শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৩

ধারাবাহিক - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার


২৪।

তবু তো পেরিয়ে আসতে হয় অসংখ্য ঝাড়-জঙ্গল-বাবলাবন-কলার বাগান।গহিন ছমছমে বৃহৎ কোনও অরণ্যভুমিতে প্রবেশ করবার আগে যেমন আট-দশটা সংক্ষিপ্ত সাঁকোহীন নদী।জীবন ছন্দময় প্রবাহিত হয়।বাইসন হানা দেয়।হাতি মানুষ মারে।অথচ জীবন থেমে থাকে না।শোকপালনের অবকাশই দেয় না।মাঠ প্রান্তরের ভিতর বছরের পর বছর সাহেবদের কবর শুয়ে থাকে।আরও জীর্ণ ও পুরাতন হয় ক্রমে ক্রমে।মকবুল বয়াতির দোতারার ডাং কোন কোন শীত রাতে ওম ও উষ্ণতা ছড়ায়।উষ্ণতর হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় শামিল হয় পাখি ডাক,মনশিক্ষার গীত-‘কচুপাতের পানি যেমন রে/ও জীবন/টলমল টলমল করে ...’ বিধ্বস্ত পুরুষ উঠে দাঁড়ায়।তার সর্ব অঙ্গে দৃঢ়তা জমে।আর অন্ধকারেই রাস্তা খুঁজে পায় সে।তখন আঙিনায় নাচগানের আসর।ঢোল-সানাই।আর নজরুল ইসলামের মরমিয়া গান-আইসো মোর কালাচান,যাও খায়া যাও বাটার পান... জোতদারের ধানের গোলায় আগুন।অথচ উদ্বেগহীন জোতদারের মুখে তখন তেভাগার গল্প।লাল পতাকা,কৃষকজনতা ও বারুদ বন্দুকের গাথাগল্প।গল্পপথে রক্তের দানা ফন্দিফিকির ও সমূহ চক্রান্তকথা।আগুন প্রায় নিভে আসে অথচ গল্প শেষ হতে চায় না।আদতে এক গল্প কিছুদুর গিয়েই নানা প্রশাখায় বিভক্ত।তাই এমন ধারাবাহিকতার মজাদার ফানুষ।এইসব গল্প খুঁটে খাই আমি।আমোদিত হই।আর বাড়ি ফিরবার পথে সন্ধে ও রাত্রির মধ্যপর্বে প্রায়শই বাঁশবাগান পড়ে।বাঁশবনের ভিতর অগণন জোনাকি।মন্দ আলোর নদী।সামন্তরক্তের মতো।লোককথার ঝোলা কাঁধে অপরূপ সব কথোয়াল হেঁটে যান।তাঁরা হেঁটে যেতেই থাকেন।আর ভালোবাসার পাশে সন্ত্রাস-রক্ত-লালসার আগুন।জন্ম ও মরণ লেখে বাজপাখি।