শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

ধারাবাহিক বিলাভারত – অভীক দত্ত

বিলাভারত
অভীক দত্ত



( মহাভারতের বিলা-রূপ, ভদ্রলোকের পড়ার জন্য নয়, এবং তারা এই লেখাটি পড়লে আমায় কু-শীল ইত্যাদি আখ্যা দিতে পারেন, তাই তাদের কাছে শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এবং দরজা দেখিয়ে দিচ্ছি।

কথায় আছে যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে। মহাভারত একটা ভাল ব্যবসা। শুধু মহাভারতকে বেস করেই প্রচুর পাবলিক করে কম্মে খাচ্ছে। আমার এই লেখা সেই ধরণের লেখাও বলা যায়, নাও বলা যায়। বিলাভারত লেখা শুরু করলাম মহাভারতের মাঝখান থেকে। যখন গল্প অনেকটাই শুরু হয়ে গেছে। জনগণের মতামতই এই লেখার ভবিষ্যৎ। )


কৃষ্ণা জয় সাঙ্গ হলে পাণ্ডবরা তাকে এনে মায়ের কাছে গেলে পৃথা বলে দিলেন যা ভিক্ষা এনেছ সবাই মিলে ভোগ কর। আর কি করা? কেলো যা হবার তা তো হলই। তখনকার দিনে তো থু থুক্কি ব্যাপারটা ছিল না। যা হইসে হইসে এবার চেপে যা পাগলা সেরকমটাও না। আর কৃষ্ণার ফিগারখানা ছিল রাঁচি হিলে পাটনা হিলে দিল্লি হিলে টাইপ। বাকি ভাইগুলো দেখেই হাত টাত মেরে নিয়েছিল। বৌদি বলে বেশি লোভ দিতে পারছিল না। কিন্তু কুন্তী একবার বলে ফেলেই... মানে ভিতরের ইচ্ছাটা সবারই ছিল, কেউ বলতে পারছিল না, কিন্তু কুন্তী বলে দিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন।

শেষমেষ আর কি করা। কৃষ্ণ যখন এলেন তখন সবাই তাকে মোড়ল ভেবে ঘিরে ধরলেন। কৃষ্ণ পড়লেন মহা বিপদে। দিব্যি বোঝা যাচ্ছে এদের সবারই কৃষ্ণাকে দেখে ইয়ে হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সবাই কিরকম ভদ্র হয়ে জিজ্ঞেস করছে তাকে। পাবলিক পালস বুঝে তাই কৃষ্ণ এক গল্প দিয়ে দিলেন। কি সেই গল্প? পুরাকালে নাকি এক সুন্দরী মেয়ে বিয়ে না হবার জন্য কান্নাকাটি করছিল, তখন মহাদেব এসে তাকে বর দিতে বলায় সে পাঁচবার বলে দেয় তার ভাল বর লাগবে। মহাদেব তথাস্তু বলায় তার পাঁচজন স্বামী হয় পরবর্তী জন্মে। সেই মেয়েই দ্রুপদ রাজের কন্যা। দ্রৌপদী। আর প্রত্যেকবার প্রতিটি স্বামীর সাথে মিলনের সময় কৃষ্ণা কুমারী হয়ে যেত ব্যাসদেবের আশীর্বাদে। মানে কি সুন্দর সেটলমেন্ট। ভাবাই যায় না। পুরুষের ভোগের জন্য একটা মেয়েকে দিয়ে যতরকম এক্সপেরিমেন্ট করা সম্ভব তাই করে গেছেন ব্যাসদেব।

ওদিকে দ্রুপদ রাজের স্বয়ম্বর সভায় ব্যাপারটা অন্যরকম ছিল। রূপে গুনে ডবকা কৃষ্ণার স্বামী হবার জন্য দুর্যোধন, কর্ণ, শল্য, জয়দ্রথ সবাই এসেছিল। কিন্তু কর্ণ সূতপুত্র বলে কৃষ্ণা তাকে ডিসকোয়ালিফাই করে দিলে। জাতপাতের রাজনীতির এক নিকৃষ্ট উদাহরণ যাকে বলে আর কি। সেই বলে না, তেরে পাস ক্যা হে? মেরে পাস বাপ হে। তা কর্ণর কাছে বাপ ছিল না বলে সে রাজকন্যে পেল না। দুর্যোধন তো চিরকালই মুখে মারিতং জগত। সবাইকে হারিয়ে অর্জুন দিব্যি জিতে গেছিল।

