ছোটগল্প
লাভগুরু
– অনন্যা সিংহ
(১)
প্রেম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল কলেজ লাইফ।এই কথাটা অভিষেক খুব ভালো করে বুঝল একদিন।
আর বুঝল বলেই না ওর ব্যবসাটা এমন ফেঁপে ফুলে উঠল। এই সেরেছে আপনারা কী ভাবছেন ওকে?
আরে না না ও কোনো ব্যবসাদার না... দুর ছাই । ও’তো এই সবে সেকেন্ড ইয়ার এ উঠল কলেজে। বাচ্চা ছেলে যাকে বলে।
তা কী যেন বলছিলাম ব্যবসা। ও হচ্ছে ওর কলেজের সাধের একমাত্র লাভগুরু। না না সলমন খান এর অনেক আগেই ও এই তকমা পেয়ে গেছিল কিন্তু। লাভগুরু বলতে আবার ওকে প্রেমের দেবতা ভেবে বসবেন না যেন। দেবতা টেবতা না ওর কাজ হল আগুনে ঘি ঢালা। বুঝলেন না মনে হয়; ওই আর কি দোনো তরফ যখন দিল-এ আগুন জ্বলে ওঠে ও ঘি ঢেলে আগুনটা আরও বাড়িয়ে দেয়। তা শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে ও মোটামুটি চল্লিশটা প্রেম করিয়ে দিয়েছে। কলেজ শেষ হওয়ার পর দু-চারটে ভেঙে গিয়েছে তা ঠিক - মানে বাপের কথা মেনে মেয়েগুলো সুড়সুড় করে বিয়ের পিঁড়ি তে বসেছে, কিন্তু মানতেই হয় বাপু, যে ওর সাফল্যর অনুপাত বেশি। চুপিচুপি বলে রাখি এই ব্যবসা টা কিন্ত ও টাকার জন্য করে না। কেস সল্ভ হওয়ার পর মেয়েগুলো ওকে খুব খাওয়ায়, বাড়ি থেকে আনা টিফিনগুলো ওরই পেটে যায়। ও কিছুতেই বুঝতে পারে না ওই অত ভালো ভালো খাবার ফেলে মেয়েগুলো স্রেফ ফুচকা কী করে খায়, তাতে ওর আর কি চাপ, ওর পেটতো ভরে। আর ছেলেগুলো মহা শয়তান - দুএকটা সিগারেট আর ক্যান্টিনে চা খাইয়ে ছেড়ে দেয়।
এই হচ্ছে আমাদের অভি আর অভির ব্যবসা, দিব্যি ছিল বেচারা কিন্তু ইদানীং এক হাসি ওর পেছনে পড়েছে, না ও আমাদের হাসিখুশি ছেলে কিন্তু!
এইবছর নবীনবরণ ঠিক ছিল মেয়েরা সব ফাস্ট ইয়ারকে ফোঁটা দেবে আর ছেলেরা দেবে গোলাপ ফুল, সব ঠিক ছিল , বাঁধ সাধলো জিএস বাবাজীবন, ফোঁটা দেবে চন্দ্রিমা আর গোলাপ দেবে অভিষেক ,শুনে ও আঁতকে উঠেছিল লাভগুরু হলে কি হবে ওর জীবনে প্রেম বস্তু এখন থাবা বসায়নি । বেশ খুশিতেই থাকে, মোবাইল এর বিল কম, রাতে নাক ডাকিয়ে ঘুমায় কাউকে বলতে হয় না ফোন কেন বিজি , সবচেয়ে বড় ব্যাপার দিব্যি ঝারি মারতে পারে , তাই ওকে গোলাপ দিতে হবে শুনে বেজায় আঁতকে উঠেছিল কারণ লাল গোলাপ যত নষ্টের গোঁড়া । দিলি যখন ফোঁটা দেওয়ার কাজ দিতে পারতিস ছেলেগুলোর সাথে সাথে মেয়েগুলোকেও ফোঁটা দিতাম বেশ বোনফোঁটা হত, যাক গে কাজ ইজ কাজ বলে দিব্যি সেদিন গোলাপ দিচ্ছিল সবাইকে , ঝারি ও মারছিল (ওর ঝারি মারার কায়দা বেশ আলাদা যাকে মারবে সে বুঝবেও না) এমন সময় কিউপিড মহাশয় মারল তির , ‘আমি কিন্তু গোলাপ পাইনি’ , ‘কি হবে গোলাপ পেয়ে’ এই ভেবে ঘুরে তাকিয়ে এক বিখ্যাত হাসির মুখোমুখি ,
হাসির পেছনে মুখটাও। ‘সরি গোলাপ তো শেষ’ ‘ঠিক আছে পরে দিয়ে দিও’ ‘এ আবার কি’ বলে আবার কবে অভি একে গোলাপ দেবে’ যাই হোক সেই থেকে এই হাসি রাতদিন ওর পিছু নিয়েছে ।
নামটা এতদিনে জানতে পারা গেছে ‘অজন্তা’ (বাপের মনে হয় হাওয়ায় চটির ব্যবসা আছে) পড়ে ফাস্ট ইয়ার, ইংরেজি অনার্স । মাঝে মাঝে অভির মনে হয় ওই হাসি দেখলে যে কোনো মাজন কোম্পানি বর্তে যাবে ।
(২)
আজ লক্ষ্মীপুজোর পর কলেজ খুলেছে , আবার কলেজ জুড়ে রঙের মেলা, অভির বেশ খুসি খুসি মন, কটা মেয়েকে ঝারি মারল বেশ রসিয়ে কষিয়ে বন্ধুদের গল্প করছিল, এক ছেলে এসে বলল আজ ঠাকুমার ক্লাস হবে না, (বয়স অনুসারে স্যার ম্যাডামদের ওরা নাম দেয় কাউকে ঠাকুমা দিদিমা পিসেমশায় এই আর কি)। হবে না তো হবে না, অভি মাঠে গিয়ে আবার আড্ডা জুড়ল মেয়েগুলো সাথে, কানে এল এক মেয়ের ফোনে প্রেমালাপ, উফফ কি ন্যাকা ন্যাকা, আচ্ছা ন্যাকামিতে কি মেয়েদের জন্মগত আধিকার। যা তা একবারে। এমনসময় ওর ফোনটাও বেজে উঠল, sms এসেছে, ‘কে বাবা’ করে খুলে দেখে কুন্তলের, এর কেসটা একটু চাপের ছিল কিন্তু অভির কাছে সব কাজ, কুন্তলের ব্যথার জায়গা রিয়া ,মালটার একটু ফেমিনিজম এর ছোঁয়া আছে, প্রায় ২মাস ধরে লড়ে বাগে আনতে হয়েছে, এবার হাতুরিটা মেরে দেওয়ার পালা, কুন্তলকে ও রিপ্লাই করে দিল ‘বস টেনশন লেনে কা নই, অভি হ্যাঁয় না’। ‘চল আসি রে, একটু ল্যাবে কাজ আছে, শ্রেয়া বলল ‘এই পরশু আমার জন্মদিন আসিস কিন্তু’ ‘তা আর বলতে,কাকিমা যা রান্না করে অবশ্যয় আসব এখন পালাই’।
গাড়িবারান্দা দিয়ে আসতে আসতে আবার সেই হাসি, উফ্, বাপু দাঁড়িয়ে আছিস তো, রুপমদার সাথে, ভাল ছেলে, থার্ড ইয়ার, ফিজিক্স অনার্স, উজ্জল ভবিষ্যৎ, তাও শালা এই অধমকে দেখেই হাসতে হবে?
অভি একটু গোয়েন্দাগিরি করে দেখেছে ওই হাসি অন্য কোনো ছেলের সামনে মেয়ে হাসে কিনা, বেরয় না দেখে খুব চাপে আছে, হাসির চাপে ওরমতো ছেলে প্রায় পালাল,কুন্তল আর রিয়া করতে করতে।
(৩)
আজ রোববার, কুন্তল-রিয়া একে অপরের হল, অভির মুকুটে আপাতত আর একটা পালক অ্যাড হল, এবার ওকে শ্রেয়ার বাড়ি ছুটতে হবে, ওদের টাটা করে বেরিয়ে সাইকেলটা জোরে চালাল, ছাতার মাথা আজ আবার সব দোকান বন্ধ, শেষে একগুছ লাল গোলাপ কিনে গজগজ করতে করতে ওদের বাড়ি ঢুকল, বাইরে থেকে খাবারের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, কার মুখ দেখেই না উঠেছিল ও, সকাল ঠেকে ভালো ভালো খাওয়া, ঢুকেই পেয়ে গেল বার্থ’ডে গার্লকে, ‘কিরে এতদেরি’; ‘ওই একটু কাজ ছিল’ কোনোরকমে শুভ জন্মদিন বলে বেচারা খাবারের দিকে এগছিল, কিন্ত এখানেও সেই হাসি, ‘ভগবান’ L, এ এখানে কেন’।
ও চট করে মুখটা ফিরিয়ে নিল, কিন্ত ততক্ষণে হাসি তার সামনে, ‘এই তুমি আমায় দেখলে পালাও কেন বলো তো ?’ ‘ভগবান, L তোমার মনে এই ছিল, আরে না পালাব কেন? কাজ,পড়াশোনা থাকে আর কি’। হাসি আবার হেসে উঠল, ‘এই শোন না শ্রেয়াদি বলেছে অন্ত্যাক্ষরি খেলা হবে। আমি কিন্তু তোমার পার্টনার হব’, ‘আমার কেন? রুপম’দার হও, (বেশ কিড়মিড়িয়ে বলে উঠল), ‘ও মা দাদাভাই কি শ্রেয়াদিকে ছেড়ে আমার পার্টনার হবে, বউকে ছেড়ে ও কাউকে পার্টনার করবে না’, (বউ, দাদাভাই কি সব বলছে অভির মাথায় ঢুকছিল না, এই কেসতো ওর হাতে আসেনি,কবে হল) ও কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞাসা করল ‘মানে?’
বিখ্যাত হাসি আবার হেসে বলল ‘মানে আর কি রুপম আমার দাদা আর শ্রেয়াদি আমার হবু বউদি, মোদ্দা কথা তুমি আর আমি পার্টনার হচ্ছি’ কথাটা শুনে বেশ হা করে অভি অজন্তার চোখে তাকাল (অভি কোথায় শুনেছিল মেয়েদের চোখে সন্মোহন শক্তি আছে,আজ হাড়ে হাড়ে ফিল করল) । কিউপিড মহাশয় বাণ মেরে দুজনকে বিদ্ধ ক্রল, পাশের টেবিলে রাখা এক গোলাপ প্রায় আপনাআপনি অভির হাতে চলে এল, কে যেন পাশ থেকে গেয়ে উঠল ‘জব সে তেরে ন্যায়না মেরে ন্যায়নো লাগে রে’ ।
ওরে রাক্ষসী । কি লিখেছিস রে ! জিও ।
উত্তরমুছুনতাপ্পর কি হল , বলিস কিন্তু :)
বাঃ! বেশ নতুন রকম। ভালো লাগল। আনন্দ পেলাম।
উত্তরমুছুনচমৎকার লেখা...খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনদারুণ লিখেছ গুরু!!!!!
উত্তরমুছুন