মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

ধারাবাহিক এপিটাফ – সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার


২১।

নদীর ভিতর নদী শুয়ে থাকে।নদীর মধ্য থেকে তুমুল এক নদী উঠে আসে।হাই তোলে।পায়ে পায়ে গড়িয়ে যায় রাস্তা।গলিপ্তহ।তস্য গলি বস্তির বাচ্চারা গান গায়।গানের গায়ে জড়িয়ে যায় খিস্তিখেউড়।আবার এক একদিন সীমাহিন এক প্রান্তর হয়ে ওঠে পৃথিবী।বাতিদান বেয়ে রক্ত গড়িয়ে নামে।রক্তের দাগ অনুসরণকারী পাখিরদের ডানার নীচে কাঁচপোকা,ফড়িং।জীবন কাটাগাছের দিকে পাশ ফেরে।দেশাচারের নকশির ভিতর হরেকরকম মানুষজন।বিলাপরত স্কুল্বালিকা।গান বাজনার তাড়সে সংকরমনতায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া মাঠ প্রান্তর থেকে উড়ে আসে প্রজন্মপীড়িত কথকেরা।তারপর লোককথার ঢঙে গল্প এগোতে থাকে।অন্ধকারের নদীর পাশে তখন ভূতুড়ে ভাটিখানা।আর চোখে জল আসতেই মাতালেরা সব প্রেমিক হয়ে যায়।প্রান্তবাসীর হাতে হাতে বাঁশি ঘোরে।বাঁশি বেজেও ওঠে আচমকা।তখন হেরম্ব বর্মন উঠে দাঁড়ায়।মহামানব হতে পাবার সুযোগ হেলায় সরিয়ে দিয়ে সে ধুলো-মাটি আর মানুষের আখ্যানমালা সাবলীল বলে যেতে থাকে।অবিরাম তাঁতকল ঘোরে।আর নদীর মধ্যে থেকে তুমুল এক নদী উঠে আসে।



২২।

ভালো ভালো গান শুনে বড় হয়েছি।নানা রঙের মানুষ দেখে দেখে বেড়ে উঠেছি আমি।অপমানের পর অপমান,গলাধাক্কা ডিঙিয়ে আমি এসেছি খোলা আকাশের তলে।আর নতুন শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে উলুধ্বনি ভেসে আসে,রাজবংশী মেয়েদের দলবদ্ধ নাচ।বিবাহ উৎসবের দিকে যাত্রা শুরু করল একটি নিঃসঙ্গ পালক।

এতসব টুকরো,ছেঁড়া খোঁড়া সময় যাপন অভিঞ্জতা আমাকে সবসময় ঘিরে থাকে এই বহুমাত্রিক জীবনই তো পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে।আমি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলি সবচেয়ে নিষ্ঠুর তম মানুষটিকে।আর গাছের পাতায় আঠা মাখিয়ে সারাদিন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করত বাবুলাল বাঁশফোঁড়।অন্ধকারে শতশত জোনাকি পোকা।আমার তরুণ বন্ধুরা সব গোল হয়ে বসে থাকে ।বাঁশের সাঁকো থেকে দীর্ঘতম সুড়ঙ্গপথ-সমস্তটাই আমার কবিতা জীবন।লোকায়ত ভুবন যার ভিতর থেকে আমার আর কোনওদিনই বেরিয়ে আসা হবে না।অথচ ব্যাধ যুবকেরা সব একদিন ভুলেযাবে প্রলাপকথন। আর মাটির ঊঠোন থেকে অনিবার্‍য কিছু গান গোটা জীবন আমার সঙ্গে থেকে যাবে।আর জীবনের বৃত্তে ঘনঘন আছড়ে পড়বে উড়ন্ত ঘোড়া,হস্তচিহ্ন।এবং উৎসব গাথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন