রাত্রি ভোর দুপুরের ইতিকথা
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
১.
অন্ধকারের সঙ্গে কথা বলবার সময় কখনো কখনো সেই মেয়েটি চলে আসে । কি রুগ্ন তার মুখ, কোটরে বসা আর চোখ একটা মৃতগাছকে জড়িয়ে ধরে । সমস্ত প্রশ্নগুলো হারিয়ে গেলে অন্ধকার একটা ঝড়ের ছবি আঁকে তাই সব উত্তর হারিয়ে যায় । আবার চাঁদ গায়ে লেগে গেলেই অন্ধকার পাল্টে যায় । ওই মেয়েটিকে সবুজ আর ডাগর হয়ে পানভর্তি ঠোঁটে এগিয়ে আসতে দেখি । মেয়েটি যৌনকর্মী হয়ে গেছে । কথা যেন ফুরোতে চায় না আর পাখিগুলি বিড়ালের থাবার আক্রমণের সম্ভাবনা সত্বেও তাদের সন্ধ্যা সংগীত থামতেই চায় না। রাত্রি কবিতা লেখে রোজ । কেউ পড়ে , কেউ পড়ে না। এতে রাত্রির কোনো মেঘ নেই , আঁধার নেই । তারা রাত্রিকে চেনে । জানালাও চন্দ্রিমার মুখশ্রীকে । ধীরে ধীরে মেঘের রাস্তায় ওর হেঁটে যাওয়া দেখি আর বৃষ্টি পড়লে ও কি অতীত জীবনে যায় আর চিকচিক করে ওঠে । নদীর সঙ্গেও রাত্রি আলাপ করে দিয়েছিল । সারারাত ছুঁয়েছিলাম নদী আর অন্ধকারকে । পৃথিবী ছুঁয়েছিলাম । নদীর বুকে জেগে থাকা দুই পৃথিবী । রাতজাগা বাদুড় অনেক গোপন কথা জেনে যায় । জানলেই বা কি! পাশবালিশের কাছে জমা দিয়ে কান্নাগুলো অন্ধকার ভাঙতেই বেরিয়েছি ।
২.
ভোরগুলো সত্যিকারের ভোর কিনা ব্রাশ বলতে পারে না। প্রত্যেক দিন মাজতে হয়, ঝকঝকে করে পর্দায় বিঞ্জাপন করে দিতে হয়। ভোরবেলা যে মৃতমানুষকে আবিষ্কার করা হলো তার কোনো ঝামেলা নেই । মর্গের মেলায় সে ভিড়ে গেছে । আধগলা জলে দাঁড়িয়ে জবাকুসুমসঙ্কাশং বলেও লোকটা ঘাটে জবাকুসুম তেল মাথায় দেয় , হাতের গন্ধ শোঁকে । তার গায়ে ভোরের গন্ধ নেই । গাছের কাছে হেঁটে যাওয়া মানুষদের গাছ চেনে । এদের অনেকেই বন কেটে শহর করেছে আর শহরকে কতকগুলো বন্ধ আর খোলা কারখানায় ঘিরে রেখেছে । আবাসন তুলেছে । অন্যের ভোর কেটে এইসব অক্সিজেন পিপাসুদের ভোর পাওয়ার অবিরাম লোভ । ভোর কারো হতে পারে না। ভোরের ভাবসম্প্রসারণ হয় না। বালিকা জানে না। ঘাসমাটি আর কংক্রীটে টুপটুপ ঝরে পড়া শিউলি টেপের আঁচলে সাজিয়ে নেয় । কার ছাদে ভীস্মদেবের হারমোনিয়াম। একলা ভোরের রেওয়াজে ভোর পাওয়া ঘোর করে রাখে। রাখালেরা টাইস্যুটে চরতে চলে যায় । ভোর ভার হয়ে হয়ে জমতে থাকে ভোরের স্কুলে । ভোর বানানোর পর বালকটি লেখে একদিন মুক্তির ভোর কবে যে শিকল পরে নিজেই সেলে ফিরে গেল সে নিজেই জানে না। দিদিমনির ভোরের মেঘে আর কোনোদিন সিঁদুর খেলা হবে না । সবদিন বৃষ্টিদিন ।
৩.
দুপুরের ঠোঁটে একটা পাখি ফেরত আসছে না বলেই রাগে ফেটে যাচ্ছে ধূসর চাদর বিছানো বিছানা । ঝিম ধরা পাতায় লেখাই নেই । পাতের উপর শূন্যতা নিয়ে কোনো অঙ্ক হয় না। গরমভাতের সেই গল্পেরও ফেরত আসার কোনো সম্ভাবনা নেই গাছের তলায় । একটা রাস্তাকে সমীহ করে গাছকে সরে আসতে হয়েছে তাই তলা একটা অদৃশ্য জাহাজের সন্ধানে চলে গেছে । পুকুর বুঝতে পারছে না দুপুর কথা । রাগের চারপাশে কোনো অনুরাগ নেই । রা-ও নেই । সমস্ত পাড়ার । কাকচক্ষুগুলি কাকস্নানও করতে আসছে না আর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন