বুধবার, ১৫ মে, ২০১৩

ধারাবাহিক - অভীক দত্ত

বিলাভারত ৫
অভীক দত্ত



১।

আগের লেখায় পরস্ত্রী সম্পর্কে মহাভারতের ভূমিকা বললাম। এবার বলি সুরা বা সোমরস সম্পর্কে। দেবতা আর দানবের যুদ্ধে দানবদের গুরু ছিলেন শুক্রাচার্য। তিনি সঞ্জীবনী মন্ত্র জানতেন। দেবতারা যে সব দানবদের মন্ত্র শুক্রাচার্য ওই মন্ত্র পড়ে সবাইকে জ্যান্ত করে দিতেন। এদিকে দেবতাদের গুরু বৃহস্পতি এই মন্ত্র জানতেন না বলে যুদ্ধে মৃত দেবতারা একের পর এক টপকে যেতে লাগল।

দেবতা দানব মানে কি ছিল তখনকার দিনে কে জানে, সত্যি সত্যি তো আর সব ভগার অবতার ছিল না, নিশ্চয়ই আর্য অনার্য বা অন্য কোন জাত পাতের মারপিট ছিল। যাই হোক, দেবতারা বৃহস্পতির পুত্র কচকে পাঠালেন শুক্রাচার্যের কাছে। আর টিপস দিলেন কচকে শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানীকে তুলতে পারলে ওর বাপ ফিট হয়ে যাবে।

কি আর বলব । এই জিনিস তখনও ছিল এখনো আছে । মেয়ে ফিট তো বাপ ফিট । তা কচ ফিট করেও নিল দেবযানীকে । এদিকে ভিলেন দানবরা জেনে গেল সেটা । কচকে মেরে দেহ খন্ড খন্ড করে কুকুরকে খাইয়ে দিল । দেবযানী শুক্রাচার্যকে বললে সঞ্জীবনী মন্ত্র দিয়ে বাঁচিয়ে দিলেন কচকে । পরপর দুবার এই ঘটনা ঘটবার পর দানবরাও চালাক হয়ে গেল । কচের দেহ খন্ড করে মদের সাথে শুক্রাচার্যকে খাইয়ে দিল ।কি হবে এবার ? অনেক হুজ্জত করে বাঁচানো হল কচকে । তারপরই শুক্রাচার্য এই অ্যানাউন্স দেন

“যে মন্দমতি ব্রাহ্মণ মোহবশে সুরা পান করবে সে ধর্মহীন ও ব্রহ্মহত্যাকারী তুল্য হবে”।

অর্থাৎ সে আর ব্রাহ্মণ হিসেবে গণ্য হবে না।

নাও, এবার সামলাও ঠেলা। কে মাল খেল আর কেস খেল কে!!!

২।

যুদ্ধের গল্প ছোটবেলায় খুব শুনতাম। সেটা চর্বিত চর্বণ করার ইচ্ছা হল । কর্ণ আসলে কার ছেলে তখনকার দিনে সবাই জানলেও আসলে তাকে নিচুজাতি হিসেবেই দেখা হত । দুর্যোধন যখন কর্ণকে সেনাপতি নিযুক্ত করল কর্ণ হঠাৎ এক অদ্ভুত কথা বলে দিল । শল্যকে তার সারথি হতে হবে । দুর্যোধন যখন শল্যকে এই কথা বলল শল্য বহুত খচে গেলেন । তিনি যুদ্ধ ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন ।

দুর্যোধন শল্যকে আটকাতে গেলে শল্য ফিরলেন ঠিকই কিন্তু এই শর্ত রাখলেন যে তিনি কর্ণকে যুদ্ধের সময় মনের সুখে স্লেজিং করতে চান এবং তাতে যেন কেউ কিছু না বলে ।

এ যেন ইন্ডিয়া টিম অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ০-৩ টেস্ট ম্যাচ হারছে আর দলের সিনিয়ার প্লেয়াররা গোষ্ঠীবাজি শুরু করেছে।

সারথি হবার সাথে সাথে শল্য কর্ণের এমন মাথা খারাপ করে দিয়েছিলেন যাতে পতন ও মৃত্যু ছাড়া কর্ণের আর কোন উপায় ছিল না। আসলে শল্য ছিলেন মাদ্রীর ভাই। দুর্যোধনকে যতটা ভালবাসতেন তার থেকে অনেকবেশি ভালবাসতেন পাণ্ডবদের। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় যখন তিনি পান্ডবপক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তখনই দুর্যোধন তাকে বোকা বানিয়ে কৌরবদলে নিয়ে যান।

অনিচ্ছুক ঘোড়াকে নিয়ে যুদ্ধে গেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে তা শল্যের কাহিনী চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়।

শল্য ছিলেন এক অদ্ভুত চরিত্র।



৩।

মহাভারতের সবথেকে ঘৃণ্য বীর হল দ্রোণাচার্যের ছেলে অশ্বত্থমা।কুরুক্ষেত্রের শেষে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত লোকেদের মেরে বিরাট বীরত্বের পরিচয় দিতে চেয়েছিল।

তবে এখানে একটা স্বপ্নের গল্প আছে।

অশ্বত্থমা যখন শিখন্ডী এবং দ্রৌপদীর ছেলেকে মারতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় তাদের রক্ষীরা তাকে দেখে চমকে যায়। তারা নাকি কদিন আগে থেকেই স্বপ্ন দেখছিল মা কালীর (মা কালীর উল্লেখ মহাভারতে একমাত্র এখানে ) সাথে এক পুরুষ তান্ডবনৃত্য করে রাতের অন্ধকারে তাদের সংহার করতে আসবে । তারা যুদ্ধ করছে ভয়ে ভয়ে আর বলছে এই সেই লোক এই সেই লোক ।

বোঝো কান্ড ।

২টি মন্তব্য: