শঙ্খ ঘোষ - আমার চোখে
পৃথা রায়চৌধুরী
শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে লিখতে হবে এই দুঃসাহস করিনি কখনো । কিন্তু এই সংখ্যাটি সম্পাদনা করতে গিয়ে আমার বন্ধুর বারংবার প্রেরণায় মনে হল অন্তত একটু হলেও লিখি । লিখতে বসে মনে হল -- সমুদ্র । এত লেখা, এতো সব অনবদ্য কবিতা, প্রবন্ধ -- কি নিয়ে বলবো ! এ যেন সেই নাবিকের মত যে মাঝ সমুদ্রে হাল ভেঙে বসে আছে । ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল -- শব্দের ব্যবহার কিভাবে করতে হয় এটাই তো আমি শিখছি । আর সেখানে শঙ্খ ঘোষের মত আর কে হতে পারেন ।
বাংলা কবিতায় কঠিন শব্দ বা তৎসম শব্দের ব্যবহার অনেকদিনের । ইদানীং দেখছি এই প্রবনতা আরো বেশী । সেখানে শঙ্খ বাবু'র কবিতা যেন মরুদ্যান । কি সুন্দর সহজবোধ্য শব্দের ব্যবহার,মুখে মুখে বলা কিছু শব্দ নিয়ে অনায়াসে তৈরি করেন অপার রহস্যময়তা । সাধারণ শব্দের সাহায্যে নির্মিত হয় -- অসাধারণ বুনট ।
এই সময় আমার হাতের কাছে খোলা রয়েছে যে বইটি, তার নাম “নিহিত পাতালছায়া”।
“একদিন সে এসে পড়েছিল এই ভুল মানুষের অরণ্যে। হাতে তাদের গা ছুঁতে গিয়ে কর্কশ বল্কল লাগে বারে বারে।
............ আজ তুমি, যে-তুমি অপমান আর বর্জনের নিত্য পাওয়া নিয়ে তবুও মুঠোয় ধরেছ আমাকে, আমাকেই, আমাকে
সেই তুমি আমার অন্ধ দু-চোখ খুলে দাও, যেন সইতে পারি এই পৃথুলা পৃথিবী, এই বিপুলা পৃথিবী, বিপুলা পৃথিবী …” --- এই অসামান্য লাইন কটি কবি শঙ্খ ঘোষের “বিপুলা পৃথিবী” কবিতার।
ছোট্ট সাত লাইনের একটি কবিতা “মাতাল”। তার মধ্যে দিয়ে কবি কি অনায়াসে সার কথাটুকু বুঝিয়ে দিয়েছেন---যৌবনের তেজী রক্ত প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এমন ভাবে যে চারিপাশের ঘটে যাওয়া অন্যায় অবিচারগুলিকে মেনে নিতে পারা কঠিন হয়ে পড়ে বোধবুদ্ধি সম্পন্ন অবস্থায়। প্রতিবাদী যুবার সুতীব্র প্রতিবাদ নানান ভাবে ভাঙ্গন ধরাতে পারে সমস্ত ‘কু’র মধ্যে; প্রৌঢ়ত্বের শীতল হয়ে আসা রক্ত, সমস্ত কিছু মেনে নিতে শিখে ফেলে বিনা প্রতিবাদে।
“ আরো একটু মাতাল করে দাও।
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ও যে সইতে পারবে না!
এবার তবে প্রৌঢ় করে দাও–
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ওকে বইতে পারবে না।”
কোনো কঠিন শব্দের ব্যবহার না করেই কবি ‘পাগল’ কবিতাটিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সুস্থ মস্তিষ্কে সমস্ত কিছু সহ্য করে চলা দুর্বিসহ; তাই পাগল হওয়াই হয়তো শ্রেয়।
“ঈষৎ মাত্র গিলে নিলে
যা সওয়াবেন তাহাই সয়।” বলে উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আচ্ছন্ন মস্তিষ্ক অনেক বেশি অবিচার সহ্য করতে পারে। অত্যাচারিত তারাই, যারা নির্বোধ, বুদ্ধিমানেরা স্বভাবতই ঊর্ধ্বে থাকেন এসবের...
“হাওড়া ব্রিজের চুড়োয় উঠুন
নিচে তাকান, ঊর্ধ্বে চান—
দুটোই মাত্র সম্প্রদায়
নির্বোধ আর বুদ্ধিমান।”
নির্বোধের স্থান সর্বদা বুদ্ধিমানের পদতলে।
“আজকাল বনে কোনো মানুষ থাকে না
কলকাতায় থাকে।... ব্যঙ্গাত্মক ‘বাস্তু’ নামক কবিতায় উনি মানুষের মধ্যেকার অমানুষটিকে তুলে ধরেছেন। কিছু মানুষের বর্বরতার কাছে বাকি মানুষদের অসহায়তাই লক্ষ্যণীয়। অসহায় এক প্রেমিক তার খোয়া যাওয়া প্রেমিকার জন্য আজও অপেক্ষা করে থাকে।
“শুধু ওই যুবকের মুখখানি মনে পড়ে ম্লান,
প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা ও কেন গলির কানা বাঁকে
এখনও প্রতীক্ষা করে তাকে!”
আপোষ করে চলার মধ্যে প্রতি পদে আমরা নিজেদের ছোট করে চলি, নিজের কাছেই নিজের আত্মসম্মানটুকুও কিছু ক্ষেত্রে বিকিয়ে যায়।
“আরো কত ছোটো হব ইশ্বর
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালে!
আমি কি নিত্য আমারও সমান
সদরে, বাজারে, আড়ালে?”... কবি শঙ্খ ঘোষ ‘ভিড়’ কবিতায় এমন কথাই সহজভাবে বলেছেন।
কোনো কঠিন আভিধানিক শব্দ ব্যবহার ছাড়াই যে কিভাবে আধুনিক আত্মোপলব্ধির কথা কবিতায় লিখে ফেলা যায়, তার নিদর্শন হোলো তাঁর ‘রাস্তা’।
“রাস্তা কেউ দেবে না, রাস্তা করে নিন।
মশাই দেখছি ভীষণ শৌখিন--”
কখন কেউ রাস্তা ছেড়ে দেবে, এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দেবে, সেই কথা ভেবে অপেক্ষায় থাকলে ঠকতেই হবে শুধু; সকলেই নিজের নিজের গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে একে অপরকে পেছনে ফেলে। সেই প্রতিযোগিতায় জিততে হলে, নিজেকেও পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে বেছে নেওয়া রাস্তায়।
“নষ্ট হয়ে যায় প্রভু, নষ্ট হয়ে যায়।
ছিল, নেই—মাত্র এই;”... কবি নিজের ‘ইট’ কবিতায় সাবলীল ভাবে বলে গেছেন, সমস্ত নশ্বর কিছু “ছিল” থেকে “নেই” হয় অবধারিত ভাবে। এই “ছিল” আর “নেই” –এর মাঝে একটি “,” ব্যবহার করে “আছে” পর্যায়টি সুন্দর সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক তিনটি পর্যায়... অথচ, মানুষ সেই সমস্ত পর্যায়কে স্মৃতিতে ধরে রাখে অন্তিমের পরেও।
কবির আরেকটি অসামান্য কবিতা, ‘মুনিয়া’।
“মুনিয়া সমস্ত দিন বাঁধা ছিল।
খুব বারোটায় উঠে চুপি চুপি খাঁচা খুলে
‘উড়ে যা’ ‘উড়ে যা’ বলে প্ররোচনা দিতে
আমার বুকের দিকে তুলে দিল ঠ্যাঙ—
জ্যোৎস্নায় মনে হলো বাঘিনীর থাবা।”
অত্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে থাকা একটি মেয়ে বা নারী, দমকা হাওয়ার মতো বহির্জাগতিক ভালোবাসা ও তার সাথে মুক্তির আলো দেখতে পেলেই পুরোমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সেই বাইরের মানুষটির ওপর; সময়বিশেষে এই নির্ভরতা এমন পর্যায়ে হয়তো পৌঁছে যায়, যাতে সে রক্তাক্ত হতে পারে সামাজিকভাবে। সেই মুহূর্তে মুনিয়ার দুর্বল ঠ্যাঙ যেন বাঘিনীর থাবা হয়ে ওঠে।
নারী ও তার অপ্রাপ্তিজনিত অপূর্ণতা নিয়েও কবি সরল ভাষায় লিখেছেন নানান কবিতা। সেই সব কবিতার মধ্যে একটি হল ‘রাঙামামিমার গৃহত্যাগ’। এক গৃহবধূ বাইরের মুক্তির হাতছানির ডাকে সাড়া দিয়ে যখন তাঁর সাধের তিলতিল করে গড়ে তোলা সংসার পেছনে ফেলে বেরিয়ে পড়েন সেই অনাস্বাদিতের কাছে ধরা দিতে, প্রতি পদক্ষেপে তিনি তাঁর ছাপ ফেলে রেখে এগিয়ে যান...
“ঘর, বাড়ি, আঙিনা
সমস্ত সন্তর্পণে ছেড়ে দিয়ে মামিমা
ভেজা পায়ে চলে গেল খালের ওপারে সাঁকো পেরিয়ে--”
অথচ, তাঁর অন্তরাত্মা পড়ে থাকে এই সংসারের ভেতর—“ছড়ানো পালক, কেউ জানে না!”
এইভাবে শঙ্খ ঘোষ মিশে যান চেতনায়, মননে । তাঁর লেখা পড়তে পড়তে হরিয়ে যাই পরাণখানার গহন অন্তরে । এই অসম্ভব শক্তিশালী কবিকে শ্রদ্ধা জানাই,তাঁর লেখার আলোচনা আমার পক্ষে স্পর্ধা মাত্র । বাংলাভাষা যতদিন থাকবে কবিও থাকবেন তাঁর সৃষ্টিতে , আমাদের মনের মণিকোঠায় ।
শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে লিখতে হবে এই দুঃসাহস করিনি কখনো । কিন্তু এই সংখ্যাটি সম্পাদনা করতে গিয়ে আমার বন্ধুর বারংবার প্রেরণায় মনে হল অন্তত একটু হলেও লিখি । লিখতে বসে মনে হল -- সমুদ্র । এত লেখা, এতো সব অনবদ্য কবিতা, প্রবন্ধ -- কি নিয়ে বলবো ! এ যেন সেই নাবিকের মত যে মাঝ সমুদ্রে হাল ভেঙে বসে আছে । ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল -- শব্দের ব্যবহার কিভাবে করতে হয় এটাই তো আমি শিখছি । আর সেখানে শঙ্খ ঘোষের মত আর কে হতে পারেন ।
বাংলা কবিতায় কঠিন শব্দ বা তৎসম শব্দের ব্যবহার অনেকদিনের । ইদানীং দেখছি এই প্রবনতা আরো বেশী । সেখানে শঙ্খ বাবু'র কবিতা যেন মরুদ্যান । কি সুন্দর সহজবোধ্য শব্দের ব্যবহার,মুখে মুখে বলা কিছু শব্দ নিয়ে অনায়াসে তৈরি করেন অপার রহস্যময়তা । সাধারণ শব্দের সাহায্যে নির্মিত হয় -- অসাধারণ বুনট ।
এই সময় আমার হাতের কাছে খোলা রয়েছে যে বইটি, তার নাম “নিহিত পাতালছায়া”।
“একদিন সে এসে পড়েছিল এই ভুল মানুষের অরণ্যে। হাতে তাদের গা ছুঁতে গিয়ে কর্কশ বল্কল লাগে বারে বারে।
............ আজ তুমি, যে-তুমি অপমান আর বর্জনের নিত্য পাওয়া নিয়ে তবুও মুঠোয় ধরেছ আমাকে, আমাকেই, আমাকে
সেই তুমি আমার অন্ধ দু-চোখ খুলে দাও, যেন সইতে পারি এই পৃথুলা পৃথিবী, এই বিপুলা পৃথিবী, বিপুলা পৃথিবী …” --- এই অসামান্য লাইন কটি কবি শঙ্খ ঘোষের “বিপুলা পৃথিবী” কবিতার।
ছোট্ট সাত লাইনের একটি কবিতা “মাতাল”। তার মধ্যে দিয়ে কবি কি অনায়াসে সার কথাটুকু বুঝিয়ে দিয়েছেন---যৌবনের তেজী রক্ত প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এমন ভাবে যে চারিপাশের ঘটে যাওয়া অন্যায় অবিচারগুলিকে মেনে নিতে পারা কঠিন হয়ে পড়ে বোধবুদ্ধি সম্পন্ন অবস্থায়। প্রতিবাদী যুবার সুতীব্র প্রতিবাদ নানান ভাবে ভাঙ্গন ধরাতে পারে সমস্ত ‘কু’র মধ্যে; প্রৌঢ়ত্বের শীতল হয়ে আসা রক্ত, সমস্ত কিছু মেনে নিতে শিখে ফেলে বিনা প্রতিবাদে।
“ আরো একটু মাতাল করে দাও।
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ও যে সইতে পারবে না!
এবার তবে প্রৌঢ় করে দাও–
নইলে এ বিশ্বসংসার
সহজে ওকে বইতে পারবে না।”
কোনো কঠিন শব্দের ব্যবহার না করেই কবি ‘পাগল’ কবিতাটিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সুস্থ মস্তিষ্কে সমস্ত কিছু সহ্য করে চলা দুর্বিসহ; তাই পাগল হওয়াই হয়তো শ্রেয়।
“ঈষৎ মাত্র গিলে নিলে
যা সওয়াবেন তাহাই সয়।” বলে উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আচ্ছন্ন মস্তিষ্ক অনেক বেশি অবিচার সহ্য করতে পারে। অত্যাচারিত তারাই, যারা নির্বোধ, বুদ্ধিমানেরা স্বভাবতই ঊর্ধ্বে থাকেন এসবের...
“হাওড়া ব্রিজের চুড়োয় উঠুন
নিচে তাকান, ঊর্ধ্বে চান—
দুটোই মাত্র সম্প্রদায়
নির্বোধ আর বুদ্ধিমান।”
নির্বোধের স্থান সর্বদা বুদ্ধিমানের পদতলে।
“আজকাল বনে কোনো মানুষ থাকে না
কলকাতায় থাকে।... ব্যঙ্গাত্মক ‘বাস্তু’ নামক কবিতায় উনি মানুষের মধ্যেকার অমানুষটিকে তুলে ধরেছেন। কিছু মানুষের বর্বরতার কাছে বাকি মানুষদের অসহায়তাই লক্ষ্যণীয়। অসহায় এক প্রেমিক তার খোয়া যাওয়া প্রেমিকার জন্য আজও অপেক্ষা করে থাকে।
“শুধু ওই যুবকের মুখখানি মনে পড়ে ম্লান,
প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা ও কেন গলির কানা বাঁকে
এখনও প্রতীক্ষা করে তাকে!”
আপোষ করে চলার মধ্যে প্রতি পদে আমরা নিজেদের ছোট করে চলি, নিজের কাছেই নিজের আত্মসম্মানটুকুও কিছু ক্ষেত্রে বিকিয়ে যায়।
“আরো কত ছোটো হব ইশ্বর
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালে!
আমি কি নিত্য আমারও সমান
সদরে, বাজারে, আড়ালে?”... কবি শঙ্খ ঘোষ ‘ভিড়’ কবিতায় এমন কথাই সহজভাবে বলেছেন।
কোনো কঠিন আভিধানিক শব্দ ব্যবহার ছাড়াই যে কিভাবে আধুনিক আত্মোপলব্ধির কথা কবিতায় লিখে ফেলা যায়, তার নিদর্শন হোলো তাঁর ‘রাস্তা’।
“রাস্তা কেউ দেবে না, রাস্তা করে নিন।
মশাই দেখছি ভীষণ শৌখিন--”
কখন কেউ রাস্তা ছেড়ে দেবে, এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দেবে, সেই কথা ভেবে অপেক্ষায় থাকলে ঠকতেই হবে শুধু; সকলেই নিজের নিজের গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে একে অপরকে পেছনে ফেলে। সেই প্রতিযোগিতায় জিততে হলে, নিজেকেও পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে বেছে নেওয়া রাস্তায়।
“নষ্ট হয়ে যায় প্রভু, নষ্ট হয়ে যায়।
ছিল, নেই—মাত্র এই;”... কবি নিজের ‘ইট’ কবিতায় সাবলীল ভাবে বলে গেছেন, সমস্ত নশ্বর কিছু “ছিল” থেকে “নেই” হয় অবধারিত ভাবে। এই “ছিল” আর “নেই” –এর মাঝে একটি “,” ব্যবহার করে “আছে” পর্যায়টি সুন্দর সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক তিনটি পর্যায়... অথচ, মানুষ সেই সমস্ত পর্যায়কে স্মৃতিতে ধরে রাখে অন্তিমের পরেও।
কবির আরেকটি অসামান্য কবিতা, ‘মুনিয়া’।
“মুনিয়া সমস্ত দিন বাঁধা ছিল।
খুব বারোটায় উঠে চুপি চুপি খাঁচা খুলে
‘উড়ে যা’ ‘উড়ে যা’ বলে প্ররোচনা দিতে
আমার বুকের দিকে তুলে দিল ঠ্যাঙ—
জ্যোৎস্নায় মনে হলো বাঘিনীর থাবা।”
অত্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে থাকা একটি মেয়ে বা নারী, দমকা হাওয়ার মতো বহির্জাগতিক ভালোবাসা ও তার সাথে মুক্তির আলো দেখতে পেলেই পুরোমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সেই বাইরের মানুষটির ওপর; সময়বিশেষে এই নির্ভরতা এমন পর্যায়ে হয়তো পৌঁছে যায়, যাতে সে রক্তাক্ত হতে পারে সামাজিকভাবে। সেই মুহূর্তে মুনিয়ার দুর্বল ঠ্যাঙ যেন বাঘিনীর থাবা হয়ে ওঠে।
নারী ও তার অপ্রাপ্তিজনিত অপূর্ণতা নিয়েও কবি সরল ভাষায় লিখেছেন নানান কবিতা। সেই সব কবিতার মধ্যে একটি হল ‘রাঙামামিমার গৃহত্যাগ’। এক গৃহবধূ বাইরের মুক্তির হাতছানির ডাকে সাড়া দিয়ে যখন তাঁর সাধের তিলতিল করে গড়ে তোলা সংসার পেছনে ফেলে বেরিয়ে পড়েন সেই অনাস্বাদিতের কাছে ধরা দিতে, প্রতি পদক্ষেপে তিনি তাঁর ছাপ ফেলে রেখে এগিয়ে যান...
“ঘর, বাড়ি, আঙিনা
সমস্ত সন্তর্পণে ছেড়ে দিয়ে মামিমা
ভেজা পায়ে চলে গেল খালের ওপারে সাঁকো পেরিয়ে--”
অথচ, তাঁর অন্তরাত্মা পড়ে থাকে এই সংসারের ভেতর—“ছড়ানো পালক, কেউ জানে না!”
এইভাবে শঙ্খ ঘোষ মিশে যান চেতনায়, মননে । তাঁর লেখা পড়তে পড়তে হরিয়ে যাই পরাণখানার গহন অন্তরে । এই অসম্ভব শক্তিশালী কবিকে শ্রদ্ধা জানাই,তাঁর লেখার আলোচনা আমার পক্ষে স্পর্ধা মাত্র । বাংলাভাষা যতদিন থাকবে কবিও থাকবেন তাঁর সৃষ্টিতে , আমাদের মনের মণিকোঠায় ।
বাহ, দারুন লিখেছিস পৃথা।
উত্তরমুছুনporechho dekhe, khub valo laglo dada
মুছুনভাল লেগেছে।
উত্তরমুছুনporbar jonyo oshesh kritoggota janalam .
মুছুন