মলের গল্প, গল্পের মলম
পার্থ বসু
বাজারে গিয়ে জিনিস হারিয়ে আসা অশ্মর দাদুর কাছে নতুন কিছু নয়। বয়স যখন তাঁর এক কুড়ি মামার বাড়ি ইলিশ পাঠাচ্ছেন মা। তাঁর হাতে। মামার বাড়ির চৌকাঠে পা রেখে মনে পড়ল মাছ ফেলে এসেছেন ট্রেনে। বয়স যখন দু কুড়ি বাজারের সব্জিওয়ালা , সে কিনা তাঁর বাড়ি চিনত না, খুঁজে পেতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি ফেরত দিয়ে এসেছিল ফেলে আসা শাকটা মুলোটা ।এখন তিন কুড়ি পার হয়ে ভুলো মন কথাটা তাঁর ব্র্যান্ড। তাঁর খাতির যাদের সাথে, যারা বন্ধুজন, ভুলো মন এমন কি তাঁরাও। সে গল্প আর একদিন। এখন দাদুর গল্প। মলের গল্প। তা কলকাতা শহর মলে ছেয়ে গেছে।এপারে সাউথ সিটি তো ওপারে অবনী। কথায় বলে স্বভাব যায় না মল-এ। মলেও দাদু জিনিসপত্র হারান। ফেলে আসেন। একবার তো গায়ের কোটটাই খুইয়ে এসেছিলেন। মলের ফ্রি হেলথ চেক মেশিনে ব্লাড প্রেসার মাপতে বসেছিলেন। কোটটা খুলে রাখতে হয়েছিল। ওঠার সময় ভুলে গেলেন নিতে। ক্যামেরা দেখে ফেলেছিল। দেখে ফেলেছিল মলের কর্মীরা তিনি চলে আসার পর।পরের দিন কাস্টমার কেয়ারে যেতে তাই না ফেরত পেলেন। মলগুলি এমনিই। ছিমছাম। অমায়িক সুভদ্র ছেলেমেয়ে কাজ করছে। হৈহল্লা নেই। খুব বেশি হলে মৃদু স্বরে মিউসিক। টয়লেট গুলি এখন নাম পালটে রেস্ট রুম। ময়লা নেই। বদবু নেই। কেনাকাটা করে ভিড় থাকলে সেলফ চেক কাউন্টার । একটা সীমা অব্দি। পেমেন্ট ক্যাশে দিলে মেশিনের স্লটে ঢোকাও। কার্ডে দিলে স্লাইড কর। খুচরো চাই? এটিএম থেকে টাকা তোলা হয় নি? বিল কিছুটা বেশি পেমেন্ট করলেই কাম ফতে। কেনা জিনিস ফেরত দেবেন ? বিল আনেন নি ? হারিয়ে ফেলেছেন ? বার কোড স্স্ক্যান করেই না বিক্রি হয়েছিল। চিন্তা নেই। একে ভোলা মন। রেস্ট রুমের সুবাদে এখন ভাবুকও। এবার মলে যে কীর্তিটি করে বসলেন বলার নয়। যাকে বলে যা তা ! এতদিন যা হারিয়েছেন বা ফেলে এসেছেন মলের মধ্যেই। মানে ভিতরে। এবার মলের বাইরে যে পার্কিং লট মানে কিনা গাড়ি রাখার জায়গা সেখানে --- নাতি ছিল কার সীটে। কার সীটটি ট্রলির উপর। নাতিকে তুললেন গাড়িতে। বেমালুম ভুলে গেলেন বাজারপাতির কথা । মনে পড়ল বাড়ি ফিরে। তাও আরও ঘণ্টা তিন পর। মল ততক্ষণে বন্ধ। প্রথম কাতরে উঠলেন অশ্মর ঠাকুমা।-- সে যে অনেক টাকার জিনিস গো ! আফসোস পরপর সংক্রামিত হল। দাদু থেকে দাদুর ছেলে, ছেলে থেকে ছেলের বউ। আবহাওয়া ভারী হয়ে উঠল দুঃখে। দাদুর মনে পড়ল , সে অনেকদিন আগে , বাজার থেকে স্কুটারে মাছ কিনে ফিরছেন। বাড়ির দরজায় রাস্তায় স্কুটার রেখে বাড়ি ঢুকেই মনে পড়ল --- মাছ? স্কুটারেই ফেলে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে এলেন। মাছ ততক্ষণে হাওয়া । এবার শুধু মাছ নয় , সঙ্গে আপেল , তৎসহ কলা – । যে পেল সে পড়ে পেল। ভাগ্যবান । যে পেল সে শুধু মাছ ভাজবে আর ভাজা মাছটি উলটে খাবে। কামড়ে খাবে আপেল। কুড়িয়ে পাওয়া। চুরির না। পেট পুরে খেতে দোষ কি ? মন খারাপ করে যে যার শুতে গেলেন। ভাবতে পারলে ভাল হত যাক যা গেছে তা যাক। ভাবা যায়! সকালে উঠেই বউমার উল্লাস। তার মোবাইলে মেসেজ এসেছে। এসেছে কাল রাতেই। ইস দেখা হয় নি তখন-- মাছ আপেল কলা ++ ফেলে গেছেন। নিয়ে যান। পাল্টা মেসেজ করে জানতে চাওয়া হল কখন গেলে পাওয়া যাবে। যে মেয়েটি মেসেজ করেছিল তার ডিউটি দুপুর দুটো থেকে। জানা গেল পার্কিং লট থেকে ট্রলি তোলার সময় জিনিসগুলি যে কর্মীর চোখে পড়ে সে কাস্টমার কেয়ারে জমা দেয়। তারপর ক্যামেরা আর মেশিন থেকে সনাক্ত করতে দেরি হয় নি ক্রেতা কে, কার। দেখুন কাণ্ড। এতক্ষন কলকাতা করে মরছি। ঘটনাটা কলকাতার নয়। ঘটেছে আমেরিকায় । ব্লুফিল্ডে । ভার্জিনিয়ায়। অকুস্থল স্যাম'স মল। sam's mall. অশ্মর দাদুর কাছেই স্বকর্ণে শোনা। দাদুকে প্রশ্ন করেছিলাম – আমেরিকায় চোর নেই ? দাদুর তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। তিনি থোড়ি বিশ্বাস করেন আমেরিকায় চোর নেই। তবে কি, তিনি জানালেন চুরি করতে হলে এখানে চোরকে গাড়ি চুরি করতে হবে প্রথম। রাস্তায় হাঁটার গল্প নেই। কিন্তু গাড়ি চুরি করে সামান্য শপ লিফটিং ! পড়তায় পোষাবে ? এমনও হয় তা হলে ? দাদু বললেন – আমাদের দেশে হবে---- কবে ?
বাজারে গিয়ে জিনিস হারিয়ে আসা অশ্মর দাদুর কাছে নতুন কিছু নয়। বয়স যখন তাঁর এক কুড়ি মামার বাড়ি ইলিশ পাঠাচ্ছেন মা। তাঁর হাতে। মামার বাড়ির চৌকাঠে পা রেখে মনে পড়ল মাছ ফেলে এসেছেন ট্রেনে। বয়স যখন দু কুড়ি বাজারের সব্জিওয়ালা , সে কিনা তাঁর বাড়ি চিনত না, খুঁজে পেতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি ফেরত দিয়ে এসেছিল ফেলে আসা শাকটা মুলোটা ।এখন তিন কুড়ি পার হয়ে ভুলো মন কথাটা তাঁর ব্র্যান্ড। তাঁর খাতির যাদের সাথে, যারা বন্ধুজন, ভুলো মন এমন কি তাঁরাও। সে গল্প আর একদিন। এখন দাদুর গল্প। মলের গল্প। তা কলকাতা শহর মলে ছেয়ে গেছে।এপারে সাউথ সিটি তো ওপারে অবনী। কথায় বলে স্বভাব যায় না মল-এ। মলেও দাদু জিনিসপত্র হারান। ফেলে আসেন। একবার তো গায়ের কোটটাই খুইয়ে এসেছিলেন। মলের ফ্রি হেলথ চেক মেশিনে ব্লাড প্রেসার মাপতে বসেছিলেন। কোটটা খুলে রাখতে হয়েছিল। ওঠার সময় ভুলে গেলেন নিতে। ক্যামেরা দেখে ফেলেছিল। দেখে ফেলেছিল মলের কর্মীরা তিনি চলে আসার পর।পরের দিন কাস্টমার কেয়ারে যেতে তাই না ফেরত পেলেন। মলগুলি এমনিই। ছিমছাম। অমায়িক সুভদ্র ছেলেমেয়ে কাজ করছে। হৈহল্লা নেই। খুব বেশি হলে মৃদু স্বরে মিউসিক। টয়লেট গুলি এখন নাম পালটে রেস্ট রুম। ময়লা নেই। বদবু নেই। কেনাকাটা করে ভিড় থাকলে সেলফ চেক কাউন্টার । একটা সীমা অব্দি। পেমেন্ট ক্যাশে দিলে মেশিনের স্লটে ঢোকাও। কার্ডে দিলে স্লাইড কর। খুচরো চাই? এটিএম থেকে টাকা তোলা হয় নি? বিল কিছুটা বেশি পেমেন্ট করলেই কাম ফতে। কেনা জিনিস ফেরত দেবেন ? বিল আনেন নি ? হারিয়ে ফেলেছেন ? বার কোড স্স্ক্যান করেই না বিক্রি হয়েছিল। চিন্তা নেই। একে ভোলা মন। রেস্ট রুমের সুবাদে এখন ভাবুকও। এবার মলে যে কীর্তিটি করে বসলেন বলার নয়। যাকে বলে যা তা ! এতদিন যা হারিয়েছেন বা ফেলে এসেছেন মলের মধ্যেই। মানে ভিতরে। এবার মলের বাইরে যে পার্কিং লট মানে কিনা গাড়ি রাখার জায়গা সেখানে --- নাতি ছিল কার সীটে। কার সীটটি ট্রলির উপর। নাতিকে তুললেন গাড়িতে। বেমালুম ভুলে গেলেন বাজারপাতির কথা । মনে পড়ল বাড়ি ফিরে। তাও আরও ঘণ্টা তিন পর। মল ততক্ষণে বন্ধ। প্রথম কাতরে উঠলেন অশ্মর ঠাকুমা।-- সে যে অনেক টাকার জিনিস গো ! আফসোস পরপর সংক্রামিত হল। দাদু থেকে দাদুর ছেলে, ছেলে থেকে ছেলের বউ। আবহাওয়া ভারী হয়ে উঠল দুঃখে। দাদুর মনে পড়ল , সে অনেকদিন আগে , বাজার থেকে স্কুটারে মাছ কিনে ফিরছেন। বাড়ির দরজায় রাস্তায় স্কুটার রেখে বাড়ি ঢুকেই মনে পড়ল --- মাছ? স্কুটারেই ফেলে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে এলেন। মাছ ততক্ষণে হাওয়া । এবার শুধু মাছ নয় , সঙ্গে আপেল , তৎসহ কলা – । যে পেল সে পড়ে পেল। ভাগ্যবান । যে পেল সে শুধু মাছ ভাজবে আর ভাজা মাছটি উলটে খাবে। কামড়ে খাবে আপেল। কুড়িয়ে পাওয়া। চুরির না। পেট পুরে খেতে দোষ কি ? মন খারাপ করে যে যার শুতে গেলেন। ভাবতে পারলে ভাল হত যাক যা গেছে তা যাক। ভাবা যায়! সকালে উঠেই বউমার উল্লাস। তার মোবাইলে মেসেজ এসেছে। এসেছে কাল রাতেই। ইস দেখা হয় নি তখন-- মাছ আপেল কলা ++ ফেলে গেছেন। নিয়ে যান। পাল্টা মেসেজ করে জানতে চাওয়া হল কখন গেলে পাওয়া যাবে। যে মেয়েটি মেসেজ করেছিল তার ডিউটি দুপুর দুটো থেকে। জানা গেল পার্কিং লট থেকে ট্রলি তোলার সময় জিনিসগুলি যে কর্মীর চোখে পড়ে সে কাস্টমার কেয়ারে জমা দেয়। তারপর ক্যামেরা আর মেশিন থেকে সনাক্ত করতে দেরি হয় নি ক্রেতা কে, কার। দেখুন কাণ্ড। এতক্ষন কলকাতা করে মরছি। ঘটনাটা কলকাতার নয়। ঘটেছে আমেরিকায় । ব্লুফিল্ডে । ভার্জিনিয়ায়। অকুস্থল স্যাম'স মল। sam's mall. অশ্মর দাদুর কাছেই স্বকর্ণে শোনা। দাদুকে প্রশ্ন করেছিলাম – আমেরিকায় চোর নেই ? দাদুর তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। তিনি থোড়ি বিশ্বাস করেন আমেরিকায় চোর নেই। তবে কি, তিনি জানালেন চুরি করতে হলে এখানে চোরকে গাড়ি চুরি করতে হবে প্রথম। রাস্তায় হাঁটার গল্প নেই। কিন্তু গাড়ি চুরি করে সামান্য শপ লিফটিং ! পড়তায় পোষাবে ? এমনও হয় তা হলে ? দাদু বললেন – আমাদের দেশে হবে---- কবে ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন