কালের আড়ালে শ্যামাচরণ
মিলন চট্টোপাধ্যায়
বাঙ্গালী সতত গর্ব করে তার ইতিহাস নিয়ে , চায়ের পেয়েলায় তুফান তুলতেও আমাদের জুড়ি মেলা ভার । আবার ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা কতটা পারঙ্গম তাও আমাদের জানা এবং এক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞানপাপী বলাটাও অত্যুক্তি নয় ।
আজ থেকে দু'শো বছর আগে বিহারের পূর্ণিয়াতে এমন একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যাঁকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বললেও কম বলা হয় । কিন্তু আমরা তাঁর কিছুই প্রায় জানিনা । যে জাতি বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমের নামে মাথা নিচু করে তাদের এমন বিস্মৃতি শুধু হতাশাজনকই নয় লজ্জাকর'ও বটে ।
সন - ১৮১৪ ( ১২২০ বঙ্গাব্দ , ৮ই চৈত্র , রবিবার ) , বিহারের রানি ইন্দুমতি'র দেওয়ান , চৈতন্য দীক্ষাগুরু কেশব ভারতী'র উত্তরপুরুষ হরনারায়ণ সরকারের ঘরে বেজে উঠল মঙ্গলশঙ্খ , বাবা হলেন তিনি । পুত্রের নাম রাখা হল শ্যামাচরণ । আদরে - আহ্লাদে বেড়ে উঠতে লাগলেন তিনি । কিন্তু সৌভাগ্য কারো বেশীদিন থাকে না , মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পিতৃহারা হলেন তিনি । মায়ের হাত ধরে ফিরে এলেন পিতৃগৃহ নদীয়া জেলার মামজোয়ান গ্রামে । সেখানে একটিমাত্র পাঠশালা , তেমন পড়াশোনার সুবিধা নেই ; তবুও নিরুপায় হয়েই শিক্ষালাভ হতে থাকলো পাঠশালায় । চোদ্দ বছর বয়সে এক জ্ঞাতির শ্রাদ্ধ উপলক্ষে কৃষ্ণনগর গেলেন শ্যামাচরণ, সেখানেই তাঁর বুদ্ধিমত্তা'র পরিচয় পেয়ে তাঁকে নিজের বাড়িতে থেকে পড়তে বললেন কাকা হরচন্দ্র সরকার । হাতে চাঁদ পেলেন শ্যামাচরণ , সেখানে তাঁকে পড়াতে শুরু করলেন রামতনু লাহিড়ী'র জ্ঞাতি শ্রীনাথ লাহিড়ী । অল্পদিনের মধ্যেই ফারসি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করলেন শ্যামাচরণ । ইতিমধ্যে রামতনু লাহিড়ী'র সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে তাঁর । কুড়ি বছর বয়সে কোলকাতায় এসে পিতৃবন্ধু রীড সাহেবের অধীনে ১০ টাকা বেতনে মুন্সী পদে নিযুক্ত হলেন । কিছুদিন পরে একটি মামলায় রীড সাহেবের হয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেবেন না বলে চাকরী ছেড়েও দিলেন । এইসময় রামতনু লাহিড়ী'র চেষ্টায় জোসেফ কোম্পানির অফিস ইনচার্জ জোসেফ সাহেবকে হিন্দি পড়ানোর জন্য মাসিক কুড়ি টাকায় নিযুক্ত হলেন , তখন তাঁর বয়স বাইশ বছর , এই সময়েই তিনি রামতনু লাহিড়ী'র কাছে ইংরাজি পড়তে শুরু করলেন । ইতিমধ্যে একদিন অশুদ্ধ উর্দু বলে উপহাসিত হওয়ায় তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন উর্দু শিখবেন এবং ১৮৩৭ সালের আগেই হিন্দি, ইংরাজি ও উর্দুতে পারঙ্গম হয়ে উঠলেন । এইসময়েই তিনি ল্যাটিন, গ্রীক, ইটালিয়ান ভাষা শিখতেও শুরু করলেন ।
১৮৩৭ সালে , কোলকাতা মাদ্রাসায় বাংলা পণ্ডিত হিসাবে মাসিক পঁচিশ টাকায় নিয়োজিত হলেন শ্যামাচরণ , পরে তা বেড়ে মাসিক চল্লিশ টাকা হয় । এরপর ১৮৪২ সালে কোলকাতা সংস্কৃত কলেজে মাসিক সত্তর টাকায় দ্বিতীয় ইংরাজি শিক্ষক রূপে যোগদান করেন । ছ'বছর পর তিনি সদর দেওয়ানি আদালতে পেশকার রূপে নিয়োজিত হন , এইসময় তাঁর খ্যাতি অনুবাদক হিসেবে ছড়িয়ে পরে এবং তখন তিনি মাসিক চারশ টাকায় এই আদালতে প্রধান অনুবাদক হিসেবে যুক্ত হন ( ১৮৫০ ) । ১৮৫৭ সালে সুপ্রীম কোর্ট তাকে 'Chief interpreter' হিসেবে মাসিক ছয়শ টাকায় নিয়োগ করে । বাঙ্গালীদের মধ্যেই শ্যামাচরণ'ই প্রথম এই পদ অলঙ্কৃত করেন । ১৮৭২ সালে তিনি ' Tagore law lecturer ' মনোনীত হন । এই ঘটনাটি ১৮ ই জুলাই ১৮৭২ এর অমৃতবাজার পত্রিকায় ছাপা হয় । এই পদের সম্মানদক্ষিণা ছিল দশহাজার টাকা । এই সময় মুসলমান আইন নিয়ে তিনি যে বক্তৃতা দেন তা ১৮৭৩-৭৪ সালে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় । এরপর ১৮৭৪ সালে শ্যামাচরণ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন যা ৬ ই মার্চ, ১৮৭৪ এ ভারত সংস্কারক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এ প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি ( ২৬ শে জুলাই ১৮৭৬ ) ।
১৮৫৮ সালে তিনি এক বৈপ্লবিক কাজ করেন , নিজের গ্রাম মামজোয়ানে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরাজি- বাংলা অবৈতনিক বিদ্যালয়, এছাড়াও প্রচুর জনহিতকর কাজও তিনি এসময় করেন । মা যাতে গ্রামের বাড়ি থেকে ট্রেন দেখতে পান সেজন্য তিনি মামজোয়ান থেকে বাদকুল্লা পর্যন্ত একদম সোজা একটি রাস্তা নির্মাণ করান যা ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ - মাতৃভক্তির এ এক অসামান্য নিদর্শন । এই রাস্তাটি বর্তমানে ' শ্যামাচরণ সরকার রোড 'নামে খ্যাত । ১৮৮২ সালের ১৪ ই জুলাই শ্যামাচরণ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
শ্যামাচরণ শর্ম সরকারের লেখা কিছু বই ~
(১) Introduction to the Bengali Language adapted to students who know English - In two parts BY a Native.
(২) বাঙ্গলা ব্যাকরণ
(৩) ব্যবস্থা দর্পণ
(৪) THE MUHAMMADAN LAW : being a digest of the law applicable especially to the sunnis of India, Calcutta 1873, P.P 567 , TAGORE LAW LECTURES, 1873
(৫) THE MUHAMMADAN LAW : being a digest of the sunni code in part and lmaniyah code, Calcutt 1875 , TAGORE LAW LECTURES, 1874
( এই দুটি বই প্রথম মুসলিম আইন গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত । এইজন্য এখনও একে 'SHYAMACHARAN LAW ' বলে অভিহিত করা হয় । )
(৬ ) সিরাজিয়া
(৭) VYAVASTHA CHANDRIKA, a digest of Hindu Law as current in all the provinces of India, Except Bengal proper vol. 1. 1878, vol. 11.1880
(৮) পাঠ্য সার ।
(৯) নীতি দর্শন ।
শ্যামাচরণই একমাত্র ,যার বই মস্কো লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে । প্রথম আইন গ্রন্থ প্রণেতা, এখনও মুসলিম আইন নিয়ে কথা বলতে ‘আমরা শ্যামাচরণ ল‘এর শরণাপন্ন হই ।প্রথম সিনট্যাক্স সম্বলিত বাংলা ব্যাকরণ প্রণেতা , পরপর পাঁচবার সুপ্রীমকোর্টের 'Chief interpreter' , প্রথম বাঙালি হিসেবে ' Tagore law lecturer ' ( প্রসন্নকুমার ঠাকুরের নামে এই পদ ) ।
শ্যামাচরণের ভাগ্যে বহু অপবাদ জুটেছিল , তারমধ্যে অন্যতম হল তিনি নীল বিদ্রোহের সময় চুপ ছিলেন । আজ জানা যাচ্ছে - দীনবন্ধু মিত্র'র 'নীলদর্পণ' নাটকের অনুবাদ করেছিলেন শ্যামাচরণ ' BY a Native ' নামে যা তৎকালীন আরেক বিখ্যাত পুরুষ ' বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ' , মধুসূদন দত্ত'র লেখা বলে প্রচার করেছিলেন ! যদিও স্বয়ং দীনবন্ধু মিত্র , তাঁর 'সুরধনী' কাব্যে লিখেছিলেন -
আরেক সম্মানীয় মানুষ ' বিদ্যাসাগর ' , শ্যামাচরণের ব্যাকরণ না পড়েই ' ফুঃ ফুঃ ' করে তাচ্ছিল্য করে সরিয়ে রেখেছিলেন ! ভাবতে অবাক লাগে যাকে আমরা জানি 'দয়ারসাগর' রূপে তিনিও এমন করেছিলেন ! যদিও পরবর্তীতে বিদ্যাসাগর স্বীকার করেছিলেন তাঁর ভুল হয়েছিল ।
আজ এই সময়ে আমাদের উচিৎ এমন এক মানুষের জন্য কিছু অন্তত করা , যাতে এতদিন যে অনাদরের ধুলো পড়েছে তাঁর গায়ে তা কিছুটা হলেও মোছা যায় ।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি -
১। শ্যামাচরণ সরকারের জীবনচরিত / বেচারাম চট্টোপাধ্যায়
২। 'গোরাগাঙনি'
৩। স্মারক পত্র
( মহাত্মা শ্যামাচরণ শর্ম সরকার দ্বিশতবর্ষ উদ্যাপন সমিতি , শান্তিপুর শাখা কমিটি )
বিশেষ কৃতজ্ঞতা -
বাঙ্গালী সতত গর্ব করে তার ইতিহাস নিয়ে , চায়ের পেয়েলায় তুফান তুলতেও আমাদের জুড়ি মেলা ভার । আবার ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা কতটা পারঙ্গম তাও আমাদের জানা এবং এক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞানপাপী বলাটাও অত্যুক্তি নয় ।
আজ থেকে দু'শো বছর আগে বিহারের পূর্ণিয়াতে এমন একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যাঁকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বললেও কম বলা হয় । কিন্তু আমরা তাঁর কিছুই প্রায় জানিনা । যে জাতি বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমের নামে মাথা নিচু করে তাদের এমন বিস্মৃতি শুধু হতাশাজনকই নয় লজ্জাকর'ও বটে ।
সন - ১৮১৪ ( ১২২০ বঙ্গাব্দ , ৮ই চৈত্র , রবিবার ) , বিহারের রানি ইন্দুমতি'র দেওয়ান , চৈতন্য দীক্ষাগুরু কেশব ভারতী'র উত্তরপুরুষ হরনারায়ণ সরকারের ঘরে বেজে উঠল মঙ্গলশঙ্খ , বাবা হলেন তিনি । পুত্রের নাম রাখা হল শ্যামাচরণ । আদরে - আহ্লাদে বেড়ে উঠতে লাগলেন তিনি । কিন্তু সৌভাগ্য কারো বেশীদিন থাকে না , মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পিতৃহারা হলেন তিনি । মায়ের হাত ধরে ফিরে এলেন পিতৃগৃহ নদীয়া জেলার মামজোয়ান গ্রামে । সেখানে একটিমাত্র পাঠশালা , তেমন পড়াশোনার সুবিধা নেই ; তবুও নিরুপায় হয়েই শিক্ষালাভ হতে থাকলো পাঠশালায় । চোদ্দ বছর বয়সে এক জ্ঞাতির শ্রাদ্ধ উপলক্ষে কৃষ্ণনগর গেলেন শ্যামাচরণ, সেখানেই তাঁর বুদ্ধিমত্তা'র পরিচয় পেয়ে তাঁকে নিজের বাড়িতে থেকে পড়তে বললেন কাকা হরচন্দ্র সরকার । হাতে চাঁদ পেলেন শ্যামাচরণ , সেখানে তাঁকে পড়াতে শুরু করলেন রামতনু লাহিড়ী'র জ্ঞাতি শ্রীনাথ লাহিড়ী । অল্পদিনের মধ্যেই ফারসি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করলেন শ্যামাচরণ । ইতিমধ্যে রামতনু লাহিড়ী'র সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে তাঁর । কুড়ি বছর বয়সে কোলকাতায় এসে পিতৃবন্ধু রীড সাহেবের অধীনে ১০ টাকা বেতনে মুন্সী পদে নিযুক্ত হলেন । কিছুদিন পরে একটি মামলায় রীড সাহেবের হয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেবেন না বলে চাকরী ছেড়েও দিলেন । এইসময় রামতনু লাহিড়ী'র চেষ্টায় জোসেফ কোম্পানির অফিস ইনচার্জ জোসেফ সাহেবকে হিন্দি পড়ানোর জন্য মাসিক কুড়ি টাকায় নিযুক্ত হলেন , তখন তাঁর বয়স বাইশ বছর , এই সময়েই তিনি রামতনু লাহিড়ী'র কাছে ইংরাজি পড়তে শুরু করলেন । ইতিমধ্যে একদিন অশুদ্ধ উর্দু বলে উপহাসিত হওয়ায় তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন উর্দু শিখবেন এবং ১৮৩৭ সালের আগেই হিন্দি, ইংরাজি ও উর্দুতে পারঙ্গম হয়ে উঠলেন । এইসময়েই তিনি ল্যাটিন, গ্রীক, ইটালিয়ান ভাষা শিখতেও শুরু করলেন ।
১৮৩৭ সালে , কোলকাতা মাদ্রাসায় বাংলা পণ্ডিত হিসাবে মাসিক পঁচিশ টাকায় নিয়োজিত হলেন শ্যামাচরণ , পরে তা বেড়ে মাসিক চল্লিশ টাকা হয় । এরপর ১৮৪২ সালে কোলকাতা সংস্কৃত কলেজে মাসিক সত্তর টাকায় দ্বিতীয় ইংরাজি শিক্ষক রূপে যোগদান করেন । ছ'বছর পর তিনি সদর দেওয়ানি আদালতে পেশকার রূপে নিয়োজিত হন , এইসময় তাঁর খ্যাতি অনুবাদক হিসেবে ছড়িয়ে পরে এবং তখন তিনি মাসিক চারশ টাকায় এই আদালতে প্রধান অনুবাদক হিসেবে যুক্ত হন ( ১৮৫০ ) । ১৮৫৭ সালে সুপ্রীম কোর্ট তাকে 'Chief interpreter' হিসেবে মাসিক ছয়শ টাকায় নিয়োগ করে । বাঙ্গালীদের মধ্যেই শ্যামাচরণ'ই প্রথম এই পদ অলঙ্কৃত করেন । ১৮৭২ সালে তিনি ' Tagore law lecturer ' মনোনীত হন । এই ঘটনাটি ১৮ ই জুলাই ১৮৭২ এর অমৃতবাজার পত্রিকায় ছাপা হয় । এই পদের সম্মানদক্ষিণা ছিল দশহাজার টাকা । এই সময় মুসলমান আইন নিয়ে তিনি যে বক্তৃতা দেন তা ১৮৭৩-৭৪ সালে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় । এরপর ১৮৭৪ সালে শ্যামাচরণ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন যা ৬ ই মার্চ, ১৮৭৪ এ ভারত সংস্কারক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এ প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি ( ২৬ শে জুলাই ১৮৭৬ ) ।
১৮৫৮ সালে তিনি এক বৈপ্লবিক কাজ করেন , নিজের গ্রাম মামজোয়ানে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরাজি- বাংলা অবৈতনিক বিদ্যালয়, এছাড়াও প্রচুর জনহিতকর কাজও তিনি এসময় করেন । মা যাতে গ্রামের বাড়ি থেকে ট্রেন দেখতে পান সেজন্য তিনি মামজোয়ান থেকে বাদকুল্লা পর্যন্ত একদম সোজা একটি রাস্তা নির্মাণ করান যা ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ - মাতৃভক্তির এ এক অসামান্য নিদর্শন । এই রাস্তাটি বর্তমানে ' শ্যামাচরণ সরকার রোড 'নামে খ্যাত । ১৮৮২ সালের ১৪ ই জুলাই শ্যামাচরণ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
শ্যামাচরণ শর্ম সরকারের লেখা কিছু বই ~
(১) Introduction to the Bengali Language adapted to students who know English - In two parts BY a Native.
(২) বাঙ্গলা ব্যাকরণ
(৩) ব্যবস্থা দর্পণ
(৪) THE MUHAMMADAN LAW : being a digest of the law applicable especially to the sunnis of India, Calcutta 1873, P.P 567 , TAGORE LAW LECTURES, 1873
(৫) THE MUHAMMADAN LAW : being a digest of the sunni code in part and lmaniyah code, Calcutt 1875 , TAGORE LAW LECTURES, 1874
( এই দুটি বই প্রথম মুসলিম আইন গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত । এইজন্য এখনও একে 'SHYAMACHARAN LAW ' বলে অভিহিত করা হয় । )
(৬ ) সিরাজিয়া
(৭) VYAVASTHA CHANDRIKA, a digest of Hindu Law as current in all the provinces of India, Except Bengal proper vol. 1. 1878, vol. 11.1880
(৮) পাঠ্য সার ।
(৯) নীতি দর্শন ।
শ্যামাচরণই একমাত্র ,যার বই মস্কো লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে । প্রথম আইন গ্রন্থ প্রণেতা, এখনও মুসলিম আইন নিয়ে কথা বলতে ‘আমরা শ্যামাচরণ ল‘এর শরণাপন্ন হই ।প্রথম সিনট্যাক্স সম্বলিত বাংলা ব্যাকরণ প্রণেতা , পরপর পাঁচবার সুপ্রীমকোর্টের 'Chief interpreter' , প্রথম বাঙালি হিসেবে ' Tagore law lecturer ' ( প্রসন্নকুমার ঠাকুরের নামে এই পদ ) ।
শ্যামাচরণের ভাগ্যে বহু অপবাদ জুটেছিল , তারমধ্যে অন্যতম হল তিনি নীল বিদ্রোহের সময় চুপ ছিলেন । আজ জানা যাচ্ছে - দীনবন্ধু মিত্র'র 'নীলদর্পণ' নাটকের অনুবাদ করেছিলেন শ্যামাচরণ ' BY a Native ' নামে যা তৎকালীন আরেক বিখ্যাত পুরুষ ' বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ' , মধুসূদন দত্ত'র লেখা বলে প্রচার করেছিলেন ! যদিও স্বয়ং দীনবন্ধু মিত্র , তাঁর 'সুরধনী' কাব্যে লিখেছিলেন -
আশা করা যায় , স্বয়ং নীলবিদ্রোহের অন্যতম রূপকার বিনাকারনে এই প্রশস্তি করেন নি । যদি শ্যামাচরণ নীলবিদ্রোহকে সমর্থন নাই করতেন তবে এই লেখা লিখিত হত কি ?" চলিতে চলিতে পরে চড়ি যে লহরী
দেখিলাম সুখে মামজোয়ানি নগরী
মামজোয়ানিরে তোর সার্থক জীবন,
দিয়াছ সমাজে শ্যামচরণ রতন ... "
আরেক সম্মানীয় মানুষ ' বিদ্যাসাগর ' , শ্যামাচরণের ব্যাকরণ না পড়েই ' ফুঃ ফুঃ ' করে তাচ্ছিল্য করে সরিয়ে রেখেছিলেন ! ভাবতে অবাক লাগে যাকে আমরা জানি 'দয়ারসাগর' রূপে তিনিও এমন করেছিলেন ! যদিও পরবর্তীতে বিদ্যাসাগর স্বীকার করেছিলেন তাঁর ভুল হয়েছিল ।
আজ এই সময়ে আমাদের উচিৎ এমন এক মানুষের জন্য কিছু অন্তত করা , যাতে এতদিন যে অনাদরের ধুলো পড়েছে তাঁর গায়ে তা কিছুটা হলেও মোছা যায় ।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি -
১। শ্যামাচরণ সরকারের জীবনচরিত / বেচারাম চট্টোপাধ্যায়
২। 'গোরাগাঙনি'
৩। স্মারক পত্র
( মহাত্মা শ্যামাচরণ শর্ম সরকার দ্বিশতবর্ষ উদ্যাপন সমিতি , শান্তিপুর শাখা কমিটি )
বিশেষ কৃতজ্ঞতা -
গোরাগাঙনি টীম,
দীনবন্ধু সরকার ,
গৌতম অধিকারী,
গৌতম চট্টোপাধ্যায়
এবং
নিজের কানজোড়া'কে ।
valo kaj korecho Milan da
উত্তরমুছুন