গুচ্ছ কবিতা
১
আমার ভেতরে কিছু হয়ে ওঠা নেই
বাবা অশ্ব বাজি রেখে জীবন কাটিয়েছেন
আমার ভেতরে প্রোথিত করেছেন এক
সুনিপুণ জুয়াড়ি
রবীন্দ্রনাথ বানাবেন বলে স্কুলেই পাঠাননি
কেবল কুয়াশা শিখিয়েছেন
বাউল হবার জন্য শিখিয়েছেন আশ্রমিক জীবন
অংকে পাশ করিনি
বিস্কিট দৌড়ে সবার পেছনে
টিউশন ফাঁকি দিয়ে
ফ্রক ফুলিয়ে সাঁতার কেটেছি
ফুটো ছাতা নিয়ে বৃষ্টিতে
এখন যদি দূর থেকে কোনো
হেলেঞ্চা বা গাঁদা ফুল গাছ দেখি
দুহাত জড়ো করে বলি, ‘নমস্কার, স্যার।’
২
একদিন সব
রাস্তা
আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাবে
প্রতিদিন মেঘগুলো
আমার বাড়ির আকাশে ডাকবে
আমার বাড়ির সামনে দিয়ে
একদিন সব রাস্তা
আমার বাড়ির আকাশে
প্রতিদিন মেঘ
প্রতিদিন বৃষ্টি
পড়া বৃষ্টিগুলো
ডাকা মেঘগুলো
দেখতে দেখতে দেখতে দেখতে
প্রতিটি রাস্তায় তুমি
প্রতিটি রাস্তা দেখতে দেখতে
প্রতিটা তুমি দেখতে দেখতে
আমার মন কেমন করবে।
৩
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে
ফিরেও এসেছি
বিদায় সহজ নয়
চোখের ড্রপস
অমিয়ভূষণ
যে জামাটা কিনেছি সেদিন
জামা রেখে যাওয়া
সহজ নয়
বাড়ি ছেড়ে
জুতো খুলে
যেদিন চলে যাবো
পা কি ফিরিয়ে আনবে
খুঁজব নিজেকে চেয়ারে
খাওয়ার টেবিলে
আড্ডায় রেষ্টুরেন্টে
এসে দেখবো
তেমনি ঝুলছে
দেয়ালের জামা
কোলে তুলে নিয়েছি
প্রিয় বেড়াল।
৪
হাজার বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে
সভ্য হয়েছে কেবল জামা
মানুষ নয়।
৫
যে কবিতা লিখেছি বিচলিত হয়ে
কোল তৈরি করেছি বাঘিনীর
যে ধ্বস শরীরের
টান টান বেণী
বুকে জড়িয়ে ধরলে কিছু কি কম
সম্রাটের গল্পে
জাহানারা জাহানারা জাহানারা
কবিতা চিৎকার করে
ভুলগুলো চিৎকার করে
আমি কী তবে চড়ে বসেছি বাঘের পিঠে!
৬.
আমাদের কথাদের হাড়গোড় দিয়ে খেলতে দিয়েছি,
বহুদিন আগে মরে গেছি বলে মাংস নেই দেহে,
তোমার মাংসটি ছিল, আমার দেহটিও
মাংসল,
এখন কথারা বেঁচে আছে কথারা নিজেরা খেলে
আমরা খেলেছি কথাদের কথা নিয়ে গান নিয়ে
অভিমান নিয়ে,
দেহের সুঘ্রাণ দিত পাহাড়েরা
এখন দেখে না কেউ, কে যেন দেখে না মধুপুর
দেখে না মরে গিয়ে সাদা হাড় হয়ে আছি আমরা একত্রে
আজ ব্যথা অথবা আনন্দ নেই কারণ আমরা
আমাদের হাড়েগোড়ে মিলে মিশে থাকি,
জেগে থাকি
আমাদের ঠোঁটে আজ কুচি কুচি বরফের ফেনা
মৃত ঠোঁট কোনোদিন জানবেনা এই
বারুদ চোখের জল
এই সত্য জানবে না এই
হাড়গোড়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন