২০০৮,সদ্য ঢাকায় এসেছি। কোনো কবির সঙ্গে চাক্ষুস দেখা হয় নি। কবিতায় কবিতায় চেনা চিনি।একদিন গোপালগঞ্জ থেকে কবি গাজী লতিফ ফোনে জানাল, বরিশাল যাবার প্রোগ্রামে সে ঢাকা আসছে। আমি উতলা। বরিশাল মানে তো জীবনানন্দ। বলে ফেললাম, যাব আমিও। সে কি করে হয়, ওসব আমি জানি না। যাবো তো যাবোই। ইচ্ছা জয়ী হল--নির্দিষ্ট দিনে সন্ধ্যায় শাহবাগে সবাই। একে একে চিনই,এ কবি শামীম রেজা,যার অসাধারন কবিতার বই'যখন রাত্তির নাইমা আসে সূবর্ণ গ্রামে'। আর তার দৈনিকের সাহিত্য পাতায় বেশ কিছু কবিতা ছাপা হয়েছে আমার। লিটিল ম্যাগ সম্পাদক 'লোক' তার নাম ও শামীমুল হক শামীম। তিনিও কবি। কবি সফেদ ফরাজী,কবি মাহমুদ শাওন, কবি মামুনুর রহমান, কবি জুয়েল মুস্তাফিজ।
ওপারের সেবন্তী ঘোষ, গাজী লতিফ,কবি সোহেল মাহমুদ আর ও অনেকে।পরিচয়ে সেই একই ঘটনা আমার নামনিয়ে।সবাই ভেবেছে,আমি নারী নই।চা-কফি খেয়ে সবাই গাড়িতে বুড়ি গংগামুখী। বিশাল ইষ্টিমার' পারাবত' এ রিজার্ভ কেবিনে গল্প-হই-চই-খাওয়া দাওয়া শেষে পুরা ইষ্টিমার ঘুরে দেখা হল। সেবন্তীর সংগে চোখা চোখি হয়--আলাপ হয় না। অনেক রাতে আড্ডা শেষে কবিতা পড়া চলল। শ্রাবণ'প্রকাশনীতে অল রেডি আমার পান্ডুলপি চলে গেছে---কয়েক টি কবিতা নিয়ে এসেছিলাম সাথে।জানানো হয়েছিল।
ঢাকার কবিদের নাম আর কবিতাই কেবল পড়েছি---তাদের সঙ্গে এক ই আড্ডায় কবিতা পড়তে ভয় ভয় লাগলো।' অবিশ্বাস বেড়ালের নুপুর' এ পুরনো ফর্ম ভেঙ্গেছি কেবল।
কবিতা পড়া শেষ হল সবার। আমি আর সেবন্তী রুম শেয়ার করে শুতে এসেছি। ভাব হতে দেরি হল না। না আপন এর ছুটি হয় নি ।বই মেলা শুরু ফেব্রুয়ারির এক তারিখে। আমরা ঢাকা ফিরেছি। আমার বই স্টলে এসে গেছে। বই হাতে লাইভ প্রোগ্রামে দু'এক লাইন কথাও বলে ফেলেছি,টিভির এক চ্যানেলে। আড্ডা দিই কাগজ প্রকাশনীর কাগজ় ষ্টলে। আপনের সাথে সন্ধ্যার দিকে আলাপ হল। গভীর কন্ঠ।খুব শান্ত।কথা বলার ভঙ্গী আকর্ষণীয়। ফোন নাম্বার দেয়া নেওয়া হলো। মেলা শেষ হলে দোকান বন্ধ । তারপর ও বাড়ির দিকে যাই না। রাস্তায় বসে তুমুল আড্ডা-চা, খাওয়া।
মেলার পরেও আপনের সাথে ফোনে কথা হয়। কোথাও পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে মেসেজে অথবা ফোনে কবিতা পড়ে আমাকে চমকে দেয়। একদিন বীথির কথা শুনলাম। আমাকে দেখাবার খুব শখ। বাসায় আসতে বলি। বন্ধুত্ব হল বীথির সাথেও। বীথি কবিকে ভালবেসে আমাকেও ভালবেসে ফেলল। বিয়েতে যেতেই হল। সেই আমরা পুরা দল। বই মেলা চলছিল সেবার। আপনের বাবা ক্যান্সার রোগি।আমাকে পরিচয় করাল ভাইএর সঙ্গেও। এমন ভাবে বাড়িতে বলেছে,যেন আমি অনেক দিনের পরিচিত। বীথির বাসায় গিয়ে তো বীথিকে পাই না। আপন জানাল,পার্লারে বিয়ের সাজ করতে গেছে। খানিক পরেই চলে এলো-একটু খয়েরী রঙ শাড়ি। দুজনে কিনেছে। বীথির মুখের সুখ দেখে খুব ভাল লাগছিল। আর মেয়েটা কেঁদে কেঁদে সারা রাত আমার সাথে কথা বলবে না। বীথির মা চাইছিলেন,কবি নয়, অন্য কারুর সাথে বিয়ে দিতে।আর আপন ও আর একটু গুছিয়ে নিতে চাইছিল।বাড়ির সব খরচ ওকে একাই দিতে হয়। আপন নাকি বলেছিল,রাজি হয়ে যাও। বীথি আমাকে বলতো,কবিরা কি এমন হয়? আপু,কবিদের তো অনেক মায়া। কত কি বলে শুধু কাঁদতো। বিয়ের পর তাই শান্তি পেয়েছিলাম খুব। মেলায় গিয়ে ফোন দিয়েছে,যেতে হবে। আমার বই কিনবে। আপনের 'সকালের দাঁড়ি কমা ও বেরিয়ে গেছে। আমাকে আগেই দেখে দুজনে এসে ধরে নিয়ে গেল আমার প্রকাশনী ধ্রূব পদ-এর ষ্টলে। বই কেনার পরে অটোগ্রাফ নেবে।আমি দিচ্ছি না।কারন আপনের বই কেনা হয় নি তখন ও। কেনা হল। দেয়া হল অটোগ্রাফ।আপন খুব শান্ত-ধীর।আমি চঞ্চল খুব,খুলে পড়তে শুরু করি কবিতা।এমনি সময়ে আপন বীথিকে বলে,কচি রেজার বই কিনেছ? আমাদের কিছু বলার আগেই আবার ধ্রুব পদের ষ্টল।আবার বই কেনা। আমি বল্লাম,এক বই দুজনে কেন কিনলে? আপন বলল,আমার বই আমার,বীথি কেন কিনবে না? বীথিও বল্ল,সে ভাল। ওর বই আমাকে ধরতে দেয় না।'
আমেরিকা আসি,আমার বন্ধুরা কেউ চায় নি। দিন রাত মেসেজ আসতে থাকে বন্ধুদের। কিন্তু ফেরানো যায় না আসা। শেষ দিন শেষ মেসেজ আসে সফেদ ফরাজী আর আপন মাহমুদের। আমি ইমিগ্রেশনের লাইনে---তখন ও। আমি চোখের জল মুছব না কি চেক ইন হব।
প্লেন ওড়ার আগে সিট বেল্ট পরে বসে আছি। ফোনের পরে ফোন। শেষ মেসেজ আবার সেই আপনের।
'কাঁদো বাংলার আকাশ--নদী--বৃক্ষ--কবি চলে যাচ্ছে''
নিউ ইয়র্ক এসে ও চ্যাট এ কথা হয়েছে। এখানে লেখা চলছে জেনে আনন্দিত হয়েছে। ওর বইটা আনা হয় নি।খুব ভোরে উঠে ল্যাপটপ ওপেন করে মেসেজ পেলাম অনেকগুলো। আমার দেশের অনেকে আর ক্ষাপচুরিয়াসের কবি অত্রি ভট্টাচার্য জিজ্ঞেস রেখেছে,কবি আপন মাহমুদ কি মারা গেছে?
