হারামি আর হারামিরা
নীলাব্জ চক্রবর্তী
বাস থেকে নেমে খিদে পেয়ে গেছিলো হারামির। কিছু পরে দ্যাখা
যায় কচুরির দোকান থেকে বেরিয়ে আসছে সে। ‘বাবু,
হামকো দোঠো কচোরি খিলাইয়ে না’ একটা মৃদু স্বর তার বাঁদিক
থেকে আসছে টের পায় হারামি। প্রায় বুড়ো লোকটা। সেমি-আড়চোখে একবার মেপে নেয় হারামি।
আর, স্রেফ ইগনোর করে। মাফ করো বা ঐ টাইপের কিছুও বলে না। সে শুনতেই পায়নি য্যানো
কিছু। বা অ্যাজ ইফ নেই-ই য্যানো লোকটা। সিগন্যালে ট্যাক্সির জানলায় ভিখারি এলে
কিন্তু হারামি এরকম ১০০ পারসেন্ট নেই করে দিতে পারেনা কখনো। কিছু না দিলেও অ্যাটলিস্ট
তার উপস্থিতিটা অস্বীকার করতে পারেনা। অল্প হেসে বা একটা কায়দার মুখভঙ্গি করে
কিছু-পাওয়া-যাবে-না টাইপের একটা কম্যুনিকেশন ঘটিয়ে ফ্যালে সে। হুঁ। ওটা স্ট্যাটিক
মোমেন্ট। আর এটা ডায়নামিক। এক্ষুনি পায়ে হেঁটে জায়গাটা আর লোকটাকে পেরিয়ে যাবে হারামি।
দু-তিন পা হেঁটে রিক্সাস্ট্যান্ড। চাইকি রিক্সাও ধরে ফেলতে পারে একটা। কিন্তু
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সিতে তার স্ট্যাটিক দশা তো নিজের ইচ্ছায় পাল্টাবে
না। বড়জোর জানলা বদল হতে পারে ট্যাক্সিতে একা থাকলে। স্বাধীন চলরাশি আর অধীন
চলরাশির মতো অনেকটা। তাই হয়তো...। কিন্তু এখন সত্যি সত্যিই একবার সে ভাবে লোকটাকে
দুটো কচুরি দিতে বলবে নাকি দোকানদারকে। একটাই তো দশটাকার নোট। ধুর, কী দরকার? আশেপাশের লোকে ক্যামোন
চোখে তাকাবে। হয়তো, দোকানদারই তাকে মুরগী ঠাওরে বসলো। না, সে মুরগী নয়। সে হারামি।
তার এক্ষুনি একটা রিকশা দরকার। রিকশাওয়ালাদের এখনো ‘হ্যালো’ বলে ডাকার চল
হয়নি, না? একটু বিপন্ন বোধ করে হারামি। আরেকটু হলেই তার মুখ দিয়ে ওটা বেরিয়ে
আসছিলো। আজকাল প্রায়ই হচ্ছে এটা। অদলবদল হয়ে যাচ্ছে। কখনো সম্বোধন কখনো
প্রতিক্রিয়া কখনো গোটা সিকুয়েন্স। এখন এটাকে আপনি রিপ্লেসমেন্ট বলবেন না
জাক্সটাপোসিশন সে আপনার ব্যাপার। তবে আমাদের মনে রাখতে
হবে হারামি আসলে কোনও একজনের নাম আর হারামি আসলে কোনও একজনের
নাম নয়। হারামি আসলে কয়েকটা আলাদা আলাদা ঘটনার একটা কালেক্টিভ সর্বনাম হয়তো। তা
হবে।
২
হারামি একটা উপন্যাস লিখেছিল একবার। সাকুল্যে সাড়ে ছয় জন
পড়েছিলো সেইটা। সেই এক ধোঁয়া ওঠা ওঠা বর্ষাকাল ছিলো বটে। নীল নীল করছিলো বাতাস। ঐ
সাড়ে ছয় জনের মধ্যে দুই দশমিক সাত পাঁচ জন খুবই আন্তরিক ভাবে রিঅ্যাকশন জানিয়েছিলো
হারামিকে। আপ্লুত হারামি কি করবে ঠিক করতে পারছিলো না। আহা, এই রিঅ্যাকশনগুলোকে
বেশ একখান মস্তবড় করে লাইক মেরে রাখা যেত --- ভাবে হারামি। তাতেও কি আর এই
আহ্লাদের যথেষ্ট প্রকাশ? তবে হ্যাঁ। মোট সাড়ে ছয় জনের মধ্যে সেই দুই দশমিক সাত
পাঁচ জন ছাড়া বাদবাকি তিন দশমিক সাত পাঁচ জন ছিলো আরও বড় হারামি। বোঝে সে। এর
কয়েকদিন পর মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে হারামি দেখে তার বালিশ থেকে কয়েকটা কালো অক্ষর
চুপিচুপি বেরিয়ে এসে খাট থেকে নেমে যাচ্ছে আর ঘরের দেওয়ালে জড়ো হচ্ছে। এটা একটা
গূঢ় সঙ্কেত। খানিকক্ষণ ভাবে বিছানায় বসে। ঠিক করে এবার থেকে সে ছন্দ মেলাবে। পরের
দিন সকালে অফিসের বাসে বসে বসেই বিনা আয়াসেই সে দেখলো দুয়েকটা বানিয়ে ফেলতে পারছে।
য্যামোন --- ঋত্বিকা বৃত্তিকা অমুকতমুক / সবে মিলে নাচে আর পায় কতো সুখ। এইরকম
একটা দুলাইনের ছড়া ছন্দ মিলিয়ে বানাতে পেরে হারামি খুশি হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গেই
প্রায়, তার মাথায় আরেকটা এরকম দুলাইনী আসছে টের পায় সে --- হাসিমুখে বাচ্চারা
আবোলতাবোল / খায়দায় গান গায় বাজে ঢাক-ঢোল। আহ্লাদে প্রায় উলু দিয়ে ওঠে হারামি।
ব্যাস। এবার কিছু গুছনো লোকজন জোগাড় করতে হবে ফেসবুকে। তার ছড়ায় ছন্দে পটাপট লাইক
দেবে তারা। কমেন্ট করবে আহা-উহু করে। ক্রমে এমন হবে, সে, এমনকি একটি করে ‘শুভসন্ধ্যা বন্ধুরা’ বা ‘সুপ্রভাত বন্ধুরা’ ছাড়লেও লাইক-কমেন্টের নোটিফিকেশনে
আকুলব্যাকুল হয়ে উঠবে তার অ্যাকাউন্ট। আর পায় কে এখন হারামিকে? তারপর সারাদিন
অফিসে দারুণ কেটে গ্যালো হারামির...
৩
বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় হারামি একটা অস্পষ্ট গলার আওয়াজ
শুনতে পেল বাস থেকে নেমে। কে যেন বললো, ‘প্রভাবিত
কবিতা’। তারপর আরেকটা গলার আওয়াজ। একটু কম অস্পষ্ট। ‘হ্যাঁ বন্ধু ঠিক বলেছো, তোমার কোন একটা মৌলিক ছড়ায়, না না সরি,
কবিতায়... কবিতায়... তোমার কোন একটা মৌলিক কবিতায় ঢাক-ঢোল শব্দটা ব্যবহার করেছিলে
না? নির্ঘাত ওইখান থেকে প্রভাবিত হয়ে এটা বানিয়েছে। তাছাড়া, অমুকতমুক শব্দটাও তো
অমুকদা বহুবার ব্যবহার করেছেন ওঁর তমুক কাব্যগ্রন্থে। আর এই স্টাইলেও তো অনেএএএক
মৌলিক কবিতা রয়েছে আগে থেকেই। তবে? নাহ, এসব চলতে দেওয়া যায় না। এইসব ভয়ংকরভাবে
প্রভাবিত যৌগিক ছড়া, না না সরি, কবিতা... কবিতা...। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, এইসব
প্রভাবিত যৌগিক কবিতা লিখবে এরা! লোকে পড়ে কী বলবে? দাঁড়াও, এগুলো নিয়ে ফেসবুকে
একটা লম্বা স্ট্যাটাস দেবো কালই। একটা সামাজিক দায়িত্ব আছে না আমাদের!’
৪
হারামির গল্প এখানেই শেষ হয়। আর, হারামিদের গল্প এখানেও শেষ
হয় না। যাবতীয় অসমাপিকা ক্রিয়া আর ধাতুর প্রসারণ গুণাঙ্ক সমেত ওটা আপনার হাতে ছেড়ে
দেওয়া আছে। আপনি শেষ করবেন বলে...
Mughal period er itihaas Porte gie ei term ta barbar eseche University Te.Jotobar define kora hoeche totobar bhetor faka hoe giche,kokhono uccharon koreo dekhini,Ajkaal sokoler mukhe byapokbhabe ei sobdota sune obak lage,Ei sobdotar pechone koekti jiboner Ki ashim sunyota ar asohayota ache ta Jodi manush upolobdhi korte parto..Lekhta bhalo laglo.
উত্তরমুছুনবাহ! দারুণ লেখা তো।
উত্তরমুছুনএই লেখকদের কোন লেখা আগে পড়িনি। খুব ভাল লেগেছে।
আরও পড়তে চাই উনার লেখা।