বীরত্ব, নাকি, ডুয়েল আত্মহননের পন্থা
১৯৭১ সাল - 'যৌনরোমের ঘাসফুল' সবে দেখা দিচ্ছে দেহে। আমার এক গৃহশিক্ষক নিজেকে ব্যতিক্রমী ভাবতেন- আমাকে শোনাতে শুরু করেছিলেন ডিরোজিও'র কাহিনী । শিহরণ জাগতো দেহে , আস্তে আস্তে রণেশাঁ'র চিন্তাধারা আমাকে আচ্ছন্ন করে তুলছে । ইয়াং বেঙ্গল উদ্দীপ্ত করেছিলো আমাকে আমূল, আপাদমস্তক । ডিরোজিও সাহেব আমার অন্তরপুরুষ হয়ে ওঠেন । আজও অবচেতনে তিনি আমাকে চালিত করেন ।
অগস্ট ২০১২ - আমার এক আশি ছুঁইছুঁই বন্ধু এবং দাদা আমাকে হঠাৎ ফোনে চমকে দিয়ে জানালেন তিনি আবার উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে একাকী চলে এসেছেন কলকাতার মায়ায় ঘেরা পথে পথে কঠোর গ্রীষ্মে ঘুরবেন বলে । আতুর কণ্ঠে তিনি জানালেন জীবনের সমাপ্তি যদি হয়ে যায় সেই ভয়ে তিনি তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থ আমাকে দিয়ে যেতে চান । দেখা হল বেদনায় , ভালোবাসায়, পেলাম ' ডিরোজিও'র ক্লাস' এবং ' ডুয়েল : একটি নিষিদ্ধ পাশ্চাত্য ঐতিহ্য ' । রচয়িতা শান্তিরঞ্জন বসু ।
যেই হাতে পেলাম ' ডিরোজিও'র ক্লাস' - রক্তে ঝলক উঠলো , আনন্দে সর্বাঙ্গে রোমাঞ্চ । পড়তে গিয়ে ঠোক্কর খেলাম -অরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও যে ডুয়েল বিষয়েও ছিলেন অনবদ্য জ্ঞানের আধার সে বিষয়ে আমি এই প্রাক্-ষাট পর্যন্ত আঁধারেই পাখসাট খাচ্ছিলাম । নিজেকে ছিঃছিঃ-কার জানাতে জানাতে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করছি আর ভাবছি এ দোষ তো একা আমার নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ও সমাজের- ফলে যতই আমরা ভাবি যে এই নেট-আবহে আমরা বহুদূর এগিয়ে গেছি ততই দেখছি নীট্ফল পশ্চাদপসারী । নালন্দা যুগে হিউয়েন সাং-রা আসতেন স্বীয় জ্ঞান বিতরন করতে , মুঘলযুগে ইব্ন্ বতুতা'র জ্ঞান থেকে সমৃদ্ধ হতেন ভারতবাসী, ইংরেজযুগে নজির অজস্র, রবীন্দ্রযুগে ভারততীর্থে আসতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন মণীষিকুল, এমনকি স্বাধীনোত্তর কয়েকটি দশকেও বিশ্বের ধীমান ব্যক্তিদের গতায়াত ছিলো ।
গ্রন্থটি জানিয়ে দিল যে, ডিরোজিও'র নিজের কর্মস্থল হিন্দু কলেজে ১৮৩ বছর আগে ১৮২৯ সালে ৫ ও ৬ জুন দুটি বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা হয়েছিলো। বক্তা ছিলেন ডিরোজিও আর এসেছিলেন ফরাসী পণ্ডিত ভিক্টর জ্যা৺কমো সুপণ্ডিত রামমোহন রায় ও ডিরোজিও'র সাথে আলোচনা করতে ।
সেই সুযোগে ৬ জুন তারিখে ব্যবস্থা করা হয় justification of duels বা ডুয়েলের যাথার্থ শিরোনামে কলোকিয়ামের । এই গ্রন্থে সেই ক্লাসে বলা বিখ্যাত ডুয়েল গুলির গল্প এক আচ্ছন্নতা তৈরি করে ।
আমাদের যৌবনে শিভালরি, প্রেমের জন্য ডুয়েল, ফেন্সিং এরকম কিছু শব্দ শোনা যেত , এখনো সদ্য যৌবন সেসব নিয়ে আলোচনা করেন কিনা জানিনা । তখন আমাদের ধারণা ছিল প্রেমের জন্যই যেন ডুয়েল লড়া হত, ডুয়েল হত নাইট ( knight )দের মধ্যে, ডুয়েলের জন্য ফেন্সিং বড়জোর গানশটকেই কল্পনায় রাখতাম । এই ধারণা দীর্ঘকাল লালন করেছি কিন্তু পরে জেনেছি প্রেম ছাড়াও অন্য যে কোনো দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত মীমাংসা-সূত্র হিসেবে ডুয়েল হত । ডিরোজিও'র বক্তৃতায় উঠে এসেছিল ডুয়েলের উদ্ভব, চলনশীলতা, ভয়াবহতা এবং সভ্যতা'র পরিচয় দিতে ইউরোপ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে আইন প্রণয়ন করে ডুয়েলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ইত্যাকার বহু বিষয় । ডিরোজিও'র গল্পগুলি ছিল পুরো ইউরোপ মহাদেশে পরিব্যাপ্ত এবং ভিক্টর জ্যাকমো'র পরিধি ছিল ফরাসী দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ।ডিরোজিও'র ক্লাস থেকেই আমাদের জানা হয়ে যাবে যে, ডুয়েলে অংশ নিতেন মহিলা ও পুরুষ,এমনকি বিপরীত লিঙ্গ-ধারীদের মধ্যেও ডুয়েল হয়েছে । দরিদ্র- ধনী উভয় আর্থশ্রেণীর বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা ডুয়েলে আহ্বান জানাতো প্রতিপক্ষকে । ডুয়েলের কারণ থাকতো শুধু প্রেম নয়, পরকীয়া , ব্যবসা , সামান্য তর্কাতর্কি ( যেভাবে মুসলিম পুরুষ স্ত্রীকে তিনবার তালাক শুনিয়ে দেয় ), আর্থিক বিতর্ক , রাজানুগ্রহ প্রাপ্তি / অপ্রাপ্তি , রাজ্যগ্রাস ইত্যাদি । নিষিদ্ধকরণ হেতু আইনকে লবডঙ্কা দেখিয়ে গোপন জনহীন স্থানে পুলিশি ঝামেলা এড়িয়ে ডুয়েল হত, তেমনই লা-পরোয়া হয়ে প্রত্যক্ষ স্থানে ডুয়েলের অস্তিত্ব বিরল ছিলনা । আমাদের যৌবনের কল্পনার র্যাপিয়ার ( Rapier ) দিয়ে ফেন্সিং নয় শুধু , বর্শা , ছোরা, তলোয়ার, পিস্তল, রাইফেল এমনকি জন্তু কিংবা বিষপ্রয়োগও ছিল মান্য হাতিয়ার সমূহ । ডুয়েল তো শুধু যুদ্ধ বৈ আর কিছু নয় - বন্য আবহ যেমন গণ্য হত, তেমনি দুর্গ, সেনাবাহিনী, এমনকি জলপথে বা আকাশপথকেও ডুয়েলের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করে নিতেন উভয় ডুয়েলিস্ট ।
এই তো সেদিন ২০১২ সালের অক্টোবরের শুরুতে সম্ভবত আসানসোলের কাছে দুই তরুণী এক যুবকের মন পাওয়া বা শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার জন্য বাজি ধরেছিলেন যে দুই কন্যাই একই গুনের-একই পরিমানের -একই বিষ- একই সাথে গিলবে : যে বেঁচে থাকবে সে পাবে ঐ যুবককে । একজন মারা গেল একটুও জানতে না পেরে যে অন্যজন বেঁচে থাকবে আরো কয়েক ঘণ্টা মাত্র এবং তারপর বিষদ্রষ্ট বিষকন্যাকে যৌন দোসর রূপে পাওয়ার হাত থেকে যুবকটিকে রক্ষা করতে অবশ্যই মারা যাবে। এটা কি ভারতীয়দের নব্য ডুয়েল নয় ?
ডিরোজিও সাহেব জীয়ন্তে বহু নির্যাতন সহ্য করেছিলেন আপাদমস্তক ভারতীয় হতে চেয়ে - সেই তিনি কি জানতেন না ডুয়েল আদৌ ভারতে বিরল ছিল না বরং দ্বৈরথ ( = ডুয়েল ) ছিল স্বীকৃত যুদ্ধকৌশল এবং অবশ্যই মহাকাব্য ধন্য দ্বৈরথ বেআইনি ছিল না । এই গ্রন্থেও ডিরোজিও'র বক্তব্য অংশে পেয়ে যাই ভারতেই ওয়ারেন হেস্টিংস্, রবার্ট ক্লাইভ , জন ম্যাকফারসনের মত স্বনামধন্য সর্বোচ্চ প্রশাসকদের ডুয়েলের বিবরণ ।
বর্তমান গ্রন্থের লেখক শান্তিদা ৮০ বছরের মুখেও নিত্য নতুন বিষয়ে গবেষণায় নিমগ্ন থাকেন । ডুয়েল বিষয়ে লিখিত তাঁর গ্রন্থদ্বয়ের প্রথম খণ্ড ডিরোজিও'র ক্লাস গ্রন্থে উৎসাহী পাঠকের জন্য পরিশিষ্টাংশে রয়েছে বিখ্যাত ডুয়েলের তালিকা, গ্রন্থে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও তাঁদের বর্ণানুক্রমিক সূচী আর গ্রন্থপঞ্জি ।
বীভৎস মজার ডুয়েল সংক্রান্ত গ্রন্থটি মুগ্ধশ্বাস পাঠ করতে করতে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলাম মুদ্রণ প্রমত্ততায় । শান্তিদাকে জানাবো ভবিষ্যতে এগুলির অপনোদনের দায় নিতে । আরো ভালো লাগতো যদি উল্লিখিত ব্যক্তিদের নামের সূচীতে ভারতীয় নামগুলিও অন্তর্ভুক্ত থাকতো। এজন্য অন্তত শান্তিদা আরও অনেকদিন আমাদের মধ্যে থাকুন ।
' ডিরোজিও'র ক্লাস '/ শান্তিরঞ্জন বসু । মধ্যমগ্রাম : বাংলার মুখ, ২০১২ । ১০৯ পৃ । ১৪০ টাকা।
অগস্ট ২০১২ - আমার এক আশি ছুঁইছুঁই বন্ধু এবং দাদা আমাকে হঠাৎ ফোনে চমকে দিয়ে জানালেন তিনি আবার উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে একাকী চলে এসেছেন কলকাতার মায়ায় ঘেরা পথে পথে কঠোর গ্রীষ্মে ঘুরবেন বলে । আতুর কণ্ঠে তিনি জানালেন জীবনের সমাপ্তি যদি হয়ে যায় সেই ভয়ে তিনি তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থ আমাকে দিয়ে যেতে চান । দেখা হল বেদনায় , ভালোবাসায়, পেলাম ' ডিরোজিও'র ক্লাস' এবং ' ডুয়েল : একটি নিষিদ্ধ পাশ্চাত্য ঐতিহ্য ' । রচয়িতা শান্তিরঞ্জন বসু ।
যেই হাতে পেলাম ' ডিরোজিও'র ক্লাস' - রক্তে ঝলক উঠলো , আনন্দে সর্বাঙ্গে রোমাঞ্চ । পড়তে গিয়ে ঠোক্কর খেলাম -অরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও যে ডুয়েল বিষয়েও ছিলেন অনবদ্য জ্ঞানের আধার সে বিষয়ে আমি এই প্রাক্-ষাট পর্যন্ত আঁধারেই পাখসাট খাচ্ছিলাম । নিজেকে ছিঃছিঃ-কার জানাতে জানাতে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করছি আর ভাবছি এ দোষ তো একা আমার নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ও সমাজের- ফলে যতই আমরা ভাবি যে এই নেট-আবহে আমরা বহুদূর এগিয়ে গেছি ততই দেখছি নীট্ফল পশ্চাদপসারী । নালন্দা যুগে হিউয়েন সাং-রা আসতেন স্বীয় জ্ঞান বিতরন করতে , মুঘলযুগে ইব্ন্ বতুতা'র জ্ঞান থেকে সমৃদ্ধ হতেন ভারতবাসী, ইংরেজযুগে নজির অজস্র, রবীন্দ্রযুগে ভারততীর্থে আসতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন মণীষিকুল, এমনকি স্বাধীনোত্তর কয়েকটি দশকেও বিশ্বের ধীমান ব্যক্তিদের গতায়াত ছিলো ।
গ্রন্থটি জানিয়ে দিল যে, ডিরোজিও'র নিজের কর্মস্থল হিন্দু কলেজে ১৮৩ বছর আগে ১৮২৯ সালে ৫ ও ৬ জুন দুটি বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা হয়েছিলো। বক্তা ছিলেন ডিরোজিও আর এসেছিলেন ফরাসী পণ্ডিত ভিক্টর জ্যা৺কমো সুপণ্ডিত রামমোহন রায় ও ডিরোজিও'র সাথে আলোচনা করতে ।
সেই সুযোগে ৬ জুন তারিখে ব্যবস্থা করা হয় justification of duels বা ডুয়েলের যাথার্থ শিরোনামে কলোকিয়ামের । এই গ্রন্থে সেই ক্লাসে বলা বিখ্যাত ডুয়েল গুলির গল্প এক আচ্ছন্নতা তৈরি করে ।
আমাদের যৌবনে শিভালরি, প্রেমের জন্য ডুয়েল, ফেন্সিং এরকম কিছু শব্দ শোনা যেত , এখনো সদ্য যৌবন সেসব নিয়ে আলোচনা করেন কিনা জানিনা । তখন আমাদের ধারণা ছিল প্রেমের জন্যই যেন ডুয়েল লড়া হত, ডুয়েল হত নাইট ( knight )দের মধ্যে, ডুয়েলের জন্য ফেন্সিং বড়জোর গানশটকেই কল্পনায় রাখতাম । এই ধারণা দীর্ঘকাল লালন করেছি কিন্তু পরে জেনেছি প্রেম ছাড়াও অন্য যে কোনো দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত মীমাংসা-সূত্র হিসেবে ডুয়েল হত । ডিরোজিও'র বক্তৃতায় উঠে এসেছিল ডুয়েলের উদ্ভব, চলনশীলতা, ভয়াবহতা এবং সভ্যতা'র পরিচয় দিতে ইউরোপ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে আইন প্রণয়ন করে ডুয়েলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ইত্যাকার বহু বিষয় । ডিরোজিও'র গল্পগুলি ছিল পুরো ইউরোপ মহাদেশে পরিব্যাপ্ত এবং ভিক্টর জ্যাকমো'র পরিধি ছিল ফরাসী দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ।ডিরোজিও'র ক্লাস থেকেই আমাদের জানা হয়ে যাবে যে, ডুয়েলে অংশ নিতেন মহিলা ও পুরুষ,এমনকি বিপরীত লিঙ্গ-ধারীদের মধ্যেও ডুয়েল হয়েছে । দরিদ্র- ধনী উভয় আর্থশ্রেণীর বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা ডুয়েলে আহ্বান জানাতো প্রতিপক্ষকে । ডুয়েলের কারণ থাকতো শুধু প্রেম নয়, পরকীয়া , ব্যবসা , সামান্য তর্কাতর্কি ( যেভাবে মুসলিম পুরুষ স্ত্রীকে তিনবার তালাক শুনিয়ে দেয় ), আর্থিক বিতর্ক , রাজানুগ্রহ প্রাপ্তি / অপ্রাপ্তি , রাজ্যগ্রাস ইত্যাদি । নিষিদ্ধকরণ হেতু আইনকে লবডঙ্কা দেখিয়ে গোপন জনহীন স্থানে পুলিশি ঝামেলা এড়িয়ে ডুয়েল হত, তেমনই লা-পরোয়া হয়ে প্রত্যক্ষ স্থানে ডুয়েলের অস্তিত্ব বিরল ছিলনা । আমাদের যৌবনের কল্পনার র্যাপিয়ার ( Rapier ) দিয়ে ফেন্সিং নয় শুধু , বর্শা , ছোরা, তলোয়ার, পিস্তল, রাইফেল এমনকি জন্তু কিংবা বিষপ্রয়োগও ছিল মান্য হাতিয়ার সমূহ । ডুয়েল তো শুধু যুদ্ধ বৈ আর কিছু নয় - বন্য আবহ যেমন গণ্য হত, তেমনি দুর্গ, সেনাবাহিনী, এমনকি জলপথে বা আকাশপথকেও ডুয়েলের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করে নিতেন উভয় ডুয়েলিস্ট ।
এই তো সেদিন ২০১২ সালের অক্টোবরের শুরুতে সম্ভবত আসানসোলের কাছে দুই তরুণী এক যুবকের মন পাওয়া বা শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার জন্য বাজি ধরেছিলেন যে দুই কন্যাই একই গুনের-একই পরিমানের -একই বিষ- একই সাথে গিলবে : যে বেঁচে থাকবে সে পাবে ঐ যুবককে । একজন মারা গেল একটুও জানতে না পেরে যে অন্যজন বেঁচে থাকবে আরো কয়েক ঘণ্টা মাত্র এবং তারপর বিষদ্রষ্ট বিষকন্যাকে যৌন দোসর রূপে পাওয়ার হাত থেকে যুবকটিকে রক্ষা করতে অবশ্যই মারা যাবে। এটা কি ভারতীয়দের নব্য ডুয়েল নয় ?
ডিরোজিও সাহেব জীয়ন্তে বহু নির্যাতন সহ্য করেছিলেন আপাদমস্তক ভারতীয় হতে চেয়ে - সেই তিনি কি জানতেন না ডুয়েল আদৌ ভারতে বিরল ছিল না বরং দ্বৈরথ ( = ডুয়েল ) ছিল স্বীকৃত যুদ্ধকৌশল এবং অবশ্যই মহাকাব্য ধন্য দ্বৈরথ বেআইনি ছিল না । এই গ্রন্থেও ডিরোজিও'র বক্তব্য অংশে পেয়ে যাই ভারতেই ওয়ারেন হেস্টিংস্, রবার্ট ক্লাইভ , জন ম্যাকফারসনের মত স্বনামধন্য সর্বোচ্চ প্রশাসকদের ডুয়েলের বিবরণ ।
বর্তমান গ্রন্থের লেখক শান্তিদা ৮০ বছরের মুখেও নিত্য নতুন বিষয়ে গবেষণায় নিমগ্ন থাকেন । ডুয়েল বিষয়ে লিখিত তাঁর গ্রন্থদ্বয়ের প্রথম খণ্ড ডিরোজিও'র ক্লাস গ্রন্থে উৎসাহী পাঠকের জন্য পরিশিষ্টাংশে রয়েছে বিখ্যাত ডুয়েলের তালিকা, গ্রন্থে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও তাঁদের বর্ণানুক্রমিক সূচী আর গ্রন্থপঞ্জি ।
বীভৎস মজার ডুয়েল সংক্রান্ত গ্রন্থটি মুগ্ধশ্বাস পাঠ করতে করতে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলাম মুদ্রণ প্রমত্ততায় । শান্তিদাকে জানাবো ভবিষ্যতে এগুলির অপনোদনের দায় নিতে । আরো ভালো লাগতো যদি উল্লিখিত ব্যক্তিদের নামের সূচীতে ভারতীয় নামগুলিও অন্তর্ভুক্ত থাকতো। এজন্য অন্তত শান্তিদা আরও অনেকদিন আমাদের মধ্যে থাকুন ।
' ডিরোজিও'র ক্লাস '/ শান্তিরঞ্জন বসু । মধ্যমগ্রাম : বাংলার মুখ, ২০১২ । ১০৯ পৃ । ১৪০ টাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন