গুচ্ছ কবিতা
ওবায়েদ আকাশ
একদিন আমি
চাইলেই আমার সুখ-দুঃখের অংশীদার তুমিও হতে পারতে
চরম নিদানকালে অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে আমার
দুঃখের গলায় ছুরি আর সুখের পেটে বর্শা ঢুকিয়ে দিয়ে
রক্তাক্ত শরীরের পাশে চিৎকার জুড়ে দিতে
সে কথা ভুলেও জানতে না
আজকাল তোমার আমার মধ্যবর্তী ব্যাপকতা ভেঙে
আমাদের সুখ-দুঃখের অনর্থই দেখা হয়ে যায়
পরস্পর কোমর জড়িয়ে ধরেÑ খায়দায়, নাচে
শুধু জলের ওপর থেকে কচুরিপানা সরিয়ে ঝুপ করে
ডুব দিতে গেলেÑ কে কখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়
আমি ভেজা ভোরবেলা রৌদ্রের কাছে তোমাকে হারানোর
বেদনার কথা বলিÑ রৌদ্র তখন শিশিরে শিশিরে ঝরে
এইসব জাজ্বল্য শিশির ফ্রেমবন্দি করে
সদর রাস্তায় তুলে ধরে দেখি
কেউ আমাকে করুণা করে কণ্ঠহার খুলে দেয় কিনা
একদিন আমি সূর্যাস্তের ভেতর তোমাকে খুঁজতে বেরুবো
সে কখনো তোমার কাছে পৌঁছে দেবে বলে
আমাকে সঙ্গে না নিয়ে যেতেই পারে না
লাল রঙের ঘুড়ি
লাল রঙের ঘুড়ি, তুমি আকাশ থেকে কতদূর
ওপরে উঠলে তোমাকে আর খুঁজেই পাবো না?
কতদিন তোমার নাটাই ধরে বসে আছি
তোমার ভালবাসার দেখভাল করছি
আর সূর্যের তাপে পুড়ে-যাওয়া রঙ প্রকৃতি থেকে ভিক্ষে করে
সময় অসময় তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি
আজকাল কিছু জ্বরের ঘোরে এটাওটা বলি
অফিসে রাস্তায় যে যার গালে চড় বসিয়ে দেই
তখন তোমার নাটাইয়ের কথা একদমই মনে পড়ে না
তখন তোমাকে সে কী কসরত করে নিচে নেমে
আমাকে সারিয়ে তুলতে হয়, আবার
ওড়ার প্রস্তুতি নিতে দিনের পর দিন ক্ষয় হয়ে যায়
অথচ জানো আমিই তোমাকে অনন্ত আকাশে
অদৃশ্যলোকে একদিন মিলিয়ে দেব বলে প্রতিশ্রুত আছি
আবার যখন ফিরে আসবেÑ দেখবে, এই আমি রৌদ্রে পুড়ে
বৃষ্টিতে ভিজে তোমার জন্য কতটা প্রতীক্ষা করতে পারি
মধ্যরাতে আথালে-গোয়ালে গবাদিপশুদের অসম চিৎকার
তোমার আমার দূরত্বের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়
ভাবছি, এবার জ্বরাক্রান্ত হলে ভরা বর্ষার নদীতে ডুবে
তোমাকে জানিয়ে দেব অনন্ত মুক্তির কথা
সাধ আহ্লাদ
সাধ আহ্লাদ থেকে একটুআধটু মাদুরের ওপর
ছড়িয়ে নিয়ে বলি: তাণ্ডব চালিয়ে যাও
রণাঙ্গনে ক্লান্ত ঘর্মাক্ত দেহে ঊর্ধ্বমুখে জল খেতে চাইলে
কেউ একজন পাঠিয়ে দেবেন বৃষ্টির ধারা
আমাদের চেনা আকাশ থেকে শকুনেরা পালিয়ে গেছে কবে
চামচিকের ঠোঁটে খণ্ড খণ্ড মেঘ ঘরময় পায়চারি করে
বর্ষণের নিরাপত্তা নিয়ে কারো কোনো উৎকণ্ঠাই নেই
এ মুহূর্তে দীর্ঘদিনের জমানো সাধ আহ্লাদে ফাটল কিংবা
বিভাজন কারো কাম্য হতে পারে না
বিভাজিত ক্ষতে সবাই আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে
মাঝামাঝি বসে কালার বাঁশি সুর তুলতে পারে
হুক্কাহুয়া শেয়ালের ডাক মধ্যরাতের সাধ আহ্লাদে শুধু
আতঙ্কই ছড়িয়ে দিতে পারে
বিভাজন ক্রিয়াটা আমি বুঝে না বুঝেই চাপিয়ে দিয়েছিÑ
অখণ্ড সাধ আহ্লাদ থেকে কোনোই সদুত্তর মিলছে না
নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারে মাতাল হয়ে যারা চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে
দেখি তারা কী বলে
অন্যথা আগত আষাঢ়ে একা একাই তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে দেখানো যাবে
স্রোতের অভিলাষ
সে এখন পাতালনিবাসী, তাকে
কূলের খবর বোঝাতে যাওয়া আকাশ থেকে একটি-দুটি তারকা খুলে
আথালের খামে বেঁধে রাখবার মতো অবাস্তব কিছু
অথচ যখন আত্মাভিমানে ঘর ছেড়ে গেল, অনাহারে
কত কত কাল পাখি আর নদীদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেল
গাঁয়ের বধূরা পরম পরিহাসে
কলসী ছেড়ে জল ছুড়ে দিত দেহে
ছোট্ট শিশুরা পরিধেয় খুলে নগ্ন করে দিত
এ-খবর রটে গেলে কলার ভেলায় করে ছুটে এল
শত শত শিশু-পর্যটক। কেউ তার নগ্ন পশ্চাৎদেশের
কেউ আবার ছবি তুলল মাথা মুড়িয়ে নিয়ে
তখন শুধু ধমকে দিয়ে বললাম:
স্রোতে চড়া মানেই যত্রতত্র ভেসে বেড়ানো নয়
কূলে কূলে পৌঁছে দেয়া ফসলের আগাম বারতা
পর্যটক মানেই...
তবু সূর্যাস্ত থমকে দাঁড়াল এ দৃশ্য অবলোকনে
এবার পাতাল থেকে বারতা এলোÑ এখানে শুধুই
অবাধ সংসর্গ আছে; নিস্তব্ধ উদযাপন আছে, এসো
স্রোতের অভিলাষ শুধু নদীতীরে জনপদে কাটাছেঁড়া
এবড়োখেবড়ো রিফুকর্ম... উন্মাতাল ত্রাস
আর চাইবো না
ভোরবেলা আর তোমার কাছে কিছু চাইবো না
সারারাত্রি চেয়ে চেয়ে জ্যোৎস্না দিয়ে সূর্য ঢেকেছি
কম্বল দিয়ে গ্রীষ্ম ঢেকেছি আর তোমার
মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হিমালয়ের মৃত্যু দেখেছি
তোমাকে জানানো হয়নি, আমার চাইবার দিন
সহস্র বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে
যখন তোমার নাভিতে বসে খেলে যেত ইদুর ছানারা
তোমার আমার নখ কেটে দিত-- দেয়ালের টিকটিকিগুলো
এতটা নির্জন ঘরে টিক টিক করে ঘোষণা করত ‘সত্যি’
#
ভাবছি, আজ ভোরবেলা গাছের গুড়ি ফেলে
পৃথিবীর বন্দর-নগর-রাজপথ-গলি স্তব্ধ করে দেবো
#
তুমি চাইলেই কেবল মুক্ত করে দেবো অকাতরে খরস্রোতা নদী
As a favorite poet of our literature has established his name. I only can comments by a single word GOOD
উত্তরমুছুন