সংস্কার
অরিন্দম চন্দ্র
“সংস্কার” শব্দটির একটি আলাদা দ্যোতনা রয়েছে আমাদের মনে।শব্দটির অভিঘাত আমাদের নিয়ে যায় কয়েক শতক আগে যখন রামমোহন রায় বা বিদ্যাসাগর বা হেয়ার সাহেব বা ডিরোজিও সাহেবের নেতৃত্বে আমাদের দেশের শিক্ষা বা সমাজ নীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছিল।আজ ২১ শতকে এসে আমরা নতুন করে যে “সংস্কার” শব্দটি দেখি তার অভিঘাতে শুধু শিক্ষা নয়,এ দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে আরো একটি পরিবর্তন এসেছে।কিন্তু প্রশ্ন কার জন্য এই “সংস্কার” ??
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের অর্থমন্ত্রী হয়ে দেশের “হাল” ধরতে প্রায় বিশ বছর আগে ব্যাপক অর্থনৈতিক “সংস্কার” কর্মসূচী ঘোষণা করেন তার পর থেকে একের পর রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প বিক্রী হতে থাকে,দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ জলের দরে দেশী-বিদেশী রাজপ্রভুদের করায়ত্ব হয়,দেশের পরিষেবা ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয় অবাধে।ঠিক সেই সময়ে ধুয়ো তোলা হয় বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশে দেশের অর্থনীতি চাংগা হবে,বেকারী কমবে,মানুষের আয় বাড়বে।এবং সাথে আসে TINA FACTOR ---THERE IS NO ALTERNATIVE...আন্তর্জাতিক মূদ্রা কোষ,বিশ্বব্যাঙ্ক আর বিশ্ববানিজ্য সংস্থার চাপে দেশের মানুষকে গেলানো হয় “সংস্কারের” নয়া দাওয়াই।অবাক হবার কিছুই থাকে না যখন প্রধান বিরোধী দল ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে একই জুতোয় পা গলায়---রাজা আসে যায়,লাল জামা গায়,নীল জামা গায়,রং পাল্টায়,দিন পাল্টায় না...
আজ দেশের সামনে আরেক নতুন সঙ্কট উপস্থিত।রাজপুরুষদের ধোঁকার টাটিটি এবার পুরো উন্মুক্ত।২০০৮ সালের পর থেকে দুনিয়া জোড়া আর্থিক সঙ্কটে এই দেশ কিছুটা হলেও INSULATED ছিল তার মূল কারণ এ দেশে এখনো কিছু রক্ষাকবচ সাংবিধানিক পথে দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।যেমন ব্যাঙ্ক বা বীমা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রয়ত্ব উদ্যোগের প্রাধান্য বা বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশ স্বত্তেও এ’দুটি ক্ষেত্রে এখনও তেমন কিছু বিপদ ঘটাতে পারে নি,কারণ ঐ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ।২০০৮ এ আমেরিকা সহ প্রায় সব ধনী দেশগুলি তাদের দেশে যে আর্থিক সুবিধার প্যাকেজ দান করে তার জন্য এদেশের বাজারও সুফল পায়।আজ যেই মাত্র ডলার চাঙ্গা হয়েছে দেশের বাজার থেকে ডলার উধাও।প্রজাপতি পুঁজি ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে মধুর সন্ধানে যাবে এটাই এই পুঁজির নিয়ম।ফলতঃ,ডলার এর দাম এক টাকা বাড়লে দেশের ৮৮০০ কোটি গলে যায়,তেলের দাম বাড়ে,রাজকোষ খালি হয়ে যায় আর কি!!!রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর মাঝে প্রায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ,আমদানী করা হল নব্যযুবক এক গভর্নরকে,তিনি এসেই কিছু নিদান দিলেন,শেয়ার বাজার উঠলো,ডলারের দাম কমল,রাজপুরুষগণ ধন্য ধন্য শুরু করলেন এবারকার মত বচ গ্যায়া শালা।
কিন্তু সমস্যার গোড়ায় গলদটাই রইল অধরা।বিশ বছরের সংস্কার এই দেশকে আজ এমন এক যায়গায় খাড়া করে দিয়েছে যেখানে সামান্য সমস্যা হলেই দেশের মাল-জানের হেফাজতের দায়িত্বের লোকেরা আবারো “সংস্কার” করতে উদ্যত হন।অস্যার্থে,আবার কিছু রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের জলের দরে বিক্রী,আরো কিছু মানুষের পেটে লাথি,আরো কিছু নেতার পকেট ভারী।ভাবনার কথা,এই টালমাটাল সময়ের মধ্যেই সরকার পাশ করে নিয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন,পেনশন আইন যার মধ্যে অন্যতম।আজ দেশের যে কয়জন হাতে গোনা সাধারণ মানুষ এই সামাজিক সুরক্ষা কবচের আওতায় পড়েন আগামীতে তাদের রক্ত জল করা টাকা খাটবে শেয়ার বাজারে।সাথে রয়েছে আগামী অধিবেশনেই বীমা ক্ষেত্রে আরো বিদেশী পুঁজির রাস্তা খোলার অঙ্গীকার,সোজা বাংলায় একুল ওকূল দুই কুলই যাবে।
লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে দেশের মিডিয়ার কল্যানে “রাগা” বনাম “নমো”-র তাল ঠোকাঠুকি বাড়ছে।একজন বংশমর্যাদায় রাজপুরুষ,আরেক জন দক্ষিণপন্থার এই মুহুর্তে সব চেয়ে বড় মুখ।কিন্তু কোথাও এঁরা একবারের জন্য কবুল করছেন না ক্ষমতায় এলে এই “সংস্কার” কর্মসূচীকে বন্ধ করব।কারণ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ী যেতে গেলে ওয়াশিংটন হয়ে যাওয়াটাই আজ দস্তুর।আশা জাগে,এইবার অন্ততঃ নেতা নয় নীতির ভিত্তিতে নতুন সরকার আসুক, “সংস্কার” শব্দটি তার প্রাপ্য যথার্থ দ্যোতনা পাক।
“সংস্কার” শব্দটির একটি আলাদা দ্যোতনা রয়েছে আমাদের মনে।শব্দটির অভিঘাত আমাদের নিয়ে যায় কয়েক শতক আগে যখন রামমোহন রায় বা বিদ্যাসাগর বা হেয়ার সাহেব বা ডিরোজিও সাহেবের নেতৃত্বে আমাদের দেশের শিক্ষা বা সমাজ নীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছিল।আজ ২১ শতকে এসে আমরা নতুন করে যে “সংস্কার” শব্দটি দেখি তার অভিঘাতে শুধু শিক্ষা নয়,এ দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে আরো একটি পরিবর্তন এসেছে।কিন্তু প্রশ্ন কার জন্য এই “সংস্কার” ??
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের অর্থমন্ত্রী হয়ে দেশের “হাল” ধরতে প্রায় বিশ বছর আগে ব্যাপক অর্থনৈতিক “সংস্কার” কর্মসূচী ঘোষণা করেন তার পর থেকে একের পর রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প বিক্রী হতে থাকে,দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ জলের দরে দেশী-বিদেশী রাজপ্রভুদের করায়ত্ব হয়,দেশের পরিষেবা ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয় অবাধে।ঠিক সেই সময়ে ধুয়ো তোলা হয় বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশে দেশের অর্থনীতি চাংগা হবে,বেকারী কমবে,মানুষের আয় বাড়বে।এবং সাথে আসে TINA FACTOR ---THERE IS NO ALTERNATIVE...আন্তর্জাতিক মূদ্রা কোষ,বিশ্বব্যাঙ্ক আর বিশ্ববানিজ্য সংস্থার চাপে দেশের মানুষকে গেলানো হয় “সংস্কারের” নয়া দাওয়াই।অবাক হবার কিছুই থাকে না যখন প্রধান বিরোধী দল ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে একই জুতোয় পা গলায়---রাজা আসে যায়,লাল জামা গায়,নীল জামা গায়,রং পাল্টায়,দিন পাল্টায় না...
আজ দেশের সামনে আরেক নতুন সঙ্কট উপস্থিত।রাজপুরুষদের ধোঁকার টাটিটি এবার পুরো উন্মুক্ত।২০০৮ সালের পর থেকে দুনিয়া জোড়া আর্থিক সঙ্কটে এই দেশ কিছুটা হলেও INSULATED ছিল তার মূল কারণ এ দেশে এখনো কিছু রক্ষাকবচ সাংবিধানিক পথে দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।যেমন ব্যাঙ্ক বা বীমা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রয়ত্ব উদ্যোগের প্রাধান্য বা বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশ স্বত্তেও এ’দুটি ক্ষেত্রে এখনও তেমন কিছু বিপদ ঘটাতে পারে নি,কারণ ঐ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ।২০০৮ এ আমেরিকা সহ প্রায় সব ধনী দেশগুলি তাদের দেশে যে আর্থিক সুবিধার প্যাকেজ দান করে তার জন্য এদেশের বাজারও সুফল পায়।আজ যেই মাত্র ডলার চাঙ্গা হয়েছে দেশের বাজার থেকে ডলার উধাও।প্রজাপতি পুঁজি ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে মধুর সন্ধানে যাবে এটাই এই পুঁজির নিয়ম।ফলতঃ,ডলার এর দাম এক টাকা বাড়লে দেশের ৮৮০০ কোটি গলে যায়,তেলের দাম বাড়ে,রাজকোষ খালি হয়ে যায় আর কি!!!রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর মাঝে প্রায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ,আমদানী করা হল নব্যযুবক এক গভর্নরকে,তিনি এসেই কিছু নিদান দিলেন,শেয়ার বাজার উঠলো,ডলারের দাম কমল,রাজপুরুষগণ ধন্য ধন্য শুরু করলেন এবারকার মত বচ গ্যায়া শালা।
কিন্তু সমস্যার গোড়ায় গলদটাই রইল অধরা।বিশ বছরের সংস্কার এই দেশকে আজ এমন এক যায়গায় খাড়া করে দিয়েছে যেখানে সামান্য সমস্যা হলেই দেশের মাল-জানের হেফাজতের দায়িত্বের লোকেরা আবারো “সংস্কার” করতে উদ্যত হন।অস্যার্থে,আবার কিছু রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের জলের দরে বিক্রী,আরো কিছু মানুষের পেটে লাথি,আরো কিছু নেতার পকেট ভারী।ভাবনার কথা,এই টালমাটাল সময়ের মধ্যেই সরকার পাশ করে নিয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন,পেনশন আইন যার মধ্যে অন্যতম।আজ দেশের যে কয়জন হাতে গোনা সাধারণ মানুষ এই সামাজিক সুরক্ষা কবচের আওতায় পড়েন আগামীতে তাদের রক্ত জল করা টাকা খাটবে শেয়ার বাজারে।সাথে রয়েছে আগামী অধিবেশনেই বীমা ক্ষেত্রে আরো বিদেশী পুঁজির রাস্তা খোলার অঙ্গীকার,সোজা বাংলায় একুল ওকূল দুই কুলই যাবে।
লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে দেশের মিডিয়ার কল্যানে “রাগা” বনাম “নমো”-র তাল ঠোকাঠুকি বাড়ছে।একজন বংশমর্যাদায় রাজপুরুষ,আরেক জন দক্ষিণপন্থার এই মুহুর্তে সব চেয়ে বড় মুখ।কিন্তু কোথাও এঁরা একবারের জন্য কবুল করছেন না ক্ষমতায় এলে এই “সংস্কার” কর্মসূচীকে বন্ধ করব।কারণ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ী যেতে গেলে ওয়াশিংটন হয়ে যাওয়াটাই আজ দস্তুর।আশা জাগে,এইবার অন্ততঃ নেতা নয় নীতির ভিত্তিতে নতুন সরকার আসুক, “সংস্কার” শব্দটি তার প্রাপ্য যথার্থ দ্যোতনা পাক।
besh onupranito hocchi... e dhoroner nobotoro udyog joto hobe toto beshi kobita porte parbo.. tnx kortipokkho ke ..
উত্তরমুছুনDHANYOBAD
মুছুন