পিয়াস মজিদ
এবার বর্ষাটা কেমন যেন! হুটহাট বৃষ্টি এসে চলেও যায় হুটহাট। কোন কুহক নেই, দীর্ঘ মেঘ করে আসা নেই; ফলে কালো মেঘের বিদ্যুতের তালে তালে মন কেমন করা অনুভবও নেই। অথচ আশৈশব আমি ভালোবেসেছি বৃষ্টির চেয়ে বৃষ্টিপূর্ব প্রাকৃতিক প্রস্তুতিকে। বৃষ্টি এলেই তো সব রহস্য চুরমার হয়ে গেল আর রহস্য চুকে গেলে কী মূল্য উজ্জয়িনীর, কালিদাসের, মেঘদূতের? প্রেম যেমন জীবনে আমার। প্রেম এসে যাচ্ছে এই অনুভবটাই আনন্দের কিন্তু এসে গেলেই তো শেষ হয়ে গেল। তাই এ জীবনে প্রেমের কুঁড়িগুলো পরিচর্যা করে ফুলে রূপান্তর করা হলো না। কিন্তু তাতে কি ? প্রেমঘন অনুভব নিয়ে মন্দ তো নেই আমি। রফিক আজাদ বলে রেখেছেন বর্ষণে-আনন্দে মানুষের কাছে যেতে। আচ্ছা, জনতায় কি বর্ষাময়ূরী পেখম মেলে?
হ্যাঁ, আজকাল অবশ্য মিলতেও পারে। যেই হারে আইসিডিডিআরবিতে পানিবাহিত রোগীর ভিড় হয় তা দেখে তৃষা সেদিন ভুল বলেনি যে বর্ষা এখন একটা জলজনিত শহুরে সমস্যায় পর্যবসিত। তবে আমি লোকটা মোটের উপর যেহেতু নিজস্ব নির্জনতাকে অলংকারে মুড়ে রাখতে অভ্যস্ত সেহেতু নিজের প্রাণমহলের বারান্দায় বসে বর্ষাযাপন করতে চাই। কিন্তু একটা গল্প লেখার জন্য বর্ষা আমাকে আলাদা করে সময় দেয় না। কারণ অনেক সামাজিক সম্পৃক্ততায় সময়ক্ষেপ হয় বর্ষার। ঊষর ফসলি জমিকে আর্দ্র করে তোলা আমার মত মধ্যাহ্নের অলস গায়ককে দু’ফোঁটা ভিজিয়ে দিয়ে যাওয়ার চেয়ে ঢের দরকারি তার কাছে। ঠিক এই জায়গাটিতে আপত্তি আমার। বর্ষা কি প্রয়োজনের তন্তুতে বাঁধা থাকবে চিরকাল নাকি মন থেকে ধানক্ষেতে একই ধারায় বেজে যাবে! এই প্রশ্নের উত্তর যে দেবে সে অবশ্যই আমি নই। কারণ আমার সব রুখাসুখা প্রশ্ন-উত্তর তো ভেসে গেছে অঝোর শ্রাবণে। কেঁদেও পাবে না তারে বর্ষার অজস্র জলধারে। বৃষ্টির সন্ত্রাস আমাকে দিয়ে গেছে সোনালি নিঃস্বতা। এখন জীবনের খরা-উপদ্রুত উপকূলে বসে ভাবছি এই জুলাইয়ে হ্যামলেট কী বলেছিল ওফেলিয়াকে। হা হা, আজ রাতে কাব্য এল মোর মনে; জুলাই মাস / তেরছা বৃষ্টি / মেঘের হামলায় ত্যক্ত আকাশ / কোথায় পাব আমার স্নানের সাবান?
হুম; তৃষা বলেছিল সেই বৃষ্টিব্যস্ত দুপুরের পর- বর্ষা এলে সাবানগুলো কেমন পানিতে থিক থিক করে, ঘেন্না হয় আমার। তৃষার ঘেন্না কার প্রতি ছিল আসলে ? সাবানটা তো অজুহাত মাত্র। বর্ষায় ইতিউতি জমে ওঠা শ্যাওলাপ্রতিম পাপের প্রতিই যে ইঙ্গিতটা তা বুঝতে বেগ পেতে হয়না আমাকে কারণ এই পাপে যোগ আছে আমার। আসলে পাপের পদ্মপুরাণ খুলে বসা ব্যতীত আমার কোন বর্ষাকতব্য ছিল না কি এবার ! তবে বলি শাওন রাতের সেইসব অভিসার একলা ছিল না। ছিল না মানে কি একলা আবার অভিসার জমে নাকি কি। একজন গাবে খুলিয়া গলা আরেকজন মনে মনে তবেই না রিমঝিম রজনী বিকশিত হবে পূর্ণ শ্রাবণকলায়। দেখে যাও বিভাবরী তার; দু’টা উঁচা উঁচা পাহাড়।
২.
বর্ষা চলে গেল। তৃষার ফেসবুক- টুইটার সব বন্ধ। সংযোগবিরহিত আমি বসে বসে ভাবি তৃষা কি তবে ছিল বর্ষাবাহিত ফুলমাত্র? না না, ফুলের তো মৃত্যু হলেও শুকনো পাপড়ি থাকে স্মৃতি হয়ে। তৃষা তবে কাদাপানির ভিড়ে বেঁচে যাওয়া একটা নিঝুম মল্লার। বর্ষা চলে গেলেও বাকি বছরটার নির্জন রাত্রিদিন যে ভরে তোলে অপার নিঃসতার বিধুর ধ্বনিতে।
শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত ভুলে বৃষ্টির নামতা গুনি;
রিম ঝিম রিম।
তুমি শুনছো তো ?
এবার বর্ষাটা কেমন যেন! হুটহাট বৃষ্টি এসে চলেও যায় হুটহাট। কোন কুহক নেই, দীর্ঘ মেঘ করে আসা নেই; ফলে কালো মেঘের বিদ্যুতের তালে তালে মন কেমন করা অনুভবও নেই। অথচ আশৈশব আমি ভালোবেসেছি বৃষ্টির চেয়ে বৃষ্টিপূর্ব প্রাকৃতিক প্রস্তুতিকে। বৃষ্টি এলেই তো সব রহস্য চুরমার হয়ে গেল আর রহস্য চুকে গেলে কী মূল্য উজ্জয়িনীর, কালিদাসের, মেঘদূতের? প্রেম যেমন জীবনে আমার। প্রেম এসে যাচ্ছে এই অনুভবটাই আনন্দের কিন্তু এসে গেলেই তো শেষ হয়ে গেল। তাই এ জীবনে প্রেমের কুঁড়িগুলো পরিচর্যা করে ফুলে রূপান্তর করা হলো না। কিন্তু তাতে কি ? প্রেমঘন অনুভব নিয়ে মন্দ তো নেই আমি। রফিক আজাদ বলে রেখেছেন বর্ষণে-আনন্দে মানুষের কাছে যেতে। আচ্ছা, জনতায় কি বর্ষাময়ূরী পেখম মেলে?
হ্যাঁ, আজকাল অবশ্য মিলতেও পারে। যেই হারে আইসিডিডিআরবিতে পানিবাহিত রোগীর ভিড় হয় তা দেখে তৃষা সেদিন ভুল বলেনি যে বর্ষা এখন একটা জলজনিত শহুরে সমস্যায় পর্যবসিত। তবে আমি লোকটা মোটের উপর যেহেতু নিজস্ব নির্জনতাকে অলংকারে মুড়ে রাখতে অভ্যস্ত সেহেতু নিজের প্রাণমহলের বারান্দায় বসে বর্ষাযাপন করতে চাই। কিন্তু একটা গল্প লেখার জন্য বর্ষা আমাকে আলাদা করে সময় দেয় না। কারণ অনেক সামাজিক সম্পৃক্ততায় সময়ক্ষেপ হয় বর্ষার। ঊষর ফসলি জমিকে আর্দ্র করে তোলা আমার মত মধ্যাহ্নের অলস গায়ককে দু’ফোঁটা ভিজিয়ে দিয়ে যাওয়ার চেয়ে ঢের দরকারি তার কাছে। ঠিক এই জায়গাটিতে আপত্তি আমার। বর্ষা কি প্রয়োজনের তন্তুতে বাঁধা থাকবে চিরকাল নাকি মন থেকে ধানক্ষেতে একই ধারায় বেজে যাবে! এই প্রশ্নের উত্তর যে দেবে সে অবশ্যই আমি নই। কারণ আমার সব রুখাসুখা প্রশ্ন-উত্তর তো ভেসে গেছে অঝোর শ্রাবণে। কেঁদেও পাবে না তারে বর্ষার অজস্র জলধারে। বৃষ্টির সন্ত্রাস আমাকে দিয়ে গেছে সোনালি নিঃস্বতা। এখন জীবনের খরা-উপদ্রুত উপকূলে বসে ভাবছি এই জুলাইয়ে হ্যামলেট কী বলেছিল ওফেলিয়াকে। হা হা, আজ রাতে কাব্য এল মোর মনে; জুলাই মাস / তেরছা বৃষ্টি / মেঘের হামলায় ত্যক্ত আকাশ / কোথায় পাব আমার স্নানের সাবান?
হুম; তৃষা বলেছিল সেই বৃষ্টিব্যস্ত দুপুরের পর- বর্ষা এলে সাবানগুলো কেমন পানিতে থিক থিক করে, ঘেন্না হয় আমার। তৃষার ঘেন্না কার প্রতি ছিল আসলে ? সাবানটা তো অজুহাত মাত্র। বর্ষায় ইতিউতি জমে ওঠা শ্যাওলাপ্রতিম পাপের প্রতিই যে ইঙ্গিতটা তা বুঝতে বেগ পেতে হয়না আমাকে কারণ এই পাপে যোগ আছে আমার। আসলে পাপের পদ্মপুরাণ খুলে বসা ব্যতীত আমার কোন বর্ষাকতব্য ছিল না কি এবার ! তবে বলি শাওন রাতের সেইসব অভিসার একলা ছিল না। ছিল না মানে কি একলা আবার অভিসার জমে নাকি কি। একজন গাবে খুলিয়া গলা আরেকজন মনে মনে তবেই না রিমঝিম রজনী বিকশিত হবে পূর্ণ শ্রাবণকলায়। দেখে যাও বিভাবরী তার; দু’টা উঁচা উঁচা পাহাড়।
২.
বর্ষা চলে গেল। তৃষার ফেসবুক- টুইটার সব বন্ধ। সংযোগবিরহিত আমি বসে বসে ভাবি তৃষা কি তবে ছিল বর্ষাবাহিত ফুলমাত্র? না না, ফুলের তো মৃত্যু হলেও শুকনো পাপড়ি থাকে স্মৃতি হয়ে। তৃষা তবে কাদাপানির ভিড়ে বেঁচে যাওয়া একটা নিঝুম মল্লার। বর্ষা চলে গেলেও বাকি বছরটার নির্জন রাত্রিদিন যে ভরে তোলে অপার নিঃসতার বিধুর ধ্বনিতে।
শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত ভুলে বৃষ্টির নামতা গুনি;
রিম ঝিম রিম।
তুমি শুনছো তো ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন