সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৩

ছোটগল্প - অভীক দত্ত

সে আর সে
অভীক দত্ত



-শোন
-বল
-আজ দেখা হল?
-না। আজকেও হয়নি।
-তবে? কি করবে?
-চলে যাব।
-কোথায়?
-যেদিকে দু চোখ যায়।
-বাবা! এযে পুরো ফিল্মি ডায়লগ!
-তাছাড়া কি করব?
-আমিও যাব তবে।
-কোথায়?
-তোমার সাথে।
-ভালবাসছ নাকি?
-সেইরকমই তো মনে হয়।
-আর তারপর যদি ও ফিরে আসে?
-আমার মনে হয় না আসবে।
-এটা তো আমার প্রশ্নের উত্তর হল না।
-কোন উত্তর শুনতে চাও?
-ও ফিরে এলে তুমি কি করবে?
-ছেড়ে দেব তোমায়। বলব যা পাখি... ওড়।
-ও তো আমাকে নাও ফেরাতে পারে।
-আমি তো থাকছিই। সব সময়।
- যুদ্ধ কবে শেষ হবে?
-কে জানে। যুদ্ধ তো কোনদিন শেষ হয় না।
- ও কি মারা গেছে?
-জানব কি করে?
-খবরের কাগজে বেরোয় না?
-খবরের কাগজে কি সব খবর থাকে? এত দুর্নীতির খবরের তলায় চাপা পড়ে থাকে।
-আমরা কি সব ঠিক করলাম? ও যদি ফিরে আসে?
-ঠিক ভুল জানি না। না এলে...
-না এলে কি?
-না এলে আমি তো আছি।
-বার বার বলছ তুমি আছ?তুমি কি সত্যিই আছ?
-হ্যাঁ, যেমন আছে তোমার নিঃশ্বাস।
-এবার ফিল্মি কে হচ্ছে?
-হলে তো খারাপ হত না।
-খারাপ ভাল তো অনেক কিছুই হয়।
-যেমন?
-মানুষ।
-খারাপ মানুষই বেশি।
-নাহ। মানুষের মধ্যে খারাপের শতাংশটা বেশি। মানুষ খারাপ কে বলল?
-খারাপ না? ক্লাবের প্রেসিডেন্টও শুতে বলে। নেতাও শুতে বলে। স্বামী নেই বলে আমি কি পাবলিক প্রপার্টি?
-তারা তোমার অপেক্ষাতেই রয়েছে। তোমার সিগন্যালের অপেক্ষায়। একবার তুমি হ্যাঁ বললে ওরা আসবে, একে একে সবাই।
-সে ভয় পাই তো। এই কারণেই তো তোমার কাছে আসা।
-আমি তো আছি বলেইছি।
-থেকো।
-থাকছি তো। ছায়ার মত পাহারা দিই তোমায়। ওই যে ভিড় বাসে ছেলেটা তোমার বুক ছোঁয়ার চেস্টা করছিল তখনও ছিলাম। আজকাল সবসময়েই থাকি।
-মাঝে মাঝে শূন্যতা অসহায় করে দেয়।
-কি মনে হয় তখন?
-ভাবি সুপ্রতিম ছেলেটার চেহারা কি সুন্দর। ও-র সাথে কিই বা হল? সব মিলিয়ে এক বার। তারপরেই তো চলে গেল।
-সর্বনাশ।
-সেটাই তো চাই মাঝে মাঝে। রাত জেগে বসে থাকি। অস্থির লাগে। মনে হয় চরিত্র ধুয়ে কি জল খাব?
-তারপর কি কর?
-ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম হয় না। তখনই ডাকি তোমায়।
-হোলি কাউ।
-তা বটে। তুমি না থাকলে আমি কি করতাম। এতদিনে সুপ্রতিম জয় করে নিত আমায়।
-নিলে নিত। কি করবে আর।
-ফোনটা হাতে নিয়ে বসতেও ভয় লাগে। কি জানি কাকে কখন আসতে বলে দিই।
-কত নাম্বার আছে তোমার কাছে?
-হাসালে। একা মেয়ে। নাম্বারের অভাব?
-সবাই দেয় তোমাকে?
-সব্বাই। ওই যে বাড়িওয়ালার বিবাহিত ছেলে। বিকেলবেলা বউকে গাড়ি করে নিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। সুখী সুখী মুখ করে ঘুরে বেড়ায় ও-ও দিয়েছে। ওদের অফিসের রিপোর্টিং বস। তারও। এমনকি ওর মেসোমশাইয়ের নম্বরও আছে।
-স্কাউন্ড্রেল যত সব।
-রাগ করছ কেন? এ তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
-রাগ করব না? তাহলে বিশ্বাস করবে কাকে?
-কাউকে নয়। আশীর্বাদ দেবার নাম করে পিঠে হাত দেওয়া, গলায় হাত ঘষে দেওয়া তো পুরনো। সেকারণে আজকাল কাউকে প্রনামও করি না।
-করে কি হবে? প্রনাম পাবার যোগ্য নেইও তো কেউ।
-সে তো ক্লাস ফাইভ থেকেই। প্রাইভেট টিউটর কোলে বসাতো। অস্বস্তি হত। কিছু বলতাম না। তারপরে মা বোঝাল।
-তারপর?
-তারপরে ঘোরের মত কৈশোর। মেয়েবেলা বলে যাকে। প্রেমিক ছিল একটা। প্রেমের থেকে শরীর খুঁজত বেশি। নাভিতে স্তনে জিভ বোলাত। একা পেলে যৌনাঙ্গে আদর করত। প্রবেশ করতে চাইত। কিন্তু কেন জানি না, শীতল ছিলাম তখন।
-আমাকে খুঁজেছিলে সে সময়?
-নাহ। ঘোরের মধ্যে থাকতাম তো। পড়াশুনার সময়েও যৌনাঙ্গে খুঁজে বেড়াতাম সে প্রেমিককে। আমাকে জাগিয়ে দিয়ে চলে যেত সে। তারপর পড়ে থাকতাম একা।
-বিয়ের পরে তবে শান্ত হলে কই?
-হলাম না তো। একদিনই তো ও ডুবিয়ে দিল আমায়। সম্পূর্ণ প্রবেশ করত। তবু ওর পিসীরা স্তনে হাত দিয়েছিল ফুলসজ্জার আগে। ওর পিসতুতো বোন নাভি ছুঁয়ে কানে কানে বলল ‘কি সুন্দর গভীর তুমি’। ও চলে যাবার পরে এসেছিল এক দিন। আমাকে নিয়ে শুল। এক অন্য তৃপ্তি যেন পেলাম। সেই প্রথম প্রেমিকের চুমু খাওয়ার মত তৃপ্তি।
-তারপরে আর আসে নি সে?
-না। তারপরেই বিয়ে হয়ে গেল তার। আর আসে নি তারপরে।
-আমায় পেলে কবে?
-তারপরেও দু এক মাস।
-কি ভাবে?
-ওর বাবা ব্যবহার করতেন তোমায়। এক শিশি তুমি দেখলাম এক দিন। ঘুম হত না বলে একটা খেলাম। দুটো খেলাম। তাও ঘুম আসে না। তারপরে চারটে খেয়ে একটা ঘোরে চলে গেলাম। মনে হল আমি আর আমিতে নেই। আমার শরীর, ওর স্মৃতি সব পড়ে আছে একদিকে। আর একদিকে তুমি।
-তাহলে আমিই কি থাকব?
-থাক, তুমি ছাড়া কে আর আছে আমার?
-এই সময় থাক চিরন্তন। ভালবাসা নিও।
-তুমিও।