সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ২য় বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা

সম্পাদকীয়



এসো হে বৈশাখ...


বসন্তের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমরা গৃহবাসীরা দ্বার খুলে দিই। নব আনন্দে নতুন বছরকে আহ্বান জানাই, বরণ করি মহানন্দে। নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা, নতুন শপথ, নতুন লক্ষ্যনির্মাণ, নতুন উদ্যম... আরো আরো নতুন অনেক কিছু করার জন্য বুকবাঁধি! আমরা চলতে শুরু করি... চলি... একদিন... দুদিন... তিনদিন...! তারপর! তারপর আমাদের অস্থি-মজ্জাগুলো ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে...চিরাচরিত আলস্যধর্মে মুখ ডুবিয়ে যাপন শুরু করি... সেখানে উধাউ হয়ে যায় বর্ষারম্ভের সেই সব বাক্যরাশি! আর হবেই না বা কেন!! যেখানে চারিদিকে এতো নৃশংসতা! এতো স্বার্থপরতা! এতো মনুষ্যত্বের অবমাননা... আমাদের মনকে করে তোলে পঙ্গু! শপথ পালন করার সেই স্ব-পথ ঢেকে যায় বিধর্মী (যে নীতি-নিয়মাদি সমাজকে ধারণ করে তার বিপরীত) ঘূর্ণাবর্তে। আমরা ‘ওই আকাশের নিচে এই পৃথিবী আর পৃথিবীর প’রে ওই নীলাকাশ’ দেখতেও ভুলে যাই! ভুলে যাই ‘পরের কাষ্ঠাহরণ যাহার স্বভাব, সে পুনর্বার পরের কাষ্ঠাহরণে যাইবে’... ভুলে যাই ‘সমুখে সাগর বিরামহীন তাকিয়ে আছে, বুকে তার নয় বিরামহীন আবেগধারা’... এইভাবেই বিদায় দিই এক একটি বছরকে! হয়তো বা তার সাথে একটু একটু করে বিদায় দিই আমাদের মান-হুঁশ...


যাইহোক, বন্ধুরা! এই নববর্ষটি হোক আমাদের কাছে অন্যরকম। শুধু সাহিত্যাঙ্গনেই নয়, আমরা যেন তুখোরভাবে সমাজেও বিচরণ করতে সার্থক হই আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে নিহিত প্রতিবাদীসত্ত্বা নিয়ে! নির্মল সমাজগঠনে অগ্রদূত হই যেন কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী মানুষজনেরাই... যুগে যুগে এঁরাই পথ দেখিয়ে এসেছেন সমাজকে, রাষ্ট্রকে... আসুন বন্ধুরা নতুন বছরকে নতুনত্বে সাজিয়ে তুলি মনুষ্যত্বের আলোয় আলোয়... সৌরভে ভরিয়ে দিই বকুলে বকুলে...

ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে বাণীব্রত কুণ্ডু

মলয় রায়চৌধুরীর ডায়েরি

মলয় রায়চৌধুরীর ডায়েরি
কবি রাজকমল চৌধুরীর শেষ কনডোম


ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত, সন্তোষ রায় সম্পাদিত ‘জলজ’ পত্রিকার নভেম্বর ২০১২ সংখ্যায় হিন্দি কবি রাজকমল চৌধুরীর বিখ্যাত ( আলোচকদের মতে কুখ্যাত ) ‘মুক্তিপ্রসঙ্গ’ কবিতার বিশ্বজিত সেনকৃত বাংলা অনুবাদ পড়ার পর রাজকমল সম্পর্কে অনেক কথা মনে পড়ছিল । ‘মুক্তিপ্রসঙ্গ’ একটি দীর্ঘ কবিতা । হাংরি আন্দোলনের সময়ে রাজকমল কলকাতায় ছিল আর ওর সান্নিধ্যে কলকাতার অন্ধকার জগতটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল, কেননা সেসময়ে ওই জগতটির নিচুতলার বেশির ভাগ কুশীলব ছিল বিহারি, অনেকে রাজকমলের জেলার । তখনকার কলকাতায় চিনে পাড়ায় চিনেদের জন্যে যে বিশেষ চিনা রমণীদের রেড লাইট এলাকা আছে তা রাজকমলের দরুন জানতে পেরেছিলুম ।

রাজকমলের গ্রাম মাহিশিতে একটা মন্দিরের কথা বলত ও, যেখানে মোষ বলি হত আর গ্রামের সবাই সেই মোষের রান্নার ভোগ খেত । আমাকেও নিয়ে গিয়েছিল মোষের মাংস খেতে । আমি অবশ্য তার আগেই নেপালে কচিলা খেয়েছিলুম, গমের মদ সহযোগে । রাজকমলের মতে, ওই মন্দিরের তারা মূর্তির মাথায় ফুল রাখলে ফুলটা যদি না পড়ে তাহলে মনোকামনা পূর্ণ হয় । রাজকমল, আমার সামনেই কয়েকবার চেষ্টা করেছিল, প্রতিবারই ফুল পড়ে গিয়েছিল । ফুল রাখছিল ওর দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাইঝিকে প্রণয় নিবেদন করে সফল হবার আশায় ।



রাজকমলের বাবার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করেছিলেন । রাজকমলের বিমাতা ছিলেন রাজকমলের চেয়ে ছোট । বাড়িতে অবস্হা ঘোরালো হয়ে উঠছে অনুমান করে রাজকমলের বাবা রাজকমলকে সৌরঠ সভার গণবিবাহের মাঠে নিয়ে গিয়ে শশীকান্তা নামে একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন , আর রাজকমলকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন আমাদের কলেজের হোস্টেলে । বিয়ের চার বছর পর রাজকমল সাবিত্রী শর্মা নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করে, প্রথম বউ যদিও তখন বাড়িতে । সাবিত্রীর সঙ্গে বিয়ে এক বছরের বেশি টেকেনি, তার ভাইঝির প্রতি রাজকমলের টানের কারণে ।

দ্বিতীয় স্ত্রী সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কলকাতায় চলে এসেছিল রাজকমল । তখন আমি হাংরি মকদ্দমার দরুন কলকাতায় ফ্যা-ফ্যা করছি । আমার ফ্যা-ফ্যা বৃত্তির সঙ্গে যোগ দিল রাজকমল । ও ছিল ফালগুনী রায়ের মতন । গাঁজা আর চরসের নেশা ওকে ধরে ফেলল । ফলে শরীর বেশ খারাপ হওয়া আরম্ভ হতে ফিরে গেল পাটনায় ।

Add caption

আমি হাইকোর্টে মকদ্দমা জিতে পাটনায় গিয়ে দেখি রাজকমল হাসপাতালে ভর্তি । ওর জন্যে পাটনা হাসপাতালের রাজেন্দ্র ওয়ার্ডে একটা আলাদা ঘর বরাদ্দ হয়েছিল । প্রতি সন্ধ্যায় তরুণ সাহিত্যিকদের আড্ডা হতো । টের পাওয়া যাচ্ছিল ওর শরীরের অবনতি হয়ে চলেছে । ও বলত সার্জেন বলেছে অপারেশান টেবিলে পেট চেরার পর পুরো হাসপাতাল গাঁজার ধোঁয়ায় ভরে যাবে ।

একদিন সবাই চলে যাবার পর রাজকমল আমায় বলল, পরের দিন সকালে আমি যেন ওকে এক প্যাকেট কনডোম দিয়ে যাই । বলল, একটি নার্স রাজি হয়েছে । একটু পরে একজন মালায়ালি নার্স এসে ওর মাথায় যখন হাত বোলানো আরম্ভ করল, রাজকমল বলল, এই যে এই মেয়েটিই রাজি হয়েছে । মেয়েটি আমার দিকে চেয়ে হাসল , জানাল যে, আপনি কাল সকালে দিয়ে যাবেন এক প্যাকেট কনডোম ।


পরের দিন সকালে গিয়ে দেখি ঘর ফাঁকা । খোঁজ নিয়ে জানতে পারলুম যে রাতেই মারা গেছে রাজকমল । ওর মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ওর প্রথম স্ত্রীর কাছে ।

কবিতা - পিনাকী সেন

দুটি কবিতা
পিনাকী সেন


(১)

ভাববাচ্যে আর কতদিন
হ্যাঁ গো ও গো তুমি শুনছো
বলে বলে জীবনটাতো কাটিয়েই দিলে
এখন সরাসরি তুই-তুকারি
জাবর কেটে কেটে যত থুতু উগড়ালে
ঢোক গিলে ফেলে নিজেই আবার
ফেনিল সাগর বানিয়েছ অতল পেটে
চীৎকার ... গলা ফাটিয়ে
চীৎকার করে বেসুরো গাও দেখি একটা
স্পষ্ট উচ্চারণ অথবা সঠিক শব্দ-চয়ন
না হয় থুতুই ছেটালে কোচর ভরে
রুমালভেজা ছাপ দেখে দেখে
ঠিক পড়ে নেব তোমার অনুভব সিক্ত নিঃসরণ
পারলে বমিও করো আঙুল দিয়ে
ভারি বুক হাল্কা হবে
দেখবে কত সহজেই কেমন বুঝে নিই
যা কিছু অজারিত অপাচ্য


(২)
চিঠিগুলো যত্ন করেই রাখা ছিল
শুকোতে শুকোতে শুকোতে শুকোতে
সুতোটা আর সইতে পারেনি
মালাটা ছিঁড়ে গেল
টুকরো টুকরো মুক্তো
চাঁদের বহু পুরোনো কবিতা
প্রতিটি খাঁজ়ে অদ্ভুত অটুট মিল
অপারগ তাকিয়ে থাকি হলদেটে স্মৃতিতে রূপালি পোকারা লুকোচুরি খেলে কথাদের ছুঁয়ে ছিঁড়ে


কবিতা - ইসফ়ানদিয়র আরিওন

অজস্র পাতাবাহারি সিটি
ইসফ়ানদিয়র আরিওন


অন্ধকার জাপটে ধরে বলেছিলেـــــ আমার কাছে আলো আছে
সেই আলোর আবদার রাখতে গিয়ে কান পেতেছি বুকভরা হতাশায়
তোমার লম্বা বারান্দায় ঝাউশাখাদের বিতাড়িত বিকেল, কেয়ার কাঁটায় বিদ্ধ দুজনার ভুলভুলাইয়া মন, অঘ্রহায়ণের বিমর্ষ বিকেলে চড়ুইদের ডানা খুশবু, দুটো চোখ, শামনে হাজারো অঙ্গের লালিত্য ঢেকে রেখেছ ময়ূরের ধুপছায়া পাখায়, ঠোঁটে জমাট কুয়াশা, মাটিমাখানো তোমার সেই উল্লম্ব শরীর,
                                            আর নাগলিঙ্গমের গন্ধে বিভূষিত তোমার সেই আধ্যাত্মিক স্তনজুটি
                                                                      আর আমার তাসবিহ গুনে গুনে দেওয়া সিটি
উহ্, আর কিছু না হয়ে যদি তোমার অলক হতাম তোমার চিবুক স্পর্শ করতাম চন্দ্রাহত জঘন্য রাতে ।

কোনো এক বনফুলের মনে কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতে বেশিদিন বেঁচে থাকা যায় না । অথচ, আমার আজন্ম আরাধ্য থাকবে বনফুল হব । কার্তিকের গোধুলি তোমার বৃন্তে ঘষে ঘষে নেমে পড়ব দূর্বাষ্টমীর আববাহিকায় ।

কবিতা - সায়ক চক্রবর্তী

সায়ক চক্রবর্তী
এভাবেও শুরু হয়


দু একটা কথা যাও বাকি, নিয়ে যেও সাথে
একা পড়ে থাক ফটো ফ্রেম বুক-শেল্ফে।
বাথরুমে শাওয়ারের সুর নেই,
চেনা রোদ বাড়ির মাথায় বসে ডাকে পরিচিতা নামে –
যার সাথে মাখামাখি শরীর ছড়িয়ে।
সুখ চলে যায় সুখী হলে, এটাই মুখস্থ করে
বোকা ছেলে ছাদের কিনারে বসে।
এখানেই উপক্রমণিকার সূচনা...



কবিতা - অরণ্য প্রান্ত

কবিতা - স্মৃতিপলি-কাঁচনদী

অন্য দিন
স্মৃতিপলি-কাঁচনদী



এক পশলা বৃষ্টি শেষে মাটির একটা সোঁদা গন্ধ
নাকে লেগে থাকে, গাঢ় মৌতাত উসকে দেয়,
সঙ্গ দেয় লাজুক কিশোরী রোদ। ঠিক এই মুহূর্তে
যে বাড়িটা পেরিয় এলাম ওটা অবন্তিকাদের বাড়ি।
এই পথে এলেই আমার আগ্নেয়গিরির শীতল
পার্শ্বদেশের কথা মনে পরে যায়, নৈসর্গের কথা
ভাবতে গিয়ে সবকিছু কেমন বিসর্গে রূপান্তরিত হয়।
ইদানীং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য ফি বছর ফাগুন
আসেনা, অশোকে-কিংশুকে রং লাগেনা তেমন।
দৃষ্টিকোণের সঠিক কোন খুঁজতে জেরবার নগর
জীবন, চারিদিকে ফ্রাস্টেটেড গল্পের ঘুণপোকা
রোদ পোহায়, বুকের ভিতর একটা ছোট্ট মুনিয়া
উড়ে বেড়ায়, এ ডাল ও ডাল ছাড়িয়ে কখন যেন
আঙ্গুলে ছড়িয়ে পড়ে ধুলোমাখা ক্লান্ত পাখি।
স্মৃতির ভিতর একমাত্র প্রতিবিম্ব সুগঠিত কাঁচের নদী,
মাঝে মাঝে তার পাড় ভাঙ্গে। ওই পলি চূর্ণ বেলায়
বারে বারে পা বিঁধে যায়, বিশেষণ প্রকাশ্যে সাঁতরায়,
সর্বনামেরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে চেটে পুটে খায় সর্বস্ব। অথচ
একটা ছোট্ট ডাকে জড়ো হতে পারত এইসব যাবতীয়
চকিত, ছোটো ছোটো হোঁচটগুলো পেড়িয়ে এগুনো
যেত নিজস্ব যৌথ-খামারে, পাঁচমিশালী সংসার।
বাড়িটা এখন পিছনে পরে রইলো, মুনিয়ার মতো
আজকাল তুমিও মন থেকে আঙ্গুলে, তাই প্রাত্যহিক
এইসব বোকা বোকা কবিতারা রচিত হয়, বোঝেনা
বারবার তাকে জানিয়ে কী লাভ –
একদিন আমি কিন্তু ঠিক-ই এসেছিলাম।

দীর্ঘ কবিতা - সৌমনা দে

জন্ম সৌমনা দে

ও মরে গিয়ে একটা পাখির জীবন পেয়েছে।
আমার জানলার কাছে এসে রোজ -
আমায় একলা পেলে
কিচির-মিচির গল্প করে যায়ে ।
ও এখন আগের থেকেও বেশি খবর রাখে
তোমার- আমার।
পার্লামেন্ট অথবা গোপন বৈঠকের .........
আগের চেয়ে অনেক স্বাধীন যে এখন
নীল আকাশে ডানা মেলে উড়ছে ।
লোকের ঘরে দিব্যি উঁকি দিচ্ছে ।
মানুষ-জন্মের মেকি লাজ যে নেই এখন।


ওকে বলেছিলাম,
এমন উশৃঙ্খল কাজ
কেবল বিপদ বয়ে আনে।
পাখির জীবন পাখির মতই
সরল কাজে-
ওড়া, ঘোরা আর ঘর বোনায়
কাটুক ।
মাঝে-মাঝে আকাশ বেড়িয়ে বাঊল হবার সুযোগ তো রইলই ।


শুনলোনা।
 

একদিন ...... আর আসে না। আসে না।
খবর পেলাম, কোন এক দরদির হাতে নাকি খুন হয়েছে।
সকালের ময়লা তোলার গাড়িতে নাকি
body মর্গে গেছে।


পাখিদের মরণের তদন্ত হয় না...
মানুষ জন্মের সব কথা কি ওর মনে ছিল??
সেই যেবার রাত করে ফেরার পথে
অন্ধকারের বুক চিরে
কয়েকটা মানুষ-জন্তুর উল্লাস,
খাওয়া-খায়ি।
আর তারপর দু'দিন বাদে
গঙ্গার বুকে একটা ঠাণ্ডা শরীর ।
সেবার তো কোন প্রশ্ন ওঠেনি ।
তদন্ত , উঁহু , হয়েনি।
 

আমি চাই
পরেরবার ও পিঁপড়ের জন্ম পাক।
যেন , মরার আগে একটা কামড় দিতে পারে ।
তদন্ত - খুনির প্রতি
শোধ নিজের হুলে ।
 

একটা পিঁপড়ের অপেক্ষায় আছি ।

অনুবাদ কবিতা – ইন্দ্রাণী সরকার

অনুবাদ কবিতা
ইন্দ্রাণী সরকার


She was a Phantom of Delight

William Wordsworth

She was a phantom of delight
When first she gleamed upon my sight;
A lovely apparition, sent
To be a moment’s ornament:
Her eyes as stars of twilight fair;
Like twilight’s, too, her dusky hair;
But all things else about her drawn
From May-time and the cheerful dawn;
A dancing shape, an image gay,
To haunt, to startle, and waylay.

I saw her upon nearer view,
A spirit, yet a woman too!
Her household motions light and free,
And steps of virgin-liberty;
A countenance in which did meet
Sweet records, promises as sweet;
A creature not too bright or good
For human nature’s daily food;
For transient sorrows, simple wiles,
Praise, blame, love, kisses, tears, and smiles.

And now I see with eye serene
The very pulse of the machine;
A being breathing thoughtful breath,
A traveler between life and death;
The reason firm, the temperate will,
Endurance, foresight, strength, and skill;
A perfect woman, nobly planned,
To warn, to comfort, and command;
And yet a spirit still, and bright
With something of angelic light.


তার অপার্থিব সৌন্দর্য্য
উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ

তাকে প্রথম দেখার পর আমি হতবাক !
যেন সে এক পলকের একটি অলংকার |
এক অপার্থিব সৌন্দর্য্যে মহিমান্বিতা |
তার চোখ দুটি যেন গোধুলির তারা
ভোরের লালিমা আর বসন্তের সব
সৌন্দর্য্য নিয়ে সে সৃষ্টিকর্তার এক
অভিনব সৃষ্টি নৃত্যের ভঙ্গিমায় আঁকা |
নিয়ত তার রূপ আমায় চমকিত করে,
বিচলিত করে আনমনে আনমনে |

তার অন্তর্মুখী রমনীয় কমনীয়তার প্রকাশ
প্রতি পদে পদে যখন সে গৃহকার্য্যে রত,
তার মুখাবয়ব মধুর স্মৃতি আর আশ্বাসে ভরা |
সে প্রাত্যহিক জীবনের জন্য একদম উপযুক্ত
না হলেও তার এই সাধারণ অথচ সাবলীল
মনোভাব আর গতিবিধি, তার মনের আপাত
দুঃখ, সহজ চাটুকারিতা, প্রশংসা, দোষারোপ,
ভালোবাসা, চুম্বন, অশ্রু এবং হাসি সব কিছুই
আমায় আকর্ষণ করে, উত্সাহিত করে |

এখন আমি যতই তাকে ভালোভাবে দেখি
তার জীবনের প্রতি পদক্ষেপ অনুভব করি |
তার জীবন আর মৃত্যুর অনুধাবন, অবিচলিত
আত্মবিশ্বাস, দূরদৃষ্টি, শক্তি, গুণাবলীতে সে
যেন বিধাতার একটি সম্পূর্ণ আর নিঁখুত সৃষ্টি |
তার উপস্থিতি আমায় সচকিত করে, সঠিক
পথের সন্ধান দেয়, মনকে শীতল করে |
তবুও আমার কাছে সে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র
যে এক অলৌকিক উপস্থিতিতে মহিমান্বিতা ||




Love
Pablo Neruda


Because of you, I love the white statues
Drowsing in the parks, the white statues that
Have neither voice nor sight.

I have forgotten your voice, your happy voice;
I have forgotten your eyes.

Like a flower to its perfume, I am bound to
My vague memory of you. I live with pain
That is like a wound; if you touch me, you will
Make to me an irreperable harm.

Your caresses enfold me, like climbing
Vines on melancholy walls.

I have forgotten your love, yet I seem to
Glimpse you in every window.

Because of you, the heady perfumes of
Summer pain me; because of you, I again
Seek out the signs that precipitate desires:
Shooting stars, falling objects.


ভালোবাসা
পাবলো নেরুদা

শুধু তোমারি জন্য আমি পুষ্পিত বাগানে
বাসন্তী ফুলের আঘ্রাণ কামনা করি |

তোমার মুখ আর আমার মনে পড়ে না,
তোমার হাতও মনে পড়ে না;
কেমন লেগেছিল যখন তোমার ঠোঁট
আমার ঠোঁটে স্পর্শ করেছিলে ?

শুধু তোমারি জন্য আমি পার্কের সাদা
নিথর মুর্তিগুলি ভালোবাসি |

আমি তোমার আনন্দপূর্ণ কন্ঠস্বর ভুলে গেছি;
তোমার চোখ দুটোও যেন আর মনে পড়ে না |

যেমন ফুল অবশেষে তার গন্ধ হারায়,
আমি তোমার বিলুপ্ত স্মৃতিকে আঁকড়ে আছি |
আমি বেঁচে আছি এক যন্ত্রণাদায়ী ক্ষতচিহ্ন নিয়ে |

তোমার স্পর্শগুলি আমায় জড়িয়ে থাকে,
বিষন্ন দেওয়ালে বেয়ে ওঠা লতানে গাছের মত |
আমি তোমার ভালোবাসা ভুলে গেছি,
কিন্তু তাও আমি প্রত্যেকটি জানালা দিয়ে
তোমার চকিত দেখা পাই |

শুধু তোমার জন্য গ্রীষ্মের উগ্র সুগন্ধি
আমায় যন্ত্রণা দেয় | আমি আবার কামনা
ও বাসনা উদ্রেকের সামগ্রীর সন্ধান করি ;
নিক্ষিপ্ত তারকাসমূহ ও পড়ন্ত বস্তু |

হাসন রাজা - শৌনক দত্ত তনু

মরমী আলো...
শৌনক দত্ত তনু

এক.
আজকের দিনটি মনোরম।রোদ্দুরের তাপে জ্বালা নেই কিন্তু বাতাসে ভারী হয়ে আছে গোমট কান্নার বাষ্প।ফেলে যাওয়া স্মৃতি আর বসতবাটি।তবু আজ এক ভিনদেশ দর্শন যাত্রার উত্‍সব। অযোধ্যা থেকে একগোষ্টী যাত্রা করেছে পূর্ববঙ্গের দিকে।পরামরাজত্বের পথ মাড়িয়ে পায়ে হাঁটা পথের ক্লান্তি, নৌকাভ্রমন পেরিয়ে তারা বসত গড়ে তোলে দক্ষিণবঙ্গের যোশরে।তারপর সেখানেও বাজলো বিদায় সুর।আবার নতুন কোন সন্ধানে যাত্রা এবার নৌকাবহর যেখানে থামলো প্রাকৃতিক নৈস্বগে আর সুরমার তীর ঘেষা সুনামগঞ্জের তঘেরিয়ার লক্ষণছিরি পরগনায়।
নতুন জায়গা,নতুন মানুষ জীবিকা আর বেঁচে থাকার তাগিদে তারা তিলতিল করে গড়ে তুলো তাদের অবস্থান তাদের বেচে থাকার জমি।
সময় তার নিয়মে চলে চড়াই উত্‍রাই পার করে।বসন্ত যায় বর্ষা আসে আবার বসন্ত পাতা ঝরায় পলাশ ফোটে শিমুল ঝরে।হিন্দু এই জনগোষ্ঠী আপন করে নেয় অতীত স্মৃতি ভুলে নতুন ভূমি।সিলেটে তখন ইসলাম ধর্মের প্রবল চর্চ্চা।শাহসুলতান,শাহপরাণ সহ আরো মহাপুরুষরা তখন মানবতার বানী ছড়িয়ে বেরাচ্ছেন।মানবতার অহিংস নীতিতে মুগ্ধ হলেন অযোধ্যা থেকে আগত বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী তিনি ধর্মান্তরিত হলেন শান্তির ধর্ম ইসলামে।


দুই,

পৌষের সকাল ঘন কুয়াশায় রোদের দেখা নেই।জমিদার বাড়িতে খেজুরের রস এসে পৌঁচ্ছেছে।প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর উপস্থিতিতে অন্দর মহল থমথমে।কিছুক্ষণ পরেই তিনি বৈঠকখানায় যাবেন।তৃতীয় সন্তানের গর্ভবতী জননীর খোঁজ খবর নিয়ে ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে তৈরী হলেন দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী।খাজাঞ্চীকে ডেকে পাঠালেন খাজনা সংক্রান্ত হিসাবনিকাশের খতিয়ান নিয়ে বৈঠকখানায় আসতে।দুই পুত্রকেও ডেকে পাঠালেন।
১২৬১বঙ্গাব্দের ৭ই পৌষ(২১শে ডিসেম্বর ১৮৫৪)কর্মব্যস্ত জমিদার বাড়ী শিশুসন্তানের কান্নায় মুখোরিত হয়ে উঠে।সেরেস্থা থেকে দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী দৌড়ে যান অন্দর মহলে তৃতীয় পুত্র সন্তানের মুখ দর্শন করে আযান দেন।এবার শুরু হয় সদ্যজন্ম নেয়া পুত্র সন্তানের নামকরণের তোড়জোড়।আলী রাজা তার খালাতো ভাই আমরি বখশ চৌধুরীর নিঃসন্তান বিধবা হুরমত জাহান বিবিকে পরিণত বয়সে বিয়ে করেছিলেন।হুরমত জাহান বিবির গর্ভেই এই পুত্র সন্তানের জন্ম।পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী তার বৈমাতৃয় ভাই দেওয়ান ওবেদুর রাজা চৌধুরীর পরামর্শে নবজাতকের নামকরণ করলেন অহিদুর রাজা।



তিন,
সময় নিরন্তর হাঁটে তার পায়ে ধুলো উড়ে না ক্লান্তি নেই ঘুম নেই তার।অহিদুর রাজা বেড়ে উঠছে সময়ের নিয়মে।আরবী ফরসীর চর্চায় বড় হয়ে উঠা আহিদুর রাজা।সিলেটে তখন আরবী ফরাসীর প্রবলভাবে প্রচলন চলতো।বালক আহিদুর রাজাকে একদিন সিলেটের ডেপুটি কমিশনার অফিসার নাজির আব্দুল্লা বলে এক বিখ্যাত ফরাসি ভাষাবিদ পরামর্শ দিলেন আহিদুর রাজা বদলে দেন তার মতে আহিদুর রাজা হয়ে উঠলেন হাসন রাজা।সুদর্শন বালক হাসন রাজা যৌবনে পা রাখলেন।বহুলোকের মাঝে চোখে পড়ার মত সৌমদর্শন,দীর্ঘভূজ ধারাল নাসিকা,জ্যাতিরময় পিঙ্গল চোখ।একমাথা কাবলিচুল পারসিক দেহধারী।তা ছাড়া উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছিলেন বিশাল সম্পত্তির মালিক আর এই যৌবন এবং অর্থ তাকে করে তোলে ব্যভিচারী।ভোগবিলাস আর নারী সম্ভোগে তিনি হয়ে উঠলেন অক্লান্ত।নিজের এই লম্পট কে তিনি নিজেই একটি গানে লিখেছিলেন-'সর্বলোকে বলে হাসন রাজা লম্পটিয়া'নিত্য নতুন নারী সঙ্গী ও নতর্কী ভোগী হাসান রাজার ঘরে একদিন তার মা নতর্কীর বেশে এলেন।লম্পট ছেলে হাসন তার মা র এই আগমন তার মনে ঘৃণার সঞ্চার করলো এবং সেইদিন তার এতবছর ধরে করা অপরাধ তার মনমানসিকতায় তৈরী করলো বৈরাগ্য।পাখিপ্রেমী ও ঘোড়া প্রিয় হাসন রাজা।(কুড়া ছিল তার প্রিয় পাখির নাম আর ঘোড়াদের নামছিলো জং বাহাদুর এবং চানদমুশিক)আর আনন্দবিহারে বজরায় ভোগবিলাস নারীতে মদে মত্ত এবং প্রজাদের থেকে দূরে চলে যাওয়া হাসন এই ঘটনার পর ফিরে এলেন নতুন জীবনে প্রজাদের সুখ দুঃখের পাশে একজন যথার্থ জমিদারে রূপান্তরিত হয়ে।



চার,

বৈরাগ্যকালে তিনি দরবেশ জীবন পালন করতেন।বাইজীর গানে মত্ত হাসন রাজা মরমীসাধনার দিকে আত্ননিবেদন করলেন।মরমী সাধনা বাংলাদেশের দর্শনচেতনার সাথে ঘটালেন সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ।হাসন রাজা লালন শাহ এর প্রধান পথিকৃত এর পাশাপাশি নাম আসে দুদদু শাহ,পাঞজশাহ,পাগলা কানাই,রাধারমন,আরকুম শাহ,জালাল খাঁ আরো অনেকের।এতে একটি বিষয় পরিষ্কার দাবী রাখে ২০৬টি গান হাসন রাজার নয় বরং হাসন রাজা একটি মরমী সঙ্গীতসাধনার সময়কাল।প্রশ্ন উঠবে জানি কেন ২০৬টি গান হাসন রাজার নয়।তথ্য মতে হাসন রাজার দরবারে নানান মরমীসাধক যেতেন নিত্য গান হতো।জমিদারকে খুশি করতে মরমীসাধক গায়করা গান বাঁধার সময় হাসন রাজা নামটা জুড়ে দিতেই পারতেন।তবে এটাও সত্যি হাসন রাজা মুখেমুখে দর্শনপূর্ন মরমী গান রচনা করতেন আর তার সহযোগীরা তা লিখে রাখতেন।আর তাই গানে ছন্দপতন,শব্দপ্রয়োগে অসতর্কতা দেখা যায়।তার গানে দেখা যায় আঞ্চলিক বুলি,প্রবচন ও বাগধারার ব্যবহার।হাসন রাজা কোন পন্থার সাধক ছিলেন তা সুপষ্ট নয়।তার পদাবলীতে কোন গুরুর নাম ও পাওয়া যায় না।তাই জোর গলাতেই বলা যায় হাসন রাজা একটি সঙ্গীতসময়কাল।যদিও কেউ কেউ বলেন তিনি চিশতিয়া তরিকার সাধক ছিলেন।যদিও তিনি বাউল বাউল বলে কখনো কখনো উল্লেখ করেছেন।তবে তিনি বাউলদের সমগোত্রীয় হলেও নিজে আনুষ্ঠানিক বাউল ছিলেন না।সূফীমতের সঙ্গে দেশীয় লোকায়ত মরমীধারা ও নিজসব চিন্তা দর্শনের মেলবন্ধনে তার সাধনার পথ বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।তার সঙ্গীতরচনার পশ্চাতের একটি সাধন দশর্নের পরভাব বলা যায়।