আমি একে একে মেসেজ পড়লাম---হোম পেজে গেলাম--ক্ষেপুতে গেলাম। নাহ কোথাও এত টুকু ফাঁক বা সন্দেহ নেই যে দ্বিধা নিয়ে বলতে পারব যে – আপন বেঁচে আছে । সামান্য অসুস্থ হয়েছিল মাত্র ।
ওপারের সেবন্তী ঘোষ, গাজী লতিফ,কবি সোহেল মাহমুদ আর ও অনেকে।পরিচয়ে সেই একই ঘটনা আমার নামনিয়ে।সবাই ভেবেছে,আমি নারী নই।চা-কফি খেয়ে সবাই গাড়িতে বুড়ি গংগামুখী। বিশাল ইষ্টিমার' পারাবত' এ রিজার্ভ কেবিনে গল্প-হই-চই-খাওয়া দাওয়া শেষে পুরা ইষ্টিমার ঘুরে দেখা হল। সেবন্তীর সংগে চোখা চোখি হয়--আলাপ হয় না। অনেক রাতে আড্ডা শেষে কবিতা পড়া চলল। শ্রাবণ'প্রকাশনীতে অল রেডি আমার পান্ডুলপি চলে গেছে---কয়েক টি কবিতা নিয়ে এসেছিলাম সাথে।জানানো হয়েছিল।
ঢাকার কবিদের নাম আর কবিতাই কেবল পড়েছি---তাদের সঙ্গে এক ই আড্ডায় কবিতা পড়তে ভয় ভয় লাগলো।' অবিশ্বাস বেড়ালের নুপুর' এ পুরনো ফর্ম ভেঙ্গেছি কেবল।
কবিতা পড়া শেষ হল সবার। আমি আর সেবন্তী রুম শেয়ার করে শুতে এসেছি। ভাব হতে দেরি হল না। না আপন এর ছুটি হয় নি ।বই মেলা শুরু ফেব্রুয়ারির এক তারিখে। আমরা ঢাকা ফিরেছি। আমার বই স্টলে এসে গেছে। বই হাতে লাইভ প্রোগ্রামে দু'এক লাইন কথাও বলে ফেলেছি,টিভির এক চ্যানেলে। আড্ডা দিই কাগজ প্রকাশনীর কাগজ় ষ্টলে। আপনের সাথে সন্ধ্যার দিকে আলাপ হল। গভীর কন্ঠ।খুব শান্ত।কথা বলার ভঙ্গী আকর্ষণীয়। ফোন নাম্বার দেয়া নেওয়া হলো। মেলা শেষ হলে দোকান বন্ধ । তারপর ও বাড়ির দিকে যাই না। রাস্তায় বসে তুমুল আড্ডা-চা, খাওয়া।
মেলার পরেও আপনের সাথে ফোনে কথা হয়। কোথাও পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে মেসেজে অথবা ফোনে কবিতা পড়ে আমাকে চমকে দেয়। একদিন বীথির কথা শুনলাম। আমাকে দেখাবার খুব শখ। বাসায় আসতে বলি। বন্ধুত্ব হল বীথির সাথেও। বীথি কবিকে ভালবেসে আমাকেও ভালবেসে ফেলল। বিয়েতে যেতেই হল। সেই আমরা পুরা দল। বই মেলা চলছিল সেবার। আপনের বাবা ক্যান্সার রোগি।আমাকে পরিচয় করাল ভাইএর সঙ্গেও। এমন ভাবে বাড়িতে বলেছে,যেন আমি অনেক দিনের পরিচিত। বীথির বাসায় গিয়ে তো বীথিকে পাই না। আপন জানাল,পার্লারে বিয়ের সাজ করতে গেছে। খানিক পরেই চলে এলো-একটু খয়েরী রঙ শাড়ি। দুজনে কিনেছে। বীথির মুখের সুখ দেখে খুব ভাল লাগছিল। আর মেয়েটা কেঁদে কেঁদে সারা রাত আমার সাথে কথা বলবে না। বীথির মা চাইছিলেন,কবি নয়, অন্য কারুর সাথে বিয়ে দিতে।আর আপন ও আর একটু গুছিয়ে নিতে চাইছিল।বাড়ির সব খরচ ওকে একাই দিতে হয়। আপন নাকি বলেছিল,রাজি হয়ে যাও। বীথি আমাকে বলতো,কবিরা কি এমন হয়? আপু,কবিদের তো অনেক মায়া। কত কি বলে শুধু কাঁদতো। বিয়ের পর তাই শান্তি পেয়েছিলাম খুব। মেলায় গিয়ে ফোন দিয়েছে,যেতে হবে। আমার বই কিনবে। আপনের 'সকালের দাঁড়ি কমা ও বেরিয়ে গেছে। আমাকে আগেই দেখে দুজনে এসে ধরে নিয়ে গেল আমার প্রকাশনী ধ্রূব পদ-এর ষ্টলে। বই কেনার পরে অটোগ্রাফ নেবে।আমি দিচ্ছি না।কারন আপনের বই কেনা হয় নি তখন ও। কেনা হল। দেয়া হল অটোগ্রাফ।আপন খুব শান্ত-ধীর।আমি চঞ্চল খুব,খুলে পড়তে শুরু করি কবিতা।এমনি সময়ে আপন বীথিকে বলে,কচি রেজার বই কিনেছ? আমাদের কিছু বলার আগেই আবার ধ্রুব পদের ষ্টল।আবার বই কেনা। আমি বল্লাম,এক বই দুজনে কেন কিনলে? আপন বলল,আমার বই আমার,বীথি কেন কিনবে না? বীথিও বল্ল,সে ভাল। ওর বই আমাকে ধরতে দেয় না।'
আমেরিকা আসি,আমার বন্ধুরা কেউ চায় নি। দিন রাত মেসেজ আসতে থাকে বন্ধুদের। কিন্তু ফেরানো যায় না আসা। শেষ দিন শেষ মেসেজ আসে সফেদ ফরাজী আর আপন মাহমুদের। আমি ইমিগ্রেশনের লাইনে---তখন ও। আমি চোখের জল মুছব না কি চেক ইন হব।
প্লেন ওড়ার আগে সিট বেল্ট পরে বসে আছি। ফোনের পরে ফোন। শেষ মেসেজ আবার সেই আপনের।
'কাঁদো বাংলার আকাশ--নদী--বৃক্ষ--কবি চলে যাচ্ছে''
নিউ ইয়র্ক এসে ও চ্যাট এ কথা হয়েছে। এখানে লেখা চলছে জেনে আনন্দিত হয়েছে। ওর বইটা আনা হয় নি।খুব ভোরে উঠে ল্যাপটপ ওপেন করে মেসেজ পেলাম অনেকগুলো। আমার দেশের অনেকে আর ক্ষাপচুরিয়াসের কবি অত্রি ভট্টাচার্য জিজ্ঞেস রেখেছে,কবি আপন মাহমুদ কি মারা গেছে?
আমি একে একে মেসেজ পড়লাম---হোম পেজে গেলাম--ক্ষেপুতে গেলাম। নাহ কোথাও এত টুকু ফাঁক বা সন্দেহ নেই যে দ্বিধা নিয়ে বলতে পারব যে – আপন বেঁচে আছে । সামান্য অসুস্থ হয়েছিল মাত্র ।
আপন'দের মৃত্যু হয়না কোনদিন। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মৃত্যু প্রতিদিন নতুন জন্মের ইন্ধন দেয়। মাটি বাঁচতে দেয়, বসতি গড়তে দেয়, খাদ্য দেয় তাই মাটির ভুবনে মৃত্যু শব্দের কোন অস্তিত্ব নেই। তাই এই মাটি, আমি, আমরা যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আপন বেঁচে থাকবে।
উত্তরমুছুনআপন বেঁচে আছে । সামান্য অসুস্থ হয়েছিল মাত্র ।
উত্তরমুছুন