অশোক চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যলোচনা
অশোক চট্টোপাধ্যায় আসলে একজন রূপকার । মনের গহন প্রদেশের গভীরতম অনুভব তার কবিতায় ফুটে ওঠে । তাঁর বেশীরভাগ কবিতাই স্বাদু এক আবহ রচনা করে । যেখানে নেই জটিল বাক্যবিন্যাস, নেই অযথা বাগাড়ম্বরের ঘনঘটা । কবিতা তখনই ভালো লাগে যখন তা আরোপিত হয় না । যখন কবিতা জোর করে পড়তে হয় তখন আর সেটা কবিতা হয়না। অশোক বাবুর কবিতার বড় গুন কবিতাগুলি আরোপিত নয় ।
অশোক চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই কবিতা লিখে চলেছেন । সম্পাদনা করছেন ' গোধূলিমন ' সাহিত্য পত্রিকা । তার মরমী মন বারবার প্রকাশ হয়েছে তার কবিতায় ।
অশোক চট্টোপাধ্যায়ের 'কাব্য সমগ্র' চারটি অংশে বিভক্ত । যথাক্রমে --
১ । উত্তর তিরিশে এসে
২ । সামুদ্রিক নোনাগন্ধ
৩ । আয় সখি,শেষ খেলা খেলি
৪ । নীল মগ্নতায় ।
'উত্তর তিরিশে এসে' কবির প্রথম দিকের লেখা । লেখাগুলিতে স্বাভাবিক ভাবেই রোম্যান্টিকটা তার নিজস্ব সাক্ষর রেখেছে । যেমন " কিংবা অন্যভাবে বলা চলে / প্রেমের অন্য নাম ১৭ ই জুলাই " । প্রেম এই লেখাগুলির অন্যতম উপজীব্য । লেখায় জটিলতা নেই ।
'সামুদ্রিক নোনাগন্ধ' -এ এসে কবির লেখা আরও শক্তিশালী হয়েছে । এখানে প্রেমের সঙ্গে মিশেছে কিছুটা একাকীত্ব , ফিরে ফিরে এসেছে রিক্ততার সুর । ঈশ্বরের প্রতি অনুযোগও আছে কিছু লেখায় । অনুষঙ্গের প্রয়োগ এই কবিতাগুলোকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে । যেমন " বাচাল মেয়ের মত সুখ মাঝে মাঝে শরীরেতে হিল্লোল তোলে / এ ভাবেই বিষণ্ণতা একদিন ঘুণপোকা হয় " ।
'আয় সখি,শেষ খেলা খেলি' রোম্যান্টিক অনুভবে লেখা । কিছুটা প্রেমবিলাস আর স্বপ্নের দেয়ালা এখানে খেলা করে যায় ।যেমন ''মেঘের পরে মেঘ জমিয়ে পাহাড় গড়ি /টুকরো টুকরো স্মৃতির মালায় স্বপ্ন গড়ি "। আবার কিছু কবিতায় আছে অভিমানের ছোঁয়া : " কত সহজেই তুমি / টপাটপ ভেঙে যাও সিঁড়ি "।
কাব্যগ্রন্থের শেষ অংশ ' নীল মগ্নতায় '। কবি পরিনত মনে ও শরীরে । ফেলে আসা উচ্ছলতা স্বাভাবিক ভাবেই কমে এসেছে । লেখায় রচিত হয়েছে একটা স্নিগ্ধ আবহ । অনুভব লীন হয়েছে মগ্নতায় । এই অংশে অদ্ভুত সুন্দর বাক্যবন্ধের ব্যবহার কবিতাকে করে তুলেছে ঋদ্ধ । "তরল সোনালী সোনা / পেয়ারাপাতায় আঁকে / জাফরির ছক "।
প্রকৃতির কাছে নিজেকে সমর্পণ, নস্টালজিয়া এই কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য । " এখন যৌবনের ঋজু খর তেজ আর নেই / শ্যাম স্নিগ্ধ কোমল মনন । / স্মৃতি জুড়ে অলৌকিক লাল বল খেলে।"
কবির প্রথম দিকের কবিতা স্বাভাবিকভাবেই যৌবনের কথা বলে । যদিও সেই উচ্চারণ মায়াময় । আস্তে আস্তে ঘটেছে চেতনার পরিণতি । তার লেখার শেষভাগে অনুষঙ্গ , রূপকের ব্যবহার কবিতাকে আরও স্বাদু করে তুলেছে ।কবির লেখার ভিতর একটা সহজ- সরল জীবনবোধ কাজ করেছে ।
বিষণ্ণতা , নস্টালজিক আবহ কবিকে এনে দিয়েছে পাঠকমনের বুকের কাছে । অনাবশ্যক জটিলতা তার কবিতাকে একবারও আক্রমন না করায় কবি সহজেই চলে এসেছেন পাঠকমনের কাছে ।
পরিশেষে বলি - মুদ্রণ প্রমাদ একটু কম হলে গ্রন্থটি আরও সুখপাঠ্য হত ।
কাব্য সমগ্র / অশোক চট্টোপাধ্যায় । ন্যাশানাল পাবলিশার্স ।২০৬ বিধান সরণি । কলকাতা - ৭০০০০৬
অশোক চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই কবিতা লিখে চলেছেন । সম্পাদনা করছেন ' গোধূলিমন ' সাহিত্য পত্রিকা । তার মরমী মন বারবার প্রকাশ হয়েছে তার কবিতায় ।
অশোক চট্টোপাধ্যায়ের 'কাব্য সমগ্র' চারটি অংশে বিভক্ত । যথাক্রমে --
১ । উত্তর তিরিশে এসে
২ । সামুদ্রিক নোনাগন্ধ
৩ । আয় সখি,শেষ খেলা খেলি
৪ । নীল মগ্নতায় ।
'উত্তর তিরিশে এসে' কবির প্রথম দিকের লেখা । লেখাগুলিতে স্বাভাবিক ভাবেই রোম্যান্টিকটা তার নিজস্ব সাক্ষর রেখেছে । যেমন " কিংবা অন্যভাবে বলা চলে / প্রেমের অন্য নাম ১৭ ই জুলাই " । প্রেম এই লেখাগুলির অন্যতম উপজীব্য । লেখায় জটিলতা নেই ।
'সামুদ্রিক নোনাগন্ধ' -এ এসে কবির লেখা আরও শক্তিশালী হয়েছে । এখানে প্রেমের সঙ্গে মিশেছে কিছুটা একাকীত্ব , ফিরে ফিরে এসেছে রিক্ততার সুর । ঈশ্বরের প্রতি অনুযোগও আছে কিছু লেখায় । অনুষঙ্গের প্রয়োগ এই কবিতাগুলোকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে । যেমন " বাচাল মেয়ের মত সুখ মাঝে মাঝে শরীরেতে হিল্লোল তোলে / এ ভাবেই বিষণ্ণতা একদিন ঘুণপোকা হয় " ।
'আয় সখি,শেষ খেলা খেলি' রোম্যান্টিক অনুভবে লেখা । কিছুটা প্রেমবিলাস আর স্বপ্নের দেয়ালা এখানে খেলা করে যায় ।যেমন ''মেঘের পরে মেঘ জমিয়ে পাহাড় গড়ি /টুকরো টুকরো স্মৃতির মালায় স্বপ্ন গড়ি "। আবার কিছু কবিতায় আছে অভিমানের ছোঁয়া : " কত সহজেই তুমি / টপাটপ ভেঙে যাও সিঁড়ি "।
কাব্যগ্রন্থের শেষ অংশ ' নীল মগ্নতায় '। কবি পরিনত মনে ও শরীরে । ফেলে আসা উচ্ছলতা স্বাভাবিক ভাবেই কমে এসেছে । লেখায় রচিত হয়েছে একটা স্নিগ্ধ আবহ । অনুভব লীন হয়েছে মগ্নতায় । এই অংশে অদ্ভুত সুন্দর বাক্যবন্ধের ব্যবহার কবিতাকে করে তুলেছে ঋদ্ধ । "তরল সোনালী সোনা / পেয়ারাপাতায় আঁকে / জাফরির ছক "।
প্রকৃতির কাছে নিজেকে সমর্পণ, নস্টালজিয়া এই কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য । " এখন যৌবনের ঋজু খর তেজ আর নেই / শ্যাম স্নিগ্ধ কোমল মনন । / স্মৃতি জুড়ে অলৌকিক লাল বল খেলে।"
কবির প্রথম দিকের কবিতা স্বাভাবিকভাবেই যৌবনের কথা বলে । যদিও সেই উচ্চারণ মায়াময় । আস্তে আস্তে ঘটেছে চেতনার পরিণতি । তার লেখার শেষভাগে অনুষঙ্গ , রূপকের ব্যবহার কবিতাকে আরও স্বাদু করে তুলেছে ।কবির লেখার ভিতর একটা সহজ- সরল জীবনবোধ কাজ করেছে ।
বিষণ্ণতা , নস্টালজিক আবহ কবিকে এনে দিয়েছে পাঠকমনের বুকের কাছে । অনাবশ্যক জটিলতা তার কবিতাকে একবারও আক্রমন না করায় কবি সহজেই চলে এসেছেন পাঠকমনের কাছে ।
পরিশেষে বলি - মুদ্রণ প্রমাদ একটু কম হলে গ্রন্থটি আরও সুখপাঠ্য হত ।
কাব্য সমগ্র / অশোক চট্টোপাধ্যায় । ন্যাশানাল পাবলিশার্স ।২০৬ বিধান সরণি । কলকাতা - ৭০০০০৬
Bhalo laglo onar shomporke jene....
উত্তরমুছুন