একগুচ্ছ কবিতা
কিরীটি সেনগুপ্ত
কিরীটি সেনগুপ্ত
রিক্টারের কাটায় …
এক
সেই কাকভোরে বৃষ্টিশুরু। ঝিরঝিরে। থামবে না। স্বভাব। চরিত্রের স্বভাব। ভরা পৌষের পাথর জমা শীত। খাঁচাররিক্টারে চার-এর কম তো নয়ই। পথ চলতি হাতে গোনা কয়েকটি প্রাণী, বিক্ষিপ্ত এদিক-ওদিক।পথের ধারে ঝাপসা এক্রিলিকে স্বপ্নের আদুরে প্রেম। ভেজা বট্ চারপেয়ে ঝাঁকুনির অপেক্ষায়।ফুটপাথের পশ্চিমে কানাগলির বস্তি। খড়কুটো জ্বালিয়ে সেঁকে নিচ্ছে হাত। কখনো পা’ও। অবশস্নায়ু কোমায়, জেগে উঠতে চায়। খুব ইচ্ছা। উপায় ?
দুই
জানলা খোলা রেখে ঘরপালানো। মনের বিকার বুঝি। চাদর মোড়া শীতে একা হাটতে পাওয়া। খানিক স্বস্তি। মজাও খানিক।হা করলেও ধোঁয়া নেই। খাঁজে খাঁজে বরফ কুচি। গরম বাড়লে গলবে। জল হবে। ধোঁয়া বেরুবে না।কত খুঁত। মস্ত খুঁত বটে। ঘুলঘুলি লাগাতে বেমালুম ভুলেছে। পাকিয়ে ধোঁয়া জমছে। রিক্টারচার ছাড়ালো। এখুনি। কিন্তু ধোঁয়ার ঘাম?
তিন
বছর সাতেকের পুরনো।পড়ে পড়ে ধুলো মেখেছে। ঝাড়পোছে এখন সাদা। কোথাও একটু ধূসর। চেয়ে আছে। নতুন কেনা জল রঙেতুলি টানছে প্রলয়। ক্যানভাস শুষে নিচ্ছে নরম আদর। অভিমানী মুখ লজ্জায়, ঘোমটায়। সবুজে-হলুদে।তুলি শেষে ব্রাশ। কনুই-এর জোর ধাক্কায় কোমর নীল। সরেছে আড়াল। বরফ জলে চকচকে আয়না। নীলসমুদ্রের হাতছানি। প্রলয় শান্ত আজ। রিক্টার সাড়া দেয় না।
পাথরবুক
পথেরধারে অজস্র আমি। তোমার চলার সাথী। ইচ্ছা হয় তোমার সাথে পায়ে পায়ে হাটি। মুক্তি দিয়েছিতোমায়, মসৃণতার। টুকরো আমি, টুকরো হয়েছি, মিশেছি ধুলায়। চাইনি মান, না ছিল আশা সম্মান।বর্জিত আমি, তবু চেয়ে আছি তোমার চরণ ধাম। দিনের আগুণ ঝরেছে আমার গায়ে। পাইনি তোমারকোল, দিয়েছ গর্ভে ঠেলে। খানিক হলেও দিয়েছি শান্তি তোমার গতিপথে। সাথী হইনি, হতে পারিনি, নাওনি কোলে তুলে।
হঠাৎ-ইএকদিন, স্বপ্নের ভোর। দেখি, হাতে নিয়ে করছ খেলা। ভাগ্য! আকাশ ছুঁলো হাসি। অভিমান তুচ্ছআজ। চেয়েছিলেম হতে সাথী, হলেম রসদ। সাধ হয়, তোমায় কাছে পাওয়ার। নিজের করে। পরম ক্ষণেনিজেরই অজান্তে টেনে নিলে কাছে। তুলে নিলে উষ্ণতায়। গভীর চুম্বনের মায়া। আচ্ছন্ন। স্বপ্ননয়। সহজ বাস্তব। বিশ্বরূপের সরস আধার, মুহূর্তের তন্দ্রা। কাটে ঘোর। কটাক্ষে আর বিদ্রূপেছুঁড়ে ফেলেছ শক্ত পাথর বুকে।
হায়!চেয়েছিলেম সাথী হতে। একা, অজস্র আমি, টুকরো পাথর।
(কিরীটি ও প্রবীর )
ফিরেআসা
বছরঘুরে এলাম ফিরে। ধুলো, ধুলো ঘর। টেবিল-চেয়ারে, চা’য়ের কাপে চুমুকের ছাপ স্পষ্ট। গঁদলেগে আছে আজও, আয়নায় ছেঁড়া কষ্ট। গুড়ো ধুলোয় চেনা গন্ধ। চেনা…..খুব চেনা। ফোঁটা ফোঁটাছাপে ধরেছি তাকে। চোখের জল! ক্লান্ত চোখে রাতের কাজল। আর আয়নার ছল।
রসদঘরে ভোগের ডালা পড়ে আছে অবহেলায়। উচ্ছিষ্টের জ্বালা তাজা। কানাকানি করা ইয়ার ফোনেরতারটি যত্নে ছেঁড়া। অদৃষ্টের টানেই বোধ হয়, বছর ঘুরে ঘর ফেরা।।
তৎসম
আপনার সমকক্ষ হইবারইচ্ছা ছিল। বিজয়ীহইবার বাসনা ছিল। ছিলপ্রকাশিত হইবার অভিপ্রায়।
বিধি বাম।
সফল হইবার যোগ্যতাসন্দেহাতীত ঔদাসিন্যে আবৃত ছিল। অদৃষ্টের হস্তে সঁপিয়া শরীর ভাসাইয়াছিলাম। এ নধরতনু আজন্মলালিত সংস্কার লইয়া জীবন রূপ মহাসাগরের গভীরতা নির্ণয়ে উদ্যত হইয়াছিল। অহো, কীনিদারুণপ্রশ্রয়।
এ মহাভাণ্ডে প্রবৃত্তিএবং নিবৃত্তি পক্ষের আমরণ সংগ্রামে জয় আপনার করতলগত। দুর্গা-বাহনকেশরী-শ্রেষ্ঠ আপনার বন্দন, কীর্তনকরিয়া থাকেন। হেমহাদেব, রণ-শ্রেষ্ঠ রণদেবআপনারে প্রণাম।
আপনার সমকক্ষ হইবার ইচ্ছা ছিল। বিধি বাম।
আপনার সমকক্ষ হইবারইচ্ছা ছিল। বিজয়ীহইবার বাসনা ছিল। ছিলপ্রকাশিত হইবার অভিপ্রায়।
বিধি বাম।
সফল হইবার যোগ্যতাসন্দেহাতীত ঔদাসিন্যে আবৃত ছিল। অদৃষ্টের হস্তে সঁপিয়া শরীর ভাসাইয়াছিলাম। এ নধরতনু আজন্মলালিত সংস্কার লইয়া জীবন রূপ মহাসাগরের গভীরতা নির্ণয়ে উদ্যত হইয়াছিল। অহো, কীনিদারুণপ্রশ্রয়।
এ মহাভাণ্ডে প্রবৃত্তিএবং নিবৃত্তি পক্ষের আমরণ সংগ্রামে জয় আপনার করতলগত। দুর্গা-বাহনকেশরী-শ্রেষ্ঠ আপনার বন্দন, কীর্তনকরিয়া থাকেন। হেমহাদেব, রণ-শ্রেষ্ঠ রণদেবআপনারে প্রণাম।
আপনার সমকক্ষ হইবার ইচ্ছা ছিল। বিধি বাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন