বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

ধারাবাহিক - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার



৩৪।


দিনদুনিয়ায় দেশকালের ওপর কখন যেন আন্ধার নেমে আসে। লম্ফ জ্বলে ওঠে কচুঝোপে জোনাকআলোর জোনাই। ধল্লা নদীর চরে কাশিয়াবাড়িত শেয়ালেরা ডেকে ওঠে। পাকশালে আন্ধনঘরত রেহেনা খালার তৎপরতা শুরু হয়। দাওয়ায় বসে তামাক টানে ইদ্রিশ মোল্লা। তামাকের রসে পুরুষ্টু হতে থাকে শরীরমন। অর্ধচেতনায় তখন জোতজমি কাকিন্যার বড়বিল নীলসাগর রসুনভাজার গন্ধ।নিকাহের খোয়াব ভাসতে থাকে। একসময় খোয়াব ভাঙেও রেহেনা খালার গুনগুন বিয়ের গীতের টানা সুরের লহরীতে। জোতজমির মতো জোতজমি পড়ে থাকে আর চারপাশে কেবল আহাজারি। রুহের জন্য মাগফেরাত।



৩৫।

হাড়িত নাই ভাত
মাথাত দিনু হাত

বনাঞ্চল চরাঞ্চল-এর ভিতর হাওড় বিল কুড়া দহের ভিতর উদ্দেশ্যহীন অনিবার্যতায় নৌকো ও মাঝির সম্পর্কের মতোন দোতরা ও গীদালের সখ্যতার মতোন জীবন সংকোচনপ্রসারনের ধন্ধধোঁয়ায় ফাঁকা ফসলহীন শীতমাঠে নেমে এসেও নির্জনতা খুঁজতে গিয়ে চিরকালীন বিষাদ নিয়ে জেগে উঠতে থাকে শোক ও শ্লোকবাহিত। ধান কাটার মরসুমে কালবৈশাখীর তাণ্ডবলীলার অপরূপ দৃশ্যসুখ স্মৃতিতে বহন করতে থাকা রূপকান্ত অধিকারী তখন ঘুমের ভিতর পাশ ফেরে আর বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে বাওকুমটা বাতাসের যত গান। গল্পের পাকে পাকে জড়িয়ে যাবার মতন।

২টি মন্তব্য:

  1. আঞ্চলিক লোক কখন যেন মাঠ, জঙ্গল, প্রান্তর পেরিয়ে চিন্তার গভীরে ঢুকে পড়লো। মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করল।
    শুভেচ্ছা প্রিয় সুবীর কে।
    এ কলম হৃদয়ে রাখলাম।

    উত্তরমুছুন
  2. সুন্দর লাগলো এঁকে যাওয়া চিত্রপট ...শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন