বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

মুক্তগদ্য - পল্লব ভট্টাচার্য্য

ব র্ণ মা লা
পল্লব ভট্টাচার্য্য

যদি বৃষ্টি হয় , তাহলে ছাতা ধরবে কে ? মাথার মধ্যে যে কোনও প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেই , মূর্ধণ্য ণ ঘন ঘন সিগারেট খায় আর ধোঁয়া ছাড়ে। বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিলে বুদ্ধিজীবি হওয়া যায় কিনা না জেনেই, প্রশ্ন আর সিগারেট, সিগারেট আর প্রশ্নের মধ্যে ধোঁয়াক্কার এক অবস্থায় মূর্ধ্যণ দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু ছাতার রঙ কী হবে?

ন যেহেতু নাজারত নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, সে বারেবারেই তাগিদ দিতে থাকে। হাজার হোক, ঠিক সময়ে ছাতাটা হাজির করার দায় তার।

‘আরে বাবা, আমি বলি কী, স্বাধীনতা শব্দটার দিকে তাকিয়ে দেখেছো কখনও?’ বলতে বলতে চক্রবর্তীর চোখে-মুখে একটা মিচকি ভাব ফুটে উঠে। ঞ-রা সাধারণত একটু বোকা ধরণের লোক, সবকিছুতেই হুল্লোড় খোঁজে। কিন্তু চক্রবর্তীর এমন কথায় তারা কোনও রগড় খুঁজে পায় না। ফলে যা হয় আর কি, তারা আগের মতোই ঘাড় গুজে বসে থাকে। যতক্ষণ না পতাকা উত্তোলন আর বক্তৃতা শেষ হয়, ততক্ষণ চকলেট বিলির কোনও সম্ভাবনা নেই। সুতরাং বক্তৃতার মাথামুন্ডু কিছু না বুঝতে পেরে অনুস্বররা মাঝে মাঝেই নাক খুটবে বা হাত চুলকাবে ।

তাহলে প্রশ্ন একটা নয়, দু`টো। কে ছাতা ধরবে, এবং সেই ছাতার রঙ কী হবে ? প্রশ্ন দুটোর মধ্যে দন্ত-ন মূর্ধণ্য ণ করতে করতে, আমাদের পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে।

বঙ্কিমচন্দ্রের বয়স পার হওয়ার পরও সুপবন না দেখে উহাতে কি লেখা উচিত বোঝা যায় নি। তাই মা যা হইয়াছেন তাহাতেই দিন গুজরান করা ছাড়া, যা হইবেন ভাবিতে কষ্ট হয়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এই কষ্ট দূর হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা - খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিশন গড়ার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই বিবেচনাধীন। কোনও না কোনও প্রাক্তনকেই এর প্রধান করতে হবে জেনে, ঠ ইতিমধ্যেই ঠোক্কর দেওয়া শুরু করেছে।

আপাতত , দরজা না খোলা অবধি , ভাবা যাক , সুপবন দেখিলে কোন নাম লিখে দিতে হবে।

‘নাম ? নামে কী আসে যায় ?’ বলতে বলতে আমাদের ঌ (লী) অন্তত সাড়ে তিনবার ডিগবাজি খায়।

কে দেখেছে , কে দেখেছে, বলে চেল্লানোর কোনও দরকার নেই। দাদা-ই সব দেখে । দাদা দেখেছে ।

সুতরাং দাদার হাতে সত্যি সত্যি কলম আছে কিনা, আর থাকলে তা ছুড়ে মারার আদৌ কোনও অভিপ্রায় রয়েছে কিনা - এটুকুই জানা দরকার। কাগজওয়ালারা এই জানা ও না জানার মধ্য দিয়ে একধরণের ডালকুত্তা বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়। অতঃপর ঘেউ ঘেউ মার্কা দু’-এক দিনের পর ক্রমশ থিতিয়ে আসা জীবনে, য থেকে জ আর জ থেকে য চক্কর কাটতে কাটতে এক সময় মুখ ঝুলিয়ে বসে থাকে এক ভুল ইতিহাস। স্প্রে পেইন্টার রামলাল সমস্ত ভুলগুলোতে ওয়েল্ডিং, ডেন্টিং আর স্প্রে করে যাচ্ছে। আসলে মেরামতি ছাড়া টিকে থাকা যায়না জেনে সকলেই রামলালের দ্বারস্থ হয়। আজ হবে কাল হবে করে খদ্দেরদের ঝুলিয়ে রাখা ছাড়া তারই বা কী করার আছে ?

খদ্দের ঝুলিয়ে রাখতে পারাটাই ব্যাবসার মূল চাবিকাঠি । পেটে অং বং কং কালির অক্ষর কিছু না থাকলেও, এই চাবিকাঠিটি জানা থাকলে আটকায় কার সাধ্যব! আপনি থাকছেন স্যার। অতএব আছেন। দুই দিকে দুই রুই কাতলা ভেসে উঠেছেন।

জলের তলায় কী ?

এই প্রশ্নে গ্রাম গঞ্জে এখনও উত্তর আসে ,-একটু আস্তে চল না ঠাকুরঝি । গ সেই আস্তে চলা গরুর গাড়ির সওয়ার । চলছে তো চলছেই । চলতে চলতে গাধা হচ্ছে , গাড়ল হচ্ছে । জেট গতির কাছে গাইয়া হয়ে হাত কচলাচ্ছে । আর ভার্চুয়ালের দুনিয়ায় তখন গ থেকে গ্লোবাল হয়ে, ঘোড়েল হয়ে উঠছে দুনিয়া ।

মূর্ধণ্য ণ জানে, ঞ-দের দুনিয়া থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে সে। ঞ থেকে মূর্ধণ্য ণ অবধি দূরত্বে একটিই অগ্রগতি এক্সপ্রেস। চুনোপুঁটিরা এই এক্সপ্রেসে উঠিতে পারে নাই। তারা মালগাড়ির অপেক্ষায় …..

চক্রবর্তী ঘুড়ির সুতায় মাঞ্জা দিতে দিতে বললেন, ‘বয়ের কাঁধে না চড়লে তোমাদের স-এর স্বাধীনতাই আসে না বাবাসকল। খুব যে কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় করছো ! বলি, দীর্ঘ-ঈ ছাতা না ধরলে ভিজে একসা হয়ে যাবে না ?

ঞ-রা কিছুই না বুঝে , এমন সময় বেমক্কা হাততালি দিয়ে উঠলে, গ-জ মার্কা থাম চারটি কেঁপে উঠল। আজ মেঘলা। বজ্র ও বিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা জানিয়া মূর্ধণ্য ছাতার খোঁজ করতে লাগল। নাজারতের ন-বাবু ছাতার সর্বজনগ্রাহ্য রঙ নিয়া ব্যস্ত। কিছুতেই মনস্থির করতে পারে না । তখনই হিন্দি সিনেমার পর্দা জুড়ে ঘোড়ার চিঁহিঁ ডাক, “ম্যায় আজাদ হু……” !!!

চক্রবর্তী আর কথা বলে না। চুপচাপ বাদাম ভাঙে আর সিনেমা দেখে।

1 টি মন্তব্য: