্ছি-এখন আর প্রেম করিনা।
অ্যালার্ম ক্লকটা এককোণে পড়ে রয়েছে অবহেলিতা ঘরের বউয়ের মতো-আজকাল আমি আমার
মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করি-সুদৃশ্য হারামিদের মতো তার মিঠে আওয়াজ-আমাকে রোজ
বাস্তবে ফিরিয়ে আনে।
তোমার সাথে অনেকদিন কথা হয়নি দীপান্বিতা-ফেসবুকে তোমাকে ব্লক করে দেবার পর-সব
মহিলাকেই বড়ো ভন্ড মনে হয়।
বাসে সিট না পেলে রোজ রোজ দু'তিনটে যাত্রীকে খুন করে ফেলি-ঘুম ভাংলে
দেখি তারা আমার জন্য জায়গা ছেড়ে নিজের নিজের স্টপে নেমে গেল।আজকাল সব সিগারেট
খুব পানসে লাগে। নেশাদের বয়েস বেড়ে যাচ্ছে।অফিসে কার্ড পাঞ্চিং মেশিনটা রোজ যখন
বিপ বিপ শব্দ করে কার্ডটা পাঞ্চ করলে - মনে হয় একটা টাইমবোমার দিকে হাত এগিয়ে
দিচ্ছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন