সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

উত্তর সম্পাদকীয় - অরিন্দম চন্দ্র

প্যাহলে “আপ”...প্যাহলে আপ
অরিন্দম চন্দ্র



চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের শেষে বেঁড়ে ব্যাটা “আম আদমি পার্টি” কেন ঘোড়া কেনাবেচা না করে,জনতার কাছে আশ্বাসিত দায় পালন না করে, রাজধর্ম না পালন করে আবার পূনর্নিবাচন চাইছে তাই নিয়ে জাতীয় মিডিয়া আজ কূট-তর্কে মেতেছে।ঠিকই তো,এদের উচিত ছিল বিজেপি বা কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে জল পরীক্ষায় নামা,যাতে প্যাহলে আপ প্যাহলে আপ বলতে বলতে গাড়ি না ফস্কে যায়।রাজ্যের প্রচারমাধ্যমগুলির কথা ছাড়েন,এরা সাবালক হতে হতে আমরা বুড়িয়ে যাব।

একথা সত্যিই যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে “আপ” এক নতুন তৃতীয় বিকল্পের কথা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেছে,ঝাড়ু আজ স্টুপিড কমন ম্যানকে মূল্যবৃদ্ধিতে ফেঁসে দূর্ণীতির ঘন কুয়াশায় আবৃত রাজনীতির বাতাবরণ থেকে একটু হলেও মুক্তির আস্বাদ দিতে পেরেছে,যা কি না সরকারী বাম-দল গুলিও এই সময়ে ভোট-বাক্সে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়ছে।

কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র।এই যে কেজরিওয়ালরা আম-আদমির স্বার্থে সরকার গড়ার লাইন থেকে সরে যাচ্ছে সেটা কি নিছক আরেক সততার প্রতীকের নির্মাণ,না কি সমাজ পরিবর্তনের যে কথা তাঁরা পথসভা থেকে সোশ্যাল-নেটওয়ার্ক সাইট বা এসএমএস এর মাধ্যমে গোটা দিল্লীর ভোটদাতাদের কাছে পৌঁছে দিলেন তার মধ্যেই কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা রয়ে গেল ??

মূল্যবৃদ্ধি বা দূর্নীতির ইস্যু আজকাল লোক খুব খাচ্ছে।রাজপুরুষগনও মেতে উঠেছেন বাইট দিতে।আর খুব ঠাণ্ডা মাথায় তাই মিডিয়াও “রাগা” বনাম “নমো”র লড়াইকে হাইলাইট করছে হরবখৎ।কিন্তু কিসের যেন দুই পিঠই সমান,ভারতের মানুষ ইতিহাসটা খুব কম আয়াসে ভুলে যান।যেন এনডিএ আমলে ভারতে মূল্যবৃদ্ধি কম ছিল,দূর্নীতির লেশমাত্র ছিল না এ পোড়া দেশে।পেঁয়াজ আশী টাকা সব্বাই করেছে,সব্বাই ভুগেছে,কফিন থেকে কমনওয়েলথ—গল্পটা একইরকম।

তাই এডভান্টেজ নরেন্দ্র মোদী---মিডিয়ার চিৎকারের পরও কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই থেকে যায়।মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তিশগড় মোদীর আমোদে আম-জনতা কতটা মেতেছে সেটার হিসাব পরে হবে,কিন্তু রাজস্থানেও মোদী হাওয়ার চেয়েও বোধকরি সরকারের ব্যর্থতা আর চুরিটা বেশী কাজে এসেছে সরকার গঠনের কাজে।মিজোরামের মত চুনোপুঁটিকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না,আমরাও ছেড়ে দিলাম।আর যে লোকের উন্নয়নের মডেলে গুজরাটের প্রায় অর্ধেক কন্যাশিশু আজও অপুষ্ট তার কথা ঝড় তুললেও গোটা দেশের মানুষ সেই ব্যক্তি বা তার দলকে এখনো কতটা বিশ্বাস করেন তার সারবত্বা জানতে আর কটা মাস অপেক্ষা করাই শ্রেয়।

বাকি রইল তৃতীয় বিকল্প।কেউ ভাবছেন ফেডেরাল ফ্রন্ট,কেউ অ-কংগ্রেস অ-বিজেপি আর কেউ বা এই হালের “আপ”।ফেডেরাল ফ্রন্টের নেতা-নেতৃদের পাল্টি মারা আগেও দেখেছি,তাই খুব বেশী আশা করলে চাষা যে মরবেই সেটা বোঝার জন্য ক্ষুরধার কূটবুদ্ধির দরকার নেই।আর অ-কংগ্রেস অ-বিজেপি জোটের ভিত্তি যতক্ষণ না নির্দিষ্ট কর্মসূচীর উপর বা বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে হচ্ছে মানুষ তাকে কতটা বিশ্বাস করবে তাও এখনই বলা যাবে না।

বাকী রইল “আপ”।এটা ঠিক যে এই ঝাড়ুর ব্যাপক জনসমর্থনের পিছনে শুধুমাত্র নাগরিক সমাজের ভূমিকাই নেই, এই দেশের সাধারন মানুষের একটা “সিম্বলিক” সমর্থন আদায়ে তারা সমর্থ হয়েছে।কিন্তু ইলেক্ট্রিক বিলের বা জলকরের বোঝা বা দিল্লী জুড়ে মেয়েদের উপর অত্যাচারই কি সব? বা দূর্নীতি আর মূল্যবৃদ্ধি?? “আপ” কি গত দুই দশক জুড়ে নয়া-উদারনীতির বিরুদ্ধে??না কি এই এই নীতিকেই আরও সইয়ে সইয়ে খাওয়ানোর নয়া এক্সপেরিমেন্ট? যা বিজেপি বা ইউপিএ করতে পারছে না?? প্যাহলে “আপ” না কি প্যাহলে আপ????

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন