সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ২য় বর্ষ, ১১তম সংখ্যা

সম্পাদকীয়



উন্নয়ন ও ভগবান

১৯৮০-৮১ সাল। বাবা-মায়ের হাত ধরে আমরা দুই ভাই গিয়েছিলাম কেদার-বদ্রী।কেদারনাথের পর বদ্রীতে যাওয়ার সময় যোশীমঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় ভয়ঙ্কর ধস নামে। তিন দিন অপেক্ষার পর ফিরে আসতে বাধ্য হই।আজ আমার ভাই তার দুই সন্তানকে নিয়ে যখন আবার একই পথে যাবার কথা ভেবেছে তখন আর পথ নেই, বাস্তবিক এই মুহূর্তে উত্তরাখণ্ডে কিছুই অবশিষ্ট নেই । উত্তরাখণ্ড আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে বেশ কিছুদিন সময় নেবে । ধরে নেওয়া যায়, এবারের অনেকেই যারা ফিরে এসেছেন শিশুরা কেউ কেউ বাবাকে বলেছিলেন হয়তো ভগবানের ইচ্ছে ছিল না , কিন্তু পরে আবার যারা যাবেন তারাও যে এই মনুষ্যসৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার কবলে পড়বেন না সেই কথা আজ আর হলফ করে বলা যায় না।

পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন আমি কোন দিকে ইঙ্গিত করছি। সেদিনের উত্তরপ্রদেশ,অধুনা উত্তরাখণ্ড এখন ১ কোটি মানুষের বাস,আর বছরে ২.৫ কোটি পর্যটক,এত চাপ কি ভগবানও নিতে পারেন?এই প্রসঙ্গে আরো কিছু জ্বলন্ত তথ্য উঠে আসছে।ভারতের ক্রম্পট্রোলার এণ্ড অডিটর জেনেরাল(CAG) গত এপ্রিল মাসেই জানিয়েছিলেন যে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কোন DISASTER MANAGEMENT PLAN নেই।আজ সে রাজ্যের জেলাওয়াড়ী প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কর্মিসংখ্যার ৪৪% পদ শুন্য।বিগত ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের STATE DISASTER MANAGEMENT AUTHORITY তৈরী হয়েছিল,যাতে আজকের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়...আজ পর্যন্ত তাদের একটাও মিটিং হয় নি!!!কেন্দ্র বা রাজ্য,কোন সরকারই কোন পাহাড়ের জন্যই প্রয়োজনীয় ALL WEATHER PROOF রাস্তা বানাতে পারে নি,স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও।

এহ বাহ্য!আজ উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ১১ টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র,সরকারী,বেসরকারী বা আধা-সরকারী কিম্বা অধুনা প্রচলিত P.P.P(PRIVATE PUBLIC PARTNERSHIP) মডেলের, যেভাবে সুড়ংগ তৈরী করেছে পাহাড়কে ফাটিয়ে,তাতে ভূমিস্তর দুর্বল হতে বাধ্য।অথচ দিল্লী মেট্রো তৈরীর সময় এভাবে ভূতলকে ফাটাতে হয় নি।মজার কথা, এক চিত্র সংলগ্ন রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও।গত শীতে শিমলার মত জেলায় এক মাসের মত বিদ্যুৎ ছিল না।বাকি জেলাগুলোর কথা থাক গে।রাজধানী দিল্লীর অবিশ্যি ঐ সময়ে বিদ্যুৎ পেতে কোনও অসুবিধা হয় নি।হিমাচলের (উদবৃত্ত )বিদ্যুৎ তো ছিলো।আজ আমরা মিডিয়ার দৌলতে পর্যটকদের কথাই ভাবি বা দেখি,কিন্তু পাহাড়ী মানুষ-জন,তাদের জন্য ভাবছি কি?আজ কটা লোক মরেছে আর কটা লোক স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে গেল সেটা বোধ করি কাল নতুন কোন ইস্যুতে চাপা পড়ে যাবে। কার্যত,হড়পা বানের মত ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে যে ভাবে পাহাড়ের পর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে তাতে কিছু ত্রাণ বিলি বা বা উদ্ধারকাজের আড়ালে চলে যাবে মূল প্রশ্ন---এই উন্নয়ন,এত উন্নয়ন-- কার জন্য,কিসের জন্য??

পাঠককে মনে করাতে চাই যে আজ উন্নয়নের প্রশ্নে উত্তরাখণ্ড বা গুরগাঁও একই যায়গায় অবস্থান করছে।অপরিকল্পিত নগরায়ন,যথেচ্ছ সবুজের সংহার আর উন্নয়নের নামে ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদ—আপনি আপনার দেশের বা রাজ্যের অন্যত্র একই চিত্র খুঁজে পাবেন,আমি নিশ্চিত।কাল তিস্তা বা তোর্সায় একই বিপদ হবে না, এটাও কেউ বলতে পারে না।ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকায় কুখ্যাত “প্রজেক্ট পোলোনোরয়েস্তে”---RAIN FOREST(যেখানে বড় বড় গাছগুলো বাঁচে ও বাড়ে অত্যন্ত কম প্রাকৃতিক পুষ্টিতে) সাফ করে তৃণভূমি বানাও,ওই ঘাস খাইয়ে আমেরিকার খাবার জন্য ছাগল-ভেড়া চাষ করা হল,আর সেটা করতে গিয়ে দ্রুত ভূমিজ জলস্তর নেমে গেল,কারণ বড় গাছগুলো মাটির অনেক গভীরে শিকড় ঢুকিয়ে জল তুলতে পারতো,যা ঘাস বা গুল্ম পারে না।তাই আজ ঐ অঞ্চলে হাইওয়ের দুইধার মরুভূমি।আপনি আর আমি আজ ঠিক একই ভাবে উত্তরাখণ্ড রাজ্য,বা গোটা হিমালয়ভুক্ত বিভিন্ন রাজ্যের,অথবা বিশ্বায়িত হওয়ার দুর্দম বাসনারত গোটা ভারতবর্ষে উন্নয়নের নামে এই চুষে খাওয়াটা কি ধরতে পারছি?

আজ উত্তরাখণ্ডের বিপদে আমরা বিচলিত হয়ে কেউ চেক কাটছি প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ ফাণ্ডে,কেউ টিভি দেখে হা-হুতাশ করছি,কেউ বা এত ভয়ঙ্কর বিপদেও কেদারনাথের মন্দিরটা বেঁচে যাওয়ায় ভগবানের লীলাকেই সাধুবাদ জানাচ্ছি—আমাদের মগজে কার্ফু—ধোঁকার টাটিটার কথা কেউ ভাবছি কি?

ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে অরিন্দম চন্দ্র
১লা জুলাই ২০১৩

গুচ্ছ কবিতা - অরবিন্দ চক্রবর্তী

গুচ্ছ কবিতা
অরবিন্দ চক্রবর্তী


ঘুড়িপত্র : ০১

সারারাত জেগে আছি কেন? উত্তরপত্রে জবাব না লিখে
পাল্টাপ্রশ্নের হালুম জারি করব।
নাচতে নাচতে কিছু চোখ শিল্পকলা করে
বলেই ফেলবে, সময় শেষ।
#
জানি তো, দৌড়বিদের হাতে ঘড়ি নিপ্রয়োজন।
দিগন্তে কেবল ঘুড়ি ঘুড়ি আকাশ।
এবার প্রশ্ন, ঘড়ি ও ঘুড়িগণের পরীক্ষাকেন্দ্র কোথায়?
দশ মিনিটের এই তুখোড় তর্কের কোনো
মিমাংশা ফলবে না।
#
তাহলে ও পালববংশের জাতক, তুমিই বল
আগুনের ধারণা নিয়ে যারা আলোচর্চা করে
তাদের লেজে কি খেলছে না মমিকাঠের উপহাস?



ঘুড়িপত্র : ০2


ভুলে যাওয়ার আগে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে রেখেছিলাম
ভুলে যাওয়ার পরেও দেবো।
#
ভুল এই একটি মাত্র শব্দ, কান মলে দিলেও
লজ্জার মাথা খেয়ে সে আরেকবার ঢুকে যাবে
সাপের গর্তে- খোলস পাল্টিয়ে এসে
গ্রামের মহিলার মতো
আমাকে ধমকে যাবে।
#
চোখে চোখ রাখার আগে আহা হুলস্থুল
মেঘ তোমাকে নমঃ নমঃ করি
ভয়কে ডানে রেখে
বামের কলোনি গেট দিয়ে
পালিয়ে পালাতে যাই।
#
উহু ভুল, আমার জিন্স জিপার নেই তাহলে
ক্লীব বলবে পিরিয়ডকালীন ঋতুপর্ণ?
#
দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েছি বলে- আমারও অনেক
আঁচলের গিঁট খুলে জিজ্ঞাসাবাদের
অ্যাসাইনমেন্ট আছে।
#
সরে দাঁড়াও পিতৃভক্তি পরায়ন স্ট্যাচু সম্প্রদায়।


বরফসম্প্রদায়

আমার একটি নাম দিন হিস্ট্রি মহাশয়, বরফসম্প্রদায় থেকে এসেছি বলে কি আমাকে ডাকা হবে না অতল? দারুণ ইচিকদানা-সকাল দৈনিক পাতায় সুসমাচার ছাপা হলেও আপনি আমাকে তুমি বলে আর তুই আমাকে সরলরেখা ডাকে। ভ্রুকুটি টের পেলেও হজমস্বার্থে তাকে দিই রঙসমৃদ্ধ ঘুমের প্রেসক্রিপশন। গাছের ডালেই বেকুব দোলে হাওয়া হাওয়া আদর। আমি বলি চিকিৎসা, কেউ কয় ব্যান্ডেজ। অথচ সিলমোহর নিয়ে ঘোরে আমার যত মায়াখুনি রোদ। তবে যদি ছায়ার অ্যাকুরিয়ামে ডুবিয়ে দিই শীতঝালাই চাকু-মাছ চরিত্র যাদের, অ্যামিবা ঝাঁকে যান। আমি বাপু বানরপুত্র-সমুদ্র তলদেশে গড়ি আগুন-ইন্ডাস্ট্রি।


শহরের বৃষ্টি ও শিল্পকলার নাচ

স্বপ্নবিভাগের ঘুম,পরামর্শ দিয়েছে কে মাথায় মেঘ ঘষলেই সুস্হ থাকা যায়?
#
যে জানেনা সুস্হতা এক উত্তরাব্যাংকের পাশ ঘেষে ঘন্টি বাজিয়ে উধাও হওয়া
খোসপাচরা ও অচ্ছুতমার্গের ছোঁয়াচের নাম
#
তাকে আজ মাথায় তুলে দেবো আসছে দিনের রোদ-হিংসুটে হলে কী এসে যায়
বরং তুই আজ ভোম্বলের পায়ে নাচ।
#
দ্যাখ জন্মের পরে পথ কত নদী দেখেছে-অথচ সমুদ্র শোনেনি রিকশার টুং টাং
এবার যদি কেঁদেই ফেলেস বলব,শহরে শিল্পকলার বৃষ্টিরা তুখোড় নাচছে।

ধারাবাহিক - রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

অবভাস
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়


৯।

ও পরাণ, পরাণের লাইগ্যা কান্দে তুমি / পরাণ বান্ধব হইয়া ওঠো…

আজ সে, সেই প্রথম পরিচ্ছেদের বিষাদ্গাছগুলোর কথা, যারা প্রলাপমারীর মধ্যে ছিল, ভাবতে বসল। ওরা কি সত্যি ওদের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ করেছিল এই হিংস্রতার কথা? সংবাদ পরিবেশনের কোন দায় ওদের নেই। প্রথম, দ্বিতীয়, বা, তৃতীয় কোন প্রতিশ্রুতিও নেই।
অথচ, প্রাণের প্রথম ভালবাসার কথা ওরা জানত। ভালবাসা তো কোন প্রতিশ্রুতি নয়।
পিঁপড়েদের উপসংসার, বা, মেয়েটির অনিন্দসুন্দর গোড়ালিও এই কথা জানত।
যথারীতি, ১৫ দিনের মধ্যে সরকারের পক্ষে চার্জশিট দেওয়া যায় নি। ফরেন্সিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসে পৌঁছয় নি। কিন্তু সরকার রুল ঢোকাচ্ছে। তাই পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার কথা ভাবছে বঙ্গের পুলিশ।
এদিকে লোকজন, আঞ্চলিক বেশ কিছু কারণে ফুঁসছে। বেশি ফুঁসছে, দেখে মিডিয়া যেভাবে একটা প্রাগৈতিহাসিক সমাজকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে। কাট্টু-কুট্টুসরাও আকছার ধর্ষণ নিয়ে মাসি পিসিকে শুধচ্ছে। মাসি পিসিরাও মিডিয়াতে বসা পেইড-পার্সোনাদের মত হেলে-দুলে-বেঁকে-চুরে
উত্তর দিচ্ছেন।
বোকচোদ, বোকচোদ সব।
বিরোধীরাও খোঁয়াড় থেকে বেরিয়ে এসে দিশেহারা হয়ে এমন একটা আচরণ করছে, যেন, এটাই একমাত্র তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা হতে পারে। বিদ্বদজনেরাও রাস্তায় হেঁটে নিলেন। বিরোধীরা মিছিল ভরাল। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের পর পুনরায় ‘বিবেক’ জাগ্রত হল। সবাই এই জনসমাজ নিয়ে ভাবছেন। এটা ভাল। এক পৃথিবী এক রাষ্ট্র আর কখনো না হওয়ার মত ভাল।
মুখ্যমন্ত্রী তো তকমা নিয়ে ঘোরেন। প্রতিবাদীদের মুখে ‘মাওবাদী’ তকমা সেঁটে দিলেন। মিডিয়া সেটাই গিলে নিল।
কানা ফকির একটা গান লিখলঃ
ও পরাণ দুলিয়া দুলিয়া ওঠো
ও পরাণ ভগ্ন পরাণে ফোটো
ও পরাণ, পরাণের লাইগ্যা কান্দে তুমি
পরাণ বান্ধব হইয়া ওঠো…

আর একটানা, ঘ্যান ঘ্যান করে সেটা হাটে মাঠে গাইতে থাকল…।

কবিতা - বাণীব্রত কুণ্ডু

আলকাপের দল
বাণীব্রত কুণ্ডু



অনেক জমেছে কথা তবু কিছু বলবো না ভেবে বলিনি তোমাকে
রাত্রি দুই প্রহরে জেগে উঠি! দক্ষিণের ছোটো ব্যালকনিটায় ঝুঁকে
দাঁড়াই, দেখি দূর বটে অজস্র আলোকবিন্দু জ্বলজ্বল করে
আতসবাজির মতো নিভে গিয়ে জ্বলে ওঠে জ্বলে উঠে নিভে যায়
#
আজ আর বাজে না সে চারণসঙ্গীত, সাজে না বালকেরা বহুরূপী সাজ
গোধূলির ধুলো ওড়া রাঙা আলোমাখা পথে ধেয়ে আসে না তো কেউ
দু-বাহু ঊর্ধে তুলে আকাশে ছড়িয়ে মন কোনো উদাসী বাউল বাউলানী
গেরুয়া বসন আর একতারা হাতে নিয়ে গেয়ে ফেরে না তো চৈত্রর মাঠে!
#
তবু দেখো প্রিয়তমা ভালোবাসা ফেরি হয় হাত থেকে হাতে নির্বিবাধে
প্রতিবাদ করোনি তুমি আর আমিও তো বলিনি কিছু; বলার যা ছিল
জানি রাত্রি সকাল হলেই মুছে যাবে, মুছে যাবে সোহাগের সুখদাগ
সেই তুমি সেই আমি সেজে নেব, সেজে নেব আলকাপদলের মতন সাজ...

কবিতা - অলক বিশ্বাস

ড্রয়িং রুম অলক বিশ্বাস

উৎসুখ নদীপাড়ে দুপুর গাছ ফেললাম এঁকে
চুপি চুপি তোমাকেও ভাবলাম পাতা
কাল্পনিক এই যে রেখাচিহ্ন ডালপালা, ঘরবাড়ি
গাছেদের সংসারে কতো আয়োজন!
#
সকালে এখানে পাতারা হলুদ হয়ে ঝরে
দুপুরে ভীষণ হাওয়া তোলপাড় তুমিও দুলে
আমাকে শাসাও ক্ষীণ
#
জানি মিলোনিয়াম পার্কে তোমাকে চুমু
সাতকাহনের প্রবাহে অবান্তর
ধ্যাৎ বলে সরে যেতে পারো অন্য শহর
আমি রোদ্দুর দাঁড়াবো কোথায় ?
#
শীতল কথাদের ঘুম ভেঙে গেলে
দরজা খুলো ড্রয়িং রুম।
#
উতল করে চলে যাচ্ছো মৌসুম কাল
এতো চুপচাপ বৃষ্টি আমার
নুড়ি-পাথরে বেজে ওঠো জল
একটা নদীও এঁকে দিও একটি সকাল।

কবিতা - অমলেন্দু চন্দ

তিন মাইল ফলক
অমলেন্দু চন্দ


তিন মাইল ফলকের পাশে হাতের গেলাসে
মহুয়ার ঝাল ঝাঁঝ সাথে চানাচুর
বুঝতেই পারছেন এর পর কোন কথা হতে পারে
#
অরণ্যের দিনরাত্রি কিম্বা আবার অরণ্য
বিনয় ভাস্কর শক্তি কিম্বা ইদানীং
দশক টশক আর একুশ শতক টক
#
ইতিমধ্যে সাপ্লাই নতুন রসদ
নিকষ কষ্টিপাথর কিম্বা সুঠাম দীঘল নয়
নেবুগন্ধী ত্রিশোর্ধা গুমটি ওয়ালী
ভাঁজহীন কোমরের কোবাল্ট ঢেউয়ের নীচে
নিতম্বের দোদুল দুলুনি
গ্লাস লঙ্কা ছোলা সাথে আরও কিছু ফালা ফালা অবাধ্য গোপন
গোড়ালির নীচে জলভাঙ্গা ছপ ছপ আওয়াজ
একটু আগের সাইক্লোন মূর্ত রেখে দুরন্ত গমনে
আমাদের কিয়দংশ অনায়ত্ব রমণীতে চলে যায় অবাধ অবুঝ
#
তিন মাইল ফলক মহুয়ার ধক আর অনিবার্য কিছু স্পার্ম
নিজেদের ভরকেন্দ্রে পাথর ভাঙতে থাকে
জল জঙ্গল আর মহুয়ার টাঁড়ে
নক্ষত্র চিত্রকল্প কবিতার অভিসন্ধি বুক পেট আঙুল টাঙুল
#
অনায়ত্ব রমণীর ডিগডিগে বাচ্চাটা
রেখে যায় প্লেটশুদ্ধু গরম রুটির প্যাক আলুদ্দম ডিম ভাজা অর্ডার মাফিক

কবিতা - সুমনা গড়াই

আপেক্ষিক
সুমনা গড়াই


যে অতীত মুখ দেখে চাপা পড়ে গেল বরফে
যে উক্তি আজও যুক্তিহীন তোমার তরফে
রক্ষিত থাক যত্নে অন্য কোনোখানে
যে কথা বোঝেনি কেউ
তার অন্যকিছু মানে
তবু দোষ না করে পাগল পেয়েছে সাজা !
পকেটভর্তি আঁচল সিকি বলে

আমি রাজা, আমি মহারাজা

কবিতা - সৃজিতা মুখোপাধ্যায়

২৬৯ পৌষালী
সৃজিতা মুখোপাধ্যায়


না,
আমার দু কান কাটা
ফ্ল্যাট এর নীচের সিঁড়িটা পেরোলেই আকাশ দেখা যায়..
বাসী চাদরের প্রতিটা ভাঁজে আদিম কৌশল..
আমার মুদ্রাদোষে যা কিছু ধরা পড়ে,আমি ওদের স্বপ্ন বলে মানি-
তখন এক একটা মোজাইক খোপ পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে বিকেল..
আমি বুকের ভিতরে কর গুনে মেপে নি রিপু আর বাসনার গুনফল..
"আমার বান্ধবী উনিশ"-বলতে বলতে কাঁচা আর পাকা গোঁফগুলো বালিয়াড়ি সাজায়-
হ্যাঙারে ঝোলানো লাল আর শাদা পাঞ্জাবির মাঝের সময়টুকু ,
ক্যামেরার লেন্স পেরিয়ে দেখে নেয় নিজেদের ছায়া-
আমি ষোলোত্তীর্ণ রিয়ার ডোমেনে মিশে যেতে দেখি
আর একটা একমিনিট পনেরো সেকেন্ড..

কবিতা - সন্দীপন মজুমদার

চতুর্দশপদাবলী
সন্দীপন মজুমদার



ঊন্মাদ এই রাত্রি ছুঁয়ে , অনিমিখ অন্তরীপ ছুঁয়ে ,
স্বপ্নসেনার ডাকে জেগেছে হরিদ্রাবন , জাগে লুপ্ত প্রেমের ফসিল ।
পৃথ্বীর পৃথুল ক্লাসে ঘণ্টা পড়ে
হলাহল নেমে আসে ধূসর কৌমার্য নিবেদনে ,
স্যাবাইনা মেধাবী , না কি ওয়পিদস্‌-এর মেধাহীন স্মৃতি ;
আপেলে দংশনচিহ্ন তবে কার ?
তোমার নিবিদে অমারাতে অসহ্য লাগে এ আত্মরতি ।

হে প্রাচীন লজ্জা প্রতিনিধি ,
ষড়জ পঞ্চমে যদি বেজে ওঠে রোদনসংরাগ
তবে কোন সরোদপ্রতিভা জাগে ধ্বংসগোধূলির সুরোৎসবে ?
হে স্তব্ধ অভিজ্ঞান , তুমি কি সেই নির্বাণকুসুম ?
গগনে গগনে সুখের ক্রন্দন -
তোমার পরাগ মেখে দেখেছি পাপড়ির দিন
কত না অনায়াসে সর্বনাশা স্মৃতি ঝরে পড়ে ।

কবিতা - বিশ্বজিৎ লায়েক

আঃ
বিশ্বজিৎ লায়েক



রেগেমেগে খুঁজছো স্পর্শসুখ
হাঁটুমুড়ে বসল ঈশ্বর
আমরা কেউ সাঁতার শিখি নি
চিনেছি জীবাশ্ম

কবিতা - নীলাঞ্জন সাহা

দুটি কবিতা
নীলাঞ্জন সাহা


১, প্লাবন

পুড়তে থাকা মানুষ যেমন
ঠোঁটে নিয়ে পোড়ায় সিগারেট
নদীও তেমন ভাসাতে ভাসাতে
ভেসে যায় !


২, ভালোবাসার মানুষ

তবু শেষপর্যন্ত মানুষ
ভালোবাসার মানুষ ছাড়া আর কিছুই চায় না ;
ভালোবাসার মানুষের কাছে এমন কী থাকে ?
তেমন কিছুই না
থাকে শুধু গ্রন্থের ভেতর
সেই লুকিয়ে রাখা
ময়ূরের মায়াবী পেখম !

কবিতা - সৈকত ঘোষ

দুটি কবিতা
সৈকত ঘোষ


অন্য বিকেল

জামার বোতামে অনেক ধরনের
কাহিনী লেগে থাকে
আকাশ কে ছোয়ার ইচ্ছে
অথবা মৃত দাম্পত্য চুইয়ে চুইয়ে পরে
#
আমার চশমার কাঁচে
এ এক অন্য বিকেলবেলা


নদী ও নারী

ভালবাসা মানে এক আউন্স শূন্যতা
আর অনেকটা রোদ্দুরের গান
বার বার আয়নায় নিজেকে দেখলে
কে যেন ডাকনামে ডাকে
পাশফিরে শুলে আমার বালিশে চাদরে
নিশব্দ নদী শরীরের উত্তাপ ছেঁকে
কখন রাত্রিভাষা খুঁজে নেয়

#

আসলে শব্দেরা এরকম
প্রায় প্রতিদিন এক একটা নতুন
ফ্রেম বন্দী আকাশ
স্পর্শবিজ্ঞানের সুত্র আনুযায়ী
সাড়ে উনচল্লিশ ডিগ্রী অক্ষাংশে
প্রতিবিম্ব কখনো নদী কখনো নারী হয়ে যায় ...

কবিতা - আসরফ সাগর


তৃষ্ণা ! আসরফ সাগর


ও কদমে খুব আদুরে ছিল ... আমি ঘ্রাণে
আষাঢ়ে পরিচয় বৃষ্টির সম্মোহনে,জনশূন্ন বাসস্টপেজ,
শুধু
আমি আর ও, ওর হাতে সেফ্র একটি কদম
কথা নেই অনেকক্ষণ তবুও মনের কড়িকাঠে
না বলা কথা দের এক্কাদোক্কা, মনে
মন লাগিয়ে অদেখা অবাক আলিঙ্গন,
শুধু
বৃষ্টি পারেনি ওষ্ঠের তৃষ্ণা মেটাতে
ওঁটা অধরেই মেটাতে হয় বলে !

কবিতা - হাবিবুল্লাহ রাসেল

দুটি কবিতা হাবিবুল্লাহ রাসেল


পথ

পথিক চলে গেলে
রাত জাগবে পথ
পথিকের সাথে পথ যাবেনা বাড়ি
#
আমার ভাবনা পথে হেঁটে হেঁটে
যতবার বাড়ি যাবে সোনাপাখি
পিছু পিছু হেঁটে যাবে পথ...



হৃদয়বাসিনী... জোছনা মায়ামুখ...

যতোটা আলো জ্বালাই ততোটা ছায়া হয়
ততোটাই কুসুম কুসুম স্বপ্নে
ছায়ারা পাখনা মেলে মায়ার ফড়িঙ
#
বর্ষা ঝরে গেলে বুঝি কতোটা ঝরেছে বৃষ্টি -
গোলাপ, টগর, হাসনেহেনায়...
হৃদয়বাসিনী কেবল হৃৎকথা বোঝে না
#
তোমার সাথে ছায়ারা চলে গেলে
ছায়া রঙের মায়ারা জ্বালায় আদিম আগুন।
আগুন কি পোড়াতে পারে
আগুনের ছায়া - মায়া ?
তবু হৃদয়ে জ্বলন্ত মোমব্যাথা
গলা মোমব্যাথায় পোড়ে মোম মন।
পুড়ে পুড়ে পুড়তে থাকে
মুখপোড়া মুখ... খড়ের ঘর... জানালা ও জোছনা...
#
স্রোতে পাড়তো ভাঙবেই -
তাতে মাছের কী এসে যায়।
প্রেমের আবার পরকীয়া কী !
ও হৃদয়বাসিনী... ও জোছনা মায়ামুখ...

অনুবাদ কবিতা - ইন্দ্রাণী সরকার

অনুবাদ কবিতা
ইন্দ্রাণী সরকার


Love's Philosophy
Percy Bysshe Shelley

The fountains mingle with the river,
And the rivers with the ocean;
The winds of heaven mix forever
With a sweet emotion;
Nothing in the world is single;
All things by a law divine
In another's being mingle--
Why not I with thine?

See, the mountains kiss high heaven,
And the waves clasp one another;
No sister flower could be forgiven
If it disdained its brother;
And the sunlight clasps the earth,
And the moonbeams kiss the sea;--
What are all these kissings worth,
If thou kiss not me?


ভালোবাসার তত্ত্ব
পি. বী. শেলী

যেমন ঝরনা নদীতে মেশে
আর নদী সাগরে মেশে
স্বর্গের বাতাস এক সুমধুর
ভাবনায় মিশে যায়;
এই পৃথিবীতে কিছুই একা নয়
এক ঐশ্বরিক নিয়মানুযায়ী
সব কিছুই অন্যের সাথে সংযুক্ত ---
তবে কেন আমি তোমাতে মিশে যাই না ?
চেয়ে দেখো, পর্বতমালা স্বর্গকে চুম্বন করে
জলের ঢেউ একে অপরকে আঁকড়ে থাকে;
সুর্য্যের আলো পৃথিবীকে ছুঁয়ে থাকে,
আর চাঁদের আলো সমুদ্রকে চুম্বন করে,
যদি এই সমস্ত চুম্বন মহিমান্বিত হয়,
কেন তুমি আমায় চুম্বন দাও না ?



The Triumph of Death
W. Shakespeare

NO longer mourn for me when I am dead
Than you shall hear the surly sullen bell
Give warning to the world that I am fled
From this vile world, with vilest worms to dwell.

Nay, if you read this line, remember not
The hand that writ it; for I love you so,
That I in your sweet thoughts would be forgot
If thinking on me then should make you woe.

O if, I say, you look upon this verse
When I perhaps compounded am with clay,
Do not so much as my poor name rehearse,
But let your love even with my life decay;

Lest the wise world should look into your moan,
And mock you with me after I am gone.



মৃত্যুর বিজয়
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

আমার মৃত্যুর পর তুমি আর শোক প্রকাশ করো না
যখন তুমি মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি শুনতে পাবে,
পৃথিবীকে জানিয়ে দিও তখন আমি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীকে
ছেড়ে মাটির তলার বাসিন্দার সাথে থাকবো বলে চলে গেছি |

এই পংক্তিগুলি পড়ার সময় লেখকের কথা মনে করো না;
আমি তোমায় এত ভালোবাসি যে আমি চাই না
আমার চলে যাবার পর তুমি আমার কথা ভেবে দুঃখ পাও |

আমার শরীর ধুলোমাটিতে মিশে যাবার পর
তুমি যখন এই কবিতাটি দেখবে,
আমার তুচ্ছ নাম কাউকে বলতে যেও না |
আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাকে
আমার জীবনের মতই নিঃশেষ করে দিও |

এই বিজ্ঞ মনুষ্যজাতি যেন তোমার দুঃখের
কারণ জানার জন্য অনুসন্ধান না করে আর
তোমার আমার সম্পর্ক নিয়ে বিদ্রুপ না করে
আমার মৃত্যুর পর ||

ধারাবাহিক - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার



২৮।


ফাঁকা প্রান্তর থেকে মিছিল উঠে আসছে।মিছিলের শ্রেণিচরিত্র এক ধরনের পূর্ণতা পেয়ে গেলেও আসলে মিছিলটা ব্যাপ্ত হতে হতে বৃহত ব্যাপ্তি পেয়ে যায়।তখন বিস্তারের ভিতর সন্তর্পণে সাপ ও সর্পগাথা ঢুকে পাড়ে।ডানকানসাহেব তার ঘোড়াটিকে ছেড়ে দেবার পর ঘোড়াটি পুলকিত হয়...... ঘুড়ি হয়ে যেন উড়তে থাকে।ফাঁকা প্রান্তরে তখন আর মিছিলের চিহ্নটুকুও দেখা যায় না।মিছিল বড় কোনও হাটের চৌহদ্দি পেরিয়ে একটা কিংবদন্তি খুজতে থাকে।পিছনে পড়ে থাকে শস্য সবুজ জনভূমি ... ইতিহাসপিছল বন্দুক।বন্দুক এমনই যা পরম্পরাগত হাতবদলে ইতিমধ্যে খ্যাতমানতা পেয়ে গেছে।লোককথা অতিকথা এমনকি ঘুমপাড়ানি গানের গায়েও বারংবার আছড়ে পড়ে বন্দুকটি তার যাবতীয় ইতিহাস ভূগোল জনগল্প নিয়ে।অথচ ডানকানসাহেবের হারিয়ে যাওয়াটুকু অখন্ড সিল্যুয়েট হয়ে থাকে।আবার বৃষ্টির ভিতর দিয়েই একা একা সাহেব চলে যেতে থাকেন সাহেবপাতার হাটে।হাট কখনও জীবন থেকে ফুরোয় না।কেবল হাটের গল্প হাটমিছিল হাটপুরাণের অতিকথা ঘুরে ফিরে বর্ণময়তার গড়ানে নুড়িপাথরসহ প্রবাহিত হতে থাকে।


২৯।


যদি প্রিপ্রেক্ষিতটা কালখন্ড দিয়ে সাজানো থাকে ...যদি ধুলোবালির সংকীর্ণতা দিয়ে দুচারটি হাটবাস যায় আর মেঘের আবডাল থেকে পুরানো গল্পগুলি মাটিপৃথিবীতে খুব মায়াময়তাসহ ফিরতে থাকে ... ফিরতে থাকাটা সাময়িক এমন ভাবনা স্থির হবার কোনও ফুরসতই পায় না যদিও জলবাহিত এক ভূগোল উপচে ফকির বাবার কন্ঠে গান বাজে......
শামুক খাজারে আমার বাড়ি আয়/কুচি
কুচি শামুক দিমু/হলদি দিমু গায়.........
গান গড়াতে থাকে গান মেদুর হয়ে ওঠে আর মেদুরতার পিচ্ছিল সীমান্তে প্রাচীনজঙ্গল থেকে হাওয়া আসে,হাওয়াকলের নীচে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে ডানকানের বাদামি অশ্ব আর তার ধবল পেশির শূন্যতাটুকু বাদলা মেঘ হয়ে ভেসে যেতে থাকে আন্দুবস্তির নারী ও নদীর দিকেই।পর্ব থেকে পর্বে যেতে গিয়ে বিস্তর হেঁটে বহুলতার মধ্য দিয়ে যেতে গিয়েও প্ররোচনাহীন অসহায়তার প্রাবল্য সত্ত্বেও ডানকান সাহেব – সাহেবের বন্দুক ঘোড়া এবং বিস্তারময়তার মধ্যে বারংবার এলোমেলো গল্প টুকরোগুলি ফিরে ফিরে আসে আর আবহমানতা থাকে বলেই ডানকানসাহেব আর সামান্যতম চরিত্রে না থেকে নতুন গল্পের খোঁজে হাহাকারের কোরাসের ভিতর ডুবে যেতে থাকে।কুয়াশা কাটলে নতুনতর কোনও কুয়াশায় ঘোড়াসহ ডানকান হারিয়ে যেতে থাকেন......স্বপ্নোচ্চারণের মতো তখন মনে হয় সবকিছু।


৩০।


চলা তো শেষ হয় না কখনও ডানকানসাহেবের ।অন্তত আজ অব্দি হয়নি।সামান্য বিরতির পর নিশ্চিত তিনি ছুটবেন।আপাতত বন্দুক নামিয়ে রাখুন তিনি বড়াইকবাড়ির উঠোনে।আর ঘোড়াটি ছেড়ে দিন অতিকথনের এক দুনিয়ায়।নদী ও হাটের ...হাট ও জঙ্গলের ...নাচ ও গানের পরিসীমায় আর পরিসীমাহীনতায় সাহেবের ভুমাত্রিক ঘোড়াটি আরও বহুমাত্রিকতায় ঢুকে যাক।ধীরে ধীরে সময় গড়াক ......রাত্রি হোক......বড়াইবাড়ির চারপাশে হাওয়া ও আগুনের ঢেউ উঠুক।উপসংহারের বদলে আমরা পুনর্বার ঢেউহীনতার কথা লিখি।আশ্চর্য গান ও গল্পের কথা লিখি।গল্প দীর্ঘকাল শুয়ে থাকবার পর হয়তো আড়মোড়া ভাঙবে......গুটিকতক হাই তুলবে ... তারপর যথারীতি ঢুকে পড়বে ঢেউহীনতার বিস্তারে।

ছোটগল্প - অভীক দত্ত

সে আর সে
অভীক দত্ত



-শোন
-বল
-আজ দেখা হল?
-না। আজকেও হয়নি।
-তবে? কি করবে?
-চলে যাব।
-কোথায়?
-যেদিকে দু চোখ যায়।
-বাবা! এযে পুরো ফিল্মি ডায়লগ!
-তাছাড়া কি করব?
-আমিও যাব তবে।
-কোথায়?
-তোমার সাথে।
-ভালবাসছ নাকি?
-সেইরকমই তো মনে হয়।
-আর তারপর যদি ও ফিরে আসে?
-আমার মনে হয় না আসবে।
-এটা তো আমার প্রশ্নের উত্তর হল না।
-কোন উত্তর শুনতে চাও?
-ও ফিরে এলে তুমি কি করবে?
-ছেড়ে দেব তোমায়। বলব যা পাখি... ওড়।
-ও তো আমাকে নাও ফেরাতে পারে।
-আমি তো থাকছিই। সব সময়।
- যুদ্ধ কবে শেষ হবে?
-কে জানে। যুদ্ধ তো কোনদিন শেষ হয় না।
- ও কি মারা গেছে?
-জানব কি করে?
-খবরের কাগজে বেরোয় না?
-খবরের কাগজে কি সব খবর থাকে? এত দুর্নীতির খবরের তলায় চাপা পড়ে থাকে।
-আমরা কি সব ঠিক করলাম? ও যদি ফিরে আসে?
-ঠিক ভুল জানি না। না এলে...
-না এলে কি?
-না এলে আমি তো আছি।
-বার বার বলছ তুমি আছ?তুমি কি সত্যিই আছ?
-হ্যাঁ, যেমন আছে তোমার নিঃশ্বাস।
-এবার ফিল্মি কে হচ্ছে?
-হলে তো খারাপ হত না।
-খারাপ ভাল তো অনেক কিছুই হয়।
-যেমন?
-মানুষ।
-খারাপ মানুষই বেশি।
-নাহ। মানুষের মধ্যে খারাপের শতাংশটা বেশি। মানুষ খারাপ কে বলল?
-খারাপ না? ক্লাবের প্রেসিডেন্টও শুতে বলে। নেতাও শুতে বলে। স্বামী নেই বলে আমি কি পাবলিক প্রপার্টি?
-তারা তোমার অপেক্ষাতেই রয়েছে। তোমার সিগন্যালের অপেক্ষায়। একবার তুমি হ্যাঁ বললে ওরা আসবে, একে একে সবাই।
-সে ভয় পাই তো। এই কারণেই তো তোমার কাছে আসা।
-আমি তো আছি বলেইছি।
-থেকো।
-থাকছি তো। ছায়ার মত পাহারা দিই তোমায়। ওই যে ভিড় বাসে ছেলেটা তোমার বুক ছোঁয়ার চেস্টা করছিল তখনও ছিলাম। আজকাল সবসময়েই থাকি।
-মাঝে মাঝে শূন্যতা অসহায় করে দেয়।
-কি মনে হয় তখন?
-ভাবি সুপ্রতিম ছেলেটার চেহারা কি সুন্দর। ও-র সাথে কিই বা হল? সব মিলিয়ে এক বার। তারপরেই তো চলে গেল।
-সর্বনাশ।
-সেটাই তো চাই মাঝে মাঝে। রাত জেগে বসে থাকি। অস্থির লাগে। মনে হয় চরিত্র ধুয়ে কি জল খাব?
-তারপর কি কর?
-ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম হয় না। তখনই ডাকি তোমায়।
-হোলি কাউ।
-তা বটে। তুমি না থাকলে আমি কি করতাম। এতদিনে সুপ্রতিম জয় করে নিত আমায়।
-নিলে নিত। কি করবে আর।
-ফোনটা হাতে নিয়ে বসতেও ভয় লাগে। কি জানি কাকে কখন আসতে বলে দিই।
-কত নাম্বার আছে তোমার কাছে?
-হাসালে। একা মেয়ে। নাম্বারের অভাব?
-সবাই দেয় তোমাকে?
-সব্বাই। ওই যে বাড়িওয়ালার বিবাহিত ছেলে। বিকেলবেলা বউকে গাড়ি করে নিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। সুখী সুখী মুখ করে ঘুরে বেড়ায় ও-ও দিয়েছে। ওদের অফিসের রিপোর্টিং বস। তারও। এমনকি ওর মেসোমশাইয়ের নম্বরও আছে।
-স্কাউন্ড্রেল যত সব।
-রাগ করছ কেন? এ তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
-রাগ করব না? তাহলে বিশ্বাস করবে কাকে?
-কাউকে নয়। আশীর্বাদ দেবার নাম করে পিঠে হাত দেওয়া, গলায় হাত ঘষে দেওয়া তো পুরনো। সেকারণে আজকাল কাউকে প্রনামও করি না।
-করে কি হবে? প্রনাম পাবার যোগ্য নেইও তো কেউ।
-সে তো ক্লাস ফাইভ থেকেই। প্রাইভেট টিউটর কোলে বসাতো। অস্বস্তি হত। কিছু বলতাম না। তারপরে মা বোঝাল।
-তারপর?
-তারপরে ঘোরের মত কৈশোর। মেয়েবেলা বলে যাকে। প্রেমিক ছিল একটা। প্রেমের থেকে শরীর খুঁজত বেশি। নাভিতে স্তনে জিভ বোলাত। একা পেলে যৌনাঙ্গে আদর করত। প্রবেশ করতে চাইত। কিন্তু কেন জানি না, শীতল ছিলাম তখন।
-আমাকে খুঁজেছিলে সে সময়?
-নাহ। ঘোরের মধ্যে থাকতাম তো। পড়াশুনার সময়েও যৌনাঙ্গে খুঁজে বেড়াতাম সে প্রেমিককে। আমাকে জাগিয়ে দিয়ে চলে যেত সে। তারপর পড়ে থাকতাম একা।
-বিয়ের পরে তবে শান্ত হলে কই?
-হলাম না তো। একদিনই তো ও ডুবিয়ে দিল আমায়। সম্পূর্ণ প্রবেশ করত। তবু ওর পিসীরা স্তনে হাত দিয়েছিল ফুলসজ্জার আগে। ওর পিসতুতো বোন নাভি ছুঁয়ে কানে কানে বলল ‘কি সুন্দর গভীর তুমি’। ও চলে যাবার পরে এসেছিল এক দিন। আমাকে নিয়ে শুল। এক অন্য তৃপ্তি যেন পেলাম। সেই প্রথম প্রেমিকের চুমু খাওয়ার মত তৃপ্তি।
-তারপরে আর আসে নি সে?
-না। তারপরেই বিয়ে হয়ে গেল তার। আর আসে নি তারপরে।
-আমায় পেলে কবে?
-তারপরেও দু এক মাস।
-কি ভাবে?
-ওর বাবা ব্যবহার করতেন তোমায়। এক শিশি তুমি দেখলাম এক দিন। ঘুম হত না বলে একটা খেলাম। দুটো খেলাম। তাও ঘুম আসে না। তারপরে চারটে খেয়ে একটা ঘোরে চলে গেলাম। মনে হল আমি আর আমিতে নেই। আমার শরীর, ওর স্মৃতি সব পড়ে আছে একদিকে। আর একদিকে তুমি।
-তাহলে আমিই কি থাকব?
-থাক, তুমি ছাড়া কে আর আছে আমার?
-এই সময় থাক চিরন্তন। ভালবাসা নিও।
-তুমিও।