সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

মলয় রায়চৌধুরীর ডায়েরি

মলয় রায়চৌধুরীর ডায়েরি
কবি রাজকমল চৌধুরীর শেষ কনডোম


ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত, সন্তোষ রায় সম্পাদিত ‘জলজ’ পত্রিকার নভেম্বর ২০১২ সংখ্যায় হিন্দি কবি রাজকমল চৌধুরীর বিখ্যাত ( আলোচকদের মতে কুখ্যাত ) ‘মুক্তিপ্রসঙ্গ’ কবিতার বিশ্বজিত সেনকৃত বাংলা অনুবাদ পড়ার পর রাজকমল সম্পর্কে অনেক কথা মনে পড়ছিল । ‘মুক্তিপ্রসঙ্গ’ একটি দীর্ঘ কবিতা । হাংরি আন্দোলনের সময়ে রাজকমল কলকাতায় ছিল আর ওর সান্নিধ্যে কলকাতার অন্ধকার জগতটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল, কেননা সেসময়ে ওই জগতটির নিচুতলার বেশির ভাগ কুশীলব ছিল বিহারি, অনেকে রাজকমলের জেলার । তখনকার কলকাতায় চিনে পাড়ায় চিনেদের জন্যে যে বিশেষ চিনা রমণীদের রেড লাইট এলাকা আছে তা রাজকমলের দরুন জানতে পেরেছিলুম ।

রাজকমলের গ্রাম মাহিশিতে একটা মন্দিরের কথা বলত ও, যেখানে মোষ বলি হত আর গ্রামের সবাই সেই মোষের রান্নার ভোগ খেত । আমাকেও নিয়ে গিয়েছিল মোষের মাংস খেতে । আমি অবশ্য তার আগেই নেপালে কচিলা খেয়েছিলুম, গমের মদ সহযোগে । রাজকমলের মতে, ওই মন্দিরের তারা মূর্তির মাথায় ফুল রাখলে ফুলটা যদি না পড়ে তাহলে মনোকামনা পূর্ণ হয় । রাজকমল, আমার সামনেই কয়েকবার চেষ্টা করেছিল, প্রতিবারই ফুল পড়ে গিয়েছিল । ফুল রাখছিল ওর দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাইঝিকে প্রণয় নিবেদন করে সফল হবার আশায় ।



রাজকমলের বাবার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করেছিলেন । রাজকমলের বিমাতা ছিলেন রাজকমলের চেয়ে ছোট । বাড়িতে অবস্হা ঘোরালো হয়ে উঠছে অনুমান করে রাজকমলের বাবা রাজকমলকে সৌরঠ সভার গণবিবাহের মাঠে নিয়ে গিয়ে শশীকান্তা নামে একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন , আর রাজকমলকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন আমাদের কলেজের হোস্টেলে । বিয়ের চার বছর পর রাজকমল সাবিত্রী শর্মা নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করে, প্রথম বউ যদিও তখন বাড়িতে । সাবিত্রীর সঙ্গে বিয়ে এক বছরের বেশি টেকেনি, তার ভাইঝির প্রতি রাজকমলের টানের কারণে ।

দ্বিতীয় স্ত্রী সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কলকাতায় চলে এসেছিল রাজকমল । তখন আমি হাংরি মকদ্দমার দরুন কলকাতায় ফ্যা-ফ্যা করছি । আমার ফ্যা-ফ্যা বৃত্তির সঙ্গে যোগ দিল রাজকমল । ও ছিল ফালগুনী রায়ের মতন । গাঁজা আর চরসের নেশা ওকে ধরে ফেলল । ফলে শরীর বেশ খারাপ হওয়া আরম্ভ হতে ফিরে গেল পাটনায় ।

Add caption

আমি হাইকোর্টে মকদ্দমা জিতে পাটনায় গিয়ে দেখি রাজকমল হাসপাতালে ভর্তি । ওর জন্যে পাটনা হাসপাতালের রাজেন্দ্র ওয়ার্ডে একটা আলাদা ঘর বরাদ্দ হয়েছিল । প্রতি সন্ধ্যায় তরুণ সাহিত্যিকদের আড্ডা হতো । টের পাওয়া যাচ্ছিল ওর শরীরের অবনতি হয়ে চলেছে । ও বলত সার্জেন বলেছে অপারেশান টেবিলে পেট চেরার পর পুরো হাসপাতাল গাঁজার ধোঁয়ায় ভরে যাবে ।

একদিন সবাই চলে যাবার পর রাজকমল আমায় বলল, পরের দিন সকালে আমি যেন ওকে এক প্যাকেট কনডোম দিয়ে যাই । বলল, একটি নার্স রাজি হয়েছে । একটু পরে একজন মালায়ালি নার্স এসে ওর মাথায় যখন হাত বোলানো আরম্ভ করল, রাজকমল বলল, এই যে এই মেয়েটিই রাজি হয়েছে । মেয়েটি আমার দিকে চেয়ে হাসল , জানাল যে, আপনি কাল সকালে দিয়ে যাবেন এক প্যাকেট কনডোম ।


পরের দিন সকালে গিয়ে দেখি ঘর ফাঁকা । খোঁজ নিয়ে জানতে পারলুম যে রাতেই মারা গেছে রাজকমল । ওর মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ওর প্রথম স্ত্রীর কাছে ।