যাকগে, ব্যাসদেব, কৃষ্ণ প্রমুখ দৌত্যের কাজ টাজ করে দ্রুপদকে অং বং বুঝিয়ে রাজি করিয়ে নিলেন। আর তখনকার দিনে ভগার নামে ঢপ দিলে পাবলিক খুব খেত। দ্রুপদও খেয়ে নিলে। অতঃপর রোশনাই সহযোগে শাদি বিয়া যা হবার তা হয়ে গেল, একটা নয়, পাঁচটা বরের সাথে।

জতুগৃহ থেকে পাণ্ডবরা বেঁচেছে, আর দ্রৌপদির মত একটা চরম মাল পেয়ে গেছে, এই দুটো খবর কৌরবদের কাছে ডুয়াল শক হয়ে গেল। বিদুর চিরকালই মহাভারতে বিভীষণের পার্ট প্লে করে এসেছে। সে ধৃতরাষ্ট্রকে জানাল কৌরবরা জিতেছে কৃষ্ণাকে। তাতে ধৃতরাষ্ট্র মহা খুশি হওয়ায় বিদুর এক্সপ্লেন করল অর্জুনরাও আসলে কৌরবই তো। মানে বৃহত্তর কমিউনিস্ট পার্টির মত একটা হৈ হৈ ব্যাপার আর কি। ধৃতরাষ্ট্রের ঝাট ফাট জ্বলে গেলেও মুখে কিছু বলল না। বিদুরের মত পাবলিকেরও তো দরকার। তাছাড়া দাসীর ছেলে হলে কি হবে। পাব্লিকে তো জানে ভাই। তাই আর কি করা।

তখনকার দিনের লোকেরা ভদ্র ছিল মুখে। আদতে বদের হাড্ডি ছিল। নিজেদের বউদের ব্রাম্ভনদের দিয়ে ইয়ে করাত। নিজেরা যখনই কনফি পেত না তখনই ওই সব করার দিকে ঝুঁকত। মহাভারত পড়লে জানা যায় বেশিরভাগই লোকই তাদের বাপের ছেলে নয়। মূলে বলা আছে কুন্তী বিয়ের আগে সূর্য, পরে পান্ডুর সাথে বিয়ের পরে ধর্ম, পবন, ইন্দ্রর সাথে ইয়ে করে কর্ণ, যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুনকে পয়দা করেছিল। মাদ্রীর ছিল কম বয়েস। পান্ডু কুন্তীর হেল্প চাওয়ায় কুন্তী মাদ্রীকে যে কোন একজন দেবতাকে ডাকার ব্যাপারে হেল্প করতে চায়। কিন্তু ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যায়। অশ্বিনীকুমার ভাইরা ছিল জমজ। মাদ্রী বুঝল যৌবনের যা জ্বালা তাতে একটা দিয়ে হবে না। সে যমজ দেবতাকেই ডেকে নিল। এতে কুন্তী খচে ব্যোম হয়ে গেল। আদতে পান্ডু কি ছিল? আদৌ কি কোন অভিশাপ ছিল তার উপরে? নাকি তার নাম থেকেই গান্ডু শব্দটার উৎপত্তি?

তখনকার দিন বলেই না, এখনকার দিনেও ঐতিহাসিকেরা বা বুদ্ধিজীবীরা নিরপেক্ষভাবে কিছু বলতে পারে না, কোন না কোন দলের ধামাধরা হতেই হবে তাদের। আসলে নাকি দুর্যোধনের আসল নাম ছিল সুযোধন। কোন বাপ তার ছেলের বদ নাম রাখে? আসলে এ সবই ছিল দুর্যোধনের চরিত্রে কালি মাখানোর ছল। অর্জুনের জন্য একলব্যের বুড়ো আঙুলটা গেল।সে ব্যাপারটা কিন্তু সেভাবে হাইলাইটেড হল না।

যাক গে, ধান ভাঙতে শিবের গীত না করে আবার ফিরি যেখানে ছিলাম। দ্রোণ, বিদুর, ভীস্ম প্রমুখের পরামর্শে ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবদের ডেকে নিলেন হস্তিনাপুরে এবং অর্ধেকরাজ্যও দিয়ে দিলেন। সেখানে নারদ এসে তাদের ডেকে একটা মিটিং করে সুন্দ উপসুন্দের গল্প শোনালেন। যে একটা মেয়ের জন্য কিভাবে তাদের জীবনের বারোটা বেজে গিয়েছিল। তখন পান্ডবেরা গোল টেবিল বৈঠকে বসে একটা ভদ্রলোকের চুক্তি করল যে দ্রৌপদি প্রতি ভাইয়ের কাছে এক বছর করে থেকে সংসার করবে। যদি সেই সময় অন্য কোন ভাই তাকে দেখে ফেলে তবে সেই ভাইকে বারো বছর ব্রম্ভচারী(এইখানে শর্ত আছে, ব্রম্ভচারী শুধু দ্রৌপদীর ক্ষেত্রে) হয়ে বনবাসে যেতে হবে।

এই নিয়মের বলি হয়ে গেল অর্জুন। গরু চোরেরা ব্রাম্ভনের গোরু নিয়ে ভাগছিল দেখে তারা অর্জুনের কাছে এসে বিচার চাইল। ওদিকে অর্জুনের অস্ত্র ছিল যুধিষ্ঠিরের ঘরে, অর্জুন রাজধর্ম পালনের জন্য সেই নিয়ম সত্ত্বেও ঘরে ঢুকে অস্ত্র নিয়ে গরুচোর ধরতে বেরিয়ে গেল, আর ফিরে এসে নিজের চুক্তিভঙ্গ নিজেই স্বীকার করে বনবাসে চলে গেল।

এখানে প্রশ্ন ওঠে অর্জুন কি ইচ্ছা করে এই কাজ করেছিল? কারণ হিসেবমত যুধিষ্ঠিরের পর ভীম তারপরে পালা ছিল অর্জুনের। মুখে না বলুক, আদতে অর্জুন তো মানুষই ছিল। দ্রৌপদী তো আসলে তারই বীরত্বের দ্বারা প্রাপ্ত। সেখানে বারোয়ারি হয়ে গেল, আর তার নম্বর আসতে লাগল দু ভাইয়ের পরে, এটা অভিমান ছিল না তো আসলে? নাকি দ্রৌপদী যখন দুভাইয়ের ঘরে থাকবে তখন ঘরছেড়ে বেরিয়ে বাইরে অন্যকিছু করার ছক ছিল? কারণ ঘরছাড়া অবস্থাতেই উলুপী, চিত্রাঙ্গদা, সুভদ্রাকে বিয়ে করে। দ্রৌপদী অর্জুনকে নিয়ে বরাবরই পজেসিভ ছিল। যখন অর্জুন সুভদ্রাকে নিয়ে ফিরল তখন মান অভিমান বেশ ভালই হয়েছিল। শেষমেষ অনেক কষ্টে পোষ মানে কৃষ্ণা।

মহাপ্রস্থানপর্বে এই কারণেই যখন কৃষ্ণার মৃত্যু ঘটার পূর্বে যুধিষ্ঠিরের কাছে সে জানতে চেয়েছিল কেন সে জীবিত অবস্থায় স্বর্গে যেতে পারবে না, তখন যুধিষ্ঠির তাকে এই কারণটাই বলেছিল, কৃষ্ণার বিয়ে হয়েছিল পাঁচ ভাইয়ের সাথে কিন্তু তার মন সবসময় অর্জুনকে প্রেফার করে এসেছিল। সেটাই ছিল তার দোষ। অন্য স্বামীদের সাথে মিলনে দ্রৌপদী অর্জুনকেই কল্পনা করতেন। সেটাই তার অপরাধ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এইভাবেই ব্যাখ্যা করে দ্রৌপদীর পাপ।

অথচ কৃষ্ণা কিন্তু অর্জুনকে মন থেকে বরণ করেছিল। যুধিষ্ঠির, ভীম, নকুল বা সহদেব কাউকেই সে চায়নি। চেয়েছিল যাকে তার সাথে ফাউ হিসেবে দেওয়া হল আরও চারজন পুরুষকে। তালিবানদের সাথে পার্থক্য আছে কিছু?

(চলবে)

1 টি মন্তব্য: