মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১২

ইন্দ্রানিল তেওয়ারি

 বুবুন
 ইন্দ্রানিল তেওয়ারি
আবে খাওয়াবি চল।
কেন বে? বাপের বিয়ে লেগেছে নাকি?
শালা! হারামি! ফার্স্ট ডিভিশন মেরে দিলি ,খাওয়াবি না?
দূর বোকা! এতে খাওয়াবার কি আছে? তুইও তো মেরেছিস।
শোন বাপ
, তোকে দুটো জ্ঞান দিচ্ছি, হামেশা মনে রাখবি - এক নম্বর,  ফার্স্ট ডিভিশন পেলে সব সময় খাওয়াতে হয় আর গাল সবসময় কমপ্লিট দিতে হয়। আধখেঁচড়া গাল অপমান জনক। না খাওয়ানটাও তাই। বুঝলি?
সে তোবুঝলুম। আচ্ছা চল, আজ খাবো  জম্পেশ সন্ধে ছটায়,জাদু করায়ে কিন্তু অর্ধেক গালি কখন দিলুম?
কেন বে, ঐ যে বললি বোকা
দিবি তো পুরা গাল দিবি।
শালা! তুই আছিস মাইরি একটা
! ওকে বস্, মনে থাকবে
ঠিক আছে চল সিগারেটটা ফুঁকে ঘর যাই। লায়েক হয়ে গেলুম,ঘরে গিয়ে চন্দ্রবদনখানা দেখায় গিয়ে। তুই কিন্তু একদম পাক্কা পাঁচটায় চলে আসিস ঘরে।
#
আমার বন্ধু বুবুন। ওর সাথে দোস্তি হয়েছিল ক্লাস ফাইবে। একসঙ্গে দুজনে ঢুকেছিলাম আমরা স্কুলে।
হায়ার সেকেন্ডারি পাস করার পর ওই শেষবার ও এসেছিল আমার ঘরে জাদু কড়ায় এ খেতে যাওয়ার আগে। আমার এখনও মনে আছে,ঘরে ঢুকে মাকে প্রণাম করতে মা বলেছিল খুব বড় , বাবা! তোরা দুজনেই খুব বড়
তারপর আমি দিলুম জয়েন্ট এন্ট্রান্স আর ও ভর্তি হল বায়োলজি অনার্স নিয়ে। দুজনের নতুন জিন্দেগী আরম্ভ হল। আমি চলে গেলুম বেঙ্গালুরু আইটি নিয়ে পতে আর ও থেকে গেল আমার হরে।  মাঝে মাঝে যখন ঘর আসতুম ওর সাথে খুব কম দেখা হতোথার্ড ইয়ারে দূর্গা পুজোয় শুনতে পেলুম ও কলেজ  ছেড়ে দিয়েছে। আমি ত অবাক! কি হল ব্যাপারটা! মাকে কথায় কথায়  বলতে মা বলল,  ওর সাথে দেখা হলে আর কথা বলিস না। ও খুব খারাপ হয়ে গেছে।  
জিজ্ঞেস করলুম কেন মা?একথা কেন ?
মা বলল আরে জানিস না! ও এখন কয়লার কারবার করে। দিন রাত মদ খায়। রাস্তায় দেখলে চিনতে না পারার ভান করে চলে যাবি।
দরকার নেই ওর সাথে কথা বলে। কি জানি কখন কি অঘটন ঘটে যায়! তুই আমার নামে দিব্যি গেলে বল যে ওর সাথে আর কথা বলবি না! তুই আমার একমাত্র ছেলে!
আচ্ছা! আচ্ছা! কথা বলব না আর।ঠিক আছে? আমি
তো এমনিতেও আর ওর  সাথে কথা বলি না, মানে দেখা হয়নি বহুদিন
না! একদম আর দেখাও করিস না।ওর এখন কোল-মাফিয়াদের সাথে ওঠা বসা।খুব বাজে হয়ে গেছে ছেলেটা। ছেলেটারই বা দোষ কি! জায়গাটাই তো খুব খারাপ হয়ে গেছে    
#
এরপর থেকে ওর খবর নেওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছিলুম। ক্যাম্পাসিং এ যেদিন কনফার্ম হল টিসিএস এর জব,সেদিন মাকে ফোন করতে মা বলল জানিস আমাদের এখানে একটা মল হচ্ছে।
বিশাল বড় মল। দারুহবে ব্যাপারটা।
শুনে বেশ ভাল লাগল। আমার শহরে এই প্রথম মল হতে চলেছে। কিন্তু মনে খুব সংশয় ছিল ব্যাপারটা কি রকম দাঁড়াবে! বেঙ্গালুরুতে যা অবস্থা,আমার শহরে তো সে জিনি কল্পনাও করা যায় না    
সে যায় হোক ইঞ্জিয়ারিং শেষ করে ঘরে ফিরে এসেছি।
পুজোর ঠিক আগে আগে টিসিএস জয়েন করতে হবে আমার লাক্‌টা ভালো কলকাতাতেই পোস্টিং হাতে এখন দুমাস।
#
সেদিন বাসে করে ঘর ফিরছি
বড়বাজার গিয়েছিলুম, ফেরার সময় পোস্ট অফিসের সামনের ফুটপাথ থেকে এসএসসি-র ফর্ম কিনে নিয়েছিলুম বোনের জন্য। হাতে ধরা ছিল ফর্মটা । জানালার পাশের সিটে বসে তাকিয়ে ছিলুম বাইরের দিকে। হটাৎ চেনা গলায় গালি গালাজ শুনে ফিরে তাকাতেই দেখি বুবুন বাসের খালাসিকে বলছে আবার কখন এরকম করলে কাট্‌কে ফেক দেঙ্গে মাদারচোদ।
আমার সাথে চোখাচোখি হতেই বলে উঠলো আবে নীল! শালা , কেমন আছিস? কতদিন বাদে দেখা! কি করছিস এখন?
এই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বসে আছি।
ও হো! তুই তো ইঞ্জিনিয়ারিং পরতে গেছিলি না! পাশ করে এখন এস এস সি দিবি
? আমিও দিয়েছিলুম অনেকগুলো। হায়ার সেকেন্ডারির পরীক্ষাগুলো। কলেজ তো আর শেষ হল না
তারপর কিছুক্ষ চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করল।  
আরে এসব গানডুর পরীক্ষায় কিছু হয় না।
তার চেয়ে বরং আমার সাথে কাজ কর ,ভাল মাল পাবি। এই দ্যাখ,বলেই পকেট থেকে একতাড়া  হাজার টাকার নোট বের করে দেখাল।
আমি হেসে বললুম ঘর আসিস একদিন।মা তোর কথা প্রায়ই বলে।
বুবুন হটাৎ গম্ভীর হয়ে গেল।অনেক ক্ষ
চুপ করে থাকার আচমকা সে বলতে শুরু করল,  
শোন বাপ, একটা জ্ঞান দিচ্ছি,হামেশা মনে রাখবি। মাতালের সামনে কখনো ঝুট বলতে নেই,ধরা পরে যাবি। কাকিমা আমার কথা বলে না বসস
, সে আমি জানি।আবে আমার মতোছেলের সাথে কেউ কথা বলে নারে ভাই। আজ একটু মদ খেয়ে আছি তো তাই তোর সাথে কথা বলছি , নইলে আগেও তোকে কতবার দেখেছি,আওয়াজ দিইনি। বুঝলি দুনিয়া বড় বেসরম। কিসিকো জিনে নেহি দেতা!
মাথা নিচু করে বললুম ঠিক আছে আজ স
ন্ধেবেলা তোর ঘর যাবো আড্ডা মারতে।
বুবুন হটাৎ খুব জোরে হাসতে শুরু করল।হাসতে হাসতেই বলল শালা একবছর ধরে ঘর যায়নি রে।
এখন অন্য জায়গায় থাকি । ঘরে টাকা পাঠিয়ে খালাস।  আর যেখানে থাকি  সেখানে গেলে তো র আর বিয়ে হবে নারে পাগলা । তার চেয়ে বরং এই ভালো অলবিদা।
লেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গেটের দিকে চলে গেল।
#
পুজো
র পর টিসিএস জয়েন করলাম। জয়েনিং ডেট টা একটু পিছিয়ে গিয়েছিল। একদিক থেকে ভালই হয়েছিল আর কি! এক মাস পরে বেতন নিয়ে উইক এন্ডে ঘরে এসে শুনলুম মল খুলে গেছে আমার শহরে।
মাকে নিয়ে গেলুম মল। দুটো ফ্লোর নিয়ে কেবল বিগ বাজার, তারপর বাকি ফ্লোরে আর তিন চারটে স্টোর
সে যায় হোক। দেখলুম তাতেই প্রচুর ভি ঘরের কেউই আগে আসেনি মা আর বোন খুব খুশি। খুব বাজার করা হল। ট্রলি নিয়ে ঘুরে ঘুরে নিজের শহরের মলে বাজার করার মজায় আলাদা। মা দেখলুম চারটে নুনেরই প্যাকেট কিনে ফেললো। ক্যাশ কাউন্টারে দেখি লম্বা লাইন। অপেক্ষা করতে করতে  যখন আমাদের সময় এল, তাজ্জব হয়ে গেলুম।  আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল বুবুন তুই এখানে! 

এক চিলতে হেসে বুবুন বলল, হুম ।
দুসপ্তাহ হল ঢুকেছি তোদের আগেই দেখতে পেয়েছিলুম।
তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল কেমন আছেন কাকিমা?
#
মা বলল তুই কেমন আছিস বাবা? বড্ড শুকিয়ে গেছিস।একদিন ঘরে আসিস। শনি রবিবার করে। নীল ঘরে থাকে।
হ্যা কাকিমা আসব একদিন। এইবার আসব।
জিনিষপত্রের দাম দিতে দিতে বুবুন কে জিজ্ঞেস করলুম ছুটি কখন তোর?
#
 বুবুন বলল সারে নটায়।
কাকিমাদের ঘরে আবার চলে আয় তোর জন্য সিগারেট রাখা আছে।

(সমাপ্ত)
 
 

৪টি মন্তব্য:

  1. যেখানে বাস্তবতা আছে তা তো মন কাড়বেই! ভালো লাগল। ঘটনক্রম সুন্দর। কিন্তু কিছু অসামঞ্জস্য রয়েছে গ্রন্থণার ক্ষেত্রে। যেমন, এক্কেবারে শেষ অনুচ্ছেদটিতে! পূর্ব অনুচ্ছেদে প্রশ্ন আর পরেরটিতে তার উত্তর। তবুও বলি ইন্দ্রনীলদা! তোমার লেখায় সুন্দরভাবে সমাজের একটা দিক উন্মোচিত হয়েছে। যা সত্য। ভালো থেকো!

    উত্তরমুছুন
  2. শেষটি আসলে স্বপ্নের মত, জীবন থেকে এত টপ জলদি কেউ পথ পরিবর্তন করতে পারলে খুব ভাল হোতো। তবে লেখকের ক্ষমতা সেখানেই, তার হাতে স্বপ্ন পূরণের সব চাবি-কাঠি...... :) আমি কিন্তু দুর্দান্ত দিয়েছি, 'ভালোই' এর চেয়ে 'ভাল', লেখা খুবই চমৎকার হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. সুন্দর গতিময় বাস্তবধর্মী লেখা...

    উত্তরমুছুন
  4. স্বচ্ছন্দ ঝরঝরে গতিময় লেখা। গল্পের আমেজ বলার ভঙ্গীতে রয়েছে, যেটা পাঠককে ধরে রাখার একটা মাত্রার কাঙ্খিত বাস্তবিকতা - কিপ ইট আপ। ভালো লেগেছে।

    উত্তরমুছুন