শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ২য় বর্ষ, ৯ম সংখ্যা

সম্পাদকীয়


সাদা পাতায় খুঁটিনাটি গুছিয়ে দুচার মুহূর্ত ঝাপটানো শুনতে পাচ্ছি। কল্পনায় একটু একটু পবিত্র হয়ে উঠছে সমস্ত শব্দ। জীবন আর ভালো। অনবরত জড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের ভালো থাকাটা কবিতার উপত্যকায়, যাতে "জীবনের প্রতি মুহূর্তে rejection জড়িয়ে আছে" ।

তাই ভাস্কর চক্রবর্তী বলেছেন -


"কবিতায়, সমাজ, দেশ পালটানো যায় কিনা এসব কথার মধ্যে অজথা না জড়িয়ে ভবিষ্যৎ আর আরো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুপ্ত সাংকেতিক ইশারা কিছু রেখে যাওয়া, একজন কবির কাছে মনে হয় অনেক ভালো ।"


বাকিটুকু নাহয় থাক পাঠকের কল্পনার জগতে, একেবারে তার মনের মনিকোঠায় –

আমরা অনবরত হেঁটে যাচ্ছি আগুনে , একের পর এক চিতা সাজিয়ে নিচ্ছি বাস্তবের ইমারতে...

চলচ্চিত্র জগতের ‘হীরের আংটি’ সম্প্রতি হারিয়ে গিয়েছে। ‘ঋতু’ অবসান হয়না যদিও, তবু প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষকে হারিয়ে বাংলা এখন বর্ষণ মুখর ... অসময়ে বর্ষা কেবল প্রকৃতিতে নয়, আমাদের প্রত্যেকের মনেই ...

আমরা শোক স্তব্ধ, তবু হেঁটে যাওয়াই নিয়ম। ‘অসুখ’ বুকে করে হেঁটে যাব , মেতে থাকব রোজের ‘দহন’ ‘উৎসব’ এ !

১লা জুন, ২০১৩



ক্ষেপচুরিয়ানস্-এর পক্ষে
সম্পাদকমন্ডলী

গুচ্ছকবিতা - পার্থ প্রতিম রায়

যা ইচ্ছে তাই
পার্থ প্রতিম রায়




ঘরের ফুসফুস, মুখ দেখা গোলাপির
কয়েকটা বোকাসোকা ইসসস!!!!
হাওয়ার তলপেটে লাট খাওয়া ঘুড়ি
বোতাম খোলা রিংটোনে
                   খুচরো অবুজ ফাঁক...
রোদের নিরামিষে জানলার চোরাটান
বৃষ্টিরও একটা চরিত্র আছে,
রং রুট গান খায়্‌,,,
                  চোখের স্যাঁতস্যাঁতে...




আধশোয়া নদীর পাতায় অথৈ গল্পে
বাঁকের তুমুল ভাঙছে স্রোত
সেলফোনের হিংসে প্রেম জমায়...
বয়ঃসন্ধি পোশাকে মেঘলা
প্রচ্ছদের আভাসে নিজের আলুথালু
... ঝুল
      ... ইচ্ছে
          থইথই চোখে সম্পর্ক শানায়...




আলপথে অজুহাত ধরে হাঁটছি
পায়ের জাদুটনা ভাসিয়ে ঘাসের মেকিপনা
হাওয়ার ময়েশ্চার থেকে খুনসুটি রোদ
হাসির ডাকনামে পাশফেরা সন্ধ্যের সবটুকু...
আলোর ফেনা, চেনা ইমেজের ঝোপ
ঘামের এক্সরে সমেত খেলার মাঠ
আমার ...দু তিন ফর্মা ছেলেবেলা




প্রচ্ছদে লেগে আছে শূন্যতার ভর
আগুন তখনো তরল
টেবিল পেরুনো আলোর মার্জিন
হাওয়ার খোপ থেকে কুয়াশাপাপড়ির
দু-একটা মেঘই স্বপ্নলাজুক...
ভাবনার বর্ণপরিচয়ে মনের জমাটগুলো
উস্কে দিচ্ছে
               শব্দ পাচ্ছে......বল্লমশব্দ!




ছাদের ওপর দু চারটে টব
পারফিউম কাকুর ছাদে
বিভিন্ন রকমের টব
সম্পর্কের টব, ভালোবাসার টব
টাকার টব, শব্দের টব,
গীতবিতানের টব......
কিন্তু মনের টব নেই, যেখানে
নিজেকে গজিয়ে তুলতে পারে!




ঘুম থেকে উঠো, স্বপ্ন কুচকে পিঠ চুলকাও,
বাড়তি ভালো থাকাতে পুরনো জুতো
জানালাটার মতো আজকের সমস্ত সকাল।
চায়ের কাপ আর ব্যক্তিগতগুলোতে
আলতো পড়ে সুখের সরুপাঁচিল
এরপর যতটুকু সাবিত বক্সের ভিতরে থাকি
ততটুকু মেঝেতে ঝুঁকে পড়ে নিজের
ছবি দেখতে চেষ্টা করছি......




খুঁটিনাটি ছাদ, শুকনো সাইকেল
রাস্তার জট থেকে ছিটকে পড়ছে অলিগলি
জামার বাড়তি ইচ্ছেগুলো বোতামে বাঁধা
বাড়ির আঁচল ছড়ানোয় ঘুমিয়ে থাকা পাড়া!
আস্তে আস্তে
              ডানাহীন
                    মুখহীন
                         আজকের ধারাবাহিকতা




হাওয়ার আবদার ফোঁটা
মনগড়ায় ফিরে আসায়
শরীরে কৌতুক লেগে আছে
জানালায় পিঁপড়ের ফুটপাত
দোটানা ঘড়ির প্যান্ডুলামে
সময়ের তখনটাই স্বেচ্ছাচারিতা
যাপনের স্ট্রিং ছেঁড়া!
নিরাময় হিসাবে মুহূর্তেরা
ছিটকে যাচ্ছে দুরের ভেজাতে...


কবিতা - রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

বাতিঘর
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়



বৃষ্টি ছাড়াই একটা রামধনু উঠল
গ্র্যান্ট হলের ওপর
যেন অর্ধরথচক্রগ্রাস
নীল মখমলে
নিয়তি শুধু তার
যে উল্টো দিকের চায়ের দোকানে
শব্দজব্দে মজে আছে
কবিতার সমার্থক অন্য কিছু
ক অক্ষরের?
অনন্ত এই গোমাংস মুখে তুলে
ভারী পড়ছে শব্দ, মেঘের থাবার মত
ওই তো ঐরাবত কল্পনায়
নিচু হয়ে এল ট্রেইনের চাকা
বৃষ্টি নয়, বর্ষার রং মাখছে
সব বিপদকালীন জানলা
আমরা লাফিয়ে উঠে যাব
যতটা ধনুর্ধর, চক্রব্যূহ
ভেদ করছে ম্যাট্রিক্স
জানি বৃষ্টি হচ্ছে অন্য গোলার্ধে
এ গোলার্ধে বৃষ্টির ছায়া পড়ছে শুধু 



কবিতা - অয়ন দাসগুপ্ত


ফুলের উপমা ব্যবহারে সমস্যা
অয়ন দাসগুপ্ত



মেয়েটিকে দেখে আমার পঞ্চেন্দ্রিয়ের কথা মনে পড়ে -

ন্‌নাহ - এভাবে নয়, কথা টথার বিষয় নেই বিশেষ -

আসলে...
...মেয়েটিকে দেখে আমার পঞ্চেন্দ্রিয় মনে হয় -

আর তার মধ্যে একটা ফুল -
না - আআহ্‌ - এরপর...
বিশেষ বস্তুটি বাদ দিয়ে আর কিছুই ভাবতে পারিনা...!

কবিতা - উল্কা

স্বপ্নমৈথুন
উল্কা


ঘুম পাবে এমন কথা ছিল না
সকাল ধরবো ক্রিসক্রস স্বপ্ন জালে
পয়লা টান দিচ্ছি
              স্বপ্নমৈথুন
তলিয়ে যাচ্ছে কেন্নো রঙা বুক
খামচানো সৌরঘরে গ্রহাবয়ব
জন্ম নিচ্ছে গ্রিক পরীর আসক্ত শরীর
ঝর্না জলে ভাসমান
কলাম রো
বাড়ন্ত কাটাকুটি
              ঢ্যাঁড়া ছাপ যুদ্ধ বাঁচোয়া।
চাদর কামড়ে আছে বই দু দিনের জঞ্জাল
ফাউল মাঠের ধারে বনসাই ঘরের উঠোন
খৈ কুড়ুনি অমাবশ্যা গুছিয়ে ফেলেছে
নৈশব্দের হাঁড়ি
বাসি ঘুমের কাঁধ ছুঁয়েছে পয়
জনান্তর হাতড়াচ্ছে কাগুজে জন্মলতিকা
ঘুম পাবে না এমন কথাও ছিল না
গ্রীক পরী রাখালি নিলাম
কাবু বনাম বেকাবু ডেস্টিনি

রোয়াকীয় রাজত্বে কমদামি খামোখা মানুষ।

কবিতা - প্রবীর রায়

প্রতিরোধ
প্রবীর রায়



ঝুঁটি ধরে টান মারতে উঠে এলো ঘাসলতা
যারা এলোনা তাদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা
এই মনোভাব থেকে সবুজ রঙের জন্ম
মানুষের সবুজলগ্নতা এভাবে বেড়ে যায়
গান লেখা হয় গান গাওয়া হয়


কবিতা - অনুপম চৌধুরী

প্রিয়ার চোখে বৃষ্টি ভাষা
অনুপম চৌধুরী



জীর্ণ জানলায় খেলে মোলায়েম মেঘ
ভাইব্রেট রঙে বাজে মুঠোমন
সাজানো আলনায় আঁকে সবুজাভ হৃদয়
টুপটাপ বরিষণ বানায় আলপনা মন
জলকেলিতে মাতে নিয়ম হাঁস ।

অঝোর আবেগে ভিজে বৃষ্টি চোখ
অব্যক্ত মনে গড়েছিল বেদনালয়
অসুখের সুখে গড়ায় শ্রু...
ধরাতল বসবাসে বুনো মেঘ
নিভৃত চিন্তনে ছটফট আহত চড়ুই
নেশা যেন নেশাকর, মদির মাতালে
ঝলসানো দু’চোখ ।
ঝরে,ফোঁটার ভাসায় ভাষাহীন সৌরভ ।

কবিতা - বাণীব্রত কুণ্ডু

ঠাকুমার ঝুলি ও নীল আলোর পতঙ্গ
বাণীব্রত কুণ্ডু


ভালোবাসার রুপকে দেখে আড়ালে থাকে বালক
বিস্ময়ে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে নিজের ঘরে বসে
তোলপাড় সে করে গেছে একের পর এক
ঠাকুমার ঝুলি, কথাসরিৎ রূপকথার ঝাঁপি
কিন্তু এমন অবাককাণ্ড কখনো পড়েনি কোথাও
তবে কি সব স্বপ্ন ছিল!
অপূর্ব নীল আলোর মোহে
বাবা-মায়ের শরীর দুটি পতঙ্গরূপ ধরে
ডানা ঝাপটায় তীব্র শ্লেষে
এ কোন খেলার সুখে...

কবিতা - অতনু বন্ধ্যোপাধ্যায়

রেওয়াজ
অতনু বন্ধ্যোপাধ্যায়



১।।

এই অবহেলার একটা নামাঙ্কণ চাই।চাই দূরের গুড়িতে খোঁজা নিজস্ব পাশভূমি যার অপেক্ষায় এই সময় দেখছে কৃশানু’র আঁকা সেই ছবিটা।

দেখছে কিছুটা ড্রিম করে আসা এই পথ...সামান্য লোকাল ভারসাম্য রেখে এগোচ্ছে আরেকটা বন্ধু নগর নতুন ব্রীজের দিকে। সহজ নাম্বারে ভরে ওঠা একটা তরুণী সকাল আলগোছে খুলে দিচ্ছে ওর গল্প । সীমানা চৌকির কাছে যে রোদের বসে পড়া তারওতো ঘোরানো চোখ আমি দেখেছিলাম। আর এইখান থেকে শুরু হবে আমাদের নিদ্রা কাটানো তাল...তালের ওস্তাদে রাখা কিছুটা আমার সেইসব ধার করা ওড়ানো ডানাদের মানাদের ছেড়ে আসা পিছল
আর গতরাতের বৃষ্টি পড়ানো দুশ্চিন্তা বাসরে তুমি গাইছিলে...... ‘চাহত ও সে মুশকুরাকে... আজা নিন্দিয়া...র্যা য় না বিতি যায়ে রে...র্যা য় না বিতি যায়ে রে...’

খুলে গেল সমস্ত লাল আর সবুজ। খুলে গেল বোতাম বা স্ট্র্যাপ যাই বল না তুমি আমি কিন্তু এই উঠে আসা আর গান গুলোকেই ভালবেসেছি বারবার...একটা সংসারের জন্য।

আর আরেকটা খুশির জন্য

আর যা আছে তার জন্য যারা আছে তাদের জন্য

বেচারা মন কি বলে? একটা গীটারের অসম্ভব সুর শোনাও প্লিজ্‌...নির্মাণের আহত গুলো ফিরে ফিরে আসুক। বুকে চোখ রাখলে যেন শুনতে পাই

ফিরে পাওয়া খালি আর খালি

কবিতা - দেবজিত মুখার্জী

উনি
দেবজিত মুখার্জী



সে বলতো ফুসফুসে একটা গাছ পুঁতবে।
যুদ্ধ-ফুদ্ধ কুকুর দের জন্য, ঈশ্বর খালি মৌলিক
চাহিদার বাইরে কিছু ভাবতে পারেনা। একটা
গোপন সিগারের মধ্যে বোমা লুকিয়ে রাখতে চাই।
মহাকরণের বাথরুমে মোতার খুব শখ।
বিপ্লব একটা ভ্রুন যেটা মৃত না জীবিত সেই
উত্তরটা নাড়িজটে থাকে। ঈশ্বরের জন্য সে
ছেঁড়া বস্তায় বিছানা পাতে রোজ। দৈনিক রোজগারের
অর্ধেকটা ঈশ্বরের জন্য জমায়, বেশ খানিকটা জমলে
সেই টাকায় চুল দাড়ি কাটায়, সাবান শ্যাম্পু,
জামা প্যান্ট এসে। নিজেকে পাঁচিল বোলে ডেকে ফ্যালে
তার কোন ব্যাখ্যা নেই, তবে নর্দমায় নৌকা দেখলে
বড় মন খারাপ করে ফেলে...



কবিতা - মধুসূদন রায়

পাখিজন্মের যাপনচিত্র
মধুসূদন রায়



স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমায়
তোমায় ঘিরে স্বপ্নের জাল ছটফট করে
সৃষ্টি হয় নতুন একটা সিন্ধু সভ্যতা

#

ক্রমশ নীল সুরে জড়িয়ে পড়ছি
ঘুমভাঙা অন্তঃস্বত্বা ফিঙে পাখি
রাজ্যপাট বানাতে চায় আমার উপর

#

শহরে নতুন নীরা জন্ম মঙ্গল শাঁখে তাকে বরণ করার পালা
কর্পোরেট জীবন মুক্তি খোঁজে

#

বারো উঠোন ঘুরে এসে অমরত্ব পরীক্ষা করার পরিসর হাস্যকর
অযথা মৈথুনে মৈথুনে শেষ করছ আমায়

#

শরীর পোড়ার গন্ধ পেয়ে উঠে দাঁড়াই
অসংখ্য 'দামিনী' পোড়ার গন্ধ
মাথায় ঘনিয়ে আসে গোপনজবানবন্দী

#

কেউ বুঝল না হাইপারবোলা জীবনের কার্ফিউ জারি করা তুচ্ছ মোহ
তবুও প্রেগন্যান্ট কবিতার উশৃঙ্খলা

#

সারাটা রাত সুরহীন গীটারের তালে
অযথা নিজেকে নির্বাসন
এবার মুখোশ খোলার পালা ।

কবিতা - শিমন রাইহান

মাহুতের গান
শিমন রাইহান



পেয়ারাবাগানের দুপুর পেরুলেই
সন্ধ্যেমাঠের দৃশ্য উড়ে যায় ছাপোষা ফু
লোকরান্নার ধোঁয়াশা          ধোঁয়ার আশা বিদগ্ধ কাঠ


পর্ণস্টারের ক্রুর হোলো আবাবিল
আর বরফের নতুন নাম বীভৎস জ্বলন
অজাচারী মেঘে শেখা গেল তানপুরার অন্য উপমায়ন
বৃষ্টির যিকির মশগুল হোলো নিতম্বের তালে আর তানসেনে


পরিত্যক্ত সার্কাস হস্তিনীর বৃক্ষশরীর - আধপেটাচোখ
ওর ভারী এগুলোর মানেও দাঁড়াল জীবন
কিছু হ্যাংওভার দুলুনির বেঘোরে ক্ষুধার দশা


কবিতা - সঞ্জয় ঋষি

কথা
সঞ্জয় ঋষি



তিনটি মানুষের সঙ্গে কথা বলি
মা - বাবা আর আমি

#

কথা মানে কয়েক
লাইনের ঢেউ

#

অপু, অরন্য, ইছামতী ।

কবিতা - সূরজ দাশ


অতীত নির্জন থেকে
সূরজ দাশ



অতীত নির্জন থেকে রিনি, কী তাণ্ডব , হাঁটু ভেঙে গতিশীল
জলের ইশারা , দৈত্য জঠরের জাগরণ ; দানবের মাঠে
মাতন লেগেছে দেখো, স্পর্শে লণ্ডভণ্ড , থোকা থোকা রাতফুল
সাক্ষী থেকো , কলপাড়ে থালাবাসনের সাথে গড়াও নিঝুম
সাক্ষী থেকো স্নায়ুজাল, ভোরের প্রথম বাসে ফিরবো নিশ্চিত
বৈশাখী ভাণ্ডার ছুঁয়ে । টেলিফোন বুথ, পুরাতন গলাকাটা
স্টপেজ পেরিয়ে , ঘুম থেকে জেগে ওঠা পানের দোকান ছুঁয়ে
শুকনো রোদের সাথে গিন্নির রাতের কথা চুম্বকে জানাবো !!!



কবিতা - সৌরভ ভট্টাচার্য্য

মাধ্যাকর্ষণ
সৌরভ ভট্টাচার্য্য



অন্ধরারের পর হাওয়াগুলো ক্ষুধার্থ,
আস্তে আস্তে পুরোটাই তলিয়ে যাবে...
                                 পাঁকজল...
নগ্ন পোস্টার ঘিরে মাধ্যাকর্ষণ অনেক বেশি,
প্রায় প্রতিটা আড়চোখই অশ্লীল...!

তুই চাইলেও রাতের চেয়ে সাদা হতে পারবি না ।
ঠিক পর্দার আড়াল থেকে পাঁচটা আঙ্গুল বেড়িয়ে আসবে

গোলাপের চেয়ে ক্যাকটাস ভালো...!

কবিতা - অনীক ত্রিবেদী

ছোটোলোক বড়লোক
অনীক ত্রিবেদী



দেখুন না,
খিচুড়ি, ডাল ভাতের লাইনে আমরা দাঁড়াই
ওনারা লাইন দেন ফুডকোর্টে ।
আমাদের নেই তাই শক্ত রাস্তায় রাত কাটাতে হয়।
বাবুদের স্পন্ডেলাইটিস তাই ওনারাও ঘুমোন শক্ত জায়গায়।
আমরা হাওয়াই চটি পড়ি,
ওনারা পড়েন সুন্দর সুন্দর স্লীপার।
বস্ত্র বিতরনে লাইন পরে, আমাদের হুলুস্থুলু লাগে কে কার আগে নেবে।
ওনারা গার্মেন্টস ডিপার্টমেন্ট এ লাইন দেন।
ওনারাও হুড়োহুড়ি করেন আগে আগে পেমেন্ট করার জন্য।
আমাদের উৎসবে নাচানাচি হয়, বাজনা বাজে
ওনাদের হয় পার্টি , ডিস্কো ডান্স
আমাদের ছেঁড়া ফাটা জামা প্যান্ট জোটে
ওনারা প্রেফার করেন ব্র্যান্ডেড ছেঁড়া ফাটা ।
আমরা রাত জাগি ধান্দায় থাকি, ওনারা চান্স নেন।
আমরা ঠেকে মদ খাই, বাওয়াল দেই , বাড়িতে হেব্বি লোচা হয়।
ওনারা বারে ড্রিঙ্ক করেন, আর বাড়িতে সিনক্রিয়েট ।

পার্থক্য টা খুব একটা বেশি নেই। শুধু ওনারা একটু বেশি সফিসটিকেটেড। এই যা ।



কবিতা - সৌমালী পাল

আমার কবি বিশ্বকবি
সৌমালী পাল

হে কবি তুমি বরেণ্য সারা বিশ্বে
তুমি আছ সবার নিস্বাসে মিশে
তুমি মোদের সুখ-দুখের সাথী
তোমায় মগ্ন যে দিবারাত্রি
সে খুঁজে পায় শান্তির ভাণ্ডার
তুমি যার কান্ডারী তার কি চিন্তা আর
তুমি পূজ্য সব বিদ্যালয়ে
সুর সাজে গলায় তোমার লয়ে
সুরুতে তুমি, তুমিই শেষ
তুমি ছড়িয়ে আছ দেশবিদেশ
হে বিশ্বকবি থেকো সদা হৃদয়াসনে
তোমার আশিস পায় যেন জনে জনে

কবিতা - রুচিরা দাস

শব্দের যন্ত্রনা
রুচিরা দাস



মুক্তগদ্য - মিলন চট্টোপাধ্যায়


হিম্‌-রাতের পাঁচালী
মিলন চট্টোপাধ্যায়



রাস্তাটা কেমন ধোঁয়া মেখে আছে । ঠাণ্ডা একটা নীল্‌চে কম্বলের মত ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশার আবরণ অদ্ভুত শূন্যতা সৃষ্টি করছে চারপাশে ।

বাড়ির সামনের গলিটায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছে পিছন থেকে কাঁধে হাত দিয়ে এই বুঝি কেউ বলবে - ' কীরে কেমন আছিস ? '

এই রাতে শুনশান রাস্তায় হাঁটলে ফেলে আসা ছেলেবেলা মনে পড়ে । আগে ছোটোরা মিলে বিকেলেই শুকনো পাতা, কাঠ জোগাড় করে বারান্দায় রেখে দিতাম , না বারান্দা বললে ঠিক বোঝানো যাবে না, আমরা রক্‌ বলতাম । তারপর রাতে পড়া শেষ হলে খেয়েদেয়ে এসে গোল হয়ে বসে আগুন ধরাতাম, আর পাড়ার বয়স্করা ভূতের গপ্পো শোনাত ।

কৈশোরে গানের লড়াই খেলতাম বা মেমোরি গেম । নানা অদ্ভুত খেলা বানাতাম । সব হারিয়ে যায় । যৌবনের দিন খুব কষ্টের , প্রথমে বেকার, তারপর একটা কাজের জন্য হন্যে হয়ে চেষ্টা , এরমধ্যেই প্রেম । যদিও সেই প্রেম আসলে স্বার্থ চিনে নেয় দ্রুত । ভুল ভেঙে গেলে হতাশা, তারপর নির্বিকারত্ব । তারপর আবার খোঁজ, অবশেষে খুঁজে পাওয়া ।

আজ হঠাৎ মনে পড়ছে সব , আর ইচ্ছে করছে তার সাথে বসে থাকতে, তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ রবি ঠাকুরের গান শুনতে । খুব ইচ্ছে করছে , খুব । আর কে না জানে ইচ্ছে আসলে কারো বারণ শোনে না ।

গল্পসমগ্র - তন্ময় রায়

গল্পসমগ্র
তন্ময় রায়



( “ভালো খাবার... ভালোবাসা ওষুধ... ভালো ওষুধ... ভালো ভালোবাসা...” – বিশু)


হাওয়া দিচ্ছে মানে ভালো গান :

১.

ভালোবাসারও বিশু শব্দ প্রিয়। অভ্যাসে বিশু সবসময় পরম। চোখ থেকে গীতা ঝরুক বা গ্রহণদারু, তার কিছুই আটকায় না – সোজা জিভ ছুরে মারে!

শীত করার কথা ছিল কিনা জানতে, বিশু ডাক্তার ঘুরে আসে।

ডাক্তারকে সে তার জিভ দেখাতে পারেনি।

বিশু এবং ছাদ দুটোকেই খালি করার কাজ শুরু হল বলে...

২.

প্রত্যেক ঘরের নিজস্ব গন্ধ আছে। বিশুর ঘরের গন্ধটাও বিশু।

বড়ো বাক্য লেখা আমার ধাত নয়, মাঝেমাঝে বিশুকে ধার করতে গিয়ে জানতে পারি, ও শিস ভালোবাসে – শিস দিয়ে ফিরলে গলিটা বুকপকেট ছুঁয়ে থাকে, শিসটা ঘর হয়ে যায়

৩.

নিজের দিনে জীবনের দিন খেতে বসলে বেদম কাশি ওঠে, কিন্তু বিশু কোনোদিন লাল হয়ে ওঠে না। এটা চিন্তার বিষয়। বিশ্বাসের ছবিরা দেওয়ালে আঁটে না এবং সেই ছবিতে বিশু কোনোদিন মালা চড়াতে যায়নি। দেখাগুলোর যত মধু মাথায় সাজানো, সেখানে জ্বর আসে। আর আজ মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে। এটাও চিন্তার বিষয় কিনা ভাবতে ভাবতে বিড়ি ধরায় ।

মুক্তগদ্য - তন্ময় গোস্বামী

আমাদের কথা
তন্ময় গোস্বামী


তারপর আর কোন কাজ রইলো না। সারে চার হাত মাটি আর তোমার মুখ- কীর্তনের মতো করুণ। তবু হেঁটে যাওয়া থেমে থাকেনি। দুই বন্ধু আর ভালুকের গল্প মনে রেখে আমাদের পথ এগিয়েছে আরও দূরের পথে। আমরা মাঝে মাঝে পিছনে ফিরে দেখেছি প্রিয় আয়না। মুখ আর মুখোশের অভিমান ঝরে পড়ে শীতসন্ধ্যায়। কালিমাতা কোল্ড ষ্টোরের মালিকের ছেলে আমারও বন্ধু-এ কথা সারা জীবনে আরও কতবার বলতে হবে তারই একটা অঙ্ক নিয়ে সেই থেকে বসে আছি । সিঁড়িভাঙ্গা সকাল পেরিয়ে দুপুর। পুকুরের পাড়ে একটা কুনো ব্যাঙ ডেকে চলেছে একটানা। আহাঃ। আজ এই সুর আমার খুব প্রিয়।

আমি কি লিখব তোমার কথা, এবং কথকথায় তুলসির সন্ধ্যা মঞ্চে আজ এতো মানুষ একসাথে। নাম সংকীর্তন। আমি একটা সিগারেট ধরাই ডান হাতে। বাঁ হাত পকেটের ভিতর খুঁজি দেশলাই। আমার যৌনতা। একটা মরে যাওয়া কি এতই সহজ।

চারপাশে মাঠে ছাগল চড়ে বেড়ায় আমার গ্রামে। আমি একটারও নাম জানি না ওরাও আমাকে ভিনদেশী মনে করে দূরে দূরে হেঁটে বাড়ি ফিরে যায় রাখালির সাথে। আমি কাল জেনেছি পৃথিবীর সবথেকে দামী ও সুস্বাদু চীজ তৈরি হয় গাধার দুধ থেকে। আর এই ছিল ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যের রহস্য। আমাদের দেখা হয়নি কখনও কেবল এই চলে যাওয়ার আগে বাঁ হাত দিয়ে পকেটের ভিতর খুঁজি দেশলাই। আমার যৌনতা। একটা মরে যাওয়া কি এতই সহজ।

এখন দ্যাখো জানলায় এসে দাঁড়িয়েছে বেদুইন রাত। আমার একটা লাল ছিল আমি হারিয়েছি জ্যোৎস্নায়। ২ বছর আগে একদিন যেভাবে হারিয়েছিলাম আমার এটিএম কার্ড আর পাসপোর্ট।

মেট্রোর ভিড় ঠেলে যে মেয়েটি কাজে যায় প্রতিদিন। পরদিন যখন রাখালি ছাগল চড়াতে আসে ঠাকুরবাড়ির মাঠে। আমার কেবল বসে থাকতে ইচ্ছে করে তখন তোমার মূর্তির সামনে।মায়ের মতো একা একা ভয় চোখে।

একটা চলে যাওয়া কি এতই সহজ।

ইংরাজী কবিতা - ইন্দ্রানী সরকার

ইংরাজী কবিতা
ইন্দ্রানী সরকার


The tale of a fairy

She was playing "love me or love me not"
with a rose petal while sitting under a tree
next to the river in a beautiful rosy evening.

Her legs were spread wide in the grass.
She had a green skirt with black stripes
and a pink blouse top with floral designs.

The rainbow colors from evening sky were
being reflected from her expressive eyes
A lovely smile adorned her beautiful face.

The pearl necklace around her neck is
glittering in the sunlight like sparkling stars.
Her rosy cheeks which looks like the
sinking sun like the color of an an egg yolk
has created a magic surrounding her.
Her sleek fingers similar to Champak flowers
were taking out the petals from a rose
one after another hurriedly.
The sweat drops on her nose is shining like
the morning dew on a lotus leave.
The tufts of her hairs have covered her
pretty face which resembles the moon
surrounded by cluster of clouds.

O dear! Please go to your room
otherwise those mischievous
red vagabond clouds are going
to cast a spell on you !
What did you get dear by tearing
those rose leaves apart?
She replied, "What else?
Why should I tell you my secret?"
All right dear, then do not say and
I hardly care about your fantasies
O my mischievous lovely lady.


Rain and Existence

Rain, melting and dropping on the trees.
Leaves, drenched by the monsoon rain,
Sway with the wind, as if an organ is
Playing its notes, happily, rhythmically.
Some feeble and dead leaves fall of trees.
So sad, end of their lifetimes and making
Rooms for next generations full of youth.
Green, youthful leaves are drinking rain
And playing with the wind hastily as if
the game will be over soon, however
the game goes on until the final stop.
Slowly sun comes out through the clouds.
Dazzling sunlight spreads all over.
We are still here and alive and will enjoy
Every moment with our hearts full of love.
Love, the essential part of our lives is
Needed for all living beings in Universe.



Expedition


I walk alone by the sea..........
Leaving my footsteps on the sand.
The mystic night with the crescent moon
Show my way in the dark.
The shiny polar star calls me from
Far far away to visit its land......
I keep on walking through the gusty wind,
Through the beaming moonlight,
Through the sound of rise and fall
Of the waves to a country unknown.........

Your Thoughts

I am so very thirsty
due to hot sun-rays...
Hope I could have sipped
the nectar from your velvety lips...

I stare at your forehead
Adorned by a red dot...
So beautiful to look at,
My eyes eventually got frozen.

I have made so many attempts
To escape from your eyes....
Alas! I come back to them
Again and again.

When I think of keeping
Almost no distance
Between you and me,
I tremble for you, my love!

I am miles away from you...
I kept on burning...
I will at last become
A burnt charcoal....!!

ধারাবাহিক - রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

অবভাস
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়




১।

আসলে হাইওয়েটাই সবকিছু গুলিয়ে দিচ্ছে...



সে তাকিয়ে থাকে আর দেখে তার ছোট্ট ঘরের দেওয়ালগুলো শুয়ে, জানলাগুলো নুয়ে আর ছাদ ভুঁয়ে এসে পড়েছে। বাইরে আকাশের দিকে একটা তোরণ, হতে পারে কোন মণ্ডপ আর নহবতখানা। তার আগে মেঘে মেঘে কিছু রঙ হয়েছিল। পৃথিবীর কন্যাদের বিদায়। এই সময়, যে, কন্যে নয়, হাইওয়ের দিকে উঠছিল। পেট্রোল ভ্যানের আলো মাপমত তার পেছনে এসে পড়েছিল। তারপর আর কিছু জানা নেই।

বিষাদ জ্বর নিয়ে গাছগুলো, মনে হয়, দেখেছিল। প্রলাপমারীর মধ্যে ছিল তারা। তাই সে ভাষা পাতায় পাতায় বোনা আছে। কোনদিন পাঠোদ্ধার হতে পারে। এদিকে তোলাবাজরা আকছার দানা ব্যবহার করছে। সন্ধের পর থেকেই শোনা যাচ্ছে সেসব অনিপুণ হাতের কারবার। ভারী ভারী মোটরবাইক সব শহরে ঢুকে পড়ছে। যেসব দোকানীরা ফ্লাইওভার, মেট্রো, মল শুঁকে শুঁকে এসেছিল, তারা হাতের সাথে সাথে ল্যাজও গোটাচ্ছে। হয়েছে বেশ। খচ্চর ছোকরারা যা যা মারাচ্ছিল, তার সাথে সংস্কৃতি মিশিয়ে দিচ্ছে। দেদার। লুটছেও ভাল।

সে শুধু লক্ষ্য রাখছে। হিপ পকেটে একটা ছোট নোটবুক, আর পেন্সিলারদের হাতে যেরকম থাকে ঠিক সেরকম একটা পেন্সিল। সুযোগ পেলেই আঁকিবুঁকি কাটছে। আর এমন ভাবে লেখাগুলো আওড়াচ্ছে যে মনে হচ্ছে বাপের না হলেও তার নিজের শ্রাদ্ধের খরচপত্রাদি। একাজে স্টেশানটা তাকে সাহায্য করছে খুব। স্টেশানের নিচে বাজারচত্বর। সব কটা নেশার ঠেক। মদ্দামাগি। শনিমন্দির লাগোয়া মাদুলির দোকান। গেল শনিবারের শালপাতা যেখানে একটা বাছুর চাটছে, ঠিক তার পাশ দিয়েই হাইওয়েটাতে উঠে যাওয়া যায়। এখন একটা ছেলে আর দুটো মেয়ে উঠছে। আসলে হাইওয়েটাই সবকিছু গুলিয়ে দিচ্ছে।



২।

তার ঘুরন্ত স্কার্টের নিচে অনেকটা টানা শাদা মোজা, যেন পৃথিবীর সমস্ত স্থিতিস্থাপকতাকে স্তব্ধ করে শালীন হয়ে রয়েছে…




বাজারী পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় যেসব মফঃস্বলের কবিদের লেখা ছাপানোর আমন্ত্রণ জানানো হয় নি, তারা স্টেশান পেরিয়ে, এই প্রাচীন রাস্তাটার মোড় পেরিয়ে, বহু জন্মের নার্সিংহোমটার ঠিক নিচে, অফ্-সপটার সামনে, বাওয়াল দেয়। আর নক্কা ছক্কা নেশার পর যাদের লেখা ছাপা হয়েছে তাদের মা-মাসি করে। এরকমই একটা চাপের সন্ধ্যায় সে সেই নার্স-দিদিমণিকে নার্সিংহোমের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতে দেখে ও দেখতে থাকে। তার ঘুরন্ত স্কার্টের নিচে অনেকটা টানা শাদা মোজা, যেন পৃথিবীর সমস্ত স্থিতিস্থাপকতাকে স্তব্ধ করে শালীন হয়ে রয়েছে।

আর ঠিক তেমনই তার শাদা জুতো।

নার্সদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণেই সে বাওয়াল দৃশ্য ত্যাগ করে তাকে অনুসরণ করে। ফোর পয়েন্ট ক্রসিঙে যে একটা নিদারুণ শাদা গাড়ি যে একটা নিদারুণ লাল আলো জ্বালিয়ে অপেক্ষা করছিল, দিদিমণি এসে সে-টাতে উঠে পড়ে। গাড়িটা শান্ত ও স্নিগ্ধ ভাবে গড়াতে শুরু করে, যেন তার অ্যাক্সিলিয়েটরে চাপ পড়তেই সন্ধ্যে হেলে যায়। আর ঠিক সে সময়েই, ভারী মোটরবাইকটা, এই দৃশ্য-কাব্যের মধ্যে জোর করে ঢুকে পড়বে বলে, সাইলেন্সর পাইপ ফাটিয়ে, গর্জনরত অবস্থায় গাড়িটার পিছু নেয়। এরপর আর কিছু জানা নেই। কারণ, জানা যায় না।

সে আবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। গুনে গুনে দুটো হোঁচট খায়। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টকে সময় জিজ্ঞাসা করে। কাঠিকাবাব রোলের দোকানটা বন্ধ দেখে মনঃক্ষুণ্ণ হয়। তারপর তার ডেরায় ঢুকে পড়ে।সেদিনের যা যা অনুসন্ধান নোটবুকে লিখে ফেলে। পেন্সিলটাকে ভাঁজে যত্ন করে রাখে।

এ সময়ে মোবাইলটা দুলে দুলে ওঠে। শব্দ তার কাছে বিভীষিকা বলে সে ওটাকে নিথর করে, ঠিক সেই নির্দেশে, যেভাবে ভাষ্যময় গলায় থিয়েটার শুরুর আগে রেকর্ডেড বাজানো হয়। সে অজান্তে হেসে উঠে। নিজেকে হেসে উঠতে শুনে একটু লজ্জিতও হয়। কারণ, তার বুকশেলফের পেছনে আর একটুও তলানি স্কচ নেই। যে কলটা ইনকামিং, সেটা তাকে আরও কিছু সময় বিব্রত করবে। তার আগে গলায় ঢেলে দিতে পারলে হত। কান দুটো গরম আর ভারী পড়ত। সে বাদ দিতে দিতে শুনত। তারপর না হয় বাদানুবাদে যেত।



৩।

... তখন ঠিক কী কারণে আকাশে একটা তারাবাজি ফুটেছিল...



ফ্লাইওভারের ঠিক নিচে তাকে যখন ফেলে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ঠিক কী কারণে আকাশে একটা তারাবাজি ফুটেছিল, তা অন্যান্য অনেক কিছুর মতই জানা যায় না। ট্রাকের খালাসিরা, এক-দুজন করে, এক্সপ্রেসওয়ের ওধার থেকে প্রাতঃক্রিত্য সেরে নেমে আসার সময়ে তাকে দেখে। তবে, তাকে দেখার মত শুধু যা ছিল, তা তার অনিন্দসুন্দর গোড়ালি। এই একটা ভাবেই তাকে শনাক্ত করা যেত। আর সেটা একজনই পারত। বাকি কিছুর জন্য ফরেন্সিক রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে।

প্রথম রাতটায় সে বিশেষ একটা ঘুমোয় নি। তবে একটা ঘোর ছিল। বেশ কিছু ছায়া ও ছবিরা তার ঘরের উত্তরমুখো দেওয়ালে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। ওই দেওয়ালের জানলা থেকেই এক্সপ্রেসওয়েটা দেখা যায়।

সে ভোরবেলা ঘুমিয়ে পড়েছিল। যখন সে ওঠে, বেলা গড়িয়ে গেছে। সমস্ত প্রামাণ্য সাক্ষ্য-চিহ্ন সহ। জটলারা আরও দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়েছে। কথারাও কান থেকে কানে ছড়াতে ছড়াতে হাওয়াকথা হয়ে গেছে।



৪।

শালা হিজড়ের দল। সব কটার এক রা…



--খুব বেশি বাওয়ালি হচ্ছে...

লেখালেখির গাঁড় মেরে রেখে দেব

--হুঁ

-- হুঁ কি রে, বে? শ্লা...

--মাদারচোদ, সামনে এসে বল...

--দাদা হয়ে গেছ, সম্পাদকের দপ্তর পর্যন্ত এখন নাক গলাচ্ছ...

--মা,বউ, বউদিমণি সবার কোল ফাঁকা করে দেব



সে মনে করতে চাইছিল ঠিক কী ঘটেছিল, বাওয়ালটা কী নিয়ে কারা দিচ্ছিল...

এরপর কিছু মনে পড়ছিল না। আর কী নিয়ে দিতে পারত! দু আনার আবগারি। অল্প দাড়ি, পাঞ্জাবি গায়ে হাফ নেতা গোছের ছেলেটার চাকরিটা পর্যন্ত বদান্যাতায় পাওয়া। পাশেরটা রেহ্যাব থেকে সবে ফিরেছে। রেগ্যুলার উইথড্রয়াল।

শালা হিজড়ের দল। সব কটার এক রা।



তারপর সে রিপোর্টের দাগানো অংশগুলো আর এক বার দেখতে লাগলঃ



On December 14, 2012 Investigator Mr. Y of Kolkata Police, Law Enforcement Department sent me a sample to determine if the odor present in the sample was indicative of a decompositional human event.

… … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … …

However, a Secret Service agent asserted that a hair found on the white car window proved that Ms. X was sitting by the back passenger window, not out of range of the gun.

… … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … … …

I’m willing to testify this fact in a court of law and I will prove to the court that my opinion is correct. My Curriculum Vitae is attached and incorporated herein by reference.



Respectfully submitted,

Z



পি. এইচডি. রিসার্চ সাইন্টিস্ট তার প্রিলিমিনারি রিপোর্টে যে তথ্যাদি জানিয়েছিলেন।



৫।



পেন্সিল বললেই ছোটবেলা নটরাজ হয়ে যায়...




সেদিন সকালবেলা সে যথারীতি হাঁটতে বেরিয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেট ফর য়্যু আলো ফোটার আগে থেকেই কর্তব্যরত। ফোর-পয়েন্ট ক্রসিঙের গোলচাক্কিটাতে রং ঝলমল করছে। টুনিও জ্বলছে। নিবছেও। সে এক হয়েছে মজার। কী, কেন, কবে, কোথায় অপ্রয়োজনীয়। একটা কিছু লাগিয়ে দাও। গোটা শহরটাই একটা চাঁদমারি। লাগাতে পারলেই হবে। দাউ দাউ হবে। হচ্ছেও।



নিজের মনে বকতে বকতে এক সময় বকা ছেড়ে সে গতি বাড়াল। ঘামে ভিজতে হবে। কেউ রক্তে। সে সব পরে ভাবা যাবে। মানিকের ‘সমুদ্রের স্বাদ’ গল্পটা তার মনে পড়ল। সে পড়াত। না, দম বাড়িয়ে নাও। চোখের ওপর আর জুলপিটাতে ঘাম সামান্য চিকচিক করছে। রাজরোগ বলে কথা। নিয়ন্ত্রণে রাখ। নাহলে তারিয়ে তারিয়ে ফুটে যাও। অবশ্য কাউকে হিসেব দাখিল করার নেই। কিন্তু প্রত্যেকেরই তো নিজের কাছে নিজের একটা লেনা দেনা থাকে। তার মাপের নিজস্ব একটা হিসেবের খাতাও থাকে। তার ভাঁজে একটা টুকরো পেন্সিল।



পেন্সিল বললেই ছোটবেলা নটরাজ হয়ে যায়।



সেই পরাগ না কেশরে স্মৃতি লেখায় সে পেন্সিলটাই মনে করতে পারে নি। আবার একটা মেমরি-গেম খেললে কেমন হয়!



হাঁটতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সে যা যা দেখেছেঃ



১। শারদীয়া ও দীপাবলীর শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। বুড়ীমার শব্দবিহীন আতসবাজী। বেলুড়, হাওড়া।

(সব কটা বানান নির্ভুল ছিল)

২। Xpert Tutorial, WB Board, ICSE & ISC, CBSE, VII- XII, NEET, JEE

Also Home Tutors Available for All Subjects.

৩। উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটির ডাকে, ১লা এপ্রিল, প্রগতি সংঘের মাঠে বিশিষ্ট মার্ক্সবাদী

কমিউনিস্ট নেতার স্মরণ সভা।

ঠিক তার পাশেই-

৪। সাম্রাজ্যবাদ অনুসৃত কর্মসংকোচনের নীতির বিরুদ্ধে কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের দাবীতে যুব সমাজ

এক হও। (পাশে চে ও তারার ছবি)

৫। MAGMA GOLD LOAN (ম্যাগমা গোল্ড লোন) টোল-ফ্রী নম্বর 1800 3002 3200

৬। Entertainment, Real Estate & Food Hungama…



সে খুব মনে করতে চাইল ইভেন্টটা কোথায় ছিল। বাল, এগুলো তার কাজ!



৬।



অক্কা আর ফক্কার মিল মিশেলে কানাঘুষো ছড়াটা কেমন হত, সে যখন ভাবছে তখনই ফোনটা কাঁপুনি দিয়ে উঠল।



জমে গেছে। শচীন কত্তার গানের মত। বাঁশি শুনে আর কাজ নেই। এখন খালি হুটার শোন আর লাল বাতি থেকে আলো ছিটকে পড়া দেখ। কানাঘুষো একটা ছড়াও শোনা যাচ্ছে, শোন সেটাঃ





ফকিরের কানা চোখে

রাতফুল ফোটে

চাতকেরা উড়ে উড়ে

চাঁদমারি লোটে





কানা ফকিরটাকে তাকে রক্ষা করতে হবে। চানা দিতে হবে আর পানি। সে অক্কা পেলে চলবে না। তাহলে সব ফক্কা। অক্কা আর ফক্কার মিল মিশেলে কানাঘুষো ছড়াটা কেমন হত, সে যখন ভাবছে তখনই ফোনটা কাঁপুনি দিয়ে উঠল। আধার কার্ডের নিচে ফোনটা ছিল। কাঁপতে কাঁপতে মুখ বাড়াল। মুখে অস্বস্তির রেখা। তারও মুখে চোখে জুড়ে বসল।

যে আলালের পো ফোনটা করেছে, সে তাকে চেনে। স্রিফ ছেনালি।

কিন্তু সে ততক্ষণে মাইন্ড গেম শুরু করে দিয়েছে।

অ্য্যপোলোতে সে যখন বসেছিল, খুব মনে করতে চাইল, কী দেখেছিল সে!



1st Floor (দ্বিতীয় তল)

Echocardiography (ইকো)

Ultrasound (ইউ এস জি)

Pulmonary Function Test (PFT)

Tread Mill Test (TMT)

Breathe Easy Clinic

Electro Cardio Graphy (ECG)

আর একটা সতর্কীকরণ ছিলঃ

Please Switch off Your Mobile Phone inside Consultation Suit



আবার ফোনটা দুলুনি দিয়ে উঠল...



৭।



ওর মনস্তাপ। জন্মের। জন্মান্তরের…



খুব ছোটবেলা থেকে লাল আকাশ তার বড় প্রিয়। আকাশের রং লাল। কবে কবে আকাশ লাল হত, তার একটা গোপন নথি, প্রায় দশ বছরের, তার কাছে আছে।

সেদিনও আকাশ লাল হয়েছিল। যখন লাল আকাশের দিকে সে মাথা তুলে, চোখ নিচে নামিয়ে রেখে খানিকটা ক্লান্ত শুয়েছিল। যেন নাইট ডিউটি ছিল তার, আর ভোর রাতের তন্দ্রা তাকে যেভাবে পেয়ে বসত। তার অনিন্দসুন্দর গোড়ালিতে সেই লাল রং মাখা ছিল।

সে এটা ভাবছে, ভাবতে থাকছে। আর গোপন নথি থেকে মিলিয়ে নিচ্ছে দিন-মাস-বছরের হিসেব। যদি কোন যোগসূত্র টানা যায়।

চাঁদমারি লুটতে চাইছে কারা?

সে তখন তার বুক শেল্ফের পেছন থেকে ’১০ সালের একটা ডায়েরি বের করে আনল। খবরের কাগজে মোড়া। তুলটে নেত্রীর মুখ, জ্বালাময়ী। এর পরের ইতিহাস ক্রমশ লেখা হবে।



১৩/০৩/১০

মধ্যরাত্রি



একটা আত্মরতির পর কই আর নিজেকে অসহ্য লাগে না তো। বরং, মনে হয় নিজের ভেতর নিজেই ফেঁপে ফুলে উঠছি। আত্মজার মত। নিজের শ্রোণিদেশ নারীর মনে হয়। নিজের দু হাত! এক হাত পুরুষের মর্দনের মতই তো, অন্য হাতে অনামিকার আংটি পর্যন্ত যোনির নম্র নরম ছুঁয়ে ছেনে যায়। তারপর তার সাথে যোগ হয় মধ্যমা। বুকের ওপর সরু সোনার চেইনটা সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত হয়, তারপর পায়ের মল। চোখদুটো ছাদের দিকে আটকে থাকে, যেখানে লাল রং সবচেয়ে বেশি পুরু আর ঘন। পায়ের দিকে তাকাতে ভয় হয়। এক কোণে চেয়ারে ও বসে আছে। কোলে নোট বুক। হাতে ধরা পেন্সিল। যতক্ষণ না উঠে এসে আমার পাদুটো কাঁধের ওপর তুলে নিচ্ছে। মুখের মধ্যে পুরে নিচ্ছে বুড়ো আঙুল। ওর মনস্তাপ। জন্মের। জন্মান্তরের।



মাদারচোদ, আলালের পো-কে হাতের সামনে পেলে হত। বুকের দানা ফোটানোর সেই সব দিন থেকে সে অযত্নে বেরিয়ে এসে এখনি গুহ্যের ভেতর দানা ফোটাত। দেখত আর দেখাত হোলির কারবার।


ধারাবাহিক - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার


২৪।

তবু তো পেরিয়ে আসতে হয় অসংখ্য ঝাড়-জঙ্গল-বাবলাবন-কলার বাগান।গহিন ছমছমে বৃহৎ কোনও অরণ্যভুমিতে প্রবেশ করবার আগে যেমন আট-দশটা সংক্ষিপ্ত সাঁকোহীন নদী।জীবন ছন্দময় প্রবাহিত হয়।বাইসন হানা দেয়।হাতি মানুষ মারে।অথচ জীবন থেমে থাকে না।শোকপালনের অবকাশই দেয় না।মাঠ প্রান্তরের ভিতর বছরের পর বছর সাহেবদের কবর শুয়ে থাকে।আরও জীর্ণ ও পুরাতন হয় ক্রমে ক্রমে।মকবুল বয়াতির দোতারার ডাং কোন কোন শীত রাতে ওম ও উষ্ণতা ছড়ায়।উষ্ণতর হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় শামিল হয় পাখি ডাক,মনশিক্ষার গীত-‘কচুপাতের পানি যেমন রে/ও জীবন/টলমল টলমল করে ...’ বিধ্বস্ত পুরুষ উঠে দাঁড়ায়।তার সর্ব অঙ্গে দৃঢ়তা জমে।আর অন্ধকারেই রাস্তা খুঁজে পায় সে।তখন আঙিনায় নাচগানের আসর।ঢোল-সানাই।আর নজরুল ইসলামের মরমিয়া গান-আইসো মোর কালাচান,যাও খায়া যাও বাটার পান... জোতদারের ধানের গোলায় আগুন।অথচ উদ্বেগহীন জোতদারের মুখে তখন তেভাগার গল্প।লাল পতাকা,কৃষকজনতা ও বারুদ বন্দুকের গাথাগল্প।গল্পপথে রক্তের দানা ফন্দিফিকির ও সমূহ চক্রান্তকথা।আগুন প্রায় নিভে আসে অথচ গল্প শেষ হতে চায় না।আদতে এক গল্প কিছুদুর গিয়েই নানা প্রশাখায় বিভক্ত।তাই এমন ধারাবাহিকতার মজাদার ফানুষ।এইসব গল্প খুঁটে খাই আমি।আমোদিত হই।আর বাড়ি ফিরবার পথে সন্ধে ও রাত্রির মধ্যপর্বে প্রায়শই বাঁশবাগান পড়ে।বাঁশবনের ভিতর অগণন জোনাকি।মন্দ আলোর নদী।সামন্তরক্তের মতো।লোককথার ঝোলা কাঁধে অপরূপ সব কথোয়াল হেঁটে যান।তাঁরা হেঁটে যেতেই থাকেন।আর ভালোবাসার পাশে সন্ত্রাস-রক্ত-লালসার আগুন।জন্ম ও মরণ লেখে বাজপাখি।


শিল্পকলা - অমিত বিশ্বাস


শিল্পকলা - প্রণব ফৌজদার


শিল্পকলা - শক্তি বর্মন


শিল্পকলা - সৌমিত্র কর


শিল্পকলা - মীরা মুখার্জী