আমার সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
তুষ্টি ভট্টাচার্য
লাটভবনের ভোজ সভায় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গিনী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তাঁর নতুন ও চিত্তাকর্ষক ঢঙ্গে পরিহিত শাড়ি পরে হাজির হলেন ইংরেজ মহলে । এই প্রথম বার ভারতীয় কোন সিভিল সারভেন্ট তাঁর ভারতীয় স্ত্রীর সাথে লোকসমক্ষে উপস্থিত হলেন ! জোরাসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১৮৪২ সালের ১ জুনে পৃথিবীর আলো দেখেন দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র , দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র যে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর , তাঁর কাছে এই নারিমুক্তির খোলা হাওয়াকে অন্দরে প্রবেশ করাতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিল , এটা সহজেই অনুমান করা যায় । বাড়ির স্বাভাবিক সুসংস্কৃত পরিবেশে সংস্কৃত ও ইংরেজি শিক্ষা শুরু হয় । এরপর হিন্দু স্কুলের গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে স্থান অধিকার করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন । ১৮৫৯ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয় এবং এই বছরেই তিনি নব পরিণীতা স্ত্রীকে ছেড়ে দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে সিংহল ভ্রমণ করেন ।
সেই সময়ে সরকারি পদে কেবল ব্রিটিশ নাগরিকরাই যোগ দিতে পারতেন । ১৮৩৩ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদ দুটি চালু করে ভারতীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং ১৮৬১ সালে আই সি এস আইন প্রয়োগ করে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস চালু হয় । সত্যেন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু মনমোহন ঘোষ না থাকলে হয়ত তাঁর ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে সরকারি উচ্চ পদ লাভ সম্ভব হত না । ১৮৬৪ সালে দেশে ফিরে এসে বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে কাজে যোগ দেন । প্রথম চারমাস এখানে কাটিয়ে তাঁর প্রথম কার্যকর নিযুক্তি হয় আমেদাবাদে । এরপর সারা ভারত তিনি বদলির চাকরির সূত্রে ঘুরেছেন । তাঁর কাছে নিয়মিত আসতেন তাঁর দুই ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ এবং বোন স্বর্ণকুমারী দেবী । অনেকগুলি ভারতিয় ভাষা আয়ত্বে আনার সুবাদে তিনি বাল গঙ্গাধর তিলকের গীতারহস্য ও তুকারামের অভঙ্গ কবিতাবলি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন । তিনি যেখানেই বদলির সূত্রে গেছিলেন সেখানেই ব্রাহ্মসমাজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়তেন । এভাবে হায়দ্রাবাদ , আমেদাবাদ ও মহারাষ্ট্রের অগ্রণী সমাজ সংস্কারক ও প্রার্থনা সমাজ নেতৃবর্গের যেমন মহাদেব গোবিন্দ রানাডে , কাশীনাথ ত্রিম্বক তেলং , রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর ও নারায়ণ গণেশ চন্দরকরদের সংস্পর্শে আসেন । ৩০ বছর আইসিএস পদে থাকার পর ১৮৯৭ সালে মহারাষ্ট্রের সাতারার জজ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন ।
উদার মনস্ক সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর বাড়ির রক্ষণশীল পর্দা প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন সচেতন ভাবেই । তিনি মনে করতেন এই পর্দা প্রথা হিন্দু সংস্কৃতির অঙ্গ নয় বরং তা মুসলিম সমাজের প্রচলিত প্রথার অনুকরণ মাত্র । ইংল্যান্ডের সমাজে মহিলাদের যে উচ্চ স্থান তিনি দেখেছিলেন , তা ভারতীয় সমাজের নারীদের তুলনামূলক অসম্মানজনক স্থানটি তাঁর কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল । ইংল্যান্ডের সমাজে নারী স্বাধীনতার যে রূপ তিনি দেখেছিলেন তা তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকেও দেখাতে চেয়েছিলেন কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের বাধায় সেবার জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ইংল্যান্ডে যাওয়া হয় নি । দেশে ফেরার পর অবশ্য তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে বোম্বাই নিয়ে যান । জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ছিলেন তাঁর যোগ্য সহধর্মিণী । ইংরেজ আইসিএস অফিসারের স্ত্রীরা যে সব আদবকায়দায় চলতেন তা সহজেই রপ্ত করে নেন তিনি । তাঁর নিজস্ব মেধা ও স্বকীয়তায় তিনি ছিলেন অনন্যা । ছুটিতে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তাঁরা এলে আলোড়ন সৃষ্টি হত তখন । লাটভবনের ভোজসভায় সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে প্রকাশ্যে দেখে ঠাকুর পরিবারের পাথুরিয়াঘাটা শাখার প্রসন্নকুমার ঠাকুর তৎক্ষণাৎ লজ্জায় ও ক্ষোভে ভোজসভা ত্যাগ করেন ।
১৮৭৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ও তাঁর তিন সন্তানকে এক ইংরেজ দম্পতির সাথে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন । এরপর রবীন্দ্রনাথকেও ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন । শুধু জ্ঞানদানন্দিনী দেবী নন , সত্যেন্দ্রনাথের বোনেরাও পরবর্তী কালে সামাজিক পরিবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন । তাঁর বোন সৌদামিনী দেবী লিখেছিলেন – এই কারনে রাস্তা ঘাটে তাঁদের যে বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে তা আজকের যুগে অবিশ্বাস্য শোনাবে । দেশাত্মবোধ সঞ্চারের উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হিন্দুমেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ । ১৮৬৮ সালের অধিবেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং মেলা উপলক্ষ্যে “ মিলে সব ভারতসন্তান , একতান গাহ গান “ গানটি রচনা করেন । এই গানটিকে প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয় । প্রথম যৌবনে তিনি , মনমোহন ঘোষ ও কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কৃষ্ণনগর কলেজে গিয়ে তরুণ সমাজকে ব্রাহ্ম সমাজের প্রতি আকৃষ্ট করেন । আমেদাবাদে কর্মরত থাকার সময় তিনি ম্যাক্সমুলারকে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পাঠান ।
অবসরের পর সত্যেন্দ্রনাথ পার্ক স্ট্রীটের বাড়িতে বসবাস করতেন । সেখানে নিয়মিত সাহিত্যের মজলিস বসত । তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু একটি বইতে মুদ্রিত হয়েছিল , কিন্তু সে বইটি পরিবারের বাইরে প্রকাশিত হয় নি । যেটুকু জানা যায় , তাঁদের আড্ডার বিষয় ছিল বাংলা ভাষা ও বাংলা অক্ষর , কবিতার উপাদান , শৌর্য , পুরুষের প্রেম ও নারীর প্রেম । ১৯০০-০১ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতিত্ব করেন । ১৮৬৭ সালে তিনি একটি নাটক লেখেন সুশীলা ও বীরসিংহ নামে , ১৮৮৮ সালে লেখেন বোম্বাই চিত্র , ১৯০১ সালে লেখেন বৌদ্ধধর্ম , ১৯০৮ সালে লেখেন ভারতবর্ষীয় ইংরেজ , ১৯১৫ সালে লেখেন আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রবাস । নবরত্নমালা , স্ত্রীস্বাধীনতা ও রাজা রামমোহন রায় নামী বইয়েরও রচয়িতা তিনি ।
অভিজাত ঠাকুর পরিবারের সদস্য হিসেবে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর পরিবারের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়েছেন , এ কথা যেমন অনস্বীকার্য , তেমনি এটাও আমাদের মেনে নিতে হবে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি । আসুন , তিনি ও তাঁর যোগ্য সহধর্মিণী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে আমরা আধুনিক যুগের পুরুষ ও নারীরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি ।
লাটভবনের ভোজ সভায় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গিনী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তাঁর নতুন ও চিত্তাকর্ষক ঢঙ্গে পরিহিত শাড়ি পরে হাজির হলেন ইংরেজ মহলে । এই প্রথম বার ভারতীয় কোন সিভিল সারভেন্ট তাঁর ভারতীয় স্ত্রীর সাথে লোকসমক্ষে উপস্থিত হলেন ! জোরাসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১৮৪২ সালের ১ জুনে পৃথিবীর আলো দেখেন দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র , দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র যে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর , তাঁর কাছে এই নারিমুক্তির খোলা হাওয়াকে অন্দরে প্রবেশ করাতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিল , এটা সহজেই অনুমান করা যায় । বাড়ির স্বাভাবিক সুসংস্কৃত পরিবেশে সংস্কৃত ও ইংরেজি শিক্ষা শুরু হয় । এরপর হিন্দু স্কুলের গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে স্থান অধিকার করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন । ১৮৫৯ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয় এবং এই বছরেই তিনি নব পরিণীতা স্ত্রীকে ছেড়ে দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে সিংহল ভ্রমণ করেন ।
সেই সময়ে সরকারি পদে কেবল ব্রিটিশ নাগরিকরাই যোগ দিতে পারতেন । ১৮৩৩ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদ দুটি চালু করে ভারতীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং ১৮৬১ সালে আই সি এস আইন প্রয়োগ করে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস চালু হয় । সত্যেন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু মনমোহন ঘোষ না থাকলে হয়ত তাঁর ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে সরকারি উচ্চ পদ লাভ সম্ভব হত না । ১৮৬৪ সালে দেশে ফিরে এসে বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে কাজে যোগ দেন । প্রথম চারমাস এখানে কাটিয়ে তাঁর প্রথম কার্যকর নিযুক্তি হয় আমেদাবাদে । এরপর সারা ভারত তিনি বদলির চাকরির সূত্রে ঘুরেছেন । তাঁর কাছে নিয়মিত আসতেন তাঁর দুই ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ এবং বোন স্বর্ণকুমারী দেবী । অনেকগুলি ভারতিয় ভাষা আয়ত্বে আনার সুবাদে তিনি বাল গঙ্গাধর তিলকের গীতারহস্য ও তুকারামের অভঙ্গ কবিতাবলি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন । তিনি যেখানেই বদলির সূত্রে গেছিলেন সেখানেই ব্রাহ্মসমাজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়তেন । এভাবে হায়দ্রাবাদ , আমেদাবাদ ও মহারাষ্ট্রের অগ্রণী সমাজ সংস্কারক ও প্রার্থনা সমাজ নেতৃবর্গের যেমন মহাদেব গোবিন্দ রানাডে , কাশীনাথ ত্রিম্বক তেলং , রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর ও নারায়ণ গণেশ চন্দরকরদের সংস্পর্শে আসেন । ৩০ বছর আইসিএস পদে থাকার পর ১৮৯৭ সালে মহারাষ্ট্রের সাতারার জজ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন ।
উদার মনস্ক সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর বাড়ির রক্ষণশীল পর্দা প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন সচেতন ভাবেই । তিনি মনে করতেন এই পর্দা প্রথা হিন্দু সংস্কৃতির অঙ্গ নয় বরং তা মুসলিম সমাজের প্রচলিত প্রথার অনুকরণ মাত্র । ইংল্যান্ডের সমাজে মহিলাদের যে উচ্চ স্থান তিনি দেখেছিলেন , তা ভারতীয় সমাজের নারীদের তুলনামূলক অসম্মানজনক স্থানটি তাঁর কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল । ইংল্যান্ডের সমাজে নারী স্বাধীনতার যে রূপ তিনি দেখেছিলেন তা তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকেও দেখাতে চেয়েছিলেন কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের বাধায় সেবার জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ইংল্যান্ডে যাওয়া হয় নি । দেশে ফেরার পর অবশ্য তিনি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে বোম্বাই নিয়ে যান । জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ছিলেন তাঁর যোগ্য সহধর্মিণী । ইংরেজ আইসিএস অফিসারের স্ত্রীরা যে সব আদবকায়দায় চলতেন তা সহজেই রপ্ত করে নেন তিনি । তাঁর নিজস্ব মেধা ও স্বকীয়তায় তিনি ছিলেন অনন্যা । ছুটিতে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তাঁরা এলে আলোড়ন সৃষ্টি হত তখন । লাটভবনের ভোজসভায় সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে প্রকাশ্যে দেখে ঠাকুর পরিবারের পাথুরিয়াঘাটা শাখার প্রসন্নকুমার ঠাকুর তৎক্ষণাৎ লজ্জায় ও ক্ষোভে ভোজসভা ত্যাগ করেন ।
১৮৭৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ও তাঁর তিন সন্তানকে এক ইংরেজ দম্পতির সাথে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন । এরপর রবীন্দ্রনাথকেও ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন । শুধু জ্ঞানদানন্দিনী দেবী নন , সত্যেন্দ্রনাথের বোনেরাও পরবর্তী কালে সামাজিক পরিবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন । তাঁর বোন সৌদামিনী দেবী লিখেছিলেন – এই কারনে রাস্তা ঘাটে তাঁদের যে বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে তা আজকের যুগে অবিশ্বাস্য শোনাবে । দেশাত্মবোধ সঞ্চারের উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হিন্দুমেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ । ১৮৬৮ সালের অধিবেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং মেলা উপলক্ষ্যে “ মিলে সব ভারতসন্তান , একতান গাহ গান “ গানটি রচনা করেন । এই গানটিকে প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয় । প্রথম যৌবনে তিনি , মনমোহন ঘোষ ও কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কৃষ্ণনগর কলেজে গিয়ে তরুণ সমাজকে ব্রাহ্ম সমাজের প্রতি আকৃষ্ট করেন । আমেদাবাদে কর্মরত থাকার সময় তিনি ম্যাক্সমুলারকে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পাঠান ।
অবসরের পর সত্যেন্দ্রনাথ পার্ক স্ট্রীটের বাড়িতে বসবাস করতেন । সেখানে নিয়মিত সাহিত্যের মজলিস বসত । তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু একটি বইতে মুদ্রিত হয়েছিল , কিন্তু সে বইটি পরিবারের বাইরে প্রকাশিত হয় নি । যেটুকু জানা যায় , তাঁদের আড্ডার বিষয় ছিল বাংলা ভাষা ও বাংলা অক্ষর , কবিতার উপাদান , শৌর্য , পুরুষের প্রেম ও নারীর প্রেম । ১৯০০-০১ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতিত্ব করেন । ১৮৬৭ সালে তিনি একটি নাটক লেখেন সুশীলা ও বীরসিংহ নামে , ১৮৮৮ সালে লেখেন বোম্বাই চিত্র , ১৯০১ সালে লেখেন বৌদ্ধধর্ম , ১৯০৮ সালে লেখেন ভারতবর্ষীয় ইংরেজ , ১৯১৫ সালে লেখেন আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রবাস । নবরত্নমালা , স্ত্রীস্বাধীনতা ও রাজা রামমোহন রায় নামী বইয়েরও রচয়িতা তিনি ।
অভিজাত ঠাকুর পরিবারের সদস্য হিসেবে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর পরিবারের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়েছেন , এ কথা যেমন অনস্বীকার্য , তেমনি এটাও আমাদের মেনে নিতে হবে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি । আসুন , তিনি ও তাঁর যোগ্য সহধর্মিণী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে আমরা আধুনিক যুগের পুরুষ ও নারীরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি ।
khub bhalo laglo lekhati
উত্তরমুছুনবাহ। বেশ ভালো লাগলো। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতেও পারলাম।
উত্তরমুছুন