সাকিন হাওয়ার অলিগলি
ঋষি সৌরক
এই গলিটার মত গলি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই হলফ করে বলা যায়। আর সেই গলিটা দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে রতন। এক-একটা পা ফেলার সাথে রোমাঞ্চের গুঞ্জন উঠে আসে । সাবধানে পা ফেলে চলে রতন । শ্যাওলায় পা পিছলে যেতে পারে। একটু বিপজ্জনক অথচ কয়েক ফুটের এই গলিটা পার হলেই ...
কোলকাতার হাওয়ায় অদ্ভুত সব গন্ধ । কিছুটা সংস্কৃতি কিছুটা হালচাল – চলমান মেট্রো – শ্যামবাজার – শহর ছুটে যাচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত – তার কোঁচড়ে বনেদিয়ানার শেকড় এবং কসমোপলিটন দণ্ডবত। কোলকাতায় রাই আছে । রাই এর গায়ের গন্ধ আছে । রতন খুব জোরে জোরে শ্বাস নেয় । কোলকাতার হাওয়া কি আমেদাবাদ এ ভেসে আসে? আসতেই পারে । হাওয়াদের কোনো পাসপোর্ট লাগে না – রোমিং ও লাগে না । কোলকাতার সেইসব হাওয়ার কোনো একটায় রাই এর বুক থেকে উঠে আসা অদৃশ্য চিহ্ন থেকে যায় । পরম যত্নে শ্বাস নেয় রতন। কাকারিয়া লেক এর কাছে আরাধনা সিনেমা হল । আবিষ্কার করে যারপরনাই পুলকিত হয় রতন। সিনেমা দেখতে এতদিন আলফা-ওয়ান সিনেপলিস এ ছুটেছিলো রতন । ছুটেছে শিবা কমপ্লেক্স আশ্রমরোড । কিম্বা সিটিএম রেভলিউশন । ইমোশনাল ফিল্মম্যানিয়া বলে একটা রোগ আছে । মানুষ যখন খুব একাকীত্বে ভোগে – নিকষ নিঃসীম একাকীত্ব তখন অস্বাভাবিক রকমের সিনেমা দেখে – নিজের রুচির ভেতরে এবং বাইরে । যেসব সিনেমা সে একা দেখতে পারে না সেইসব সিনেমাও সে অনায়াসে দেখে ফেলে একা একাই তবে সিনেমাহলের অন্যান্য দর্শকদের মাঝে । সে মনে করে ওই একটা সময়ের জন্য সে আর একা নেই । যারা দর্শক তাদের সাথে একসাথে সে নিজের একাকীত্ব শেয়ার করে নেয় কোনো কমিউনিকেশন ছাড়াই । প্রচুর টাকা এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে রতনের। তেলুগু-ভোজপুরি-ইংলিশ-যতবিচ্ছিরি হিন্দি এমনকি গুজরাতী সিনেমাও সে দেখে ফেলেছে গাদাগুচ্ছেক। একদিনে পাঁচ-পাঁচটা সিনেমা পাগলের মত দেখে গেছে সে ।প্রতি টা সিনেমার টিকিট ২০০ টাকা করে।কিছুটা সময় এভাবে কাটে । কিন্তু একাকীত্ব যেন আরো ছেঁকে ধরে ।প্রতিবার সিনেমা শেষ হবার পর সিনেমাহল থেকে যখন সবাই বেরিয়ে যায় রতনের খালি মনে হয় আর একটু থাকা যেত না ! আরাধনা সিনেমা হল এ ৪০ টাকার টিকিট –ব্যালকনি । রতন এখন ওখানেই সিনেমা দেখতে যায় । লোকে ভীষণ প্রাণবন্ত ভাবে সিনেমা দেখে । সিটি মারে – নাচ করে। ওদের উদ্বেগ-কৌতুহল- আনন্দ-হতাশা –চিতকার –আবেগ সমস্ত কিছুর মধ্যে রতন নিজেকে খুঁজে পায় । নিশব্দে কথোপকথন হয় ওদের সাথে । ভোজপুরি সিনেমায় সুইটি ছাবড়া যখন কোমর দুলিয়ে আইটেম নাচে তখন সিনেমা হলের রিক্সাওলা থেকে বাবুসাব সক্কলে গলা জড়াজড়ি করে সে কি ফুর্তি-কি মস্করা রতন শুষে নেয় ! শুষে শু্ষে নেয় ।বাঁকুড়ার কথা মনে পড়ে ? বাঁকুড়ার সেই কুসুম হল। যেখানে একবার জোর করে এক বান্ধবী নিয়ে গেছিলো লে-ছক্কা দেখতে ? ২০টাকার টিকিট । না আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা না আছে ডলবি সাউণ্ডসিস্টেম না আছে মুভেবল আরামকেদারা আর না আছে ২০০ টাকার জাম্বো-পপকর্ন ! মানুষের গায়ের গন্ধ যে কতখানি ডেলিকেট হয় – একজন বান্ধবী কতখানি পরম আত্মীয়া হলে সামান্য যত্নই স্বর্গ হয়ে ওঠে মনে পড়ে যায় রতনের । আজ ওর আরাধনা সিনেমা হল এ গেলেও মনে হয় বাঁকুড়াতে পৌঁছে গেছি । “সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে অচেনা ক্রাউডকে এড়িয়ে আবছায়া রাত্তিরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরা যাবে ফেরা যাবে মনে কর ফেরা হল না বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেলো না কে যেনো ম্যাজিক করে ভ্যানিস করে দিয়েছে বাড়িটাকে বাড়িটাকে রোজই তো ঘটে কত হ্যানাত্যানা কেন এমনটা ঘটে না ঠিক যেমন অবাস্তবে আমার এ ভালোবাসা বেঁচে থাকে বেঁচে থাকে” –একাকীত্বটা কানে বেজে ওঠে ! আর ঠিক তক্ষুণী মনে পড়ে যায় রায়বরেলী উত্তরপ্রদেশের কথা ! প্রথম একার মত একা হওয়ার শুরু । বাবা-মা-পরিবার-পরিজন-সাধের বাংলা –বারো মাসে তেরো পাব্বন সব ছেড়ে সত্যি সত্যি একা । এভাবেই একটা গুজরাতের মধ্যে আস্ত কোলকাতা আস্ত উত্তরপ্রদেশ আরো কতকী অজানা আয়তনে ঢুকে আছে । বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য কে অনুভব করে রতন । বুকের মধ্যে গান বাজতে থাকে একা একা । একা একাই গুনগুনিয়ে ওঠে রতন । একাই শোনে একাই খায় একাই বাঁচে । একা একাই ভালোবাসে । একা একা গলি পেরোয় একটা । আমদেবাদ থেকে কোলকাতার শর্টকাট । যেটার খবর আর কেউ জানে না । শুধু রতন জানে। ওই গলিটার ওপারে আছে কোলকাতা । কোলকাতার কোনো এক গলি দিয়ে উত্তরপ্রদেশ । উত্তরপ্রদেশের কোনো এক শর্টকার্ট দিয়ে বাঁকুড়া। বাঁকুড়া থেকে ফ্যাণ্টাসিমোড়া অলিগলি পেরিয়ে আমেদাবাদ । এভাবেই মিশে থাকে বেঁচে থাকা । একা একা বেঁচে থাকার পরও আমি থেকে আমরা হয়ে ওঠে ; কোলকাতার রতন –বাঁকুড়ার রতন-উত্তরপ্রদেশের রতন আর আমেদাবাদ এর রতনেরা ! হাওয়াদের কোনো সইসাবুত লাগে না – হাওয়াদের হারিয়ে যেতে ছুতো লাগে না । রতন হারিয়ে যায় ...
এই গলিটার মত গলি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই হলফ করে বলা যায়। আর সেই গলিটা দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে রতন। এক-একটা পা ফেলার সাথে রোমাঞ্চের গুঞ্জন উঠে আসে । সাবধানে পা ফেলে চলে রতন । শ্যাওলায় পা পিছলে যেতে পারে। একটু বিপজ্জনক অথচ কয়েক ফুটের এই গলিটা পার হলেই ...
কোলকাতার হাওয়ায় অদ্ভুত সব গন্ধ । কিছুটা সংস্কৃতি কিছুটা হালচাল – চলমান মেট্রো – শ্যামবাজার – শহর ছুটে যাচ্ছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত – তার কোঁচড়ে বনেদিয়ানার শেকড় এবং কসমোপলিটন দণ্ডবত। কোলকাতায় রাই আছে । রাই এর গায়ের গন্ধ আছে । রতন খুব জোরে জোরে শ্বাস নেয় । কোলকাতার হাওয়া কি আমেদাবাদ এ ভেসে আসে? আসতেই পারে । হাওয়াদের কোনো পাসপোর্ট লাগে না – রোমিং ও লাগে না । কোলকাতার সেইসব হাওয়ার কোনো একটায় রাই এর বুক থেকে উঠে আসা অদৃশ্য চিহ্ন থেকে যায় । পরম যত্নে শ্বাস নেয় রতন। কাকারিয়া লেক এর কাছে আরাধনা সিনেমা হল । আবিষ্কার করে যারপরনাই পুলকিত হয় রতন। সিনেমা দেখতে এতদিন আলফা-ওয়ান সিনেপলিস এ ছুটেছিলো রতন । ছুটেছে শিবা কমপ্লেক্স আশ্রমরোড । কিম্বা সিটিএম রেভলিউশন । ইমোশনাল ফিল্মম্যানিয়া বলে একটা রোগ আছে । মানুষ যখন খুব একাকীত্বে ভোগে – নিকষ নিঃসীম একাকীত্ব তখন অস্বাভাবিক রকমের সিনেমা দেখে – নিজের রুচির ভেতরে এবং বাইরে । যেসব সিনেমা সে একা দেখতে পারে না সেইসব সিনেমাও সে অনায়াসে দেখে ফেলে একা একাই তবে সিনেমাহলের অন্যান্য দর্শকদের মাঝে । সে মনে করে ওই একটা সময়ের জন্য সে আর একা নেই । যারা দর্শক তাদের সাথে একসাথে সে নিজের একাকীত্ব শেয়ার করে নেয় কোনো কমিউনিকেশন ছাড়াই । প্রচুর টাকা এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে রতনের। তেলুগু-ভোজপুরি-ইংলিশ-যতবিচ্ছিরি হিন্দি এমনকি গুজরাতী সিনেমাও সে দেখে ফেলেছে গাদাগুচ্ছেক। একদিনে পাঁচ-পাঁচটা সিনেমা পাগলের মত দেখে গেছে সে ।প্রতি টা সিনেমার টিকিট ২০০ টাকা করে।কিছুটা সময় এভাবে কাটে । কিন্তু একাকীত্ব যেন আরো ছেঁকে ধরে ।প্রতিবার সিনেমা শেষ হবার পর সিনেমাহল থেকে যখন সবাই বেরিয়ে যায় রতনের খালি মনে হয় আর একটু থাকা যেত না ! আরাধনা সিনেমা হল এ ৪০ টাকার টিকিট –ব্যালকনি । রতন এখন ওখানেই সিনেমা দেখতে যায় । লোকে ভীষণ প্রাণবন্ত ভাবে সিনেমা দেখে । সিটি মারে – নাচ করে। ওদের উদ্বেগ-কৌতুহল- আনন্দ-হতাশা –চিতকার –আবেগ সমস্ত কিছুর মধ্যে রতন নিজেকে খুঁজে পায় । নিশব্দে কথোপকথন হয় ওদের সাথে । ভোজপুরি সিনেমায় সুইটি ছাবড়া যখন কোমর দুলিয়ে আইটেম নাচে তখন সিনেমা হলের রিক্সাওলা থেকে বাবুসাব সক্কলে গলা জড়াজড়ি করে সে কি ফুর্তি-কি মস্করা রতন শুষে নেয় ! শুষে শু্ষে নেয় ।বাঁকুড়ার কথা মনে পড়ে ? বাঁকুড়ার সেই কুসুম হল। যেখানে একবার জোর করে এক বান্ধবী নিয়ে গেছিলো লে-ছক্কা দেখতে ? ২০টাকার টিকিট । না আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা না আছে ডলবি সাউণ্ডসিস্টেম না আছে মুভেবল আরামকেদারা আর না আছে ২০০ টাকার জাম্বো-পপকর্ন ! মানুষের গায়ের গন্ধ যে কতখানি ডেলিকেট হয় – একজন বান্ধবী কতখানি পরম আত্মীয়া হলে সামান্য যত্নই স্বর্গ হয়ে ওঠে মনে পড়ে যায় রতনের । আজ ওর আরাধনা সিনেমা হল এ গেলেও মনে হয় বাঁকুড়াতে পৌঁছে গেছি । “সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে অচেনা ক্রাউডকে এড়িয়ে আবছায়া রাত্তিরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরা যাবে ফেরা যাবে মনে কর ফেরা হল না বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেলো না কে যেনো ম্যাজিক করে ভ্যানিস করে দিয়েছে বাড়িটাকে বাড়িটাকে রোজই তো ঘটে কত হ্যানাত্যানা কেন এমনটা ঘটে না ঠিক যেমন অবাস্তবে আমার এ ভালোবাসা বেঁচে থাকে বেঁচে থাকে” –একাকীত্বটা কানে বেজে ওঠে ! আর ঠিক তক্ষুণী মনে পড়ে যায় রায়বরেলী উত্তরপ্রদেশের কথা ! প্রথম একার মত একা হওয়ার শুরু । বাবা-মা-পরিবার-পরিজন-সাধের বাংলা –বারো মাসে তেরো পাব্বন সব ছেড়ে সত্যি সত্যি একা । এভাবেই একটা গুজরাতের মধ্যে আস্ত কোলকাতা আস্ত উত্তরপ্রদেশ আরো কতকী অজানা আয়তনে ঢুকে আছে । বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য কে অনুভব করে রতন । বুকের মধ্যে গান বাজতে থাকে একা একা । একা একাই গুনগুনিয়ে ওঠে রতন । একাই শোনে একাই খায় একাই বাঁচে । একা একাই ভালোবাসে । একা একা গলি পেরোয় একটা । আমদেবাদ থেকে কোলকাতার শর্টকাট । যেটার খবর আর কেউ জানে না । শুধু রতন জানে। ওই গলিটার ওপারে আছে কোলকাতা । কোলকাতার কোনো এক গলি দিয়ে উত্তরপ্রদেশ । উত্তরপ্রদেশের কোনো এক শর্টকার্ট দিয়ে বাঁকুড়া। বাঁকুড়া থেকে ফ্যাণ্টাসিমোড়া অলিগলি পেরিয়ে আমেদাবাদ । এভাবেই মিশে থাকে বেঁচে থাকা । একা একা বেঁচে থাকার পরও আমি থেকে আমরা হয়ে ওঠে ; কোলকাতার রতন –বাঁকুড়ার রতন-উত্তরপ্রদেশের রতন আর আমেদাবাদ এর রতনেরা ! হাওয়াদের কোনো সইসাবুত লাগে না – হাওয়াদের হারিয়ে যেতে ছুতো লাগে না । রতন হারিয়ে যায় ...
8 comments:
Vishon valo likhecho... Jack Keruak er kotha mone porlo...unio evabe nijer jibon mishiye likhten
khub valo laglo... ei ekakitter bornona..ei hariye jawa...
রাজর্ষি অনেকদিন বলেছিলো একটা গল্প দিতে । মাথায় ছিলো কিন্তু লিখে উঠতে পারছিলাম না । অবশেষে হোলো - যেভাবে বাচ্চা হয় সেভাবে না হলেও হোলো । আমি সিওর ছিলাম না । ওকে বলেছিলাম ইচ্ছেমত এডিট করে নিতে । ও করে নি মনে হচ্ছে । এতজনের রেসপন্স পেয়ে আমি আপ্লুত । ক্ষেপুতেও বোধায় বেশ অনেকদিন বাদে লিখলাম ।
পরিশেষে একটা কথা বলিঃ আমরা "একা" নই ! কারণ আমাদের সাথে আমাদের অতীত এবং ভবিষ্যত সততই বর্তমান । অসম্ভব কড়া কথা উইথ মায়াবী মায়াবী যন্ত্রণা
bhai ami mugdha-ami harie gelam
ki likhechis guro...ভোজপুরি সিনেমায় সুইটি ছাবড়া যখন কোমর দুলিয়ে আইটেম নাচে তখন সিনেমা হলের রিক্সাওলা থেকে বাবুসাব সক্কলে গলা জড়াজড়ি করে সে কি ফুর্তি-কি মস্করা রতন শুষে নেয় ! শুষে শু্ষে নেয় ।বাঁকুড়ার কথা মনে পড়ে ? বাঁকুড়ার সেই কুসুম হল। যেখানে একবার জোর করে এক বান্ধবী নিয়ে গেছিলো লে-ছক্কা দেখতে ? ২০টাকার টিকিট । না আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা না আছে ডলবি সাউণ্ডসিস্টেম না আছে মুভেবল আরামকেদারা আর না আছে ২০০ টাকার জাম্বো-পপকর্ন ! মানুষের গায়ের গন্ধ যে কতখানি ডেলিকেট হয় – একজন বান্ধবী কতখানি পরম আত্মীয়া হলে সামান্য যত্নই স্বর্গ হয়ে ওঠে মনে পড়ে যায় রতনের ।...tui kar sathe gachilis...
E vabei mishe thake beche thaka. Tomar lekhoni beche thak ... Mishe jak emon hajar hajar Ratan er beche thakau ... Khub valo laglo.
ধন্যবাদ ! কিন্তু আপনার নাম দেখাচ্ছে না :/
তোর সাথে :D :D :D
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন