চান্দের চর
(সপ্তম কিস্তি)
দ্বৈপায়ন খেয়াল করছে কোলকাতা শহরে কুকুরের চেয়ে পথশিশুর সংখ্যা বেশি। তারা নির্দ্বিধায় রাস্তার মাঝে বসে খেলে, হাসে, কাঁদে। তাদের বাবা মায়েরা দ্বৈপায়নের মতই হেঁটে বেড়ায় শহরের বুকে। দ্বৈপায়ন জানেনা কেন সে এই ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। চাইলে দিদির বাড়ি দুইদিনে ধীরে সুস্থে পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু অত পরিশ্রম করতে ইচ্ছে করছে না তার। তাই সে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির গলির সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইউনিভার্সিটির পর বাবা বলেছিল, “আলস্য হোল স্লো পয়জন, কখন তোমাকে কাবু করে ফেলবে তুমি জানতেও পারবে না। গা ঝাড়া দিয়ে তোমার অবিলম্বে চাকরীর চেষ্টা করা উচিৎ।” আজ অবধি গা ঝাড়া হোল না তার। আলস্যের শেওলা ধরা পাঁচিলে হেলান দিয়ে সে বছরের পর বছর অতিবাহিত করে চলল। বাবা বলেছে, “অলস মস্তিস্ক শয়তানের বাসা।” দিদি কিছুই বলেনি, দিদি জানে পিকু শয়তান হয়ে ওঠার মত কর্মময়তা দেখাতেও আলস্য বোধ করবে। নিশ্চিন্তে শহর বয়ে যায়।
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির পথে পা বাড়াতে কানে আসে একতারার সুর। সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠে দ্বৈপায়নের। সেদিন কি তাহলে সত্যিই রবীন্দ্রনাথের সাথে কথা বলেছে সে? অশরীরি ব্যাপার! এদিক ওদিক তাকাতে সে দেখে রাস্তার এক কোণে রোদে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। সন্দেহ নিয়ে সে তাঁর দিকে এগিয়ে যায়।
“কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না, মেলে না-
তোরা আয়রে ধেয়ে, দেখ্রে চেয়ে আমার বুকে-
ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে।।”
তাকে দেখে বাউল,- গান থামিয়ে দেন, প্রশ্রয়ের হাসিমুখে তাকিয়ে থাকেন। পিকু চুপ করে দেখে চলে তাঁকে। বাউলের মুখ ভরা দাঁড়ি, উচ্চতা, গায়ের রং, নাক চোখ সবের সাথেই কবিগুরুর মিল আছে। তবে রেকর্ডের ‘তবু মনে রেখো’র সাথে এঁর কন্ঠের মিল পাওয়া সম্ভব নয় এবং তা উচিৎও নয়। পিকু পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এই ব্যাক্তি পার্সোনালিটি ডিস অর্ডারের শিকার। কষ্ট হয় মানুষটার জন্য, সে বলে, “ছায়ায় আসুন না, খুব রোদ তো এখানে।”
গাছের ছায়ায় আসতে আসতে তিনি বলেন, “হ্যাঁ শরৎ এসেছে, খুব সকালে আজ কাল শিশিরও পড়ছে কোলকাতাকে কাঁদিয়ে।”
মুগ্ধ হয় দ্বৈপায়ন, রবি বলে চলেন, “তুমি ফেরোনি এখনো?”
“পারিনি, টাকা ফুরিয়ে ফেলেছি।”
হাসি প্রশস্ত হয় বাউলের মুখে, “বাড়ির সবাই তো খোঁজ করছে তোমার। ফিরে যাও, ঘুরোনা শহরের পথে পথে।”
“আপনি ঘুরছেন যে!”
হেসে ওঠেন তিনি, “আমি তো কোলকাতার জিয়ন কাঠি, আমাকে তো নড়েচড়ে বেড়াতে হবেই, না হলে শহরটা প্রাণ পাবে কি করে। কিন্তু তুমি ফিরে যাও। ঘুরে বেড়িও না। এক সময় দেখবে কোথায় বিলীন হয়ে গেছ, গোটা কোলকাতা শহর উপুড় করলেও কোথাও তোমার একটা ফোঁটাও ঝরে পড়বে না।” বলতে বলতে গম্ভীর হয়ে যান রবি।
দ্বৈপায়নের গা হাত পা শিরশিরিয়ে ওঠে। যদি সত্যিই এরকম হয়। সে তো হারাতে চায়নি। তাকে হারিয়ে ফেলেছে শহরটা। চিত্তরঞ্জন এভিনিউ এর দিকে চোখ চলে যায় তার, রাস্তা এফোঁড় ওফোঁড় করে বাসগুলো চলে যাচ্ছে, মানুষে মানুষে কাটাকুটি। যদি সত্যি আর দিদির বাড়ি যাওয়া না হয়! আনমনে সে দক্ষিণ দিকে হাঁটতে শুরু করে। রবি বাউল টের পান ছেলেটা বড় হয়ে গেছে। কোলকাতার শূন্যতা যাকে ধরে তাকে দুম করে বড় করে দেয়। ভীড়ের মধ্যেও সে একদম একা দাঁড়িয়ে থাকে, যেমন দ্বৈপায়নের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন,- অনেকক্ষণ, তারপর এক সময় গলির মধ্যে ঢুকে গেলেন একতারায় পরিচিত সুর বার করতে করতে।
ছেলেটা খাবার দিতে দিতে সবাইকে রাতের মিটিং এর কথা জানিয়ে যাচ্ছে ঘর থেকে ঘরে। এক জালনার সবচেয়ে সস্তার ঘরটার সামনে এসে সে থেমে যায়। পায়রাদের গুমড়ানোর আওয়াজে মন খারাপ হয়ে যায় তার, কিন্তু সাথে সাথে সেই মন খারাপ গা ঝাড়া দিয়ে ফেলে সে ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে আসে।
গম্ভীর মুখে ম্যানেজার চেয়ারে বসা। ছেলেটা নিরীহ দৃষ্টিতে দেখে তাকে।
“সালা, ডুবিয়ে দেবে ** আমায়! যদি জানতে পারে ** পুলিস, মেস উঠে যাবে **, তখন তোর আর আমার ** হাল এক হবে, বুঝলি **!”
“এটা তুমি ঠিক বলেচ, সবাইকে বলে দাও আগে থাকতে, ভাতে মারবে আমাদের ওই খ্যাপা**টা!”
“তাই তো ডাকলাম ** মালগুলোকে, এমন ক্যালানে ** এক একটা, ছড়িয়ে ** ছত্তিস করে ছাড়বে। আর সালা পুলিসগুলোও আসবে বিকেলে **, কেলানেগুলো সবকটা ঘরে ঢুকে ** তা দিতে বসবে তখনই। ** একটাকেও ছাড়বে নাকি ওরা! জানতে পারলে ** টিভি চ্যানেল ডাকবে **! সভা বসিয়ে ল্যাংটা করবে ** আমাদের!”
সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ শোনা যেতে তারা চুপ করে যায়, ছোট ঘরটাতে নানান বয়সী মানুষ এসে ঢুকতে থাকে।
“কি ব্যাপার দাদা, হঠাৎ সবাইকে ডাকলেন কেন? ভাড়া বাড়ানোর প্ল্যান আছে নাকি মশাই?”বয়জ্যেষ্ঠ মানুষটি জিজ্ঞেস করেন।
শোরগোল ওঠে বাকিদের মধ্যে, “আমরা এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। মামদোবাজি হচ্চে!”
“এক পা হাঁটলে ঘর শেষ, জল নেই স্নানের, খাবারের কথা ভুলেই যান, লাল রং ঢেলে ঢেলে বিষ পাঠাচ্ছেন আপনি রোজ রাতে, খেলেই পেট ছাড়ে! তার ওপর ভাড়া বাড়াবেন! এসব সিন চলবে না দাদা!”
ম্যানেজারের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে, “আর আপনারা ** ছক কসে লোক তাড়াবেন ** মেস থেকে আর আমায় ** তার জন্য পুলিসের ** মাড়াতে হবে **! বোকা** পেয়েছেন আমায়!”
পুলিশের নাম শুনে সবাই থমকে যায়।
“পুলিশ কোত্থেকে এলো মশাই!”
খাবার দেওয়া ছেলেটা বলে, “এই আপনাদের জন্যই তো সালা পুলিস আসবে কালকে বিকেলে, সবাইকে থাকতেও বলেচে, ওই খ্যাপা**টার খোঁজ করতে আসবে।”
ম্যানেজার টেবিলে রাখা বাটিতে পানের পিক ফেলে বলে, “দেখুন দাদা, ভাড়া আমায় বাড়াতেই হবে, নইলে ** খাবার আমি আনতে পারবো না ** বলে দিচ্ছি! কিন্তু পুলিসের সামনে কাল ছড়ালে ** মেস তুলেই দিতে হবে আমায়, আর মাগনায় ঘর পেয়ে গেছেন আপনারা মাইরি, আমায় **লেও কোলকাতার কোথাও ** এই ভাড়ায় ঘর পাবেননা, সেটা ** আপনারাও জানেন, আমিও জানি।”
“ভদ্র ভাবে কথা বলুন!” বয়স্ক মানুষটি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন।
“** ভাষা **চ্ছো! ঘোস কে ঘর ছাড়া করার সময় সালা কারোর খেয়াল ছিল না ** ভদ্রতা সেখাচ্ছে আমায়!
সবাই চুপ করে যায়, মৃদু স্বরে একজন বলে ওঠে, “তা আমরাও কি সারা গায়ে শ্বেতী নিয়ে ঘুরে বেড়াবো! আমাদের বউ বাচ্চা নেই!”
“বউ বাচ্চা পরে **ও, আগে কাল ** সবাই ঠিক সময়ে ** হাজির থেকো, পুলিসের কোসচেনে ছড়িও না, তালেই হবে। সালা একটা মানুষকে মেস ছাড়া করার সময় ** এগুলো মনে ছিল না, আবার বউ বাচ্চা **চ্ছে!
বয়স্ক লোকটি বলেন, “খালি আমরা তাড়িয়েছি! আপনি বলেন নি, ওকে ছুঁতে, ওর সাথে কথা বলতে ভয় করে আপনার! ওর ছোঁয়া টেলিফোনে হাত দেবেন না বলে লাইন পর্যন্ত কাটিয়ে দিয়েছেন আপনি! আমরা কি কালা নাকি মশাই, আমরা একজোট হলে আপনিও বাঁচবেন না বলে দিলাম। আমরা পুলিশকে অন্য কথাও বলতে পারি! বলতে পারি যে আপনিই ওনাকে শ্বেতীর ভয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন।”
“না না, সেটা ** আপনারা করবেন না আমি জানি, আমি জেলে গেলে ** আপনারাও ** পথে পড়বেন। আমার কিসুই ছিঁড়বে না!”
সবাই আবার চুপ হয়ে যায়।
“সুনুন, আমরা কেউ ** সেতি ফেতির কথা জানিনা, কেউ সেতির কথা মুখেও আনবেন না **, জানতে চাইলে বলবেন ঘোস তিন মাসের ভাড়া দেয়নি **, তাই আমি তাড়িয়ে দিয়েছি।”
খাবার দেওয়া ছেলেটা বলে, “এর বাইরে কিচাইন করলেই আমরা শেষ হয়ে যাবো কিন্তু, সবাইকেই কেসটা সাবধানে হ্যান্ডেল করতে হবে।”
“কতো টাকা বাড়াবেন আপনি?” কয়েকজন জানতে চায়।
“এখন পঞ্চাস বাড়ান, আপনাদের কথা ভেবে ** কমে ছেড়ে দিচ্ছি!”
কেউ কোনো কথা বলে না, খাবার দেওয়ার ছেলেটা বলে, “দেখুন, দাদা ভাড়া বাড়ায়নি বেসি, আপনারাও কাল খিল্লি করবেন না, করলে আপনাদেরও চাপ আমাদেরও। ব্যাপারটা আমাদেরই সেটল করতে হবে।”
অল্প বয়েসী কলেজ পড়ুয়াটি বলে, “দাদা, ভাড়া বাড়াচ্ছেন, ঠিক আছে, কথায় কথায় একটু কম ‘বাড়ান’, বড্ড বাড়াবাড়ি শোনাচ্ছে!” সবাই হেসে ওঠে।
ম্যানেজার রক্তচক্ষু ছুঁড়ে দেন তার দিকে। হাসতে হাসতে সবাই বেরিয়ে যায়। ম্যানেজারের চোখে চোখ পড়তে খাবার দেওয়ার ছেলেটা হাসতে গিয়েও থেমে যায়।
দোপাটির আবার এরকম হতে শুরু করলো। সারা শহরময় জ্বর নেমেছে যেন, রোদ্গুলো আরও উজ্জ্বল, ছায়াগুলো আরও ঘন, যখন তখন চিন্তা ভাবনা এলোমেলো করে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে কোলকাতায়, কঙ্কাবতী বলছে শরৎ আসছে নাকি, কি যে আসছে তা দোপাটিই একমাত্র জানে, সারা শরীরে উত্তেজনা মেঘ ছেয়ে সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার, নবম মেঘে উড়ে উড়ে নেশাময় সারা শহর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে সে। বাঁশি হাতে কোলকাতার গলিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। স্কুলের পর অবশ্য এই প্রথম! দোপাটি প্রমাদ গুণছে, কঙ্কাবতী টের না পেলেই হোল। কৃষ্ণসার ম্যামের ভাই হবে কে জানতো! বাড়ির কেউ সন্দেহ করলেই শেষ হয়ে যাবে সে। আজকাল দীপাম্যামের ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে বসতে সাহস হয় না তার। ক্লাস কামাইও করতে পারে না। শাঁখের করাত! এরকম পরিস্থিতিতে অতীতে ছোড়দাই একমাত্র পাশে থেকেছে তার। ছোড়দার ঘরে ঢুকে এক কোণায় চুপ করে বসে সে।
“কিরে, কি হয়েছে? তোর ম্যাডাম খোঁজ পেলেন কৃষ্ণস্যারের?”
“না।” নখ খুঁটতে খুঁটতে জবাব দেয় দোপাটি। “ছোড়দা, তোমার বাঁশিটা দেবে?”
“কেন রে?” পুশ আপ ছেড়ে ছোড়দা উঠে দাঁড়ায়, ভ্রূ কুঁচকে দোপাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।“আবার সেই কেস নাকি!”
“হুম্”, হাসি চেপে সে বলে।
“কে সে?”
“আছে, তুমি দেবে কিনা বলো না!”
“বয়স কতো?”
“আহ, এতো জবাব দিতে পারছি না। তুমি দিলে দাও, না হলে চললুম!”
“দাঁড়া না! আর কেউ জানে?”
“পাগল! জানলে বাবা, মা চাবকিয়ে ছাল তুলে দেবে না আমার!”
“সত্যি, জেনারেশান গ্যাপ! বাবুও আবার তোর মত না হয়! ছেলে বলে অনেক স্কোপ পাবে ও, তোর থেকেও বেশি, কাকু, কাম্মা জানতে পারলে একইদিনে হার্ট ফেল করে মরে যাবে।”
“উফ!! তুমিও না প্রচুর ফালতু বকতে পারো!”
“হ্যাঁ, আর তাই তো সারা বাড়িতে একমাত্র আমাকেই নিজের কেসগুলো জানাতে আসিস তুই!”
“আমি যাচ্ছি!” উঠে যায় দোপাটি।
“আরে দাঁড়া দাঁড়া,” ছোড়দা আলমারি খুলে নিজের প্রিয় বাঁশিটা দোপাটিকে দেয়, “কেঁচে গেলে মনে করে ফেরত দিয়ে যাস আমায়, যা ভুলো তুই!”
“যেন কেঁচে যায়! প্রে করো! বাড়িতে জানলে আমি ফিনিস ছোড়দা!”
“চাপ নিস না, কে সে?”
“আছে একজন।”
“নামটা তো বল!”
“না!”
“বয়েস কতো? এবারও বয়স্ক কাউকে জুটিয়েছিস!”
হাসি চেপে দোপাটি বলে, “হুম!”
“দেখো আবার লজ্জা পাচ্ছে! মেয়ে, ভালো ফেসেছিস কিন্তু এবার! ভেবে চিনতে কাজ কর!”
“আরে ভাবছিই তো! সারাদিন রাত ভেবেই চলেছি!” হাসি হাসি মুখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দোপাটি। বাঁশি হাতে করিডোরে বেরিয়ে এসেই অন্ধকারে সাদা শাড়ি পরা মহিলার অবয়ব দেখে সে চমকে পিছিয়ে আসে।
“ওহ, পিসঠাকমা! কি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমায়!”
“বাঁশি হাতে কোতায় যাচ্ছিস তুই?”
“ঘরে যাচ্ছিলাম।”
“আচ্ছা।”
দোপাটি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়,
“শোন দোপা!”
আবার দাঁড়াতে হয় তাকে, “হ্যাঁ বলো ঠাকমা!”
“এমন কিছু করিস না যাতে বাড়ির মান ইজ্জত যায়।” হন হন করে হেঁটে করিডোরের পাশে দরজা দিয়ে নিজের ঘরে চলে যান তিনি। অন্ধকারের মধ্যে দোপাটি দাঁড়িয়ে থাকে, শিরদাঁড়া বরাবর ঠান্ডা একটা স্রোত নেমে যায়। পিসঠাকমা কি জানে সবকিছু! বেড়ে যাওয়া হার্টবিটের তালে তালে সে নিজের ঘরে এসে ঢোকে। জালনা দিয়ে তেমনই ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে আসছে বাইরের নিঝ্ঝুম থেকে। বিছানায় এসে বসে দোপাটি। আঁকার খাতাটা উল্টে পাল্টে দেয় সে কোলকাতা হাওয়া, পর পর পাতা গুলো বয়ে যায়, কোনোটায় কৃষ্ণসার মাথা নীচু করে হাত ধরে আছে দীপাম্যামের, কোনোটায় কৃষ্ণসারের মুখে খড়কুটো গুঁজে দিচ্ছেন দীপাম্যাম, কোনোটায় কৃষ্ণসার কবরের ওপর টানটান শুয়ে- দীপাম্যাম হন্নে হয়ে কোলকাতা ঘুরে চলেছেন। উড়তে উড়তে এক সময় শেষ পাতাটা এসে থেমে যায়। ঠান্ডা বিছানায় দোপাটি শেষ পাতা জোড়া কৃষ্ণস্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে।
-অলোকপর্ণা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন