মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

গুচ্ছ কবিতা - রেজওয়ান তানিম

রেজওয়ান তানিম এ সময়ের একজন তরুণ কবি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা এই তরুণের আগ্রহের জায়গায় রয়েছে বাংলাভাষা ও বাংলা সাহিত্যের বিশ্বায়ন। কাব্যচর্চা তার লেখালেখির মূল প্রেরণা হলেও পাশাপাশি তিনি ছোট গল্প ও সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ রচনাতেও রেখেছেন দক্ষতার সাক্ষর।

প্রকাশিত গ্রন্থ: কাব্যগ্রন্থ মৌনমুখর বেলায় (প্রকাশক: জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন)
গল্প সংকলন: অবন্তি (প্রকাশক: ভাষাচিত্র প্রকাশন)
‘In Praise-In Memory-In Ink’ (আন্তর্জাতিক কবিতা সংকলন) Blurb Publication, Canada.
'In Our Own Words' (আন্তর্জাতিক কবিতা সংকলন)Blurb Publication, Canada.

সম্পাদিত গ্রন্থ: শাহবাগের সাথে সংহতি (ই-বুক)
সম্পাদিত পত্রিকা: লিটল ম্যাগ লিপি,
ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র অনুপ্রাণন

শাদা পরচুল অন্ধকার
রেজওয়ান তানিম
এক.

একটি লাস্যময়ী বান মাছ আমার স্বপ্নের ঘোরে ঢোকে শাদা পরচুল পড়ে। ওকে ধরতে গেলেই পিছলে যেতে থাকে সকাল, প্যাপিরাসে পেখম মেলে ঔপনিবেশিক অজাচার। ঘরোয়া অন্ধকারের কাছে রংধনু দাবি করে বোকা চাঁদ, যার জ্যোৎস্না জৌলুশ ফুরিয়েছে দিন পনের আগে। রাত পোড়ানোর গানে প্রাণ আনতে আজকাল তারাদের পাশাপাশি রংধনুবিলাসও প্রয়োজন হয়। যদিও আমন্ত্রণ ভাষ্যে কণ্ঠস্বরের রক্তাল্পতা স্পষ্ট, তবু তা গোপনের অযাচিত প্রচেষ্টা ক্ষুব্ধ করে রাতবাতাসের প্রবাহকে। জলের মৌচাকে মুখ গুজে পরে থাকা রংধনুটার আর আসা হয় না তাই চাঁদবিলাসীর সাহায্যার্থে। অন্ধকার, রাতের কোল জুড়ে বসে থাকে বিবর্ণতায়; ওদিকে আমার ঘরে ঢোকা বান মাছটার শাদা পরচুল খুলে বেড়িয়ে পড়ে অনাহূত বিষাদ।


দুই.

যে হাত ডালিমের দানা থেকে তুলে আনে সর্বনাশ, তার নাম প্রেম। সর্বনাশ ভেঙে সেই তৈরি করে পাথরের পথ, যদিও তার কোলে ঘুমোয় না নির্ভাবনার পুতুলঘোড়া। অহর্নিশ পা’র জুড়ে বুনে যায় অবিশ্বাস, ফণা তোলা রক্তের অসুখগুলো। সম্ভবত একারণেই ভেতর থেকে উঠে আসতে থাকে নি:স্বতম ক্রোধ, যাকে সহজেই নাম দেয়া যায় অভিযোজিত নীল রাজহাঁস। রাতের জন্মপ্রহরে যার নি:শ্বাস সমুদ্র থেকে বিষ খুঁজে নেয়, সেতো মুহূর্তেই অগ্রন্থিত বেদনার জন্মকথা লিখতে পারে আবীর উৎসবে। জোনাকি জানে, আঠারো শতকের বোতামে আটকে আছে আমার সর্বনাশের সন্ধ্যাটুকু, যার কোলে চড়ে বসেছে ব্যক্তিগত সূর্যোদয়। বিকট রাতগুলো কালো দাঁত খুলে বিশ্রী একটা হাসি দেয়; এতে করুণার উদ্রেক হয় ঈশ্বরের, উটকো ঝামেলা হিসেবে। অনি:শেষ উপকথার দানপাত্র থেকে জোটে কয়েক টুকরো বিষাদী বাণমাছ ও পুরোনো অবিশ্বাস। ওদের ঠোটে ছাইরঙ লিপস্টিক, আমাকে মনে করিয়ে দ্যায় কালকে মাথা থেকে খসে পড়েছে শাদা পরচুল, যা আসলে আগুনের সন্তান।


তিন.

পৃথিবীর নি:স্বতম শালিখ ঘুরে বেড়ায় একা একা আপেলের বনে। ছিঁড়তে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি মৃত বাণমাছ, ফলের বদলে ঝুলে আছে বিধ্বস্ত বাদামী শাখায়। বলে গেছে মায়ামৃগ, দু:সময়ের কোমরে বাধা খদ্দরের কাপড়! পায়ে অন্ধকারের ঘুঙুর পেঁচিয়ে উড়ে বেড়ায় পরিযায়ী অসুখ। ঠোঁটে উপেক্ষার কদম নিয়ে উড়ে যায় সোনালি রোদ্দুর, কোলে তার শাদা পরচুল অন্ধকার। বিপরীতমুখী আচরণে রাতের বুকে আলোর ঢল নামায়, ফলার মত ঝলকে ধাঁধিয়ে দেয় দুটো বুনোহাঁস চোখ। ওদিকে নেচে বেড়ায় আপেলের বন, কানে কানে বিবাগী জলের ধ্রুপদ নৃত্য সঙ্গত! ঝুলন্ত বাণ মাছগুলোর কাছে গেলেই শব্দরা অন্ধকারের কাছে আসে, নৃত্যের শেষ মুদ্রা আহ্লাদিত করে শুকিয়ে যাওয়া লাল পিপড়াকে। অবিশ্বাসের প্রভু! মরেনি রেশম মথ, এখনো জীবন তার পাতায় ও পতঙ্গ নামে।


চার.

শহরে অবিশ্বাসের রোদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুশো বছরের পুরোনো শকুন। পোড় খাওয়া নাগরিক বালুকণার গায়ে লেপ্টে আছে সম্ভ্রমহানির চিহ্ন। অস্থির হাওয়া কেউটের মত ফণা তুলে ঘোষণা করে, কুমিরের পেটে এখন শাদা পরচুল। পুরাণের এ্যাপোলো, বিষের বীণ বাজিয়ে তুমি চুষে নাও গোখরোর স্রাব; ভেবেছ কি কখনো, বেটে ময়ূর আয়নায় দেখেনা পেখমের উচ্ছ্বাস? অন্ধ বালকের পায়ে ভুল পথের শেকল, শেকড় ভুলে গেছে অসময়ের জাদুকর। স্টেজ পারফর্মেন্সে ভুল হয় তাসের জাদু, অবিশ্বাস পতিত হয় কালাজ্বরে। আলেয়ার কোলে হাত রেখে বেকে বসে বুটিকের দর্জি, আর বুনবে না জলের নীলানলে পাক খাওয়া এক দল বান মাছের চর্বিযুক্ত ওয়ালেট। গতরাতে বাতাস নামেনি শহরে, দেখে যাও জলের কৌটাগুলো কী আশ্চর্য রকম নিরুত্তাপ! ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে পাপের বোঝা, পিছু লেগেছে সেই পূর্বজন্ম থেকে; ভোর হতেই দূষিত করে ফেলতে চায়, আমার দৈনন্দিন পাটিগণিতের শহরটাকে।


পাঁচ.

টপলেস সূর্য তৃষাতুর সারমেয় বুকে চাবুক চালায়, জলাধারে জীবন খুঁজতে নামলেই কেন তেড়ে আসে মহাশোল? জানেনা পলিমাটি মন। বলতে পারে না কেউ, কেন কখনো কখনো নিরাশ্রয়ের সকালে আশাতুর বাবুইয়ের ঠোঁটে আধার তুলে দেয় সোনালি বাণমাছ। মনে পড়ে যায়, দীর্ঘস্থায়ী অবিশ্বাসের চিকিৎসায় ফল আসেনি এক বিপ্লবে। আরো কয়েকটি বিপ্লব বিষয়ক কর্মশালা আশু প্রয়োজন, পেলব কবিতা লেখবার স্বার্থে। উষ্ণতর হিংসায় পুড়তে থাকা পৃথিবীর মুখ, জমে যায় স্নেহহীন বরফকুঁচির বুকে গ্লেসিয়ার আর্ট হিসেবে। সবশেষে নিরবতা। প্রিয়ন্তিকার খয়েরি চুলে এখন গুজবের ঘরকন্না, একটু আগে ত্রিমুখী ক্রসফায়ার চালিয়েছে শাদা পরচুল। কেউ কেউ ঘুম যায় লাবণ্যের কবরে, দুগ্ধস্নান শেষ করে নেমে পড়ে কাদাজলে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একে জলহস্তীদের চারিত্রিক প্রবণতা হিসেবেই মনে করে বালু-ঘড়িতে মাপা আপেক্ষিক সময়।

৫টি মন্তব্য:

  1. উত্তরগুলি
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় আশরাফুল ভাই। শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইল কমেন্টের জন্যে

      মুছুন
  2. ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে পাপের বোঝা, পিছু লেগেছে সেই পূর্বজন্ম থেকে; ভোর হতেই দূষিত করে ফেলতে চায়, আমার দৈনন্দিন পাটিগণিতের শহরটাকে। রেজওয়ান তানিমের কবিতা গুলো ভালো লাগা এনে দিলো। ভাবিয়ে তুললো সময়। আমি আছি আমি ছিলাম ভাবতে ইচ্ছে করছে তখনও এখনও সব মিলিয়ে মহাকাল।

    উত্তরমুছুন