পাঁচ
১৯শে ডিসেম্বর ১৯২৫খ্রীঃ Indian philosophical congress এর প্রথম অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন।সভাপতির অভিভাষনে তিনি প্রসঙ্গক্রমে হাসন রাজার দুটি গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তার দর্শন চিন্তার পরিচয় দেন।

১৯৩০সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের'হিবার্ট লেকচারে'ও রবীন্দ্রনাথ'The Rellgion of Man'নামে যে বক্তৃতা দেন তাতেও তিনি হাসন রাজার দর্শন ও সঙ্গীতের উল্লেখ করেন।

মম
আঁখি হইতে পয়দা আসমান
জমিন
শরীরে করিল পয়দা শক্ত
আর নরম
আর
পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা আর
গরম
নাকে পয়দা করিয়াছে খুসবয়
বদরয়।

এই সাধক কবি দেখিতেছেন যে,শাশ্বত পুরুষ তাঁহারই ভিতর হইতে বাহির হইয়া তাহার নয়ন পথে আর্বিভূত হইলেন।বৈদিক ঋষিও এমনভাবে বলিয়াছেন যে,যে পুরুষ তাঁহার মধ্যে তিনিই আধিত্যমন্ডলে অধিষ্ঠিত।

ছয়,

ডিসেম্বরের ৬ বাতাসে ঠান্ডা আভাস হেমন্তের শেষ।শেষ বেলার গোধুলিতে সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় ভেসে আসচ্ছে আযান আর উলুধ্বনি।কোথায় যেন একটা শূন্যতা।কুয়াশার ঘোরে দূর আর ও দূর থেকে নশ্বর এক দেহ দেহতত্ত্বের মরমী আলোয় ভেসে আসে অমর এক করুন মিনতি 'ছাড় ছাড় হাসন রাজা এ ভবরে আশা।
পরান বন্ধরে চরণ তলে কর গিয়া বাসা রে....'

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ
পিতা ভানু দত্ত এবং অম্লান সরকার শুভ,অমিত দত্ত।

ধারাবাহিক - অভীক দত্ত


বিলাভারত-৩ অভীক দত্ত


কোলাজ বিলা

১।

এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। মহাভারতে সঞ্জয়ের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। সঞ্জয়ের কাজ ছিল ধৃতরাষ্ট্রকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট করা, কোথায় কি হল। মানে এখনকার দিনের রেডিও সাংবাদিকের কাজ। এবার সমস্যা হল সঞ্জয়ের আবার কোন দলের ব্যাপার ছিল না। তখনকার দিনে চিটফান্ড বলে কিছু ছিল না, শাসকদলের চ্যানেল বিরোধী দলের চ্যানেল ইত্যাদি কিছু ছিল না। তাই সঞ্জয়কেও হলুদ সাংবাদিকতার আশ্রয় নিতে হয় নি। কুরুক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে তাই তাই জেনেছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। ভাগ্যিস মহাভারত এই সময়ে লেখা হয় নি। তাহলে এত চ্যানেলের জ্বালায় ধৃতরাষ্ট্রর ইয়ে মারা যেত।

কোন আখ্যানে হিরো আর ভিলেইন যেমন আলাদা করে বোঝা সহজ মহাভারতে এই কাজ বেশ কঠিন। কর্ণকে কখনও খুব কঠিন ভাবে দেখানো হয়েছে, আবার যখন কৃষ্ণ কর্ণকে সরাসরি লোভ দেখাতে গিয়েছিল কর্ণের তীক্ষ্ণ উত্তর কৃষ্ণকে চমকে দিয়েছিল। অর্জুনকে হিরো বলতেও অসুবিধা হয় কারণ দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় অর্জুনের চুপ থাকাটা কাপুরুষতার পরিচয়। ভীমকে পেটুক, মাংসলোভী ও স্বার্থপর বলা হয় কিন্তু দেখা যায় দ্রৌপদীর বারে সব থেকে বেশি নেচেছে ভীম। রামায়নে শ্ত্রুঘ্নর যেমন কোন ভূমিকা পাওয়া যায় না(ভানুর ভাষায় ও যে সারাজীবনে কয়ডা শ্ত্রু মারসে তার হিসাব নাই), মহাভারতে দুই মাদ্রিপুত্রের অবস্থাও সেরূপ। নকুল আর সহদেবের কোন কংক্রিট ভূমিকা পাওয়া যায় না সেভাবে। শকুনিকে মারা ছাড়া এরা যে সেরকম কিছুই করেনি।

কর্ণের সাথে দরাদরির সময় কৃষ্ণ কর্ণকে প্রস্তাব দিয়েছিল তুমি বাপু পান্ডবপক্ষে যোগ দাও তবে তুমি রাজ্য তো পাবেই তার উপরে দ্রৌপদীর ভাগটাও পাবে। এ এক অত্যন্ত নোংরা ঘটনা। নারীদের দাঁড়িপাল্লায় তুলে ভীষণ বিচ্ছিরিভাবে লোভ দেখানো হত। বলা বাহুল্য এক্ষেত্রে কোন রকম প্ররোচনাতেই পা দেয়নি কর্ণ, এই ব্যাপারটাও তার পক্ষে যায়। উল্টে দুর্যোধন তার জন্য কি কি করেছে, সারথি পরিবারে তার কি কি কমিটমেন্ট আছে এইসব হাজারো তথ্য কৃষ্ণকে শুনিয়ে দেয় সে। তার দিকে তাকিয়ে দুর্যোধন কুরুক্ষেত্রর মত এতবড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এই সময় সে কি করে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে?

আদতে কুরক্ষেত্র যুদ্ধের কিছু আগে থেকে কর্ণের চরিত্র মহিমান্বিত করার একটা চেষ্টা দেখা যায়। এর আগে কর্ণকে রীতিমত ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে প্রোজেক্ট করা হয়েছিল।

মহাভারতের আরও এক ট্রাজিক চরিত্র ভীষ্ম। নিজের বাবার জন্য নিজের যৌবন কুরবান করে দিয়েছিলেন তিনি। ভাবা যায়? একই ধরণের চরিত্র আদিকথায় রাজা যযাতির পুত্র পুরু। শুক্র ক্রুদ্ধ হয়ে যযাতিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন তিনি জরাগ্রস্থ হবেন। যযাতি তখন শুক্রের হাতে পায়ে ধরলে তখন শুক্র বলেন তার কোন ছেলে যদি বাপের জরা ধারন করে তবেই যযাতি পুনরায় যৌবন ফিরে পাবেন, পাঁচ ছেলের মধ্যে একমাত্র ছোট ছেলে পুরু এই শর্তে রাজি হলে যযাতি এক হাজার বছর (* মহাভারতের এই এক হাজার বছর, একশো ছেলের বাপ এই সব ব্যাপারে লীলা মজুমদার একটা চমৎকার ব্যাপার বলে গেছেন। তারা তো তখন বড় বড় রাজা ছিলেন,ছোট ছোট কাজ করলে ঠিক প্রচার পেতেন না। তাই পাঁচ ছেলেকে পঞ্চাশ ছেলে, পাঁচ বছরকে পঞ্চাশ বছর দেখিয়ে গেছেন। এই নিয়ে অনেকের মধ্যে অবশ্য মতপার্থক্য দেখা যায়। তখনকার দিনে সবকিছু নাকি ফ্রেশ ছিল, শুধু তারই জন্যে নাকি অনেকে অনেক বছর বেঁচে থাকত। ) যৌবন ভোগ করেন। ওই সময়টা পুরু জরাগ্রস্থ হয়ে থাকে। যৌবন কাটিয়ে এলে যযাতি তার সমস্ত সম্পত্তি ও যৌবন ছোট ছেলেকে দান করে। প্রজারা যযাতির কাছে জানতে চায় কেন সে চার পুত্রকে সম্পত্তি থেকে কাটিয়ে দিল। উত্তরে যযাতি বলে দিল যে ছেলে বাপের কথা শুনেছে, সেই রাজত্ব পাবে।

আমাদের ভীষ্ম সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছেন। সামনে ডবকা ডবকা মেয়েছেলে দেখেছেন। হারেম ছিল। ব্যবহার করেননি। এমনকি যখন তার সৎ মা তাকে অনুরোধ করেন তার বউ মাদের সাথে শোয়ার জন্য তখনও সম্পূর্ণ ভাবে নিজের প্রতিজ্ঞা বজায় করেছিলেন তিনি।

সবাই ক্ষুদিরামকে যে কেন একা দোষী বলে!

২।

তখনকার দিনের স্বর্গের অপ্সরা বেশ অ্যাভেইলেবল ছিল। যখন তখন মর্ত্যে নেমে এসে যার তার সাথে শুয়ে পড়ত। কিন্তু কেসটা হল তারা মর্তেই বাচ্চা পয়দা করে যেত। শকুন্তলা থেকে দ্রোণাচার্য সবাই এই পথের পথিক। পরের সংখ্যার বিলাভারতে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

(চলবে)

ছোটগল্প – উল্কা

চট্‌চটাচটিচটেচটো
উল্কা



ছাদের কার্নিশে চটি খুলে উঠে বসল বলাই।একটু আগেই বিরেন স্যার বাংলা কপচে গেছেন।একরাশ সন্ধি সমাস কারক বিভক্তি কোনোটার সাথে কোনোটার খাপ খায় না এদিকে একটা বাক্যে সবাই আছে তাল মিল করে।বেশ তো লাগছিল সাগরসঙ্গমে নবকুমারের একখাবোল তমালতালিবনরাজিনীলা না কি যেন।উপভোগ্য আরাম দায়ক।জীবনবিজ্ঞান স্যারই তো সেদিন বললেন এটা অ্যাডোলেসেন্স পিরিয়ড।এই সময় শরীরের সব ঘুমন্ত অর্গানগুলো কারণে অকারণে সাড়া দিতে থাকে।বলাই বাহুল্য এতো ষাঁড়াষাঁড়ি হয়ে যাচ্ছে!তবে মেয়েগুলো সেদিন অদ্ভুত ভাবে চুপকে চুপকে স্টাইলে হেসে উঠেছিল।এই হাসির পিছনে সামনে কোন কারণই ঠিক ঠাক ফিট করছিল না।পাশে বসে খাতায় অ্যাবস্ট্রাক্ট ভঙ্গিতে আঁকা জীবনবিজ্ঞান বই থেকে নারী দেহটার স্তনে দুবার বল পেনের মুখটা ঘষে সন্ত বলছিল “ওই যে পিরিয়ড বলেছে সে জন্য ওরা হাসছে।ও তুই বুঝবি না, জটিল ব্যাপার...”জটিল ব্যাপার শালা নিজেই জানে না জটিল ব্যাপার।কিন্তু সন্তু কিছু কিছু জিনিস এত ভয়ানক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে যে আহা...তৃপ্তি ছাড়া আর কিছুই লাগে না।আরে বাবা অ্যাডলেসেন্সে তো সেটাই চাই... বুঝবে কে।পুরো শীতের দুপুরগুলো এই স্যারের জ্বালায় দফারফা হবে নিঃসন্দেহে।মাধ্যমিক বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তা।জীবনবিজ্ঞান ক্লাসটা ছিল বলে রক্ষে।বিরেন স্যার বিদায় হওয়ার পর সন্তুবাবার দয়ায় কেটে যায় দুপুরটা।মনে পড়ে ক্লাস এইটে সন্তু স্কুলে মাঝে মাঝে চটি পড়ে আসত।খুব শখ ছিল ওর নানা রকমের চটির।লাল নীল ডিজাইন করা।কোন কোনটাতে আঁকা থাকতো মাল্টিকালারের ফুলপাতা। মাঝে মাঝে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে ওর দাদার বিদেশি চটিও পড়ত। সেই গল্প বলাই অবাক হয়ে শুনত।বলাই যদিও সন্তুকে একজোড়ার বেশি চটি পড়তে দেখেনি,তাতেও আবার সেফটিপিন লাগানো। সেফটিপিন এটার মধ্যেও কত রকম মজারু আছে সেটা ওর কাছেই জানতে পেরেছিল বলাই।বাসে ট্রামে দু তিন টাকায় বিক্রি হওয়া এই জিনিসটার যা কপাল কোথায় না কোথায় লাগানো থাকে বলে চোখ মেরেছিল সন্তু।



বিলটুদের ছাদে দুটো পায়রা বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে। একটা গোলা পায়রা আরেকটা সাদা।অ্যালজেব্রা দিয়ে লিঙ্গ বানানো বেশ মজার! দুটো এক্স জুড়লেই একটা জলজ্যান্ত নারী আর তিনটে জুটলে...এটা ভাবলেই কেমন একটা শিহরণ জাগে বলাইয়ের পেটে।নারী ছাড়া যেন কিছুই কমপ্লিট না।তাসের দেশেও আছে বিবি।সন্তু এদেরও এক্স ওয়াই ক্রশ করে একটা ছয় আর একটা নয় কিভাবে হতে পারে দেখিয়েছিল।ওটা নাকি ওর দাদার থেকেই শেখা।সত্যি একটা দাদা থাকলে কত সুবিধে হয়।চটির দিকে এতক্ষণ নজর ছিল না তার। নতুন কিনেছে চটিটা।দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।আগামী শুক্রবার সন্তু চেয়েছে পড়বে বলে।চটি এক্সচেঞ্জ!পায়রাগুলোর কি মজা খালি পায়ে উড়ে বেড়ায় হেঁটে বেড়ায়।কোন এক্স ওয়াই জেডের বালাই নেই।প্রাকৃতিক নিয়মে কেমন সব আপনা আপনি হয়...আর এদিকে বলাইয়ের জীবনের অন্তরমহল চোখের বালিতে কিচকিচ করছে।চটিতেই কেবল যেটুকু নতুনত্ব বাদবাকিটা ক্যামন খ্যাব্রাখ্যাচাং হয়ে গেছে।



প্লাস্টিক হাতে মেয়েটা অনেকক্ষণ থেকে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।চিমসে শরীর কিন্তু ডবকা।ডবকা শব্দটার তুলনা একটা জলজ্যান্ত মানুষের সাথে কিন্তু প্রতি মুহূর্তে ডবকাই জেতে। এটার এমন গোল নিটোল ভাব আছে যে কামড়ে খাবলে চেটে আরশোলা হয়ে যেতে ইচ্ছা করে বলাইয়ের।মেয়েটা চটি পড়েনি ফ্রক পড়েছে।মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছে বলাইয়ের দিকে।তাকিয়েই থাকছে...পরশু রাতের সাক্ষী ওর বিনুনির লাল ফিতে নেতিয়ে রয়েছে।সেদিন দুপুরে দেখা হয়েছিল মেয়েটার সাথে।হাওয়ায় উড়ন্ত ফ্রকের ঘের দুহাতে চেপে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার মোড়ে।বলাইয়ের সামনে হাঁ করে ছিল ওর ফ্রকের চেন কাটা উদোম পিঠ।চোখ নামাতে গিয়ে দেখে ফেলেছিল বিশ্রী ভাবে ফাটা নোংরা ওর পায়ের গোড়ালিটা।আজ ফ্রকটায় বোতাম রয়েছে।ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলে মেয়েটার চোখে তলিয়ে যাবে বলাই।ইদানিং আলাদিন হতেও ইচ্ছা করে বলাইয়ের।কিন্তু ওর প্রদীপ নেই আছে চটি।তবে কি গুগাবাবার মত!না না ওদের তো জুতো ছিল তাও ভুতের রাজার দেওয়া।দীর্ঘ ল্যাজ বিশিষ্ট জানোয়ার হয়ে বসে আছে বলাই। সামনে চটি, পিছনে সন্তু, রাস্তায় অনামিকা, অলক্ষ্যে জোড়া পায়রা, নেপথ্যে ষড়যন্ত্রী মাধ্যমিক।

পুস্তক সমালোচনা : সুবীর সরকার

নির্বাচিত কবিতাঃ সুবীর সরকার
একলব্য হরিণ


একজন কবির ষোল বছর ধরে লিখে চলা কবিতার বইগুলি থেকে যখন নির্বাচিত সংগ্রহ পড়া হয় তখন তা শুধুই কবিতাপাঠ থাকে না,তা হয়ে ওঠে অভিযাত্রাও। কবির ভাঙা-গড়া আলো-অন্ধকার হয়ে ওঠে পাঠকেরও আত্মজ্ঞান।কবিতার মাধ্যমে একজন কবি তো নির্মাণ করে চলেন তাঁর বিশ্ববোধ,তাঁর সময়। চলমানতার এই বিষয়টি পাঠকের একটি বাড়তি পাওয়া।এই বাড়তি পাওয়া টুকু সঙ্গে নিয়েই আমরা হাতে তুলে নিই সুবীর সরকারের নিবার্চিত কবিতা।এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ যাপনচিত্র থেকে ২০১১-তে প্রকাশিত বিনোদন বিচিত্রা পর্‍যন্ত ১৬ টি গ্রন্থের নিবার্চিত কবিতাগুলি।

প্রথম কবিতাটি শুরুই হচ্ছে -অথচ নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে সুপুরীবাগান পর্‍যন্ত/ যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার।একটি কবিতা যখন অথচ এই সংযোজক দিয়ে শুরু হয় তখন আমরা বুঝি কবি পাঠককে একটু অচেনা পথে হাঁটার আমন্ত্রন জানাচ্ছেন।সংযোজক দিয়ে কবিতা আরম্ভের ব্যাপারে অনেকে তাঁদের অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাসাহিত্যে।আমরা সেইসব নিষেধাজ্ঞা আপাতত অমান্যই করছি।আসলে যে পংক্তিটি হওয়া উচিত ছিল কবিতার শেষ পংক্তি তাকেই প্রথমে নিয়ে এসে ভেঙে দিয়েছেন মান্য পারম্পর্‍য।বাধ্যতার রাস্তাঘাটগুলি কবিকে তাঁর একান্ত গন্তব্য থেকে বিরত রাখছেঃ আর সেই শহরের ঝুলে থাকা রাস্তাঘাট/আমি কিছুতেই অতিক্রম করতে পারিনা।বাধাস্বরূপ এইগুলি তো আসলে গুরুত্বপুর্ন নয়,গুরুত্বপুর্ন ছিল প্রসঙ্গতঃ এই যে না যেতে পারা,আকাঙ্ক্ষা থেমে যাওয়া এই এক বিষন্নবোধ সুবীরকে বলা যায় কখনওই পিছু ছাড়ে না। পরবর্তীতে জোকারের দিনলিপি কবিতায় আবার তাকে আমরা বলতে শুনছি-বড় জোর কাঠের পুল তার বেশি আর যাওয়া হয় না।দূরে কোথায়,দূরে কবির মন ঘুরে বেড়ায়,সুবীর যেন কিছুতেই সেই দূরত্বটুকু অতিক্রম করতে পারেন না।তাই রোমান্টিকতা সুবীরকে জারিত রাখে।যাই হোক,বিষয়টি ঠিক একেবারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।উনিশে আগস্টের কবিতা থেকে আত্মজীবনীর ছেঁড়া অংশ-র প্রথম অংশ-র শুরুর শব্দটি হল তারপর; আরও স্পষ্ট করে কবিকে আমরা স্পর্শ করতে পারি যখন তৃতীয় অংশ তিনি শুরু করেন এই বলে যে-তো ব্যস্ত রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে একা একা নদীর দিকে যায় জীবন—।আমাদের এইরকম মনে হয় যে কোনও আরোপিত অবস্থান নয়,এই লেখক কবিতাযাপন করেন।দিনের যে কোনও মুহুর্ত,উচ্চারিত যে কোনও প্রাত্যহিকতা থেকে সুবীরের কবিতা শুরু হতে পারে,হয়ে যায়।

যেমন অসুখ সংবাদ পড়ছি কবিতাটি।পরিচিত কেউ,হয়তো বিশেষ কেউই,হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর রয়েছে।কবি তাকে দেখতে গিয়েছেন।এই সরল স্বাভাবিক ঘটনা থেকে শুরু হয়ে কবিতাটি ভেঙে ফেলল তার স্বাভাবিক চলন।সুবীর লিখলেনঃ

অস্ত্রোপচারের পর তুমি কেমন আছো এটা জানবার
জন্য আমি হাসপাতালে যাই
অন্ধকারে বেজে ওঠে ব্যান্ডপার্টি... জলাশয়ে জল নেই
তাই সরাইখানা নাম পালটে এখন গার্লস হস্টেল
প্রতিরক্ষা ভেঙেপড়ছে...যদিও ডেটল সাবান, ব্লাডব্যাঙ্ক
অ্যাম্বুলেন্স-এইসব কেন্দ্রে রেখে
জীবন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে আমার

অসুস্থ-আমরা সঠিকভাবেই ধরে নিচ্ছি-মেয়েটির অবস্থা আমাদের কবি স্পষ্ট করে জানান না।ব্যান্ডপার্টির উল্লেখে আরোগ্যের কথা ভাবি,আবার প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ছে ভেবে আমাদের ভাবনা অন্যতর হয়।এবং এইসব অনুষঙ্গে এবং এই আরোগ্য বা আরোগ্যহীনতায় কবির জীবন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।

ঠিক এই কবিতার পাশাপাশি আমরা যখন তুমি দীর্ঘবেনী খুলে দিলে-র মত কবিতা পড়ি তখন পাঠক হিসেবে সে এক পরিপূরক প্রাপ্তি।নিজের মত করে বলে ওঠা সম্বোধনে,নিজের মত করে ভেবে ওঠা শব্দের রূপমায়ায় কবিতাটি সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে।ধ্রুপদী রোমান্টিকতার বৈশিষ্ট্য যে বিষন্নতা-সেই বিষন্নতা কবিতাটিকে স্পর্ষ করে র‍য়েছে।তাই আমরা পড়ছিঃ

আলোঢালা আকাশ আমি তোমার কাছে
সমুদ্রের ঠিকানা চেয়েছিলাম
জীবনে আঙুল ডুবিয়ে বিষাদের আঙুল ডুবিয়ে
দেখি আরো আরো জীবন

তুমি দীর্ঘবেনী খুলে দিলে শুরু হবে নগরকীর্তন।

যে গল্পটির আভাস লুকিয়ে রেখেছে কবিতাটি,সেই গল্প এই সংকলনে প্রায় ফল্গুর মতন বহমান।কেবল পালিয়ে বেড়ানো এক অবয়ব, পরিপূর্নভাবে স্পর্ষ করতে না পারা এক অনুভব সংকলনটিকে এক মায়ারহস্যের আলোর ভরিয়ে রেখেছে।চাপা বিষাদের কবিতা-র নাম থেকে আমরা এই বোধটিকে চাপা বিষাদের বোধ হিসেবে অভিহিত করতে পারি।শোকচিহ্ন কবিতাটি জন্মদিনের কথা বলেছে,কিন্তু আমরা একটু বিস্ময়ের সঙ্গে খেয়াল করি তার পিছনে খেলা করছে কিছু অন্ধকার।বক্তব্যবিহীন দু-একটি ছবি-কিন্তু তারাই এঁকে দিচ্ছে জীবনের কোনও একটি টুকরো কিন্তু সম্পুর্ণ ক্যানভাসঃ

হারিয়ে যাবার কথা উঠলেই একটা গোটা
হাসপাতাল
জন্মদিন পালন করি রক্ত
ও ডেটল দিয়ে।
বিজ্ঞাপনের শহর-কবিতায় সুবীর সম্ভবত একটি আত্মস্বীকৃতি নথিভুক্ত করেছেনঃ ...এইসব
কেন্দ্র করে ধিরস্থির জমে ওঠে আমাদের
বিষাদযাপন
এই মূল ভরকেন্দ্রসম সুরটিকে আমরা মান্যতা দিলাম।

০২।

একজন কবিকে তাঁর শব্দব্যবহার,তাঁর দৃষ্টির ভিন্নতা দিয়ে যদি চিহ্নিত না করা যায় তাহলে তা কিঞ্চিৎ হতাশই করে।সুখের কথা সুবীরের কবিতা আমাদের হতাশ করে না।

জ্যোৎস্নায় কিছু বর্ণনা করলে আমরা চাঁদের আলোয়-ই সাধারণতঃ লিখে থাকি।সুবীর লেখেন-কিছুটা চাঁদের আলো ধার করে।এই যে ধার করা ক্রিয়াপদ তিনি চাঁদের আলো সম্পর্কে লিখলেন প্রথম পংক্তিতে (কবিতার নামকরণেও),আমরা অন্যমনস্ক হতে পারি না।আর তিনি শেষ করছেন এই লিখে যে-আর কিছুটা চাঁদের আলো ধার করে উড়ে/আসে বৃষ্টিঠোঁট পাখিরা। ছোট কবিতা; কিন্তু সূচনা ও সমাপ্তির মধ্যে তিনি মিশিয়ে দিয়েছেন ব্যক্তিগত শোকযাত্রা,মহাজাগতিক সংঘটন,লোকগান। প্রক্ষিপ্ত নয়,বিস্তারিত নয়___ কিন্তু নিজস্ব রসায়নে কবিতা হয়ে ওঠা।

কবিতা হয়ে ওঠা এই নৈপুন্যে সুবীর আমাদের আশ্চর্‍য করেন তাঁর মিতবাক দক্ষতায়।প্রায় সমস্ত কবিতাতেই সুবীর পংক্তির একটি বা দুইটি শব্দকে ভেঙে দিয়ে আলাদাভাবে লেখেন।একটু বেশি গুরুত্ব আদায় করে নেন পাঠকদের কাছ থেকে।ফলে কবিতার শরীরে যেমন একদিকে অতিরিক্ত শাখাপ্রশাখা যুক্ত হয়,অন্য দিকে নির্মিত হয় একটি নিজস্বতা।আমরা একটি মাত্র কবিতার উল্লেখ করছি___ আবহসংগীত (গ্রন্থঃ মেঘকলোনির কবিতা)।প্রথম পংক্তি থেকে দ্বিতীয়ে,দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়ে,তৃতীয় থেকে চতুর্থে... এই ভাবে পংক্তিগুলি সামান্য ছোট করতে করতে সুবীর গান গড়িয়ে নামার একটি চিত্র উপস্থাপিত করেন।তারপর,একদম শেষ পংক্তিতে শেষের শব্দটি ভেঙে নীচে লিখে কবিতাটি সম্পুর্ন করেন।শব্দটি পংক্তিতে সংযুক্ত থাকলে যে অভিঘাত জাগাত পাঠকের মনে, তার থেকে অনেক অনেক বেশি ভারী হয়ে ওঠে আলাদা লেখায়। শব্দটি?অন্যমনস্কতা।

সুবীর, ব্লারব থেকে জানলাম তিনি কুচবিহারে থাকেন।কুচবিহারে কিছুদিন ধরে রয়েছেন আরও এক অগ্রজ কবি সুব্রত রুদ্র।সহনাগরিকত্বের কোনও এক বন্ধন বোধহয় কবিতাকেও জারিত করে।সুব্রত –কে নিয়ে সুবীর লিখেছেন ওড টু এ টল পোয়েট...। আমরা যারা সুব্রত-র কবিতাকে চিনি,তারা জানি সুবীরের ___আপনার নিঃশ্বাসের ভিতর অতিমন্থর বৃষ্টিদিন বা নাতিদীর্ঘ সেতুর ওপর আপনি রেখে আসেন/পিতামহর চিরুনি,গত শতকের পালকি/আর আপনাকে অনুসরণ করে প্রেমের গল্প,টুকরো মেঘ।এবং পরবর্তী গ্রন্থের নাম-উনিশে আগস্টের কবিতা। নাম কবিতাটি এক কবির জন্মদিনে উৎসর্গ করা হয়েছে।ঘটনাচক্রে আমাদের জানা আছে দিনটি কবি সুব্রত রুদ্র-রও জন্মদিন।সব মিলিয়ে বিষয়টি বাংলাকবিতার বৃহত্তর ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে।নব্বই-এর একজন সহযাত্রী হিসেবে সুবীরকে এই প্রতিবেদকের অভিনন্দন।

বোধে ও অনুভবে,মেধায় ও নির্মাণে সুবীর সরকার তাঁর প্রকৃতিসম্মেলনে,সংলাপময়তায় এবং প্রেমের সংবেদন ও বেদনায় বাংলাকবিতায় এক নিজস্ব ভুবন গড়ে তুলছেন।তাঁর শহরে,তাঁর কবিতায় কখনও কখনও আমাদের ভ্রমন আমাদের আনন্দ দিয়ে চলুক।


নির্বাচিত কবিতাঃ সুবীর সরকার
কবিতা ক্যাম্পাস,হাওড়া-০৬
কলকাতা বইমেলা,২০১২

ইংরাজী কবিতা - শ্বেতা মন্ডল

SWETA MONDOL

ESCAPE

will you open the closed door?
will you set me free?
will you stand at my facade and strech your arms towards me?
I am a prisoner in my own prison--
be it fallacy or a reason
If you are stopped at the door,
come after twilight
when the darkness sets in....
'steal me'
and take me in your palomino
amidst the daffodil garden we shall go.m
the enigmatic hues of aurora paints the colossal canvas,
the dew drops glitters like diamond on the tip of the grass..
I was a prisoner then,
you are a convict now...
together we travel
in search of the treasure at the end of the rainbow.


COBWEB

I am one of the finest creation
though i always go unnoticed
sometimes in between foliage
or on the darkest corner of ur attic.
when the sun rays
fall on my silver thread,
the most enigmatic hue i spread...
and those who re mesmerized by my sight
falls prey to my creator.

শিল্পকলা - অমিত বিশ্বাস


শিল্পকলা - ভাস্কর লাহিড়ী


শিল্পকলা - গৌরব রায়


শিল্পকলা - গণেশ হালুই


শিল্পকলা - সৌমিত্র কর


শিল্পকলা - শ্বেতা মন্ডল

দুটি ছবি
শ্বেতা মন্ডল