শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়


"আমরা হতভাগা।
বন্ধুত্ব দিয়ে আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়
শেষ হয় খিস্তিখেউড়ে।
"

 ঠিক এতটা গ্রাফিক না হলেও, প্রায় কাছাকাছি কিছু এক্সপ্রেশন দিয়ে ব্যাখ্যা করে দেওয়া যায় আজকের আধাশিক্ষিত তথা উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর আপামর কনট্যুর। বাঙালী হিসেবে (কম্যুনিটি নয়, ভাষাভাষী) আমাদের ভাষা নিয়ে সেলিব্রেশন প্রায় আমাদের পরিচয়ের খুঁটির মত একটি ইঙ্গিত। এই প্রবৃত্তির তাগিদ অদৃশ্য, কিন্তু ধারালো। তার নিয়ত খোঁচায় রক্তাক্ত হয়ে যখন গুটিকয় তরুণ ক্ষেপচুরিয়াস নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ শুরু করে শূন্য দশকের শেষে, তখন তার লজিকাল শেল্ফ লাইফ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। ওয়েল, তার প্রয়োজনও ছিল না। কারণ, পরিস্থিতি এ দেশ বা বৃহত্তর বাঙালী সমাজকে যে মেরুকরণের দিকেই ঠেলুক না কেন, তার সাময়িক উত্থানপতন তথা বোহেমিয়ানিজমকে ম্যানিফেস্ট করে ক্ষেপচুরিয়াস, আমাদের আদরের ক্ষেপু এখনোও, বাংলাকবিতার এই পোস্ট-ট্রুথ কালকল্পে বিদ্যমান।


বাংলা সাহিত্যে ফেসবুকের অনলাইন আধিপত্যের বয়স ব্লগের তুলনায় কম। এবং ব্লগ ম্যাগাজিন (আদরে ব্লগজিন) হিসেবে ক্ষেপুর কৌলিন্য হয়তো বয়সে অতটা নয়, গুণে ও বৈচিত্র‍্যে যতটা। কিন্তু ক্ষেপু ব্লগ, তার অল্প ক'টি সংখ্যায় গ্রুপম্যাগের থেকে সামান্য হলেও ভিন্ন এক অস্তিত্বব্যঞ্জনা সাজিয়ে নিয়েছিল। ২০১৪-য় এসে, মূলত: আমাদেরই রুজিরুটির মুঠোয় পিষে এ উদ্যোগ ছুটি নেয়।


এতে করেও যে ক্ষেপুর প্রতি উত্তরবর্তী কবিতাপ্রজন্মের আত্মিকতা লোপ পায়নি, তার প্রমাণ আমরা পেলাম বাইশের শীতে, এক ছোটমাফিক জমায়েতের ডাক দিয়ে। ক্ষেপুর আজন্মের সুহৃদেরা হৈ হৈ করে কলকাতা পাড়ি দিয়েছিল গত ডিসেম্বরে। কমবেশী ত্রিশজন ক্ষেপুর মনখোলা রেসপন্স প্রমাণ করেছিল এই ভার্চুয়াল পাগলাগারদের প্রতি তাদের এখনোও অক্ষুন্ন টান।


তারপর বছর ঘুরতে চলেছে। ইতিমধ্যে ভেটেরান থেকে কনিষ্ঠতম কয়েকজন ক্ষেপুকে এ মরজগৎ থেকে খুইয়েছি আমরা। বিষাদ ব্যক্ত হয়েছে কবিতার উদযাপনে। গ্রুপ চলছে যেমন চলে থাকে রোজকার কবিতায় বিকল্প নিখিল খুঁজতে খুঁজতে। তারই মধ্যে ক্ষেপু সুদীপ ব্যানার্জী, প্রস্তাব দেন ব্লগের রিভারবেড আবার খুঁড়ে জল তোলবার। মার্জিনাল, নামমাত্র সময়ে সবকিছু গুছিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে ক্ষেপুর নিজস্ব পরিবারের বাইরেও আমন্ত্রিতরা। যারা পারেনি তাদের দোষ দিইনা। আমরাই এ ফিরে আসার নামতায় যথেষ্ট আমতা আমতা। তবে ব্লগনির্মাণের আঙ্কিক, কারিগরি দিক ধরে রাখার দায়িত্ব এবারেও একা হাতে সামলালেন সর্বংসহা ক্ষেপু সুমিতদা, সুমিত রঞ্জন দাস। তাকে অশেষ আলিঙ্গন।


এই প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগে আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী নই৷ বাংলা কবিতা যে সুবিশাল ট্র‍্যাশ ও ফাঁকা আওয়াজে ভরে উঠেছে, তার মধ্যে ক্ষেপু বরাবরই ছিল সিলেক্টিভ, ক্রিটিকাল। আমাদের পাগলাগারদের একমাত্র ট্র‍্যাডিশন সমালোচনার প্রতি নোয়ানো মাথা, তাতে কারোও মাথা নিচু হয়না তা আমাদের চিরকালীন বিশ্বাসে থাকবে।


যদিচ আমন্ত্রিত লেখাগুলির কিছু কিছু ক্ষেপুর সমোচ্চে অন্যূন হবে তা বলাই বাহুল্য। এও এক পরীক্ষা, পাঠকের, বৃহত্তর ক্ষেপুবৃত্তে আমাদের জল মাপবার মার্ক টোয়েন। লেখা যেমনই হোক, পাঠকের অবাধ স্বাধীনতা লেখাকে ব্যাক্তিগত মাপকাঠিতে যথেচ্ছ অনুশীলনে ফেলা। সে আহ্বানের ট্যাটু আজন্ম জ্বলজ্বল করুক ক্ষেপুর শরীরে।


এ সংখ্যায় পেইন্টিং বিভাগের হাল যথারীতি ধরেছেন অমিত বিশ্বাস, দশক পেরিয়েও যার উপর আমাদের ভরসা কন্টিন্যুইং। কবিতায় আমন্ত্রিতরাই শুধু, ইনক্লুডিং গৌতম চট্টোপাধ্যায়, যার কাছ থেকে লেখা পাওয়ার সাফল্য এ সংখ্যার জয়ধ্বজা। এছাড়া নিয়মিত বিভাগ, পরিমিত সামর্থ্যে, অটল। নতুন বিভাগ হিসেবে ফটোগ্রাফি,  যার আদরের নাম দৃশ্যখেলনা। আর একঝাঁক খুদে ক্ষেপুকে মাঠ ছেড়ে দেবার প্রয়াস-ও শুরু করেছি আমরা। এ সংখ্যায় আঁকিবুকি দিয়ে ধন্য করেছেন শ্রীযুক্ত প্রমিত রায়।


ক্ষেপুর সাবেকী পরিচয় সেল্ফ-এক্সপ্ল্যানেটরি৷ এতে এখনোও একচুল ঘুণ ধরেনি। পুরনো লেখাকে নতুন দিয়ে যুঝে উঠবার ছেঁদো খেলায় নয়, আমাদের বরাবরের বিভব ও বৈভব একঘেয়েমী ভাঙিয়ে নতুন ভাষার সন্ধান। এবং পাঠকের সর্বব্যাপী স্বাধীনতা।


এ সংখ্যায় পাশে থাকুন। মতামত দিন যার যেমন খুশি। ব্লগের সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকের কমেন্টবক্স-ও খোলা রইল। পরবর্তী সংখ্যার আহ্বান দেখতে না দেখতেই লাফ দেবে।


সবাইকে ধন্যবাদ।

 

-- অত্রি ভট্টাচার্য এবং মিলন চট্টোপাধ্যায়

1 টি মন্তব্য: